পত্রিকা – মানব জিবনের পূর্ণতা মানবিকতায়

এস. এম. বাহরায়েন হক ওয়ায়েসী

সৃষ্টির সেরা মানুষ, কিসে তার শ্রেষ্ঠত্ব? আইয়ামে জাহিলিয়াতকে পরাভূত করে দাঁড় করিয়ে দেয়া এই অজুদ শৈলীর স্থায়ীত্বকে বিকশিত করে হাইউনে পৌঁছে পৃথীবিকে করেছে সুখময়। অমলিন হয়েছে প্রেমময়তা। অহমিকা ছেড়ে সুষ্ঠভাবের আদান প্রদানে হয়ে উঠেছে সবে দরদী। আজ আমরা বেঁচে থাকার স্বার্থকতা খুঁজে পেয়েছি। পেয়েছি সেই পথের অবলম্বন – কোথায় ছিলাম, কোথায় আছি, আবার কোথায় যাব?

তরিকা মানে পথ, এই পথ কদম চলার পথ নয়। এই পথ হচ্ছে আত্মার সুনিপুন স্বচ্ছ দিক নির্দেশনার প্রতিফলন। যা বাহ্যিক দৃষ্টি ও অভ্যন্তরীন দৃষ্টিকে কলংকিত হতে রেহাই দেয়। সে যেদিকেই ফেরে, কেবল তাকেই দেখতে পায়। কারণ এক হতে একক সত্ত্বার বিকাশ ঘটলে এক তো কখনও মিলিয়ে যায় না। সুক্ষ হতে অতি সুক্ষে অবস্থান নেয়। এত মিহিন হেকমতের দ্বারা এই বিশ্বালয় পরিচালিত, যেন কে বা কারা এক হস্তে নিয়ন্ত্রণ করছে সব। তার সৃষ্টির দর্শন, কেউ কাউকে টপকাচ্ছে না। সমান তালে নিজের আত্ম-কর্তব্য পরিচয়ে মানুষের প্রভুত্ব সম্মান প্রদর্শন করে ধন্য হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ কি তা বুঝতে পারছে?

নিয়মতান্ত্রিক পথ কখনও পরিবর্তন হয়নি, হবেও না। যে সমস্ত মানুষ তা উপলদ্ধি করতে পারে না, সে থেকে যায় অমর্যাদায়। আর মর্যাদাবান মহামানবেরা তাঁর অস্তিত্ব সমন্ধে পরিচয় দিয়ে, মুল্যায়িত করে পৌঁছে যায় মহিয়ানে। অফুরন্ত ভান্ডারের মালিকানায় বিকশিত হয়ে ফিরে এসে মায়ামৃগে তার অবস্থানকে দেখিয়ে দেয় দূরত্বই কাছে। তখন সাধকগণ সাধনার রেওয়াজ দেখিয়ে দেয়। ঐশি জাত সত্ত্বা সর্বসময় রক্ষার কাজেই পরিচালিত থাকে। ধ্বংস সে কখনও পছন্দ করতে চায় না।

সৃষ্টিতে যার সুখ অন্বেষণ, সে তো ধ্বংস চাইবে না। তবে রাহমানুর রাহিম কখনও মন্দকে একপেশে করে না, তাকেও পৃথিবীর রাজ্যে প্রভু অবস্থানের সুযোগ দিয়েছেন। দুইটা কারনে, এক ভালকে ভাল রাখার প্রত্যয়ে, আর দুই মন্দও যদি চায় তবে শুদ্ধতা আনয়ন করে ভাল হওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে। তাই মানব জীবনের পূর্ণতা বিশ্লেষন করে, তার শিক্ষার পরিধীকে সসীমে আটকে দিলে হবে না, অসীমকে স্পর্শ করতে সমস্ত পথ খুঁজে পেতে হবে। সে পথে স্বার্থ অন্বেষণ করা যাবে না।

