লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
ঐশ্বরিক নিয়মসমূহ আমাদের শেখায় কি করে আমরা নশ্বর এ জগতের বাসিন্দা হয়েও অবিনশ্বর তথা অমর জগতে স্থিত হতে পারি। একটি সুরেলা জিবন-যাপন তথা জান্নাতি জিবন-যাপন করার জন্য প্রভুপ্রদত্ত নিয়ম-আহকাম অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই। প্রভু মানুষের ভেতরে নিহিত রেখেছেন অসীম সম্ভাবনা। মানুষ তার আপনত্বের পূর্ণ জাগরণের মধ্য দিয়ে মহামানুষে পরিণত হতে পারে, পারে তার ভেতরের সুপ্ত প্রভুসত্ত্বাকে জাগিয়ে তুলতে। মানুষের ভেতরের প্রভুসত্ত্বা জাগ্রত হলেই মানুষ ফিরে পাবে তার হারানো ফিৎরাত, যে ফিৎরাত সমূহ দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে। জাগতিক মোহ-লিপ্সা, মায়া-বিভ্রমে মানুষ সে ফিৎরাত হারিয়ে নিচ জিবন-যাপন করে চলেছে। হারানো ফিৎরাত উদ্ধার হলেই মানুষের স্বভাব হবে চির-সুন্দর, চির-কল্যাণকর। তখনি মানুষ হবে আল্লাহর, আল্লাহর ওহী কালামের হেফাজতকারী। সে মানুষটি বাস করবে চিরকালীন শাশ্বত জান্নাত বা মানবী জান্নাতে। সে মানুষটিই হয়ে উঠবে খোদার প্রতিনিধি, ধর্মের ধারক ও বাহক।
যুগে যুগে প্রভু মানুষদের ভেতর থেকেই নির্বাচিত করেছেন পথ-প্রদর্শক। শুদ্ধ মানুষেরাই পতিত মানুষকে দিয়েছে বাস্তব মুক্তির শিক্ষা। সে শিক্ষার আলোতেই কেটে গিয়েছে সকল অজ্ঞানান্ধকার, জ্ব্যাজ্বল্যমান হয়েছে শান্তি, সমুন্নত হয়েছে ধর্ম। মানুষকে মোহজাগতিক অনিত্য আবদ্ধতা থেকে চির-মুক্তির জগতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়াটাকেই আমরা বলি সুফিবাদ বা তরিকত। একজন সুফি বা শুদ্ধ মানুষ প্রদত্ত দেশনাবলিকেই সুফিবাদ বলে। জগৎগুরু মোহাম্মদ (সা) প্রবর্তিত মত-পথ কে অবলম্বন করে যুগে যুগে মহামানবগণ তথা ওলী মুর্শিদগণ আমাদের জন্য প্রণয়ণ করেছেন মুক্তির আলেখ্য। যা অনুসরণেই আমরা লাভ করতে পারবো চিরজিবন। চিশতীয়া সুফিমতে প্রভুপ্রেমের পথে প্রেমিককে অতিক্রম করতে হয় এগারোটি সিঁড়ি। সিঁড়িগুলো গুরুজ্ঞানের আলোকে অতিক্রম করতে পারলেই একটা মানুষ প্রভুময় হয়ে উঠবে। জ্ঞানার্থীদের অন্তকরণে জাগ্রত হবে প্রভুপ্রেমের অসীম নূরের ফোয়াড়া। এগারোটি সিঁড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো।
১. মারিফাত (প্রভুর পরিচয় জ্ঞান)
