ব্লগ – মাওলা আলী (আ) এর ২০ টি বাণী – পর্ব ০৪

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

১। নীরবতার আধিক্য সশঙ্ক মনোভাবের সঞ্চার করে; ন্যায়-বিচার গাঢ় বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে; উদারতা মর্যাদা উন্নত করে; নম্রতা অনেক আশীর্বাদ আনে; দুঃখ-দুর্দশার মোকাবেলা করে নেতৃত্ব অর্জন করতে হয়; ন্যায়-সঙ্গত আচরণ করে বিরোধীদের পরাভূত করা যায় এবং মূর্খদের কর্মকান্ডে ধৈর্যধারণ করলে নিজের সমর্থকগণ বিরুদ্ধে যায়।

২। তৃপ্তি জমিদারি স্বরূপ এবং উত্তম নৈতিক চরিত্র আর্শীবাদ স্বরূপ।

৩। সে হলো জ্ঞানী ব্যক্তি যে সবকিছুকে যথাযোগ্য অবস্থানে রাখতে পারে।

৪। কিছু লোক আছে যারা পুরস্কারের আশায় ইবাদত করে। নিশ্চয়ই, এটা ব্যবসায়ীদের ইবাদত। আবার কিছু লোক ভয়ে আল্লাহর ইবাদত করে-এটা দাসদের ইবাদাত। এরপরও কিছু লোক কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আল্লাহর ইবাদাত করে-এটা স্বাধীন মানুষের ইবাদত।

৫। অসৎ উপায়ে প্রাপ্ত একটি পাথরও যদি কোনো ঘরে থাকে তবে তা সে ঘরের ধ্বংস নিশ্চিতভাবে ডেকে আনবে।

৬। আল্লাহ বহু-ঈশ্বরবাদ থেকে পবিত্র করার জন্য ইমান প্রতিষ্ঠিত করেছেন, আত্মশ্লাঘা থেকে পবিত্র থাকার জন্য সালাত; জীবিকার উপায় হিসেবে যাকাত; মানুষের পরিক্ষা হিসেবে সিয়াম; দ্বীনের খুঁটি হিসেবে হজ; ইসলামের সম্মান হিসেবে জিহাদ; সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আমর বিল মা’রুফ; ফেতনা-ফাসাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য নাহি আনিল মুনকার; সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য জ্ঞাতিত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ; রক্তপাত বন্ধ করার জন্য কিসাস; হারামের গুরুত্ব অনুধাবনের  জন্য শাস্তির ব্যবস্থা; বুদ্ধিমত্তা রক্ষা করার জন্য মদ্যপান নিষিদ্ধ; সততা জাগিয়ে দেওয়ার জন্য চৌর্যবৃত্তি বাতিল; মনোরম অবস্থা বজায় রাখার জন্য ব্যভিচার নিষিদ্ধ; বংশবৃদ্ধির জন্য সমকামিতা নিষিদ্ধ; কোনো বিষয় প্রমাণ করার জন্য সাক্ষী; সত্যের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মিথ্যা প্রতিহত; বিপজ্জনক অবস্থা থেকে রক্ষা করার জন্য শান্তি রক্ষা; উম্মাহর শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ইমামত এবং ইমামতের প্রতি সম্মান হিসেবে ইমামদের মান্য করা সুস্থতা অর্জিত করেছেন।

৭। ঈর্ষা না থাকলে শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয়।

৮। যখনই তুমি বিপদ বা দুরবস্থায় পড়বে তখন দান-সদকার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে ব্যবসা কর।

৯। বন্ধুকে একটা সীমা অবধি ভালোবাসো, কারণ সে যেকোনো সময় শত্রু হয়ে যেতে পারে। আবার শত্রুকে একটা সীমা অবধি ঘৃণা করো, কারণ যেকোনো সময় সে তোমার বন্ধু হয়ে যেতে পারে।

১০। দৃঢ় প্রত্যয় সহকারে জেনে রাখো, অদৃষ্টলিপিতে যা লেখা আছে তার অধিক জীবিকা আল্লাহ নির্ধারণ করেন না। যতই উপায় অবলম্বন করা হোক, যতই কঠোর প্রচেষ্টা করা হোক আর যতই কসরত করা হোক না কেন নির্ধারিত জীবিকার বেশি পাবে না। কোনো লোকের  দুর্বল অবস্থা বা উপায়-উপকরণের অভাব নির্ধারিত জীবিকার পথে অন্তরায় হতে পারে না। যারা এটা অনুধাবন করে এবং সে মতে আমল করে তারাই সব চাইতে আরাম-আয়েশে থাকে; আর যারা এতে সন্দেহ পোষণ করে এবং এর প্রতি অবহেলা করে তারা সকলের চেয়ে বেশি অসুবিধা ভোগ করে। আনুকূল্য প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ধীরে ধীরে আনুকূল্যের মাধ্যমে শান্তির দিকে তাড়িত করা হচ্ছে এবং শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে শাস্তির মাধ্যমে কল্যাণ করা হচ্ছে। সুতরাং হে শোতৃমন্ডলী, তোমাদের কৃতজ্ঞতা বর্ধিত কর, লোভ-লালসা কমিয়ে ফেল এবং তোমাদের জীবিকার সীমার মধ্যে তৃপ্ত থাকো।

১১। লোভ মানুষকে জলাশয়ের কাছে টেনে নিয়ে যায় কিন্তু পানি পান করানো ছাড়াই আবার টেনে ফেরত নিয়ে আসে। লোভ দায়িত্ব গ্রহণ করে কিন্তু তা পরিপূর্ণ করে না। লোভাতুর ব্যক্তি তৃষ্ণা মেটার আগেই অনেক সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়ে। কোনো কিছু পাবার আকুল আকাঙ্খা যত বেশি হবে, তা না পেলে দুঃখও তত বেশি হবে। লোভ-লালসা বোধগম্যতার চক্ষু অন্ধ করে দেয়। যা ভাগ্যে নির্ধারিত আছে তা না চাইলেও পৌঁছে যাবে।

১২। মূর্খের সঙ্গে মেলামেশা করো না; কারণ সে তার আমলসমূহ তোমার সামনে সুন্দর করে তুলে ধরবে এবং আশা করবে তুমি যেন তার মতো হও।

১৩। কোরানে রয়েছে অতীতের খবর, ভবিষ্যতের পূর্বাভাস এবং বর্তমানের জন্য আদেশ।

১৪। আল্লাহ দুঃখীজনের জীবিকা ধনীদের সম্পদের মাঝে রেখেছেন। যার ফলে, যখন কোনো অভাবগ্রস্ত লোক উপোস থাকে তখন বুঝতে কোনো ধনী ব্যক্তি তার সম্পদে অভাবগ্রস্ত লোকটির হিস্যা অস্বীকার করেছে। মহিমমান্বিত আল্লাহ ধনী লোকদের এজন্য একদিন জিজ্ঞেস করবেন।

১৫। জ্ঞান দু-রকমের-আত্মভূত জ্ঞান ও শ্রুত জ্ঞান। শ্রুত জ্ঞান আত্মভূত না হলে কোনো উপকারে আসে না।

১৬। অন্যের কী আছে সেদিকে নজর না দেওয়াই বড় সম্পদ।

১৭। সবচাইতে বড় পাপ হলো সেটি করে পাপী তা নগণ্য মনে করে।

১৮। যে ব্যক্তি নিজের দোষ-ত্রুটির প্রতি লক্ষ্য রাখে সে অন্যের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায় না। আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকায় যে সন্তুষ্ট থাকে সে যা পায়নি সেজন্য দুঃখ করে না। যে বিদ্রোহের জন্য তরবারি বের করে সে তরবারিতেই মারা যায়। যে সহায়-সম্বল ছাড়া সংগ্রাম করে সে ধ্বংস হয়ে যায়। যে গভীরে প্রবেশ করে সে ডুবে থাকে। যে কুখ্যাত স্থানে যায় তার বদনাম হয়। যে বেশি কথা বলে  সে বেশি ভুল করে। যে বেশি ভুল করে সে নির্লজ্জ হয়ে পড়ে। যে নির্লজ্জ হয় সে আল্লাহকে কম ভয় করে। যে আল্লাহকে কম ভয় করে তার হৃদয় মরে যায়। যার হৃদয় মৃত সে আগুনে প্রবেশ করে। যে অন্যেল দোষ-ত্রুটি দেখেও নিজেই তা করে থাকে নিঃসন্দেহে সে মূর্খ। তৃপ্তি এটা পুঁজি যা ক্রমান্বয়ে হ্রাস (অবচয়) হয় না। যে মৃত্যুকে স্মরণ করে সে এ পৃথিবীতে অল্পে তুষ্ট থাকে। যে ব্যক্তি জানে যে, তার কথা আমলের একটা অংশ সে বিশেষ লক্ষ্য ছাড়া কথা বলে না।

১৯। মহিমান্বিত আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে হলে তোমরা প্রথমে রাসুল (স) ও তাঁর আহলুল বাইতের প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ কর, তারপর যা যাচনা করার তা কর। কারণ পরম দয়ালু আল্লাহ দুটি অনুরোধের মধ্যে যেটি রাসুল (স) ও তাঁর আহলুল বাইতের দরূদ ও সালাম সংলাগকৃত সেটি রক্ষা করেন এবং অন্য সব যাচনা বাতিল করে দেন।

২০। হে মানুষ, এ দুনিয়ার সম্পদ উচ্ছিষ্টের মতো যা মহামারির সৃষ্টি করে। সুতরাং এ চারণভূমি থেকে দূরে সরে থাকো। এতে শান্তিতে থাকা অপেক্ষা এটাকে ত্যাগ করা অনেক বেশি ভালো এবং এর সম্পদরাজি অপেক্ষা পারিতোষিক অংশ অনেক বেশি সুখকর। এখানে যারা সম্পদশালী পরকালে তারা হবে দুর্দশাগ্রস্ত। তাদের জন্যই রয়েছে পরকালের সুখ-শান্তি যারা দুনিয়া থেকে দূরে সরে থাকতে পেরেছে। এর চাকচিক্যে কোনো লোক আকৃষ্ট হলে তার দুচোখ ধাঁধা লাগে। যদি কেউ এর প্রতি আগ্রহান্বিত হয়ে পড়ে তবে তার হৃদয় দুঃখপূর্ণ হয় এবং ক্রমেই কালিমালিপ্ত হয়ে পড়ে। এর কিছু তাকে উদ্বিগ্ন করে আর কিছু তাকে বেদনা দেয়। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সে এ অবস্থায় থাকে। সে শূন্যে নিক্ষিপ্ত হয় এবং তার হৃদয়ের ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে পড়ে। তার মৃত্যু ঘটানো ও তার সহচরগণ দ্বারা তাকে কবরে শায়িত করা আল্লাহর পক্ষে বড় সহজ কাজ।

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর