প্রবন্ধ – মহাত্মা লালন স্বরণোৎসব – দুটি কথা

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

“লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজা জানান, পবিত্র মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে এবারের লালন স্বরণোৎসব-২০২৪ শুধু একদিন আলোচনার মধ্যে (বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত) সীমাবদ্ধ থাকবে।”
উল্লেখ্য, প্রতিবছর দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ার ৩ দিন ব্যাপী লালন স্বরণোৎসব উদযাপিত হয়। সেখানে দোল পূর্ণিমার সন্ধ্যার অধিবাসে রাখালসেবা, পরদিন সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবা সহ পুরো পূর্ণিমা তিথিজুড়ে অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে মানবধর্মের জয়গান গাওয়া হয়।

এবার মূল বিষয়ে আসি, এবার রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় লালন স্বরণোৎসবের প্রায় সকল আনুষ্ঠানিকতাই বন্ধ রাখা হয়েছে। যা এটাই প্রমাণ করে, লালন স্বরণোৎসব অপবিত্র। যা উদযাপিত হলে রমজানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হবে! আরো প্রমাণিত যে, লালন উৎসব ধর্ম-বহির্ভূত, যা রমজান মাসে করলে অধর্ম হবে। ৩ দিনের বিচিত্র এবং মরমী-অনুষ্ঠানমালাকে বাদ দিয়ে এক বেলার আলোচনায় লালন উৎসবকে সীমাবদ্ধ করে আয়োজকগণ বিশেষ করে সভাপতি মহাশয় ধর্ম উদ্ধার করেছেন!

বাংলাদেশ এমনিতেই ধর্মগ্রস্ত দেশ। এদেশের মানুষ ধর্ম-মহামারিতে আক্রান্ত। ধর্ম না বুঝে ধর্ম-ফলানো বা ধর্ম-চেঁচানোতে আমরা অভ্যস্ত। ধর্মরোগ আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, আমরা প্রকৃত ধর্ম বেমালুম ভূলে বাঁদরনাচ নাচতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছি। আর একটি বড় সমস্যা হলো, ধর্মজ্ঞানশূণ্য লোকেরা ধর্মীয় নেতৃত্ব লাভ করছে। ফলে ধর্মীয় খানকা বা আখড়া গুলোও দিন দিন স্থবির হয়ে পড়ছে, সেখানেও ঘনিয়ে আসছে বিজাতীয় ওহাবী সালাফি অক্ষরবাদী অধর্মের কালোছায়া।

জনাব এহতেশাম রেজা সহ আয়োজকবৃন্দের ধর্মীয় জ্ঞানশূণ্যতা এমন যে, তারা লালন উৎসবকে রমজানের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলেন! লালন দেশনাকে তারা ধর্ম-বহির্ভূত করে দিলেন! যেখানে লালন স্বয়ং ধর্ম-প্রচারক রসুল, সেখানে রোজা হয়ে উঠলো লালন অনুষ্ঠানের প্রতিবন্ধক! লালন উৎসবে তো ধর্ম প্রচারই হতো! রসুল লালন, রসুল মুহাম্মদ (স) এর মতোই বাংলার মানুষকে মানবধর্ম শিখিয়েছেন। লালন উৎসবে সেই শাশ্বত ইসলাম বা মানববাদেরই চর্চা হতো! উৎসবজুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হতো দ্বীনে মোহাম্মদীর আহ্বান, “আয় গো যাই নবীর দ্বীনে”…

দেশকাল সংস্কৃতি ভেদে লালন ঐশীবাণী যথাযথই বাঙালী চেতনায় জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে ধর্ম-বোধ, যা আমাদের মন মননের সাথে পুরো সামঞ্জস্যপূর্ণ ও বোধ-সাপেক্ষ। আর আমরা লালন কে পৃথক করে আচারসর্বস্ব ধর্ম পালনের দোহাই দিয়ে কূপমন্ডুকের মতো অস্বীকার করে চলেছি ধর্মের চিরন্তন সত্যকে। যা দিন দিন আমাদেরকে এজিদি-ওহাবী মতবাদের ভাগাড়ে নিক্ষেপ করে চলেছে।

তাছাড়া, রমজান কখনো রাষ্ট্রীয় বাধ্যতামূলক কর্ম নয়। নাগরিক দৃষ্টিতে রমজান পালন করা বা না করা, দুটোই একান্ত নাগরিক স্বাধীনতা, এখানে রাষ্ট্রীয় বা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কোনোপ্রকার বলপ্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই।

আমার যতটুকু ধর্মীয় জানাশোনা, রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য কোনো জিহাদীকে প্রভু মোড়লগিরি করতেও বলেননি। সকল ধর্মের সার যে সত্য, “মানুষ ভজে মানুষ হওয়া”, সে সত্য প্রকাশের উৎসব কখনো কোনোকিছুর চেয়ে কম গুরুত্ব রাখেনা।

“সকল মরমী আয়োজন বন্ধ রেখে শুধু ১ বেলার আলোচনায় লালন উৎসবকে সীমায়িত করায় প্রকৃত ধর্মচেতনা ক্ষুন্ন হয়েছে, আয়োজকদের লালন মাহাত্ম্য বা লালন ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানহীনতা ও জাতিগত হীনমন্যতা প্রকাশ পেয়েছে, যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা প্রয়োজন”।

রচনাকাল – 14/06/2024
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – সুফি ভাবনার কাগজ “আপন খবর”
চেয়ারম্যান – আপন ফাউন্ডেশন

আপন খবর