অনুবাদ ও সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী
1. সোহনী ও মাহীওয়াল
নকশী কাঁথার মাঠে কবি জসিমউদ্দিন একটি রাখালী গান উল্লেখ করেছেন।
গানের কথাগুলো এমন –
“বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে ক্ষীর নদী,
উইড়া যাওয়ার সাধ ছিল, পাঙ্খা দেয় নাই বিধি।”
রুপক সাহিত্যের ঠিক এমন একটি আশ্চর্য উদাহরণ হলো সোহনী ও মাহীওয়াল। যেখানে, দুজন প্রেমিক প্রেমিকা ও তাদের মিলনের অন্তরায় নদী কে উপজীব্য করে আধ্যাত্মিক মিলন তথা গুরু-ভক্তের মিলন কে বোঝানো হয়েছে। গল্পটি এমন –
সোহনী ও মাহীওয়াল কে প্রেমের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদেরকে পৃথক করে দেয়া হয়েছিল আর তাদের মধ্যে কেটে দেয়া হয়েছিল “চেনাব” নামক নদী! যে নদীটি তাদের মিলনের পথে নিষ্ঠুর বাঁধা হয়ে দাড়িয়ে ছিল।
সোহনী তার প্রেমাস্পদের সাথে মিলনের জন্য একটি মাটির পাত্র নির্মাণ করে নেয় এবং সে পাত্রে করে সে নদীটি পার হয়ে মাহিওয়ালের কাছে যেতে চায়। কিন্তু স্রোতস্বিনী নদীতে কিছুদূর যেয়ে তার মাটির পাত্র যায় ভেঙ্গে, আর ভয়ংকর উত্তাল নদীর বুকে হয় তার সলিল সমাধী।
পাঞ্জাবের সুফি সাহিত্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে থাকা সোহনী ও মাহিওয়াল আধ্যাত্মিক প্রেম পথে আশেক-মাশুক বা প্রেমিক-প্রেমাস্পদের প্রতীক! আর এই আশেক মাশুকের মিলনের অন্তরায় হিসেবে মাঝে রয়েছে দুনিয়া নামক নদী! যে নদী বড় ভয়ংকর! উত্তাল!
সে নদী পার হতে প্রয়োজন একটি নৌকা! উপযুক্ত একটি নৌকা! যে নৌকা আশেককে মাশুক স্বানিধ্যে পৌঁছে দিবে। মহাত্না লালনের ভাষায় রূপ কাঠের নৌকা। অর্থাৎ একজন ইনছানে কামিল বা পথ প্রদর্শক তথা গুরু-মুর্শিদ।
যদি গুরু হয় ভন্ড বা অযোগ্য, তাহলে নদীতে ডুবে মরা বৈ গত্যান্ত্যর নেই।
সোহনী মৃত্যুমুহুর্তে ভাঙ্গা মাটির পাত্রটিকে ডেকে ডেকে বলছে, “তুমি আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলে?”
ভাঙ্গা মাটির পাত্রটির উত্তর –
“ম্যায় গড়হা, মেন খুর জানা
মেইনুন হাত না লওয়াইন –
ফার পালরা পাক্কে মুর্শিদ দা
জেরহা তেনোঁ পর লাঙ্গাওয়ে”
অর্থ – আমিতো মাটির পাত্র, ভঙ্গুর! আমাকে ধরে নদী পার হতে পারবে না, পার হতে চাইলে একজন খাঁটি মুর্শিদ ধরো (রূপ কাঠের নাও), তাহলেই উত্তাল নদী পার হতে পারবে।
2. সানায়ীর সাম্রাজ্য
ধ্রুপদী সুফি সাহিত্যের এক বিস্ময়কর স্রষ্টা, ভাবোন্মত্ত সুফি আউলিয়া হাকিম সানায়ী গজনভী (রহ)। ভাবাবেশে লিখলেন,
“O you who have heard about Rum and about China, Rise and come to behold the empire of Sanaa” – যারা রোম এবং চীন সাম্রাজ্যের কথা শুনেছো, তারা এসো, সানায়ীর সাম্রাজ্য দেখে যাও।
কাসিদাটি পাঠ করে রোমের রাজপুত্র কৌতুহলী চিত্তে রওয়ানা হলেন গজনীর উদ্দেশ্যে। সানায়ীর সাম্রাজ্য দেখার জন্য!
