মহাত্মা হাকিম সানায়ী (রহ)
অনুবাদ – লাবিব মাহফুজ
অতীন্দ্রিয়বাদী দার্শনিক, প্রেমমার্গের কবি, একাদশ শতাব্দীর ধ্রুপদী সুফি লেখকদের অন্যতম মহাত্মা হাকিম সানায়ী (র.) (১০৪৪ – ১১৫০) দক্ষিন আফগানিস্থানের গজনা প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মহান ওলী ইউসুফ হামদানী (র.) কর্তৃক দীক্ষিত হয়ে তিনি পথচলা শুরু করেছিলেন আধ্যাত্ম্য প্রেম পথে। ইশকের রহস্যজ্ঞানী সানায়ী নির্মাণ করেছিলেন সুফি প্রেম-সাহিত্যের বিশেষ ধারা এবং প্রভুপ্রাপ্তির চরম উপলব্ধিকে প্রকাশ করেছিলেন কাব্য-সাহিত্যে।
কবিতা – পথ প্রদর্শক
অতঃপর, অস্পষ্টতায়
আমি দেখলাম, একজন বৃদ্ধ। যার
মুখমন্ডলে বিরাজ করছে সুমহান উজ্জ্বলতা!
তুমিই চাঁদ! ডাকলাম আমি। প্রশ্ন করলাম,
কোথা থেকে এসেছে তুমি?
তিনি বললেন – আমি যাবতীয় পদার্থ আর
স্থানের বাহিরে অবস্থান করি।
সৃষ্টির অনাদী কারণ আমি!
প্রত্যাবর্তনের তাগিদ নিয়ে –
মাঝে মাঝে আসি এ ভূমিতে!
হৃদয়ে বহন করে আনি জলন্ত আগুন! এ আগুনে
ছাই করে ফেলো নিজেকে। ভয় পেও না –
এটি এমন আগুন, যার ভেতর রয়েছে –
অনন্ত জলের ঝর্ণাধারা!
তিনি বললেন –
যদি মৃত হয় তোমার অভ্যন্তরস্থিত পশু-আত্মা
তবেই, সুমহান দীপ্তি নিয়ে জেগে উঠবে –
নব-শক্তি! শাশ্বত প্রাণ প্রবাহ! হে পথিক!
বিনয়-নম্রতায় অনুসরণ করো আমাকে।
আমি তোমাকে মহিমান্বিত করবো।
তিনি বললেন – আরো অনেক কথা! নিরবে!
এক প্রদীপ্ত ভালোবাসা আর জ্যোতিষ্মান চক্ষু
তিনি দান করলেন আমায়।
সে সুমহান সত্ত্বা! যথার্থই চাঁদ এবং
পথ প্রদর্শনকারী!
হাকিম সানায়ী (রহ) এর একটি বাণী মুবারক –
- দুনিয়ার মানুষ হচ্ছে মোমবাতির শিখার সামনে উড়ন্ত তিনটি প্রজাপতির মতো। প্রথমটি অগ্নিশিখার খুব কাছে গিয়ে বলে, ভালোবাসা কি আমি জানি। দ্বিতীয়টি তার ডানা দিয়ে অগ্নিকে আলতো স্পর্শ করে বলে, আমি জানি প্রেমানল কিভাবে পোড়ায়। আর তৃতীয়জন নিজেকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করে এবং নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কেবল সেই জানে সত্যিকারের প্রেম কি!”