প্রভুর পরিচয় জ্ঞানকে মারিফাত বলে। প্রভু মানব অস্তিত্বের সাথে মিশে আছেন। মানুষের বাহিরে খুঁজে কখনোই প্রভুকে লাভ করা সম্ভব নয়। নিজেকে চেনার মধ্য দিয়েই চিনতে হয় প্রভুকে যাকে বলা হয় মান আরাফার শিক্ষা। এ শিক্ষা লাভ করতে হয় গুরুপথের একান্ত নিষ্ঠা ও অনুরাগ সাধনার মধ্য দিয়ে। সালিক বা মুরিদ তার অন্তকরণস্থিত সকল কলুষরাশি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আপনত্বে প্রভুর জাগরণের যোগ্য হয়ে ওঠে। সে প্রভু প্রত্যাশী সালেকের হৃদয়েই প্রকাশিত হয় প্রভুর নূর। খুলে যার তার হৃদয়ের বদ্ধ দরজা। জগত ও জিবনের সকল রহস্য তার জন্য উন্মোচিত হয়ে যায়। সে প্রভু পথের পথিক তখন আপনাকে চেনার মাধ্যমে প্রভুকে চিনে থাকেন এবং প্রভুপ্রদত্ত নূরে সে জগত সংসার কে অনুধাবন করে থাকেন।
“শেখ আলী হুজাইরি (দাতা গঞ্জে বখশ) (রা.) বলেন, ইলম বা আকল দিয়ে মারিফাত অর্জন হয় না। মারিফাত কেবল প্রভু প্রত্যাশীগণ লাভ করেন এবং তারাই প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন।”
“আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রা.) বলেন, একজন সুফির জগতের সবকিছুর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং তারা প্রভুর বিষয়ে দিবালোকের মতো নিশ্চিত।”
“হযরত জুন্নুন মিশরী (রা) বলেন, মারিফাতের বাস্তবতা এটাই যে, প্রভু তার খোদায়ী নূরের অবিরাম দীপ্তিতে প্রেমিকদের কাছে তার গোপনীয়তা প্রকাশ করেন।”
“হযরত শিবলী (রা) বলেন, মারিফাত চির বিস্ময়ের নাম। আল্লাহর অস্তিত্বের বিষ্ময় দ্বারাই একজন সুফি বিশ্বাস চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়।”
“হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রা) বলেন, মারিফাত হলো দৃঢ় বিশ্বাসের উৎস।”
২. তাওহীদ (অস্তিত্বের এককত্ব)
যখন একজন মানুষ খোদায়ী জ্ঞান অর্জন করে তথা খোদায়ী নূরে নূরান্বিত হয়ে মহাকালে উন্নীত হয়, তখন সে অনুভব করতে পারে যে অস্তিত্বের ভেতরে কোনো দ্বৈততা নেই। সে তখন এক অনাদী অনন্ত সারসত্যের অনুভব করে এবং নিজেকে প্রভুর অপরিসীম নূরের দরিয়ার ভেতর নিমজ্জিত দেখতে পায়।
প্রভুর গুণরাশি যখন একটা মানুষে জারি হয়, তখন মানুষটি নিজেই খোদার শক্তি প্রকাশের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তখন তার চারধারে বিরাজ করে একমাত্র মহিমান্বিত অস্তিত্ব। তিনি তখন প্রভু শক্তিতেই তার সচেতন বৃত্তিকে পরিচালিত করেন। তিনি স্পষ্ট অনুভব করতে পারেন, জগতে একমাত্র অস্তিত্ব হলো প্রভুর অস্তিত্ব এবং জগতের সকল কিছু সে অস্তিত্বের ভেতরেই বিরাজমান। সেই তত্ত্বজ্ঞানী তখন স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন, প্রভুই দেখেন, শুনেন, বলেন এবং সকল কিছু তিনিই করেন। আমরা তার গুণরাশির প্রকাশক মাত্র।
৩. ঈমান (বিশ্বাস)
ধর্মের মূল স্তম্ভ বলা হয় বিশ্বাসকে। মূলত বিশ্বাস থেকেই মানুষের আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আর বিশ্বাসের উৎপত্তি হয় আল্লাহর মারিফাত থেকে। যখন সালিক প্রভুর মারিফাত বা জগতে প্রভুর বিচিত্র ক্রিয়া ও মানুষে প্রভুর বিষ্ময়কর প্রকাশ দেখতে পায়, তখন মানুষ প্রভুর অস্তিত্ব ও প্রকাশ-প্রক্রিয়ার ওপর দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে।
