প্রবন্ধ – আমরা মরিয়া আনন্দে থাকি

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

১.
সুফিদের জন্য সময় কখনোই অনুকূল নয়। জাগতিকতামুক্ত সুফিদেরকে চিরকালই জাগতিকতায় আচ্ছন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তরফ থেকে সহ্য করতে হয়েছে অত্যাচার, নির্যাতন। সুফির সূদুর রহস্যাবৃত ধর্মালাপ কখনোই রাষ্ট্রযন্ত্র বা জনগন, কেউই হৃদয়াঙ্গম করতে সক্ষম হয়নি। বরং পাহাড়সম অপবাদ, ফতোয়া বা অত্যাচারের ইতিহাস রচিত হয়েছে সুফিদের ওপর। তবু সুফি অটল থেকেছে তার স্বকীয় আত্মোৎকর্ষের সীমাহীন আনন্দ-ভূবনে। যাক বয়ে হাজার নির্যাতনের তুফান, সুফি থাকে তূরীয় আনন্দের তুঙ্গে।

২.
সুফি চির নিরপেক্ষ সত্ত্বা। ঐশী মহাশক্তির নযুলিয়াতের ফলে সুফির অস্তিত্ব হয়ে ওঠে পাহাড়সম নির্বিকার, ঐশী চেতনাদীপ্ত। জাগতিকতা সুফির কাছে হয়ে ওঠে তুচ্ছাতিতুচ্ছ। বিত্ত, বৈভব, ক্ষমতা বা জাগতিকতাকে ‍ঘৃণাভরে ছুড়ে ফেলে দেয় সুফি। চটের কম্বল বা শুকনা রুটির নেওয়াজে সে চরম তৃপ্ত। কিছু না হওয়ার তথা আত্ম-অস্বীকারের চূড়ান্ত মাকামে সে অবস্থান করে নির্লিপ্ত সত্য সহকারে।

৩.
সুফির দেশ কোনো ভৌগোলিক দেশ নয়। সুফির দেশ তার আপন দেহভূমি। সে দেশে সে রাজেশ্বর রাজা। রাষ্ট্র কাঠামো তথা জন-তন্ত্র থেকে দূরে সুফি তার স্ব-দেহে মগ্ন। সুফি আপন আত্মদেশে বিহার করে নিয়ত স্বর্গীয় ‍সুষুষ্মায় অবগাহন করে। যেখানে কোনো রাষ্ট্র নাই, দেশ নাই, কোলাহল নাই, জনগন নাই। আছে কেবল অপার শান্তি, অপরিসীম স্নিগ্ধতা। আপনত্বে ঈশ্বরত্বের অনভিব্যক্ত অনুভূতি। ঐশী রূপ দর্শনের অনন্ত মুগ্ধতা।

৪.
দল, মত, রাষ্ট্র বা ধর্ম এর কোনোটার অনুবর্তী কেউ সুফি নয়। সে সুযোগসন্ধানী বা স্বার্থান্বেষী। সুফি স্বয়ং স্ব-দেশের স্বয়ম্ভূ। জাগতিকতার প্রতি বিন্দুমাত্র আকর্ষিত বা কোনো প্রকার শক্তির প্রভাবে অনুমাত্র উদ্বেলিত যে সত্ত্বা, সে সত্ত্বা সুফির নয়। সুফি ঈশ্বরে উদ্বাহু এবং জগতে উদ্ধত। প্রেমে নবনিত কমল ও স্বার্থে বজ্রদম্ভোলি। সুফির বাসর রচিত হয় ফাঁসিকাষ্ঠে, চ্ছিন্নমস্তকের শোণিতকণিকায় জপিত হয় অস্তি নাস্তির হরণ পূরণ। ‍সাফার অনন্ত শুভ্রতা সুফিকে বেষ্টন করে রাখে সর্বদায়।

৫.
সুফি কোনো সংকীর্ণ মতবাদ নয়। প্রভুর প্রভুত্ব প্রকাশের মাধ্যম সুফি। দলবাজ, কমিটিবাজ, ইজমবাজ, রাষ্ট্রবাজ, পক্ষ-বিপক্ষ-সাপেক্ষবাজ, ধর্মবাজ, গোষ্ঠীবাজ তথা যে কোনো বাজ-বিভক্ত সুফিরা সঠিক সুফি আদর্শে বিশ্বাসী হোন, সুফি নীতিতে অটল হওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করুন। সকল প্রকার জাগতিকতার মোহমুক্ত হয়ে একমাত্র পরম-পদে প্রণত হোন। আপন সত্যে নিষ্ঠাবান হোন, আপন ঐশ্বরত্বকে মূল্য দিতে শিখুন। সকল প্রকার স্থুল-সুক্ষ গোলামী অচিরেই পরিহার করুন। না হলে সুফি পোষাক অঙ্গে রাখার যোগ্যতা হারাবেন আপনি।

সুফিরা মরণ-দরজায় আব হায়াত সঞ্জীবনী পান করে সুফি হয়। ফের মৃত্যুকে কেন ভয় সুফির? মনে রাখবেন, সুফির মাহাত্ম্যকে ধারণ করার মতো দেশ নাই, সংস্কৃতি নাই। আপন সত্যকে সমুন্নত রাখার জন্য জিবন দেয়াই সুফির নীতি। উন্নত মস্তকে স্বীয় সত্য বলতে বলতে দেহত্যাগ করাই সুফির নীতি। কিসের ভয় সুফির? সুফি চির আনন্দের সারথী, সুফি চির জিবনের প্রতীক, সুফি চির প্রেমময় সত্ত্বা।

সুফি জীবিত হয় মৃত্যুর পরেই।

লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর পত্রিকা
28|08|2024

আপন খবর