লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াচ্ছাল্লামের বিশিষ্ট অনুচর হযরত আনাস (রা), হযরত আবু হুরায়রা (রা) সহ বহু ধর্মনিষ্ঠ ও পূণ্যাত্মা মানুষদের সংস্পর্শধন্য বিশিষ্ট অলী হযরত আবু হাশেম মাক্কী (র)। উল্লিখিত মহামানবদের সংস্পর্শ আবু হাশেম মাক্কী (র) এর জীবনকে করেছে দারুণভাবে প্রভাবিত।
আসহাবে সুফফা’র মতাদর্শে উজ্জীবিত সুফি আবু হাশেম মাক্কী (র)। সারাজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সুফি চর্চা তথা ইলমে তরিকত ও ইলমে মারিফত চর্চায়। আবু হাশেম মাক্কী (র) এর জীবনী রচনা করেছেন অনেক বিদগ্ধ পন্ডিত। তাঁদের মধ্যে আবু ওসমান মাক্কী (র) উল্লেখযোগ্য।
বাদশাহকে দেয়া উপদেশ
মহাপ্রাজ্ঞ সাধক একং দূরদর্শী জ্ঞানী ব্যক্তিত্ব হযরত আবু হাশেম মাক্কী (রা)। তৎকালীন সময়ে তাঁর অঞ্চলের বাদশাহ ছিল খলিফা হাশেম বিন আব্দুল মালেক। আব্দুল মালেক ছিল মহাপ্রতাপশালী খলিফা। একদিন খলিফা আবু হাশেম মাক্কী (র) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘শাসন কার্যে যুক্ত থেকেও আমি কিভাবে মুক্তি পেতে পারি?’ মহাতাপস আবু হাশেম মাক্কী (র) উত্তর দিলেন, “আপনার প্রতিটি দিরহাম যেনো সিদ্ধস্থান থেকে উপার্জিত হয় এবং সে দিরহামগুলো যেনো সিদ্ধস্থানেই ব্যায় হয়।” খলিফা প্রশ্ন করলেন, তাও কি সম্ভব? আবু হাশেম মাক্কী (র) বললেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন যার উদ্দেশ্য, তার পক্ষে সেটি খুবই সম্ভব।”
আবু হাশেম মাক্কী (র) এর কিছু বাণী
তিনি বলতেন, “পার্থিব কামনা থেকে বিরত থাকতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “পৃথিবীতে এমন কোনো বিষয় বা বস্তু নেই যা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হয় না, ব্যগ্রতা বা অস্থিরতার শিকার হতে হয় না। এসবের কোনো আনন্দময় পরিণতি নেই। পৃথিবীর তুচ্ছতম কোনো বস্তুর প্রতি মানুষের আসক্তি পরকালের বৃহত্তর বস্তুসমূহ থেকে তাকে বঞ্চিত করবে।”
তিনি বলেন, “মানুষের জন্য দুটি বিষয়ই মূল কথা। প্রথমটি হলো, যে জিনিস তার জন্য সংরক্ষিত, তা সে পাবেই। যদি তার থেকে সে দূরে পালিয়ে যায়, তবু তা পেছন পেছন ছুটে যাবে। দ্বিতীয়টি হলো, যা তার নয় বা যা কিছু অন্যের জন্য রাখা হয়েছে, তা সে পাবে না। তার জন্য যত চেষ্টাই করুক না কেনো, সে কিছুতেই তা পেতে পারে না।”
তিনি আরো বলেন, “মানুষ এমন এক যুগে উপনীত হয়েছে, যখন সে কাজের চেয়ে কথায় বা বিদ্যায় বেশি সন্তুষ্ট।”
তিনি বলতেন, “যে আল্লাহর ওপর খুশি, সে কখনো মানুষের কাছে কোনো কিছুর প্রত্যাশা করে না।”
একটি ঘটনা
একদিন তিনি কোথাও যাচ্ছেন এক কসাইখানার সামনে দিয়ে। তাঁকে দেখে কসাইখানার কসাই বললো, ‘ভালো মাংস আছে, নিয়ে যান।’ তিনি জবাব দিলেন, ‘আমার কাছে পয়সা নেই।’ কসাই বললো, ‘তাতে কি, পরে দিয়ে দিলেই হবে।’ তিনি উত্তরে বললেন, “তার চেয়ে বরং নফসের কাছ থেকে কিছু সময় চেয়ে নেয়াই ভালো।” কসাই এবার কটু স্বরে বললো, ‘তাইতো পাঁজরের হাড় ক’খানি গোনা যায়!’ আবু হাশেম মাক্কী (র) এবার তার উত্তরে বললেন, “তবুও দেহে যতটুকু মাংস আছে, তাতে কবরের কীটগুলোর অনেক দিন চলবে।”
বাগদাদের ঘটনা
একবার কোনো এক বিখ্যাত সাধক যাবেন হজ্জ করতে। মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে বাগদাদ পৌঁছে তিনি শুনতে পেলেন আবু হাশেম মাক্কী (র) বাগদাদে আছেন। তিনি আসলেন আবু হাশেম মাক্কী (র) এর সাথে দেখা করার জন্য। এসে দেখেন, আবু হাশেম মাক্কী (র) ঘুমে আছেন। কিছুক্ষন পর ঘুম থেকে জেগে আবু হাশেম মাক্কী ঐ সাধককে বললেন, আমি এইমাত্র রাসুল (সা) কে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আপনার সমন্ধে বলেছেন, আপনি যেনো আপনার মায়ের হক আদায় করেন। তাঁর সেবায় নিযুক্ত হোন। এ মুহুর্তে আপনার মায়ের হক আদায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দেশে ফিরে যান ও মায়ের পরিচর্যা করুন। উক্ত সাধক এ উপদেশ শ্রবণ করে দেশে ফিরে যান এবং মায়ের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। রাসুল (সা) থেকে এমন নির্দেশনা লাভ ও রাসুল (সা) এর দীদার আবু হাশেম মাক্কী (র) এর আত্মিক পরিশুদ্ধিতা ও উচ্চতার প্রমাণ দেয়।
রচনাকাল – 19/08/2021
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী