লেখক – এস এম বাহরায়েন হক ওয়ায়েছী
মানুষ কোথায় দাঁড়িয়েছে? যার শ্রেষ্ঠত্ব ভূবন জোড়া, সৃষ্টির সাম্রাজ্যে তার অতুলনীয় পদাচারণা। সাম্যতায় যদি সে আত্মপ্রকাশ ঘটাতে পারে, তবে সে ঐশী প্রেমের মূল্যায়নে মূল্যায়িত হতে পারবে। কারণ, সে আশরাফ। তার গুণ, সুরৎ গঠন লাছানী। নেই কেউ তার সমকক্ষ, তবু কেন যে হিংস্রতা?
ভোগের তাড়নায় পারেনি আমিত্বকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে। তাই তার মর্যাদা আসফালা সাফেলিনে নেমে গেছে। কিন্তু মহান স্রষ্টা তার সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের অসুন্দর মেনে নিতে চাননি। চেষ্টার পথে এগিয়ে দিয়ে নবুয়ত ও রেসালাত এর মাধ্যমে পবিত্রতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। উপহার দিয়েছেন আম্মারা থেকে লাওয়ামার মাধ্যমে মতমায়েন্নায় পৌঁছাতে পারার ক্ষমতা এবং মলহেমার পথ ত্বরান্নিত করে (আল কোরআনের ভাষায় বিকশিত করে) বিলায়েতের সুমহান দায়িত্ব ভারে তার দিদারকে ঈদে গাদীরে খুম রূপে ঘোষনা করে আসমান হতে দুইটি রশি ছেড়ে দিয়েছেন, জমিন পর্যন্ত। তার প্রথমটি হল- রাসূল (স.) এর আহলে বায়েত। আর দ্বিতীয়টি হল- কালামে পাক আল-কোরআন।
রাসূল (স.) ওফাত প্রাপ্ত হলে আম্মারা ভোগী কিছু মানুষ মতমায়েন্নাকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছেন, কিন্তু সাময়িক ছিল সে মোহময়তা। মলহেমার দৃঢ়তায় সেই হক সৃজিত ছিল বলে আজ অবধি ওয়ালিয়াম মুরশীদ রূপে যাদের পদাচারণ, তারা তপস্বী। তাদের আত্মজের মধ্যে কোন কুলশতার স্থান দেননি। তারা সদা সর্বদা ছিলেন ঐশ্বরিক তাৎপর্য বাস্তবায়নে সচেষ্ট যে কারনে অযাচিত, লোভ, মোহ, ক্রাম, ক্রোধ, মাৎসর্য স্থান দেননি তনুমনে। সকলকিছুর উর্দ্ধে তুলে ধরেছেন ইনসানিয়াতকে।
তারা দৈহিক অবকাঠামোর সৌন্দর্য রক্ষা ও পাপ পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে সংরক্ষিত করার চেষ্টায় মগ্ন থাকেন। অনেকেই লেবাছের চাকচিক্যে আত্মজের বলিদান না করে অভিনবতায় পশুত্বের কামুকতা প্রদর্শন করে সকলের তরে তার বিশ্বাসযোগ্যতা ছিনিয়ে নিয়ে সর্ব তপস্বীদেরও অমর্যাদা করার পরিবেশ তৈরি করেছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যে সাধক তার সাধনার তাৎপর্যের সততায় গুপ্ত হতে গুপ্ত থেকে নিজের রহমতের বারিধারা পৌঁছে দেন, তার নেই কোন আড়ম্বর। কারন যেকেরকারীদের সংখ্যা অতিব নগন্য।