কর্তব্যপরায়ণতার ওয়াদায় ছিফাতের গুণাগুণ লালন করে জাতের পথকে ত্বরান্বিত করতে হবে। একটা পর্যায়ে সে আপনা-আপনি অনুভব করতে থাকবে ওয়ালিয়ম মুর্শিদ আসলে কি? ওয়ালিয়ম মুর্শিদ ভক্তের ভক্তির সিমায় রূহানী তাছিরে নূরানী নূরে চির জাগ্রত করে দিতে পারে। তখন সে সংরক্ষিত করে স্বতন্ত্র সেই রূপ যা লাছানি। তার মানবিকতা ছাপিয়ে মুহিত চেতনার কুল আলমকে ঐশ^রিক শক্তি দেয়। ছুটে যায় মানুষ তার কাছে তখন সে হয়ে উঠে সকলের। তার আত্মা হতে অমৃতের সুধা বিলিয়ে দেয় সবার মননে। তারই প্রতিচ্ছবি হৃদয়ে অঙ্কন করে অনেকেই ভূলে যায় পাশবিকতা। মানবতার পূণ্যে ত্যাগের মহিমাকে লালন করে সে। সরল সে পথ অনেক কষ্টে অর্জিত, সেই পথে নেই কোন ভয়।

মহান ¯্রষ্টার বলয়ে প্রভুত্বের মর্যাদা পেয়ে দেখায়ে দিয়ে যায় কখনও কেউ অবমুল্যায়িত হতে পারে না। সৃষ্টির ধারায় এক বর্ণিল শোভায় শোভিত হয়ে প্রকৃতিকে প্রাণবন্ত নির্ভেজাল অপরূপ শক্তি সঞ্চালন করে প্রত্যেকে স্বজন হয়ে উঠে। তখন বিচ্ছেদ হয় বেদনা বিধুর। এস্কের তামান্না মিটানোর মধ্যে কর্তব্যপরায়নতা ঐশী নিয়মের প্রতিফলন ঘটিয়ে ওজুদী তাৎপর্যকে লাছানিতে দাড় করিয়ে দিয়ে চমৎকারে দর্শনীয় শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়ে তার সত্ত্বা বুঝিয়ে দিয়েছেন। কি করে সর্বজনীন জাত স্বত্তায় মোহাম্মদী চেতনা বশবর্তী হওয়া যায়। নবুয়তী হেকমতে বিলায়েতের যে আত্মপরিচয় তা তার অসীম প্রয়োজনীয়তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।

প্রভু আর গোলাম এক নয়, তবে গোলামী করেই প্রভুত্বে পৌঁছাতে হয়। প্রভুত্বে পৌঁছে একক থেকে একলীন হয়ে যখন দেখতে থাকে তখন অমরত্বের পথ খুলে, যে পরিচয় পাওয়া যায়, ঐ রূপের ছুরত হতে কখনও আর নিরিখ ফেরানো যায় না। যে যেখানে ঘুরে কেবল আপনাকে পেয়ে যায় নীড়ে। যাকে এখন সর্বজনীন মানবিকতায় পূর্ণ করে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরবান্বিত আত্মপ্রত্যয়ী বিশে^র আবাসস্থল হিসেবে পূজনীয় করে রাখে সর্বদায়। তখন বলতে হয়না কাউকে ধর্মভিরু হতে, ধর্মের অনুরক্ত হচ্ছে স্বার্থহীন এক সত্ত্বা, যা তার প্রকৃত মর্যাদাকে মুল্যায়িত করে হেফাজতের অধিকার দেয়।

একটু খানি অনুভব করবেন, যেন এই পৃথিবীর আলো, বাতাস, মাটি, পানি, বৃক্ষ তরুলতা হায়ানিয়াতে দাড়িয়ে প্রকৃতির প্রকৃতকে অবলোকন করে আমার অস্তিত্বকে চিহ্নিত করে প্রতিনিধির দায়িত্বকে স্বীকার করে কর্তব্যের স্বীকৃতি নিয়ে পবিত্র হতে পারা যায়। আর পবিত্র হলেই মানব জীবনের পূর্ণতা মানবিকতায় দেখতে পাব।

সবাই ভাল থাকুন । আমিন।

আপন খবর