পত্রিকা – রুহ ও নফস – পর্ব ০১

লেখক – ফকীর আতিকুর রহমান চিশতী

ধর্মে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ “রুহ” ও “নফস”। “রুহ” শব্দটি নিয়ে শরীয়তের মোল্লা, কাজী, মুফতি ও পুস্তক বিদ্যার লোকেরা হৈ চৈ করে না। বিষয়টি সুফীবাদ এর মৌলিক পটভূমি । এখান হতেই ঈমানের বিভিন্ন স্তর ও আধ্যাত্মবাদের যত আলোচনা । উলুহিয়াত-রবুবিয়াত-আবুদিয়াত তিনটি ভরে তৌহিদী ভেদতত্ত্ব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মিল অমিল এখানেই। আত্মদর্শন, তত্ত্বদর্শন নিয়ে এখানে দাড়িয়ে কত বড় বড় লেখালেখি দেখতে পাই ৷

যাহোক, ‘রুহ’ শব্দটির কোন নির্দিষ্ট অনুবাদ হয় না, “নূর” শব্দের মতই মৌলিক শব্দ এটি । কুরআন বলে আল্লাহ্‌ আসমান যমীনের নূর, অথচ নূর শব্দের অর্থ যত্রতত্র দেখি আলো। তাহলে আল্লাহ আলোতে আছেন অন্ধকারে নাই! আল্লাহর সত্ত্বার জন্য এমন কথা বেমানান । জুলমাত (অজ্ঞতা, অন্ধকার) অপসারনে নূর শব্দটিকে আলো বা চেতনা অনুবাদ করা হয় মাত্র। বরং নূর শব্দটিকে নূর হিসেবে রাখাই যুক্তিযুক্ত। তা আলো অন্ধকারের উৎপত্তিকারক ৷ “নূর” আর “রুহ” শব্দদ্বয়ের যোগসুত্রও গভীর । এ দুটি এক থেকে অন্যে আলাদা নয়। সাধক কঠিন রিয়াজত ধ্যান সাধনা করেই নূরানী অজুদে (জ্যোতির্দেহে) রুহের পরিচিতি পান। রুহের সাধারণ অর্থ করা হয়েছে- “আত্মা”। বর্তমান কালে আরবী অনুবাদে একে সজীব মূলনীতি, প্রাণ, জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস, সার বা নির্যাস, অনুপ্রেরণা ইত্যাদি অর্থে দেখতে পাই।

লক্ষ্য করছি সুফীদের মধ্যে কেউ কেউ ইদানিংকালে দাপটের সাথে লেখছেন, যে- “যারা রুহকে জামাদি (খনিজ জগত), নাবাতি (বৃক্ষ জগত), হায়ানি (পশু জগত), ইনসানি (মনুষ্য জগত) ও কুদসি বা রহমানি (পরম জগত) এ ভাগ করেন, তারা সুফীবাদের কিছুই বুঝেন না” ৷ এ ভাগটি কি বর্তমান কালের কোন সূফীর করা? ‘জগৎবরেণ্য আত্মার বিজ্ঞানীরা এর পরিচিতি তুলে ধরেছেন মাত্র। মহাশুণ্যে ‘বিচরণশীল বিহঙ্গ, উদ্ভিদ, প্রাণী প্রতিটি জাতিই মানুষের মত এক একটি গোত্রভুক্ত, তা ধর্মবিধান বলে দিয়েছে। আজগুবি কথা বলে যাচ্ছেন তারা, সারা বিশ্বে নাকি শুধু নফসের ছড়াছড়ি, এখানে রুহ নাই! অথচ কুরআন বলে- এমন কোন নফস নাই যার উপর একজন সংরক্ষক (হেফাজতকারী) না আছে” [৮৬:৪] ৷ মোদ্দাকথা রুহের শক্তি ছাড়া কোন নিস্তি অস্তিতে আসতে পারে না, কোন দেহ ক্রিয়াশীল হতে পারে না। এক কোষী প্রাণী এ্যামিবা থেকে শুরু করে উন্নত মস্তিষ্কের সর্বত্রই এ রুহের কর্মশক্তির ফলাফল দেখি।

