লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
ইহা এক উন্মত্ততা।
ইহা মহাকালের বুকে ভাসিয়া আসা মানবের আদি হৃদয়-উৎসের গভীরতম সংগীত।
চেতনার গভীরের বিজন-কুঠরীতে আজিও অবিরাম বাজে সেই মনোহারিনী তান। সপ্তসুরে মহান প্রভু আজিও মানবের দ্বারে-দ্বারে পৌঁছিয়া দেন সেই অনাদী কালের আহ্বান- হে ঘুমন্ত ব্যার্থ, ওঠো, জাগো। নারায়ণ আজি ক্ষীরোদ সাগরের কালনিদ্রা ত্যাজিয়া তোমার মানব-দুয়ারে কড়া নাড়িতেছে- হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! ওঠো, জাগো। ঐ শোনো মহাভারতের মহারণতীর্থে মহাকালের বুক চিড়িয়া ভাসিয়া আসিতেছে পাঞ্চজণ্য শঙ্খধ্বনী। হে মূঢ়, হে অজ্ঞান, আজ সময় অধর্ম নাশের, আসো চেতনার, মহাপ্রেমের মহামিলন সমুদ্র মাঝে। করো ধর্ম সংস্থাপন, কালের পদধ্বনীরে বাধো আপনার আশ্রয় রূপ বন্ধনে।
অচেতনতার মায়ামোহন বাহু শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানব!
তব কর্ণকুহ্বর কি আজো শুনিতে পায় না ঈসরাফিলের প্রলয়ধ্বনি? দেব চক্রপানি আজ তোমারই সারথি। তোমায় লইয়াই তাহার অনন্ত মহাযাত্রা। দেখো হে ঘুমন্ত, স্বয়ং আযাযিল আজ স্ববেশে, সে এক সৌম্য মূর্তি, কল্পনাতিত এক আনন্দ উজ্জীবণ সূধায় আবাহন করিয়া আসিয়াছে তোমারে জাগাইয়া তুলিতে। তোমার তরে তাহার প্রেমাঞ্জলী সমর্পন করিতে। বেখেয়ালের এক অন্ধকূপ হইতে আঘাতের পর আঘাত হানিয়া, তব হাতে-পায়ে বাধা জিঞ্জির শৃঙ্খলে হাতুড়ি হানিয়া, খেয়াল তথা চেতনার আর্শীতে অবলোকন করাইতে তোমার ঐশী রূপ। আজো কি রহিবে অন্ধ? জন্ম তব মৃত্যু মাঝে, ধ্বংস মাঝে, আজো কি রাখিবে পথবিহীন সংশয়তায় বদ্ধ করিয়া?
মৃত্যুর দুয়াড়ে তব জীবনের আহ্বান লইয়া আসিয়াছে মহান দিকবিহীন সেই অনন্ত সত্ত্বা, তোমার যৌবন-কুঞ্জ-কিশলয়ে। বাসুমতি চাহিয়া রহিয়াছে তোমার টলটলায়মান চরণযুগল পানে। বীণাপানির স্তববৃষ্টি অবিরাম বর্ষিত হইতেছে তোমার নাঙা শিরে। জিবরাইল আজ তাহার অপরূপ নূরময় ডানাসমূহ মেলিয়া নৃত্ত করিতে করিতে আগাইয়া আসিতেছে তোমার পানে, তোমায় পথ দেখাইয়া লইয়া যাইবে বলিয়া। তেত্রিশ কোটি দেবতা সকল আজি ধ্যানমগ্ন তোমারই তরে। তবুও কি মুখ ফিরাইয়া রইবে হে পাষাণ? উঠিয়া আসো ঐ ধর্ম মাতাল, জীবন মাতালদের আড্ডা হইতে। উঠিয়া আসো ঐ নোংরা পঁচা-শব ভাগাড় পায়ে দলিয়া, শশ্মানের মৃত্যু আহ্বান পেরিয়ে উঠিয়া আসো হে মুক্ত আকাশের পাখি।
শোনো আজি নবযুগ বাণী
বদ্ধ-অন্ধ অতীতের পঁচা শব,
ছাড়ো আজি পুরাতন, শকুন-স্বপন
মৃত্যুকূপে গলিত লাশের, বর্বর উৎসব!
