পত্রিকা – মানবধর্ম

আবদুল হালিম

ধর্ম মূলত একটি মানসিক ব্যাপার। ধর্ম বাহিরে দেখানোর বা আনুষ্ঠানিক কোনো বিষয় নয়। আল্লাহ বিরাজ করে মানুষের মাঝে। সপ্তম আকাশে কিংবা মক্কা নগরীতে তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষের মাঝেই তাঁর অবস্থান।

রাসুলে পাক (সা.) বলেছেন, যে আমাকে দেখলো, সে স্বয়ং আল্লাহকেই দেখলো। “মান রা’আনি ফাকাদ রাআল হক”। নূরে মোহাম্মদীকে দর্শন করা আর সত্যকে দর্শন করা একই কথা।

আপনত্বে বিরাজিত প্রভুসত্ত্বাকে জাগ্রতকরণের নামই ধর্ম। এজন্যই নিজেকে চিনতে বলা হয়েছে। “মান আরাফা নাফসাহু, ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু”। বহুকাল পূর্বেও একথাটি বলেছিলেন সক্রেটিস। নিজেকে চেনো। মানবীয় অস্তিত্বের উৎসমূলে ধ্যানপ্রক্রিয়ায় নিমগ্নতার ফলে ধীরে ধীরে মানবীয় সত্ত্বায় উদ্ভাসিত হয় প্রভুসত্ত্বা। এজন্যই নিজেকে চেনাই হচ্ছে প্রভুপরিচয়ের ভিত্তিভূমি। আল্লাহ বলছেন, “আমি তোমার নফসের সাথে মিশে আছি, তুমি কি দেখতে পাও না?”

কোরানের স্পষ্ট বর্ণনা, আল্লাহ পাক তাঁর নিজের রুহ ফুঁকে দিয়ে আদম কে তৈরী করেছেন। আদম যদি আল্লাহর রুহ প্রাপ্ত হয়ে থাকে, তাহলে আদম কে? এজন্যই বলা হচ্ছে, আপনাকে চিনতে। মানবধর্মই একমাত্র ধর্ম। কারণ, মানুষেই বিরাজিত মহান প্রভু। মানুষেই তাঁর প্রকাশ বিকাশ। তাই পুরুষোত্তম নজরুল ইসলাম বলছেন, ভগবান – আত্মজ্ঞান! আত্মজ্ঞান জাগ্রত হলেই মানবসত্তায় জেগে ওঠেন আল্লাহ। কবি চন্ডীদাস বলেন, সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নাই। মহাত্মা লালন সাঁইজি বলেন, সর্ব সাধন সিদ্ধ হয় তার, মানুষ গুরুর নিষ্ঠা যার”।

অন্ধ অনুমান কল্পনায় খোদা সাব্যাস্ত করে নিজেকে অধপতিত না করে সকলেরই উচিত সঠিক ধর্মজ্ঞান অর্জন করা। মানুষতত্ত্বে নিষ্ঠাবান হয়ে প্রভুকে লাভ করলেই পালিত হবে সঠিক ধর্ম। প্রভু আমাদের সকলের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত করতে সহায় হোক।

আপন খবর