তবে বিশেষ কথাটি হলো জিন আর ইনসান ব্যাতিত অন্যন্য জীবের মস্তিস্ক আত্মপরিচিতি পেতে সক্ষম নয়। জীবজগতকে অনন্ত তৌহিদী ব্যাবস্থাপনায় চলতে হয়, ব্যাক্তি স্বাধীনতা নাই বললেই চলে, তাই তারা সেজদারত আছে। জীবদেহের উপযোগীতার উপর ভিত্তি করে বিশেষ রুহের কর্তৃত্ব রয়েছে। দৃশ্যমান মানুষে জামাদি, নাবাতি, হায়ানি, ইনসানী ও কুদসি পাঁচটি স্তরে রুহের কর্তৃত্ব দেখা যায়। মানুষ পশুর চেয়ে হতবুদ্ধি/খারাপ আচরণ দেখাতে পারে, আবার একটি কুকুর গায়ব (গোপন) অস্ত্র উদ্ধারের জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে উঠছে, তা একটু বুদ্ধি খরচ করলেই বুঝা যায়। আসহাবে কাহাফের কুকুর জান্নাতে যাওয়ার অর্থ কি?

প্রতিটি জীবের চেতনা শক্তির মূলাধার হলো রুহ। রুহ্‌ মূলত পরোয়ার দেগারের নির্দেশ (আমর), পরমের অখন্ড পরিচিতি । কোন কোন জীব অস্তিত্বে আসবে “কুন বল” সৃষ্টির আদিতেই সেখানে আমানত রাখা হয়েছে। রবের নির্দেশ পাওয়া মাত্রই কুন বল ক্রিয়াশীল হয়ে কর্মশক্তির মাধ্যমে নফস ও দেহের সংযোগে একটি জীবের উদ্ভব। বাজে আলেম আর ভন্ড পীরের দাপটে ইসলামী চিরন্তন ব্যবস্থাপনা আধুনিক বিজ্ঞানে গ্রহণযোগ্য হতে পারছে না। অথচ  বিজ্ঞান প্রাণতত্ত্বের সুক্ষ স্তর জেনেটিক বিদ্যার যে অহংকার করছে তা কুরআন গবেষকদের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

মন, দেহ, কুলব, রূহ, নফস প্রত্যেকে ক্রিয়াশীল হতে একে অপরের উপর নির্ভরশীল ৷ মনের চিকিৎসক মনোবিজ্ঞানীরা এ মনের পরিচিতি কি পাচ্ছেন? মনের জন্যই উন্নত মস্তিষ্কের জীব মানুষ, এ মনেই মিজান (নিক্তি) স্থাপন করা হয়েছে। বাম পাল্লার নিক্তিটি গায়রুল্লাহ, দুনিল্লাহ্‌ হতে অজস্র ছবি অংকন করে স্মৃতিতে জমা করছে যা পরকালে একটি দুর্ভাগ্যের কিতাব। ডান পাল্লার নিক্তিটি আত্মপরিচিতি অর্জন করতে একজন গুরুকে গ্রহণ করছে ও জান্নাতের দরজা পার হয়ে অগ্রবর্তীগণের দলে যুক্ত হচ্ছে। রুহুল কুদসির ক্রিয়াকলাপে ঈসা আ. কে আমরা মাটির পাখিতে জীবন সঞ্চার করতে, কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য করতে দেখি। পঁচা, ঠনঠনে কাদাগুলোকে মৈথুন করে গুরু সাঈদান তাইবা বা শুদ্ধ মাটিতে পরিণত করে তাতে রুহ ফুৎকার করে প্রাণ সঞ্চার করেন।

ভব কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত ও চক্ষুহীনদেরকে গুরু আরোগ্যদান করছেন। রুহ দিয়ে প্রাণ সঞ্চার করার মানে তার সুপ্ত রুহকে জাগ্রত করে তোলেন। এখানে গুরু বলতে “আমরা” পরিচয়দানকারী (হিযবুল্লাহ) আল্লাহর দলের সদস্য। সৃষ্টিতে জৈৰ পদার্থে রুহের পরিচিতি সহজ হলেও অজৈব পদার্থে তা জটিল ৷ অথচ জৈব ও অজৈৰ পদার্থের মৌলিক কণাগুলো অভিন্ন, শুধুমাত্র গাঠনিক পার্থক্য ব্যতীত নয়। রুহ দ্বারা সাধারণ অর্থে জীব জগতে প্রাণ সঞ্চার করা হয়।