ভক্তির আদলে যদি স্বার্থ থাকে সেখানে আর যাই হোক আত্ম-সমর্পন হয় না। আত্মসমর্পণ মানে যদি হয় বিক্রয় করা, তবে বিক্রিত জিনিস বিক্রেতা পূণরায় প্রাপ্তির দাবিতে অনড় থাকে তবে ক্রেতাকে লাঞ্ছিত করা হয়। অতএব কাউকে লাঞ্ছিত করলে নিজেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যায়। তাই যার আকলে ইনছাফ বাস্তবায়িত থাকে, সে শ্রেষ্ঠত্বের দম্ভে দম্ভিত না হয়ে মমতার মাধ্যমে যদি বুঝতে সক্ষম হয় যে, দাসত্বের মাঝেই নিহিত রয়েছে দাসত্বের শুদ্ধতা, তখনই পূর্ণতা লাভ হবে। তার ফলে কেউ আর দাসত্বকে খাটো নজরে দেখবে না। চলে আসবে হৃদয়ের তামান্না মিটাতে । যেখানেই সে খুঁজে পাবে অসীম সম্ভাবনা। সেখানেই নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সফলতাকে অবলোকন করে দেখতে পায়, তার ভবিষ্যৎ দৃষ্টির সীমায় ভেসে ওঠে।
সমস্ত মানব মানবীর আত্মিক বন্ধনের মিলন মেলা চলে আসে অসীমের দ্বার উন্মুক্ত করে। তার মেজাজীর চিহ্ন না থাকলেও হাকীকী তাৎপর্যের চিরভাস্বর হয়ে থাকে আদি হতে অনাদিকাল। এমন প্রতিভা সবারই মাঝে আছে। কেউ তার সন্ধান পেয়ে যায়, আবার কেউ হারিয়ে ফেলে বা খুঁজেই পায় না তার আত্মসচেতনতার অভাবে। পরিশ্রম বিহীন কোন কাজেরই স্থায়িত্ব আসে না। ত্যাগী প্রতিভার প্রত্যাশা নিয়ে বিলিয়ে দিতে হয় পূর্ণ ইচ্ছাশক্তিকে, কর্ম উদ্যম মন এক দিন দেখতে পায় কখন যেন সে পৌঁছে গেছে সু-উচ্চ চূড়ায়।
কিন্ত কত সময় লেগেছে, কত প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, কখনো জীবন নাশেরও পর্যায় উপনীত হতে হয়েছে। তবুও অদম্য শক্তিকে ভরসা করে মানবতার নেশায় ডুবিয়ে দিয়ে পূর্ণ মানবতার প্রতিককে, দেখে আত্ম-তুষ্টি হলে তার আদর্শের প্রতি সমস্ত চেতনার শির লুটিয়ে পড়বে, খুঁজে পাবে সেই সাম্রাজ্য, যেখানে ইনছাফ কায়েম হয় সদা সর্বদা। সফলতার চেষ্টায় যে বুঝতে পারবে, যেমন করে পৃথিবীতে তার অস্তিত্বের রক্ষায় সবকিছু ঢেলে সাজাতে সুন্দর শৃঙ্খলায় আসতে হবে। নচেৎ ধ্বংস থেকে রক্ষা করা কঠিন হবে।
মানুষ যদি কখনো ভাবে যে, আমার মর্যাদা আমাকেই রক্ষা করতে হবে, তবে সমস্ত সৃষ্টির নিজের অবস্থান সম্বন্ধে অবহিত হতে হবে। তাহলে নিজের ভাল থাকার প্রয়োজনে অন্যকে ভালো রাখতে হবে। তাই মানুষের সৃষ্টি সত্ত্বার সাথে যার সম্পর্কিত তাকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে মানুষকেই পরতে হবে দুর্বিষহ অবস্থায়। এই পথে যার শিক্ষা রয়েছে তিনি হলেন ওয়ালিয়াম মুর্শীদ, সে তার অজুদি কম্পাসের মাধ্যমে জরিপ করে দেখেছেন কোথা হতে তার নকশা, পর্চার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁর ভুখন্ডে অন্য কারো দখল নেই এবং তিনিও অন্যের ভূখন্ড দখল করেন না। তবে একনিষ্ঠ চেষ্টার সফলতায় তাকে নাম , নিয়ামত, জাতকে বুঝতে শেখাবে এবং এ ভেদ শিখতে পারলে ঐশ্বর্য প্রাপ্তি কোনো কঠিন কিছু নয়। দৃঢ়চেতা মনোভাব আত্মপ্রত্যয়ী। অতএব প্রাণবন্ত মন পেছন ফিরে না, সম্মুখ তার স্থির আরাধনা। আল-আমীন।