লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
শিখায়া দে তুই আমারে, কেমন করে তোরে ডাকি;
কি নামে ডাকিলে তারে হৃদ আকাশে উদয় হবে;
জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি;
প্রভুকে ডাকার এমন আকুলতা আশেক হৃদয়কে প্রতিনিয়ত উদ্বেলিত করে। কখনো ডাক শিখিয়ে দেয়ার আহ্বান, কখনো ডাকতে না পারার অভিমান, কখনো প্রভুর প্রকৃত নামটি জানতে চাওয়ার সুতীব্র বাসনা অনুরাগীর অন্তরকে অস্থির করে তোলে। কারণ, ভক্ত হৃদয় ভালো করেই জানে, সে নাম জেনে নিলেই নামের নামীকে লাভ করা যায়। নাম লাভ হলেই লাভ হয় রূপ, নাম ও রূপ যেন অঙ্গাঙ্গী বিজড়িত। এ যেন, “নামেরও সহিত রূপও, ধিয়ানে রাখিয়া জপো”।
প্রকৃত অর্থেই প্রভু নামের ভেতরেই নিহিত রেখেছেন তার সকল আসরার বা রহস্য, রহস্যজ্ঞান তিনি প্রদান করেছেন প্রথম মাখজানে আসরার হযরত আদম আলাইহিস সালামকে। নিজেই বলছেন –
وَ عَلَّمَ اٰدَمَ الۡاَسۡمَآءَ کُلَّہَا
অর্থ: আর আল্লাহ আদমকে সব নাম শিখিয়েছেন। (আল-বাকারা 31)
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে মানবীয় পরম্পরার সেই নামের জ্ঞান তথা নাম-রূপের জ্ঞান তথা আদী রহস্যজ্ঞান স্থানান্তরিত হয়েছে সিনা-ব-সিনায়। আজো সাধকচিত্ত সে নামের নবুয়তি পর্দা উন্মোচণ করে প্রত্যক্ষ করে বেলায়েতি রূপমাহাত্ম্য।
মূলত এই নামরূপের জ্ঞানটাই মানবীয় বিশেষত্ব যা মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টি থেকে পৃথক করে। মানুষকে নিয়ত স্বর্গীয় সুষুস্মায় সমুজ্জল করে। নামের নূরানী চ্ছটায় আলোকিত-উচ্চকিত সিংহাসনেই অধিষ্ঠিত হন পরম সত্ত্বা প্রভূ জাতপাক। প্রভূকে জানা-চেনার জন্য তাই আবশ্যক প্রভুর নাম-জ্ঞান অর্জন করা যা মানুষকে প্রদান করা হয়েছে সৃষ্টির প্রারম্ভেই এবং মানব অস্তিত্বের ইবলিশীয় উৎপ্রেক্ষায় মানুষ আজ সে নাম-জ্ঞান বিস্মৃত! বিস্মৃতির অতল থেকে সে নাম-রূপ-জ্ঞান পুনরুদ্ধারেই মানবীয় সাধনার সফলতা। এখানেই মূলত নাম শেখার বা প্রভুর আসল নাম জানার সাধক-চিত্তে অনন্ত আকুলতার মাহাত্ম্য নিহিত।
প্রভূর ইসমে জাত বা জাতী নাম বা ব্যক্তিনাম তথা চেহারা/রূপ সম্বলিত নাম দর্শনেই আশেকের চক্ষুযুগল শীতল হয়। তাইতো, সে নাম শেখার, জানার এতো আকুলতা, এতো অনুরাগ! সে নাম দর্শনেই আমাদের হৃদ আকাশ হয় আলোকিত, আমরা হয়ে উঠি যথার্থই সে নামের হেফাজতকারী।
আশেকী হৃদয় সে নামে ফানা হোক, ফানা হোক নাম-রূপের আদি রহস্যের অতল তলে।
লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর
চেয়ারম্যান – আপন ফাউন্ডেশন
রচনাকাল – 19/11/2024