সৃষ্টিতে কোন জীবে রুহের পরিচিতি পাবার ব্যবস্থা রাখা হয় নাই জিন আর ইনসান ব্যতীত ৷ আমরা কুরআনে প্রাণশক্তি মতবাদে রুহ দ্বারা প্রাণ সঞ্চার, রুহ ফুঁৎকার করা, নিক্ষেপ করা, রুহুল আমিন (বিশ্বস্ত রুহ), রুহুল কুদসি (পবিত্র রুহ), রুহের শক্তিতে রুহ্‌ ফুঁৎকার ইত্যাদি দেখতে পাই । হাজারো গাছগাছালী, তৃণ লতাগুল্ম এ শক্তির অভাবে কাঠ, খড়কুটো, আবর্জনায় পরিণত হয়। এ প্রাণ, সত্ত্বা, সজীব মূলনীতির অভাবে দেহটি লাশ হয়ে পড়ে থাকে ও পঁচে যায়। দেহটি নিস্পাপ- প্রকৃতিতে বিক্ষিপ্ত হয়, রুহ আল্লাহর সাতটি সিফাত কার্যকর করে পরকালে একটি কিতাবের দিকে নিয়ে যায়, তাহলে মরছে কে?

নফস হিব্রু “নেফেস” (NEFESH) শব্দের সমার্থক । প্রবৃত্তি, আত্মানুভূতি, স্বভাব ইত্যাদি বুঝায় ৷ অপরিশুদ্ধ বস্তবাদী আমিত্ববোধ মানব অস্তিত্বের নিন্মমাত্রা। এখানে নফস আম্মারার তত্বাবধায়ক শয়তান রুহ হায়ানীর পক্ষ হতে মদদপ্রাপ্ত। জীবজগতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট রুহানি কর্তৃত্ব প্রকাশ পায়। অথচ রুহ অবিভাজ্য, শুধুমাত্র কোন সময়ে কোন (নফসের) স্বভাবের উপর তা কার্যকর থাকে সে ভিত্তিতে নামকরণ করা হয়েছে মাত্র। “কুল নাফসি যায়েকাতুল মাওত; ছুম্মা ইলাইনা তুরজাউন” বা “প্রত্যেক নফস মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করে; তারপর আমাদের দিকে ফিরে আসে” [২৯:৫৭] কালামের তাৎপর্য বুঝাও সহজ কাজ নয়। একটিমাত্র নফস থেকে বাকী চারটি নফস প্রসারিত, রুহও তাই । প্রতিটি নফসে রুহ ক্রিয়াশীল ৷

রুহ যখন নফস আম্মারায় বা পশু প্রবৃত্তিতে [১২:৫৩, ৭৯:৪০] কার্যকর হয় তখন তা রুহ হায়ানী নামে পরিচিতি পায়। মুসা আ. এর মত জাদরেল নবীর মাধ্যমে আল্লাহ শিক্ষা দিলেন যে, দুনিয়ায় (আমিত্ব খোয়াড়ে) থাকা অবস্থায় “রবের আরনী”র উত্তর আসে “লান তারানী” ৷ বস্তজগতের সকল মোহ কালিমার ‘তুর’ জ্বালিয়ে দিলেই বস্তজগতে অবচেতন হয়ে আত্মিক চৈতন্যে রবের দীদার হয়। নফস লাওয়াম্মা বা কর্মশীল প্রবৃত্তি বা জাগ্রত বিবেকে [৭৫:২] রুহ নাবাতি, নফস মুলহেমা বা অনুপ্রাণিত বৃত্তি [১৪:৩১] তে রুহ জামাদি, নফস মুতমাইন্না বা মানব প্রবৃত্তি (৮৯:২৭) তে রুহ ইনসানি, নফস সাফিয়্যা/নফস ওয়াহেদ/রহমান [৪:১, ৫৫:১] তে রুহু কুদসি কার্য পরিচালনা করেন। আল্লাহর নফস নিয়ে কুরআন বলে ঈসার ভাষায়ঃ “তা’লামু মাফী নাফসী ওয়ালা আ’লামু মাফী নাফসীকা; ইন্নাকা আনতা আল্লামূল শুযুব” অর্থঃ “আমার নফস সম্পর্কে তুমি অবগত আছ কিন্তু আমি তোমার নফস সম্পর্কে অবগত নই। নিশ্চয় তুমি গায়ব সম্পর্কে অবগত ।”

অবশ্য অধিকাংশ অনুবাদে নফস, কলব, রুহ অনুবাদে অন্তর/আত্মা ইত্যাদি করা হয়েছে। নফসে রহমানী/ওয়াহেদ হতে অন্যান্য নফস প্রকাশিত হয় বলে সকল নফসের গায়ব এ নফসটির জানা, সৃষ্টির বলয়ে থাকা কোন নফস, ওয়াহেদ নফসের স্বরূপ বুঝতে সক্ষম হয় না। রুহ কুদসি বিভিন্ন নফসে ক্রিয়াশীল হয়ে যে অন্যান্য রুহের উপস্থিতি প্রমাণ করে তা মূলত এক একটি নফসের উপর কর্তা বা নিয়ন্ত্রক মাত্র ৷ পরিশুদ্ধ মানব ব্যতীত পরিশুদ্ধ রুহটি (রুহ কুদসি) জীব জগতের কোথাও পরিচিত নাই। রুহের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন নিস্তি অস্তিতে আসে লা, শুধুমাত্র নফসের ক্রিয়াশীল হওয়ার কোন ব্যবস্থাপত্র আল্লাহর বিধানে (কিতাবে) নাই।

উচ্চ স্তরে দাস (আবদু) সিদ্ধি লাভ করলে আল্লাহ্‌ নিজেই নফসের হেফাযতকারী হয়ে যান। সকল নফস মৃত্যুর আস্বাদন করবে, নফস মোতমাইন্নাকে দাসদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে জানাতে প্রবেশ করার আহ্বান করা হয়েছে (৮৯:২৭-৩০]। নফসের উপরে অত্যাচারী তার নফসকে ধ্বংসযজ্ঞ নামিয়ে নিয়ে এসেছে ফলে নিম্ন শ্রেণীর নফসে উথ্থিত করে বলা হবে “তোমাদের অত্যাচার তোমরা আস্বাদন কর [৫১:১৪]। পশুজগতের চেয়েও নিকৃষ্ট হতে পারে দৃশ্যমান মানুষ৷ “ইন্না শাররাদ দাওয়া ইন্দাল্লাহিল কাফারু ফাছুম লা ইউমিনুন ৷” অর্থঃ “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট মন্দ পণ্ড যারা কাফের, যেহেতু তারা ঈমানের কাজ করে না।” [৮:৫৫]

রুহের অবস্থান সর্বত্র থাকলেও শুধুমাত্র পরিচিতিটির অভাবে রুহকে অস্বীকার করা হয়। রুহ ফুৎকার করার পরে মাটির দেহে আদম প্রতিষ্ঠিত হয়, তা নিরাপত্তা দান করলে রুহুল আমিন নাযিল হওয়া বুঝায়। রুহের কর্তৃত্ব যখন নফস রহমানের মাধ্যমে ইনসান কামেলে প্রকাশ পায় তার যাবতীয় আল্লাহর কর্ম হয়, তা নিজে সৃজনশীল হয়ে রুহ ফুৎকার করতে (সুপ্ত রুহকে জাগ্রত করতে) পারে। রুহুল আমিন, রুহুল কুদসি ও রুহ অনুবাদে আমরা যে অনুবাদ দেখতে পাই তা একেবারেই অযৌক্তিক । ফেরেশতারা হলেন নির্দিষ্ট এলেম প্রাপ্ত, বর্তমান বিজ্ঞানের আধুনিক রোবট বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মত । নিজ হতে কিছু করার ক্ষমতা তাদের নাই। রুহের শক্তি হতে তাদের শক্তি প্রসারিত মাত্র। আদম যখন সকল কিছুর পরিচয় ব্যক্ত করলো, জীবরাঈল, মিকাঈল সহ সকল ফেরেশতারা তা ব্যর্থ হলো, আদমে সেজদা করলো [২:৩১-৩৪|।

মানুষের এবাদতের বিশেষ রজনীতে নফসের স্বভাব ঢাকা পড়লে রবের আমর (নির্দেশ) হতে ফেরেশতা ও রুহ নাযিল হয় [৯৭:8]। লাওহে মাহফুয হতে কুরআন জ্ঞান স্পষ্ট হয়। প্রদীপ্ত একটি প্রদীপ হতে অন্য একটি প্রদীপ জ্বালানো হলো। প্রদীপে আলোর উপকরণ সবই ছিল তা প্রজ্জলিত করার ব্যবস্থাটিই রুহ নাযিল করার সমার্থক হতে পারে। এক ফেরেশতা অন্য ফেরেশতার কর্ম করতে পারে না। উপমা স্বরূপ- মনুষ্যে হাইউন (জীবন্ত শক্তি), আলিমুন (জ্ঞান), মুরিদুন এরাদা (ইচ্ছা), কাদিরুন (কুদরত বা কর্মশক্তি), সামিউন (শ্রবণ শক্তি), বাছিরুন (দর্শন শক্তি) ও কলিমুন (বাক শক্তি) একের কাজ অন্যে করতে পারে না।

চক্ষু সারা জীবনেও কর্ণের শ্রবণের কাজ করতে পারে না, তেমনি কর্ণ দেখার কাজ করতে পারে না। এতো কাছাকাছি থেকে একে অপরের কাছে অচেনা । অথচ এ সাতটি সেফাত রুহ হতে ইনসানে এক যোগে প্রকাশ আছে বলেই মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত ৷ অন্য কোন জীবে এ সেফাত সাতটি একত্র পূর্ণভাবে বিকশিত হয় নাই, কোন কোনটি প্রকাশ থাকলেও অন্যান্যগুলি সুপ্ত (নাই এমন নয়- উপযুক্ত বাহনে বা দেহে তা প্রকাশ পায়)।

দেহ হচ্ছে বাহন বা রাজ্য, রুহ রাজা, আকেল উজির, নফস রুহের কর্ম প্রকাশে মাধ্যম বা স্বভাব বা প্রবৃত্তি যা সৈন্য। এর ফেল অসংখ্য (রবের সৈন্য সংখ্যা অসংখ্য) দেহকে রক্ষা করা ও যাবতীয় অর্জনের দায়িত্ব এ নফসের। ভবের হাটের বাণিজ্যে যে ঘোড়াটি দৌড়ে চলছে তাতে অর্জন বা বিসর্জনের নিরব জুয়াখেলা এটি ৷ ঘোড়াটির মালিক বাণিজ্যে মনিমুক্তা জমা করে স্বনির্ভর রাজ্য গড়ে তুলবে এটিই রাজ্যের সংবিধানে লেখা। রাজা তার বাদী নফসের প্রতি আসক্ত। নফস মোলহেমা, লাওয়াম্মা, মোৎমাইন্নাকে পর্যদুস্ত করে নফস আম্মারার জাগরণে একটি অত্যাচারী রাজ্য । নফস আম্মারার প্রধান মাতব্বর আজাজিল/খান্নাস বা ইবলিশ বা শয়তান । নিন্ম জগতের সকল মানুষই জিন স্বভাবগ্রস্ত। নাস আর খান্নাসের পার্থক্যজ্ঞান বুদ্ধিতে ৷ পুস্তকগত বিদ্যায় আমিত্ব অহংকারীরা আজাজিল দলের । এদের মধ্যে যারা ভ্রান্ত ও রবের অবাধ্য তারাই শয়তান। ইবলিস সত্যবিধানে আস্থাহীন, অহংকারী ও কাফের [৩৮:৭৪]।

এক আল্লাহর পরিচিতি (আলিফ = আবজ্বাদ মান-১) দুনিয়ার (চোখে (আইন = আবজাদ মান-৭০) ৭০ হাজার পর্দা টেনে আমিত্ব নুকতা দ্বারা (গাইন = আবজাদ মান-১০০০) গায়ব করে রাখে। যারা আল্লাহর পরিচিতিতে তাদেরকে গাফেল করার কি আছে বরং ইবলিশের ওয়াদা হলো সিরাতাল মুস্তাকিমের পথ হতে আদম সম্তানদের (দৃশ্যমান সকল মানব নয় বরং নূর পরিচিতির বংশ) পথভ্রষ্ট করা। করারও কিছু না ইবলিশের বাহিনী বড়, বস্তজগতে আল্লাহর দেখা পাওয়া সম্ভব নয়- এ কথাটিকে আল্লাহ কে চেনার অযোগ্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। অবশ্য যা কঠোর ধ্যান সাধনা করে চিনতে হয়, তা বলা না বলায় কিছু যায় আসে না।

“মা কাযাবাল ফুআদু মারাআ, আফাতুমারুনাছ আলা মাইয়ারা” অর্থঃ “যা সে দেখেছে তার অন্তকরণ তা মিথ্যা বলে নি, তার দেখা বিষয়ে তোমরা কি তর্ক করবে?” [৫৩:১১-১২] “রাআ” শব্দটির অর্থ ব্যকরণবিদরা ভাল অবগত আছেন। এখানে প্রষ্টা করা হয়েছে “ফুআদ” বা “অন্তকরণ” কে। অন্তরের চোখে আল্লাহর দেখা পাওয়া সম্ভব এটি উম্মতে মুহাম্মদীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এছাড়া নবী মুহাম্মদ (স), আল্লাহকে দেখলো কি না দেখলো তাতে উম্মতের লাভ ক্ষতি কি? “মাযাগাল বাছারু ওয়ামাতাগা, লাকাদ রাআ মিন আয়াতি রাব্বিহিল কুবরা” অর্থঃ “ভার দৃষ্টি বিভ্রম হয় নি, লক্ষচ্যুতও হয় নি। সে তার রবের মহান (কুবরা) পরিচয় (আয়াত) দেখেই ছিল ।”

আপন খবর