হাকীম সানায়ী! দরিদ্রক্লিষ্ট সানায়ী চটের পোশাক পরণে একটি সমাধীমন্দিরের পাশে ধ্যানস্থ! দরবেশি জিবনযাপনে নেই কোনো আড়ম্বর! শূণ্য ভগ্ন গৃহ-কুটির! রাজপূত্র প্রবেশ করলেন সানায়ীর সাম্রাজ্যে!
আমাকে তোমার সাম্রাজ্য দেখাও, রাজপুত্র বললেন। সানায়ী শর্ত দিলেন, আমার সাম্রাজ্য দেখতে হলে তোমাকেও আমার মতো পোশাক পরিধান করতে হবে! সম্মত হলেন রাজপুত্র। আপন অলংকার, দামী পোশাক পরিত্যাগ করে গায়ে জড়ালেন দরবেশি গুদরী! চটের পোষাক!
দরবেশি পোশাক গায়ে জড়ানো মাত্রই যেনো খোদায়ী নূরের এক বিদ্যুৎ-প্রবাহ খেলে গেলো রাজপুত্রের অন্তর-বাহিরে! হৃদয়ে জেগে উঠলো এক ঐশী অনুভবের তূরীয় আনন্দের স্রোতধারা! সানায়ীর ভগ্ন গৃহ কুটিরকে মনে হতে লাগলো জগতের সবচেয়ে মূল্যবান দেবালয়, প্রেমের কনক-দেউল! রেখে আসা রাজত্ব তার কাছে পরিণত হলো ঘৃণ্য এক আস্তাকুড়েতে!!
বিমোহিত রাজপূত্র হাকিম সানায়ীর চরণযুগলে চিরকালের জন্য সমর্পিত হলেন। দীক্ষা নিলেন দরবেশীতে! পরিণত হলেন এক জিবন্মুক্ত মহাপুরুষে!
বললেন,
“শুধু রোম আর চীন নয়, সানায়ীর সাম্রাজ্য সমগ্র জগতের চেয়ে বেশি মূল্যবান, সুন্দর”
3. ঈশ্বরতো দেখেন কেবল হৃদয়!
সেই রাখালটির কথা আমরা সবাই জানি, যে মরুভূমিতে তার ঈশ্বরকে আরাধনা করছিল। ভক্তি বিগলিত চিত্তে সে ঈশ্বরকে ডেকে ডেকে বলছিল –
প্রভুগো! কোথায় আছো তুমি? আমাকে তোমার দাসানুদাস হিসেবে স্বীকার করবে কি? আমি তোমার সেবা করবো প্রভু! আমি আমার জিবন ও সকল পশুপাল তোমায় দিয়ে দিবো। তুমি অসুস্থ হলে তোমার সেবা করবো। তোমার চুল আচড়ে দিবো সুন্দর করে। জুতা সেলাই করে দিবো, তোমার ছোট ছোট নরম হাত পা মালিশ করে দিবো, তোমার ঘর ঝাড়ু দিয়ে দিবো। কোথায় তুমি প্রভু? তোমার জন্য আমি আমার সকল কুরবানি করবো! আমার সকল দীর্ঘশ্বাস আর কান্না যে তোমারি জন্য প্রভু!
রাখালটির জলন্ত হৃদয়ের অগ্নি-প্রার্থনাটিও মুসা (আ) এর কাছে মনে হয়েছিল নিতান্তই অপরাধ, অপমানমূলক! মুসা (আ) এর তিরষ্কারে রাখালটি ভয়ার্ত হরিণীর মতো ছুটে পালিয়েছিল! ভীত-চকিত মনে সে ত্যাগ করেছিল তার হৃদয়-ক্ষরা আকুল প্রার্থনা!
সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাদিষ্ট হন হযরত মুসা (আ)। বলা হয়, “রাখালটির প্রার্থনাই মূলত প্রভূর হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছেছিল! প্রভুতো শুনে থাকেন ছলনাবিহীন হৃদয়ের সকল কথাই”
4. আমিই আমার একমাত্র বিভ্রম!