মৃত্যু স্বপনে নীল-নেশায় আক্রান্ত হে মানব!
আজ তারার বহ্নিস্রোতে দুর্বার গতি। জীবন সমুদ্রের পাড়ে চেতনার হিমালয়ে আজ নবযুগের বিশাল পক্ষধ্বনি। দুহাতে আঁখি ঢাকিয়া কেনো ইচ্ছা অন্ধ হইয়া পাষাণ বিবেকে দিতেছো সূধা মহন্তের হৃদয় ক্ষরা আর্শীবাদ বিসর্জন?
জীবন সিন্ধু মন্থন করিয়া আজ অঞ্জলী ভরিয়া নাও মহাপ্রেমের অমৃত। জীবন দুয়ারে আজ স্বাগত জানাও জাগরণকে। ওঠো কালনিদ্রা ত্যাজিয়া। আপনারে লয়ে সকল দ্বিধা, সকল অনিশ্চয়তায় খন্ডিত সংশয়ের হউক অবসান। জাগিয়া উঠুক নব নির্মাণ। মুক্ত কন্ঠে আজি গাও ভাঙ্গার গান। সে তানে সুউচ্চ মানবের মহামিলন তীর্থে প্রতিষ্ঠিত হউক আত্মশক্তি, আত্মচেতনার, মহাপ্রেমের গননস্পর্শী গম্বুজ। রবির রক্ত উজ্জল রাঙা আভায় আলোকিত হইয়া হাসিয়া উঠুক তোমার করুণাধন্য এই জগৎ।
নব-কন্ঠে নব-মঞ্চে দাঁড়ায়ে
মৃত্যু-ভাগাড় দু’পায়ে মাড়ায়ে,
মুক্তপথে মুক্ত-মতের গাও জয়গান,
ঐ শোনো আজ, নবরুপ জ্যোতি
চির নতুনের ধরিয়াছে তান-
মুক্ত করো প্রান, সকলি গাও, চির নতুনের গান!
হে চির শিশু, তোমার উন্মাদ কোলাহলে প্রান পা’ক মরার দল। আশীর্বাদরূপে আবির্ভূত হও ধরণীর, বুকে বাধিয়া মহামানবের মহামিলন সূধা, আত্মাকে বিলাইয়া দিয়া বৃহৎ সুন্দরে, তুমিও হও সুন্দরের এক জ্যোতির্চ্ছটা, স্বয়ং ভগবানের অবতার। অনন্ত সৌন্দর্যকে করো বক্ষে ধারন, অখন্ড অনাদী রাঙা চরনযুগলকে করো আপনার আপন। তবেই জগতের সমস্ত অনস্তিত্ব বা খারাপ সমূহ ভেদী হাসিয়া উঠবে তোমার মুক্ত সুন্দর প্রান। তোমার হাসির মোহন রূপে উন্মাদ ধরণী রহিবে হাজার বছর দীপ্তিমাণ।
তোমার কন্ঠে ফুটিয়া উঠুক বিশ্ব-নিখিলের অপূর্ব মহিমাময় সুর-
খুলেছে আজি দক্ষিণা দুয়ার
ছিল যেথা লু-হাওয়া সাইমুম ঝড়-
হতাশার নরকাগ্নি, অসহায় মৃত্যুর প্রহর,
ছাঁপিয়েছে কূল-
নব-দিগন্তে আশা-ভালোবাসার সরোবরে
সুগন্ধময়, হাসিতেছে উৎপল!
জাগিতেছে আজ শত-সরোবরে নিত্য-নন্দন শতদল।
বীণা-সুরে আজ ভাসিতেছে বাণী, ভোরের পাখি জাগো
জাগো আজি জাগো, আপনার প্রাণে
আপনি আজিকে জাগো!
চির-শিশু, অশান্ত হিয়া উন্মাদ কোলাহলে
শান্তির বাণী ব্যাপ্ত হোক- চরাচরে, ব্রমান্ডলে
তোমার ছোঁয়ায় খুলে যাক সকল, বদ্ধ ব্যাথিত প্রাণ
জগৎ মাঝারে উচ্চ রবে গাহো, চির-শান্তির জয়গান।
রচনাকাল – 19/02/2015
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী