লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
আমরা এসেছি স্রষ্টার নিকট হতে, আবার আমরা স্রষ্টার নিকট-ই ফিরে যাবো।
এই স্রষ্টার নিকট থেকে আসা এবং তাঁর নিকট ফিরে যাওয়াকে সুফি পরিভাষায় বলে নজুলিয়াত এবং ওরুজিয়াত । (ওরুজ-নজুল / আরোহন-অবরোহন)।
দুর্নিবার প্রেমের আকর্ষণে প্রভু যেমন নজুল হয়েছেন মানবীয় অজুদে, মানুষকেও তেমন প্রভুপ্রেমে আকুল হয়ে ওরুজ করতে হয় প্রভুর সন্নিধানে।
অস্তিত্বের ন্যূনতম অবস্থান থেকে অনুরাগ সাধনার বলে যারা ধীরে ধীরে উন্নীত হয় প্রভুর দীদারে, তারাই প্রভুময় হয়ে চিরকালীন জান্নাতে তথা মাকামে মাহমুদায় স্থিত হয়।
মানুষের আত্মিক ক্রমবিবর্তনের পাঠ মূলত স্বভাবের উত্তোরোত্তর উন্নতির পাঠ। যেখানে একজন মানুষ জড় স্বভাব থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে নিজেকে প্রভু স্বভাবে স্বভাবিত করে তোলে। তখনই সে প্রভু সত্ত্বায় একাত্মতা বোধ করে এবং নিজেকে ফানা বা ফানাউল বাকার মহিমাময় মর্তবার মধ্যে দেখতে পায়।
জড় স্বভাব থেকে প্রভু স্বভাবে উত্তরণের জন্য আমাদের পাঁচটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। (জামাদাত, নাবাদাত, হায়ানাত, ইনছানিয়াত, রহমানিয়াত)। এখানেই মূলত পঞ্চরুহ তথা রুহের পঞ্চস্তর বিভাজনের মাহাত্ম্য লুক্বায়িত।
মানবের এই মহান উর্ধারোহণ তথা প্রভু স্বানিধ্যে গমণের প্রক্রিয়াটি দারুণ ভাবে উপস্থাপন করেছেন মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী (রহ)। তিনি বলছেন –
আমরা খনিজ (জামাদাত) অবস্থায় মারা যাই
অতঃপর উদ্ভিদ (নাবাদাত) হয়ে জন্মাই।
উদ্ভিজ্জ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে প্রাণীকূলে (হায়ানাত) উঠি।
প্রাণী অবস্থায় মরে মানুষ (ইনছান) হই।
কিসের ভয় আমার! মানব প্রকৃতি হতে বিদায় নিয়ে
জন্ম হবে ফেরেশতাকূলে। যেখানে –
নূরান্বিত চেহারা নিয়ে – ডানা মেলে দিব আকাশে।
বরং তার চেয়ে উচ্চে! আবার উর্ধ্বগামী হব আমি।
এমন এক মাকামে, যা অকল্পনীয়!
অস্তিত্বকে মিটিয়ে দিব শাশ্বত অস্তিত্বে! (রহমানিয়াত)
যে মহান সত্ত্বা আমাদের মোহিত করে রাখেন –
সত্যই – তাঁর কাছেই আমাদের প্রত্যবর্তন।
রচনাকাল – 28/05/2024
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর পত্রিকা
চেয়ারম্যান – আপন ফাউন্ডেশন