কে আপনাকে ঈশ্বরের দিকে পথ প্রদর্শন করেছেন? হযরত আবু বকর শিবলী (রহ.) কে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন ‘একটি কুকুর!’
প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছিল কুকুরটির! জলাশয়ে পানি পান করতে যেয়ে জলে নিজের চেহারার প্রতিফলন দেখে সে ভেবেছিল, এটি অন্য একটি কুকুর এবং প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল। এতোটাই ভীত ছিল সে, পানি পান করতেই পারছিল না।
কিন্তু যখন কুকুরটির তৃষ্ণা চরমে পৌঁছালো, তখন সে ভয়কে অতিক্রম করে পানিতে ঝাঁপিয়ে পরলো, এবং দেখলো অন্য কুকুরটিও অদৃশ্য হয়ে গেছে।
হযরত আবু বকর শিবলী (রহ.) বলেন, আমি নিশ্চিতভাবে শিখলাম, “আমিই আমার বিভ্রম, যে বিভ্রম আমাকে বঞ্চিত করে রাখে”। শক্তিমত্তার সাথে আপন বিভ্রমকে অতিক্রম করতে হবে আমাদের। অলীক নফসানিয়াত তথা বিভ্রম কে জয় করতে হবে। তবেই লাভ করতে পারবো ইনছানিয়াতের আব-হায়াত!!
5. প্রভুর সামর্থ্য
হযরত আবু আলী শাকিক আল বলখী (রহ), যিনি শাকিক বলখী নামেই পরিচিত, তিনি জগদ্বিদিত আউলিয়া ইব্রাহীম বিন আদহামের ভক্ত ছিলেন। তাঁর জিবনের একটি ঘটনা –
হযরত শাকিক বলখী একবার বলখ থেকে ব্যাবসার উদ্দেশ্যে তুর্কিস্থানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি হঠাৎ দেখতে পেলেন, একজন মূর্তিপূজক তার আরাধ্য মূর্তির সম্মুখে রোদন করছিল। আরাধনা করছিল। শাকিক বলখী ভাবলেন, লোকটা বিপথগামী। লোকটিকে তিনি বললেন, “তুমি পাথরের পূজা কেনো করছো, আমাদের উচিত সর্বশক্তিমান আর সর্বসমর্থ জিবন্ত প্রভুর উপাসনা করা!
লোকটা তাকালেন শাকিক বলখীর দিকে। বিরক্তির সাথে বললেন, কেমন সর্বশক্তিমান তোমার প্রভু? যিনি তোমার শহরে তোমার জীবিকার ব্যাবস্থা করতে ব্যার্থ? তোমাকে জীবিকার তাগিদে এতোদূরে আসতে হলো?
ঘটনাটি দাগ কাটলো শাকিক বলখীর হৃদয়ে। এবং সে থেকেই শাকিক বলখী প্রাণিত হলেন অন্তর্মূখী ঈশ্বরের সন্ধানে।
শিক্ষা –
অন্তরে জাগ্রত না হলে সর্বসমর্থ প্রভুও অসমর্থ,
অন্তরে জাগ্রত হলে অসমর্থ মূর্তিও সর্বসমর্থ!
6. দাসের কৃতজ্ঞতা বোধ
প্রাচীনকালে এক ধনী ব্যবসায়ী একজন ক্রিতদাস রেখেছিলেন। ক্রিতদাসটিও ছিল তার প্রভুর প্রতি একনিষ্ঠ অনুগত যে পূর্ণ সততা, আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছিল। ব্যবসায়ী লোকটিও তার দাসের প্রতি এতোটা নির্ভর হয়ে পরেছিলেন যে, এমনকি তিনি যখন খাবার খাবেন, শুরুতে সে খাবার তিনি দাসকে দিতেন। ক্রিতদাস খাবারের স্বাদ নিয়ে যদি খুশি হতো, তারপর সে খাবার তিনি নিজে খেতেন।
একদিন এক খামারী ব্যবসায়ী লোকটির জন্য একটি তরমুজ উপহার নিয়ে আসেন এবং তরমুজটি কেটে তাকে খেতে দেন। অভ্যাস মতো ব্যবসায়ী লোকটি প্রথমেই তরমুজের এক টুকরো তার দাসকে খেতে দেন।
দাসটি তরমুজের টুকরো এতোটা শান্তি ও আনন্দের সাথে খেলো, মনে হলো যে, তরমুজটি অনেক সুস্বাদু এবং ক্রিতদাসের অনেক ভালো লেগেছে। ব্যবসায়ী লোকটি দাসটিকে আরো এক টুকরা খেতে দেন। আরো একটা টুকরা দেন। এভাবে দিতে দিতে দেখা গেলো আর মাত্র একটি টুকরা অবশিষ্ট আছে!
