লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
বিশাল এ সৃষ্টিজগতের একমাত্র নিয়ন্ত্রক, সকল সৃষ্টি-ব্যাপি বিরাজিত একমাত্র পবিত্র সত্ত্বা, সকল জীবের একমাত্র জীবন, সকল জীবনে অবস্থিত একমাত্র পবিত্র সত্ত্বা, মহান রব- রুহ আকারে সকল প্রানে অবস্থান করে সৃষ্টিকে বিলিয়ে দিচ্ছেন অমিয় প্রেমসুধা। যে প্রেমের ধারাতে নেই কোনো অসুন্দর, কুৎসিত বা দ্বিত্ববাদের নাম গন্ধটুকুও।
পঞ্চ উপাদানে গঠিত এই মানব দেহ সৃষ্টিতে একত্বে সংলীন যা আহাদ-স্বরুপ। আহাদ সত্ত্বা বা একক সত্ত্বা বা অদ্বৈত সত্ত্বার একক লীলাভূমি এ বিশ্ব-ভ্রমান্ড। যেখানে একত্ববাদ ব্যতিত দ্বৈত-সত্ত্বার কোনো অবস্থান নেই। লা-শরিক বা লা ইলাহার অনন্ত নাস্তির মাঝে অবস্থিত একক ইসবাত বা অস্তিত্ববান অবস্থা হল আহাদ তত্ব। আহাদ তত্বের অভেদ জ্ঞানে সমস্ত কিছু এক। সকল সৃষ্টি এক সুতায় গাঁথা। অনন্তরুপে সমগ্র চরাচর ব্যাপী মনোমোহিনী একই বীণার সুর। যেখানে অনন্ত সৌন্দর্য্য ব্যতিত নেই অসুন্দর এক কোনো কাপ্লনিক রেখাও।
শিরক বা অংশীবাদ বা খন্ডবাদ এর একমাত্র অবস্থিতি হল নফসানিয়াত সম্বলিত মানব সত্ত্বা। মানব- যেই নফসানিয়াতকে গঠন করে নেয় তার অতীত অভিজ্ঞান বা ইনছানিয়াত ব্যতিত অস্তিত্বশীল অন্যান্য সৃষ্টি হতে। যার অজ্ঞানতার প্রাবল্যে সৃষ্টি হয় মতবৈষম্য, বিভেদ বা দ্বিমত। খন্ডিত ধারনা বা অজ্ঞানতার বা অন্ধত্বের অভিশাপে অনন্ত সুরময় নিত্য মানবকে ভোগ করতে হয় বিষয়-জ্বালা তথা দোযখ।
দোযখ থেকে উত্তরনের জন্য প্রতিটি মানবকে নফসানিয়াতের উর্দ্ধে উঠে জানতে হয় একত্বের পরিচয়, স্থিতি লাভ করতে সে মহিমান্বিত একত্বে। ফলশ্রুতিতে তিনি পরিনত হন ইনছানুল কামেলে এবং অবস্থান করেন লা-মউতে। লাভ করেন দিব্য-জ্ঞান।
দিব্য-জ্ঞান লাভের একমাত্র উপায় হলো আত্মশুদ্ধি অর্জন। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর স্বভাব মানব সত্ত্বায় বিকশিত করা। আহাদ-তত্ত্বের অভেদ জ্ঞানে লীন হওয়া।
মহান রব বলছেন – (ফাআক্বিম ওয়াজহাক্বা লিদ্দিনি হানিফা, ফিতরাতাল্লাহিল্লাতি ফাতরান্নাসা আলাইহা, লা তাবদিলা লি খালকিল্লাহি, জালিক্বাদ দ্বিনুল কাইয়্যিম, ওয়ালাকিন্না আকছারান্নাছি লা ইয়ালামুন) অর্থাৎ – তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত করো, আল্লাহর ফেতরাতের অনুসরন করো, যে ফেতরাতে আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো পরিবর্তন নেই, ঐটাই স্বরণীয় দ্বীন – কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানেনা। (সুরা রুম-৩০)
“মহান স্রষ্টার স্বভাব মানব সত্ত্বায় ধারন করাকেই আরবীতে ইসলাম বলে।”
ইসলাম তথা স্রষ্টার স্বভাবে স্বভাবিত হওয়ার যে তরিকা তা প্রচার করার জন্যই যুগে যুগে দেশে দেশে অবতরণ করেছেন মহান সকল ধর্মপ্রচারকগণ। তারা মানুষকে জাতি গোত্রের বিভেদ বৈষম্যের বেড়াজাল এর উর্দ্ধে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে মানুষকে একত্বের শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে দেখিয়েছেন বাস্তব মুক্তির পথনির্দেশিকা।
ধরাধামে সকলের মাঝে তথা সুন্দরের মাঝে কোনো সংশয় না থাকলেও মানব অস্বিত্বে বিরাজিত অংশীবাদের ধোঁয়া যা মানুষকে টেনে নিয়ে যায় অন্ধত্বের দিকে বা পশুত্বের দিকে। এই শয়তানি গুনশক্তিগুলো মানুষকে স্রষ্টার গুনে গুণান্বিত হতে দেয় না। মানব অস্বিত্বে বিরাজিত মহান রব বারবার সংশয়-আবৃত মানবকে ডেকে বলছেন, তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও, স্রষ্টার রঙে রঞ্জিত হও, রবের স্বভাব ধারণ করো। তা সত্বেও মানব সত্ত্বা কু-রিপু বা বদ স্বভাবে স্বভাবান্বিত হয়ে বিস্বরণ হয়ে আছে সেই ডাক।
মুক্তির তথা চিরশান্তির জন্য আমাদের আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে দাখিল হতে হবে ইসলামে তথা একত্বে বা চির শান্তির দেশে। অনুসরণ করতে হবে মহামানবদের। বাস্তবতায় অবস্থিত খারাপ সমুহের ত্যাগে এবং ইনছানিয়াতের অনুসরণেই আসবে আমাদের কাঙ্খিত মুক্তি।
যুগে যুগে দেশে দেশে কালে কালে প্রতিটি জনপদে আবির্ভূত মহা-মনীষীগণ বা অলি আউলিয়াগণের পূত-পবিত্র জীবনাচারণে বারবার জগতে প্রতিধ্বনিত হয়েছে সে ডাক। জীবাত্মার গুণ খাছিয়তে আবৃত রূপধারী মানুষদের বিরোধিতায় কখনো কখনো প্রচন্ড অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে তাদের। তারপরও তারা আমাদের মতো পতিত মানব জাতির জন্য রেখে গেছেন মুক্তির অমিয় সুধা। যা অনুসরণেই আসতে পারে আমাদের কাঙ্খিত সফলতা।
মহামানবদের অনুসরণে জগতের প্রতিটি পলে পলে সেই মুক্তির ডাক, অন্ধত্ব থেকে আলোয় উত্তরণের ডাক, পশুত্ব থেকে ইনছানিয়াতে উত্তরণের ডাক, কবর থেকে আলোকিত পরকালে উত্তরণের ডাক, আপনত্বে বিরাজিত মহত্ত্বের মহান অমিয় বার্তা, দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে যুগপৎ কাজ করছেন মহান সকল আউলিয়া কেরামগণ।
তাদের পূতঃপবিত্র জীবনাচার এর জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হোক আমাদের প্রতিটি জীবন এবং আমরা সর্বান্তকরণে যেনো ধারণ করতে পারি তাদের আদর্শ – এটাই হোক আমাদের একান্ত চাওয়া।
মানবাত্মার মানবধর্ম কায়েম হোক।
রচনাকাল – 17/02/2015
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী