আপন খবর দ্বিতীয় সংখ্যার সম্পাদকীয় প্রবন্ধ
‘আপন খবর’ অর্থাৎ আপন পরিচয়, আপন ভেদ, আপন রহস্য, আত্মসন্ধান, আপনাকে জানা, আত্মপরিচয় তথা নিজেকে জানা। ‘আপন খবর’ জানার তথা আত্মপরিচয় লাভের মধ্যেই নিহিত স্রষ্টার পরিচয়। তাই দেখা গেছে যে, সকল ধর্মের একমাত্র উপদেশটি হলো ‘আপন খবর’ জানা তথা নিজেকে চেনা। পৃথিবীর সকল ঐশী মহামানবের মূল শিক্ষাটি তথা একমাত্র ধর্মদর্শনটি হচ্ছে – আপন পরিচয় জ্ঞান লাভ করা। কেননা, আপন ভেদ জানতে পারলেই খোদার ভেদ জানা হয়ে যাবে; নিজেকে চিনতে পারলেই আল্লাহকে চেনা হয়ে যাবে। তাই সকল ধর্মের মূল শিক্ষা শুধু একটি; আর তা হচ্ছে ‘নিজেকে চেনা’ তথা ‘আপন খবর’ জানা। এ ছাড়া আর কোনো ধর্মদর্শন নেই।
এই আপন খবরের গুপ্তভেদ প্রকাশে মহাত্মা বৌদ্ধ ঘোষণা করেন, “তুমি তোমার আত্মাকে জানো”। আত্মপরিচয় জানার গুরুত্বকে তুলে ধরতে গিয়ে অবতার পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আর সহজ ভাষায় প্রকাশ করলেন, “তুমি তোমার ব্রহ্মাকে (ঈশ্বর)কে নিজের মধ্যেই খুঁজে পাবে”।আপন খবর এর ইঙ্গিত দিতে গিয়ে যীশু খৃস্ট ব্যাক্ত করলেন “স্বর্গরাজ্য তোমার ভেতরে”। ইসলাম তথা মোহাম্মদী ধর্মের সার শিক্ষাও ছিল তাই, যা মহানবী (সা) এর বাণীতে দেখা যায়, “মান আরাফা নাফসুহু, ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু” অর্থাৎ যে নিজেকে চিনেছে সে তার আল্লাহকে চিনেছে। নিজের মধ্যে স্রষ্টাকে না খুঁজে তথা আপন খবর না জেনে দূরে কোথাও, অনুমানে, আসমানে খোদাকে সাব্যস্ত করে মানব জাতিকে নিঃস্ব কাঙ্গাল বানিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু নিকটের আল্লাহকে মানুষ থেকে দূরে সরিয়ে সপ্ত আকাশে রাখতে পারলেই যে ধর্মব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুবিধা! আপন খবর কে কৌশলে চেপে রেখে মানুষকে অন্ধ বিশ্বাসে, কল্পনার জগতে (হুর-পরী), ধর্মান্ধতার শিকলে বেঁধে রাখতে পারলেই ধর্মডাকাতদের লাভ। প্রকৃতপক্ষে, নিজেকে চেনার মাধ্যমে স্রষ্টার পরিচয়জ্ঞান লাভ করাই হচ্ছে ইসলামের একমাত্র বিধান, যা যোগী, ঋষি, সুফি, দরবেশগণের জীবনে পরিলক্ষিত হয় এবং সকল ধর্ম তথা মরমীবাদের একমাত্র নির্দেশনা ও সুফিদর্শনের মূল শিক্ষাও এটাই।
শ্বাশত মুক্তির আকাঙ্খায় সমর্পিত মানুষেরাই প্রবল সাধনাবলে চেতনার ধ্যানাকাশে লাভ করতে সক্ষম হয় মুর্শিদ তথা গুরূরূপের আলোকময় অনির্বাণ শিখা। গুরু প্রদত্ত আলোকময় করুণাধারায় সিক্ত হয়ে, শুদ্ধ হয়ে, পতিত মানুষ পায় কাঙ্খিত মুক্তির সন্ধান। নিজেকে চেনা ও জানার বাসনায় মানুষগুরুকে নিষ্ঠা করেই চলে তার ভজন সাধনের সার্বিক আয়োজন। আদম কাবায় সেজদাবনত হলেই মানুষ খুঁজে পায় সেরাতুল মুস্তাকিম।
সেরাতুল মুস্তাকিম এর এ চিরন্তন ধারায় ভক্তি, বিশ্বাস আর প্রেম শিকলে গুরুকে শক্ত বাধনে বাধতে পারলেই ধন্য হয় মানুষ জীবন। অনুরাগ সাধনার বলে গুরুপ্রেমে সর্বত্যাগী হলেই মানুষ হয় আত্মজয়ী। আত্মজয়ী মানুষেরাই নিত্যলোকের চির বাসিন্দা হয়ে করে অমরত্বের আস্বাদন। সেই অমরত্বের সন্ধানে “আপন খবর” তার অভিযাত্রা অব্যাহত রাখবে আপনাদের সহযোগিতা পেলে। পরিশেষে এখনও যারা গুরুপ্রেমের করুণাধারায় সিক্ত হতে পারেনি তাদের উদ্দেশ্যে বলি-
“মরতে যদি পারো রে মন
মরার আগে –
ও তোর আপন খোদার মিলবে দীদার
মুর্শিদ প্রেমের অনুরাগে”
হযরত খাজা হিমেল শাহ আল চিশতী নিজামী
মহান মুর্শিদ কেবলা
এশকে মাওলা চিশতীয়া দরবার শরীফ, কলতা, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