ধর্মকালে ঈমানকে বলা হয় বসন্ত। পূর্ণ বিশ্বাস সহযোগে পূর্ণ আনুগত্যই ধর্মের মূল ভিত্তি। শওক মুহাব্বাত বা ভালোবাসার উৎস বলা হয় বিশ্বাসকে। যার বিশ্বাস যত প্রবল, তার আধ্যত্মিক পথ পরিক্রমাটাও ততটাই সহজ। বিশ্বাসের পরিণত রূপায়নটিই হলো একটি নিখাদ ভক্ত, যার অন্তকরণ তৈরী হয় নিরন্তর ভক্তির দ্বারা এবং ফলশ্রুতিতে তার জিবন হয়ে ওঠে ঐশী আলোকমন্ডিত।
৪. তাহারাত (পরিচ্ছন্নতা)
সুফির জিবন মূলত সকল প্রকার গাইরুল্লাহ হতে মুক্ত জিবন। সুফিগণ একমাত্র প্রভু সত্ত্বায় লিপ্ত থাকেন এবং তারা প্রভু ব্যতিত সকল কিছুকেই পরিত্যগ করে থাকেন তথা পরিচ্ছন্ন থাকেন। তাহারাত দু প্রকার। যথা, তাহারাত-ই-জাহির এবং তাহারাত-ই-বাতিন। তাহারাত-ই-জাহির হলো বাহ্যিক বা দৈহিক পরিচ্ছন্নতা এবং তাহারাত-ই-বাতিন হলো অভ্যন্তরীন তথা আত্মিক পরিচ্ছন্নতা। দৈহিক পরিচ্ছন্নতা ব্যতিত যেমন ধর্মীয় কর্ম অনুমোদিত নয় তেমনি আত্মিক পরিচ্ছন্নতা ব্যতিতও মারিফাত লাভ সম্ভব নয়।
৫. তাওবা (অনুতাপ জনিত ক্ষমা প্রার্থনা)
সুফির আচরণ বা কর্ম সংক্রান্ত ত্রুটিসমূহ তওবার মাধ্যমে ক্ষমাযোগ্য। মূলত তওবাই মানুষকে ক্ষমার আওতায় নিয়ে আসে। কোনো একটি ত্রুটি সংঘটিত হওয়ার পর সে ত্রুটি দ্বিতীয়বার আর সংঘটিত না হওয়াটাই প্রকৃত তওবা, একজন সালিক যেখানে নিজেকে উত্তমরূপে সংশোধিত করে। পূর্বকৃত অন্যায় যখন মানব মনে তীব্র অনুশোচনা জাগ্রত করে, তখনি মানুষ তওবার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করে। তাই একজন ধার্মিকের জিবনে তওবা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
৬. সালাত (প্রভুর দীদার জনিত তন্ময়তা)
শায়খ আলী হুজাইরি (দাতা গঞ্জ বখশ রা.) বলেন, সালাত শুধু ভক্তকে আল্লাহর পথে পরিচালিতই করে না, বরং এই পথের সকল গোপন রহস্য অনুরাগী ভক্তের কাছে উন্মুক্ত করে দেয়।”
ওযু প্রক্রিয়ায় শুদ্ধির পর কেবলা নির্ণয়পূর্বক প্রভুর প্রতি একাগ্র ধ্যান-নিবিষ্টতাই সালাত। ভক্তের অর্ন্তনিহিত বিশ্বাস-ভক্তি ও মারিফাত তথা প্রভু পরিচয় জ্ঞান-ই হলো সালাতের পূর্বশর্ত। চার আকছামে আহমদি চেহারার ধ্যানে সালাত আদায় যার স্ব স্ব তাৎপর্য রয়েছে। নফসকে রুজু করা এবং জিকির তথা প্রভুর অবিরাম স্বরণ ও প্রভুর রূপ আস্বাদনের এক রুহানী ধ্যানাবস্থা হলো সালাত। আলমে নাসুত তথা দেহজগতে থেকে আলমে হাকিকি বা আলমে আরওয়াহ বা রুহ জগতের পরম সত্ত্বার দীদার ও দীদার জনিত তন্ময়তা হাছিল না হলে সালাত আদায় হয় না।
৭. যাকাত ( প্রবৃত্তির বৈষম্যমুক্তকরণ)
আপনত্বকে বৈষম্য মুক্ত করার জন্য সত্ত্বা হতে কিছু সম্পদ বিয়োজন করতে হয় যা ধর্মজগতে যাকাত নামে পরিচিত। তাওয়াক্কল নির্ভর জিবন যাপনের জন্য যাকাত এক অনিবার্য বিধান যার মাধ্যমে একটি ভক্ত নিখাদ ভক্ত হয়ে ওঠে। জন্ম প্রক্রিয়ায় এ জগতে স্থিত হয়ে আমরা স্বাভাবিক ভাবে কিছু জাগতিক প্রবৃত্তির অনুবর্ত্তী হয়ে পড়ি। যে প্রবৃত্তি গুলো আমাদেরকে তিলে তিলে প্রভু থেকে বিচ্যূত করতে থাকে। সচেতন চিত্তবৃত্তিতে যদি আপনত্ব থেকে সেসব ক্ষতিকর প্রবৃত্তিগুলো চিহ্নিত করে করে বিয়োজন করা সম্ভব হয়, তবেই অন্তর হবে পরিশুদ্ধ ও নির্মল। অভ্যন্তরকে পরিশুদ্ধ করার এক সুন্দরতম প্রক্রিয়া হলো যাকাত।
৮. সিয়াম (উপবাস)
মানুষের আকাঙ্খা একটি পাগলা ঘোড়ার মতোই লাগামহীন যা নিয়ত অস্থির এবং অশান্ত। নিজের নফস তথা আকাঙ্খা বা জাগতিক তৃষ্ণা কে নিবৃত্ত করা তাই মানুষের জন্য খুবই কঠিন একটি কাজ, যেটি নিয়ন্ত্রণ করার আগ পর্যন্ত মানুষ তার পশু প্রবৃত্তিতেই আবদ্ধ থাকে। যদি সম্ভব হয় সেই চির-অশান্ত চিত্তবৃত্তির মুখে লাগাম পড়ানো, তাহলেই হৃদয়ে জ্বলে ওঠে ঐশ্বরিক জ্যোতি এবং মানুষটি হয়ে ওঠে প্রভুময়। নফসকে লাগাম পড়ানোর কাজটিই মূলত সিয়াম যা সালেককে প্রভুপ্রাপ্তির দূর্গম পথে সাহায্য করে। তাই আমরা মহান ওলী-আউলিয়াগণকে দেখে থাকি তারা নফসকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠিন কৃচ্ছসাধনার পথ অবলম্বন করতে।
৯. হজ্ব (তীর্থদর্শন)
প্রভু আপন ইচ্ছাশক্তিতে আপন কুদ্রত বলে নিজেকে গুপ্ত ধনাগার হতে প্রকাশ করার জন্য সমগ্র সৃষ্টিকে সৃজন করেছেন। সমগ্র সৃষ্টির ভেতর মানুষ একমাত্র সৃষ্টি যার ভেতর স্রষ্টার সকল ফিতরাত পূর্ণতর রূপে প্রকাশিত হয়েছে এবং স্রষ্টা স্বয়ং আসন অধিগ্রহণ করেছেন এই মানবের অভ্যন্তরে। তাই মানুষকে বলা হয় স্রষ্টার প্রকাশক। স্রষ্টা কোনো জাগতিক স্থানে আবদ্ধ নয়। তিনি মূলত মানুষের হৃদয় জুড়ে বাস করেন। তাই একটা মানুষ হলো প্রকৃত তীর্থ-কাবা, যেখানে খুঁজলে প্রভুর দেখা বা দীদার সম্ভব। যতক্ষণ মানুষ তার সত্ত্বাস্থিত প্রভুর সন্ধান লাভ করতে ব্যর্থ হবে, ততক্ষণ সত্য তার অধরাই থেকে যাবে এবং তার সকল ধর্মকর্ম ও তীর্থ যাত্রা হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। মানবতীর্থের মানমন্দিরে সে নিরন্তর মহিমার বাস। তাই প্রভুকে খুঁজতে হবে মানুষের মাঝে, পরিশুদ্ধ হৃদয়ে।
১০. মুশাহাদা (খোদায়ী নূরের সম্মুখবর্তী হওয়া)
মুশাহাদা মূলত একজন ভক্তের জন্য এমন একটি অবস্থা, যখন আত্মিক ভ্রমনে একজন ভক্ত প্রভুর মুখোমুখি উপনীত হয় এবং তার আর প্রভুর মাঝে অগাধ ভক্তি-বিশ্বাস-প্রেম ব্যতিত আর কিছু থাকে না, ভক্তটি তখন চারদিকে তাকালে নিখাদ প্রেম ব্যতিত আর কিছু দেখতে পায় না। প্রভুর নূরের দরিয়ার আদিগন্ত বিস্তৃত প্রেমময় এক ঐশী খেয়ালে নিজেকে ডুবিয়ে রাখাই হলো মুশাহাদা। প্রভুর নূরের ধ্যান ভক্তকে এক অসীম আনন্দে অবগাহন করায়।