ব্যবসায়ী এবার শেষ টুকরা টা নিজে মুখে দেন। মুখে দিয়েই চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায় তার! বিষের মতো তিক্ত ছিল তরমুজটি এবং ব্যবসায়ী লোকটির মুখ দীর্ঘক্ষণ তিক্ততায় ভরে থাকে! বিষের মতো তিক্ত তরমুজ টি একদমই খাওয়ার অনুপযুক্ত ছিল।
অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লোকটি দাসকে প্রশ্ন করেন, কিভাবে খেলে তুমি? তাও এতোটা আনন্দের সাথে?
আমার প্রভু! উত্তর দেয় দাসটি – সারাজিবন আমাকে কত সুস্বাদু খাবার খাইয়েছেন! আজ প্রথমবার যখন কটু খাবার নিজ হাতে দিলেন, আমি অভিযোগ করতে লজ্জা পাচ্ছিলাম! প্রভু, আমার সকল অস্তিত্ব তো আপনারি দান, সেখানে একটিমাত্র তিক্ত অনুগ্রহকে আমি কি করে অস্বীকার করি?
শিক্ষা – আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ।
7. মূর্খের সঙ্গ
পারস্যের উত্তরাঞ্চলে বাস করত বাদামী রঙের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কিছু ভাল্লুক। এই ভাল্লুকদের প্রধান শত্রু ছিল আরেক ভয়ঙ্কর প্রাণী, যারা ভাল্লুকগুলোকে মেরে ফেলতো। স্থানীয়রা এই প্রাণীটিকে ড্রাগন বলতো।
একবার এক লোক এই অঞ্চলে তাঁবু ফেলেছিলেন। হঠাৎ তিনি বিকট চিৎকারের শব্দ শুনে জঙ্গলের সীমানায় যেয়ে দেখতে পান যে, ড্রাগন একটি ভাল্লুককে আক্রমণ করেছে। ভাল্লুকটি ড্রাগনের আক্রমণে পর্যুদস্ত। লোকটি তৎক্ষণাৎ তার সাথে থাকা রিভলভার দিয়ে ড্রাগনের মাথায় গুলি করেন। মস্তিষ্কে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় ড্রাগনটি।
তারপর লোকটি খেয়াল করেন, ভাল্লুকটি তার দিকে আসছে। কিছুটা ভয় পেলেও তিনি দেখতে চান ভাল্লুকটি কি করে! লোকটিকে হতবাক করে দিয়ে ভাল্লুকটি তার পায়ে নিকট মাথা নামিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
লোকটি তাঁবুর দিকে রওনা হলে ভাল্লুকটিও তাকে অনুসরন করে। সারারাত বসে থাকে লোকটির তাবুর পাশে। পরেরদিনও ভাল্লুকটি চলে যায় না। ভাল্লুকের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে লোকটির।
ভাল্লুকের সাথেই বাস করতে থাকেন লোকটি। ভাল্লুকটিও ধীরে ধীরে পূর্ণ বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। এভাবেই চলতে থাকে দিন।
লোকটির আত্মীয়গণ শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাকে নিষেধ করেন ভাল্লুকের সাথে থাকতে। কিন্তু ভাল্লুকের ব্যাপারে পূর্ণ বিশ্বাস ধরে রেখেছিল লোকটি। তিনি ভাল্লুকের সাথেই দিন যাপন করতে থাকেন।
একদিন লোকটি ভাল্লুকটিকে সাথে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে অতিরিক্ত গরমে ক্লান্ত হয়ে একটা বটগাছের তলে বসে পড়েন। বটের ছায়ায় শীতল বাতাসে দুচোখের পাতা নেমে আসে লোকটির। ভাল্লুকটিকে পাশে বসিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন লোকটি।
এতদিনের প্রশিক্ষিত ভাল্লুকটি পরম মমতায় লোকটির পাশে বসে থাকে। সময় গড়িয়ে যায়। হঠাৎ কোত্থেকে একটি মাছি এসে লোকটির মুখে বসে। ভাল্লুক অত্যন্ত যত্নে মাছিটি তাড়াতে চায়। মাছিটিও নাছোড়বান্দা! আবার এসে মুখে বসে। বারবার এমন চলতে থাকে। ভাল্লুকটিও মরিয়া হয়ে ওঠে মাছিটি তাড়াবার জন্য!