শেখ শিবলী (রা) বলেন, “আমি যা কিছু দেখেছি সবকিছুতেই আমি প্রভুর নূরকে অসংখ্য রঙ ও আকারে দেখতে পেয়েছি।”
১১. আদব-ই-সালিক (সালিকের শিষ্টাচার)
ধর্মজগতে একজন প্রভুপ্রত্যাশীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আদব বা ধর্মীয় শিষ্টাচার। আদব একজন প্রভুপ্রেমিকের ভূষণ যা তাকে অন্য সাধারণদের থেকে পৃথক করে তোলে। আদব দ্বারাই একজন সালিকের অসামান্য জিবনবোধ নির্ণিত হয়। সালিক বা সত্য পথের পথিকদের এগারোটি আদব উল্লেখ করা হলো।
1 – প্রভুর আদেশ ও রাসুল (সা) এর বিধানাবলীকে দৃঢ়ভাবে মেনে চলতে হবে।
2 – একজন সালেককে অবশ্যই সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও প্রেমময় সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
3 – একজন সালেককে সর্বদাই সুফিদের সঙ্গ পেতে ব্যাকুল থাকতে হবে।
4 – আগত সকলকেই সমান আন্তরিকতা ও সম্মানের সাথে স্বাগত জানাতে হবে।
5 – অবশ্যই প্রভুর সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ ও জ্ঞান অন্বেষণের জন্য সফর করতে হবে।
6 – সৎ রিজিক অন্বেষণ করতে হবে এবং আহারে আড়ম্বর প্রত্যাহার করতে হবে।
7 – ধনী, রাজকীয় ব্যক্তি, ক্ষমতাধরদের এড়িয়ে চলতে হবে।
8 – অহংকার পরিত্যাগ পূর্বক নম্রতায় আচরণকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।
9 – ঘুম কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ভক্তিসঙ্গে প্রভুধ্যানে সময় কাটাতে হবে।
10 – নীরবতা কে অবলম্বন করতে হবে। নীরবে আত্মিক উন্নতির প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে হবে।
11 – দুনিয়াবিমুখিতাই হলো একজন সত্যার্থীর সবচেয়ে বড় অলংকার।
নফসের খাছিয়ত তথা বস্তুবাদের লাগাহীন মোহময়তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আপন অন্তররাজ্যে প্রভুর খাসমহল সাজানোর নামই ধর্ম। আমাদেরকে সে কাজটিই করতে হয় অনুরাগ সাধনা তথা প্রভুপ্রেমের অপরিমেয় শক্তিতে। নিত্যের সাধনায় ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকে আমাদের চিরপরিচিত বস্তবাদের কালো ছায়া, অপসারিত হয় চোখের পর্দা, তখনি প্রভুর খাস নূরের ঝর্ণাধারায় সিক্ত হই আমরা। উন্মোচিত হয় আমাদের বদ্ধ হৃদয়ের দুয়ার। তখনি আমরা অনুভব করতে পারি, “আমরা প্রভুর থেকে আলাদা নই।”
প্রভুময়তা অর্জনের নামই ধর্ম। প্রভু আমাদের কবুল করুন। আমীন।
রচনাকাল – 10/10/2020
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর পত্রিকা
তথ্য সহায়তা – চিশতী আদেশ