কোনোভাবেই মাছিটিকে তাড়াতে পারে না ভাল্লুকটি! বারবার এসে মুখে বসে। শেষমেষ মাছিটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ভাল্লুকটি। যোগাড় করে আনে একটি বড়সড় পাথর! মাছিটি যখন লোকটির কপালে বসে, অমনি মাছিটির ওপর পাথরের তীব্র আঘাত হানে লোকটি। থেতলে যায় মাছিটি, সাথে মাথাটিও।
শিক্ষা – উদ্দেশ্য যদিও ভালো, তবু মূর্খের সঙ্গ বিপদজনক!
8. মূলত আবদ্ধ কে? মানুষ নাকি গরু?
তাপসগুরু হযরত জুনায়েদ বাগদাদী শিষ্য-সমভিব্যাহারে শহরের রাস্তায় হাটছেন। একটি গরু নিয়ে আরেক লোক চলছেন তাদের পাশ দিয়ে। গরুর গলার দড়ি ধরে হেটে চলেছেন লোকটি। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী শিষ্যদেরকে প্রশ্ন করলেন, বলোতো এখানে কে আবদ্ধ?
শিষ্যগণ জবাব দিলো, গরুটি আবদ্ধ এবং লোকটিকে অনুসরণ করছে।
“এখন দেখো”, বললো জুনায়েদ বাগদাদী এবং কাচি বের করে দড়িটি কেটে দিলো। দৌড়ে চললো গরু এবং গরুর মালিক লোকটি দৌড়াতে লাগলো গরুর পেছন পেছন!
বলে চললো জুনায়েদ বাগদাদী – যা কিছু তুমি তোমার মনে করছো, কিছুই তোমার নয়। মূলত বন্ধনে আটকে আছো তুমি! জগতের বস্তুনিচয় ততক্ষণ তোমার, যতক্ষণ তুমি বেঁধে রাখবে। তুমি না বাঁধলে সবি তোমার থেকে পালাবে!
ঠিক গরুটির মতো!
9.পরার্থপরতা – আরাধনার উর্ধ্বে যা
তিনজন দরবেশ শহরের উপকন্ঠে একটি পরিত্যক্ত গৃহে উপাসনায় নিমগ্ন। কিন্তু চতুর্থ দরবেশ উপাসনায় লিপ্ত না হয়ে ঘরটির ভাঙা দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। সারারাত! যতক্ষন না দরবেশত্রয়ের উপাসনা সমাপ্ত হলো!
কেনো তিনি এমন করলেন? উত্তরে চতুর্থ দরবেশ বললেন, ঘরটির দরজা ভাঙ্গা এবং বাইরে প্রচন্ড শীত, সাথে শৈত্যপ্রবাহ! দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলাম যাতে দরবেশদের শীতে কষ্ট না হয়।
উক্ত দরবেশ ছিলেন মহান ওলী হযরত খাজা ইব্রাহীম বিন আদহাম (রহ.)
10. সেবা ও উপাসনা
দুই ভাই মনস্থির করলেন তারা ধর্মে নিবেদিত হবেন। একভাই লিপ্ত হলেন স্রষ্টার উপাসনায়, আর এক ভাই লিপ্ত হলেন তার অসুস্থ মায়ের সেবায়। কিছুদিন পর, স্রষ্টার উপাসনায় লিপ্ত ভাইটি স্বপ্ন দেখলো, তার মাতৃসেবক ভাইটি সিদ্ধকাম হয়েছেন।
অদৃশ্য বাণীতে বলা হলো, “তুমি ছিলে অভাবশূণ্য সত্ত্বার সেবক, আর তোমার ভাই সেবা করেছে প্রকৃত অভাবীর!
অনুবাদ ও সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী