ব্লগ – হযরত আলী (আ) এর ২০ টি বাণী – পর্ব ০৫

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

১। এমন সময় আসবে যখন লেখা ছাড়া কোরানের আর কিছুই থাকবে না; নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকবে না। সে সময় মানুষ মসজিদগুলোকে বড় বড় ইমারতে পরিণত করায় ব্যস্ত থাকবে, কিন্তু তাতে কোনো হেদায়েত থাকবে না। যারা এর মধ্যে থাকবে এবং যারা এতে যাবে তারা পৃথিবীতে নিকৃষ্টতম হবে। তাদের থেকে ফেতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং সকল বিভ্রান্তি তাদের দিকেই ফিরে যাবে। যদি কেউ তাদের থেকে ফিরে যায় তবে তাকে ধাক্কা দিয়ে পুনরায় সামিল করা হবে।

২। হে জনমন্ডলী, আল্লাহকে ভয় কর। মানুষকে তিনি অকারণে সৃষ্টি করেননি যে, সে নিজেকে যেনতেনভাবে কাটিয়ে দেবে। তিনি মানুষকে এমন অযত্নে রক্ষিত করেননি যে, সে কান্ডজ্ঞানহীন বাজে কাজ করে যাবে। এ দুনিয়া তার কাছে যতই মনোমুগ্ধকর মনে হোক না কেন তা কখনো পরকালের স্থানাপন্ন হতে পারে না। সাহসিকতার মাধ্যমে যে এ জগতে কৃতকার্য হয়েছে সে পরকালের কৃতকার্যতার তুলনায় সামান্যতমও অর্জন করতে পারেনি।

৩।   ইসলামের চেয়ে উচ্চ মর্যাদাশীল আর কিছু নেই; আল্লাহর ভয়ের চেয়ে সম্মানজনক আর কিছু নেই; আত্মসংযম অপেক্ষা বড় আশ্রয় আর কিছু নেই; তওবার চেয়ে বড় উকিল আর কিছু নেই; তৃপ্তির চেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ আর কিছু নেই; নূন্যতম জীবনোপকরণে তৃপ্ত হওয়ার চেয়ে বড় দুঃখনাশক আর কিছু নেই। কামনা-বাসনা হলো দুঃখের চাবিকাঠি এবং দুর্দশার বাহন। লোভ, অহংকার ও ঈর্ষা হলো পাপের আলো এবং ফেতনাবাজি হলো সব চাইতে বড় কু-অভ্যাস।

৪। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি উচ্চারণ করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত কথা তোমার নিয়ন্ত্রণে। আর বলে ফেললেই তুমি কথার নিয়ন্ত্রণে চলে গেলে। সুতরাং স্বর্ণ-রৌপ্যকে যেভাবে পাহারা দাও সেভাবে তোমরা জিহ্বাকেও পাহারা দিয়ো, কারণ একটা কথাই তোমার আর্শীবাদ কেড়ে নিয়ে তোমার জন্য শাস্তি আনয়ন করতে পারে।

৫। যা জানো না তা বলো না এবং যা জানো তার সবকিছু বলো না; কারণ আল্লাহ তোমার সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং শেষ বিচারের দিন এসব নিয়েই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

৬। কোনো ব্যক্তি যা খোঁজে তার অংশ হলেও পায়।

৭। যাতে তৃপ্তি পাওয়া যায় তা ক্ষুদ্র হলেও যথেষ্ট।

৮। অপমানিত হওয়ার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। অন্যের মাধ্যম ব্যতীত ক্ষুদ্র জিনিসও উত্তম। যে বসে পায় না, সে দাঁড়িয়েও পাবে না। এ পৃথিবীতে তোমাদের দুটি সময় হবে- একটি তোমার পক্ষে অপরটি তোমার বিরুদ্ধে। সময় তোমার অনুকূলে থাকলে আত্মম্ভরী হয়ো না, আবার তোমার প্রতিকূলে গেলে ধৈর্য ধারণ কর।

৯। দম্ভোক্তি পরিহার কর, আত্ম-প্রবঞ্চনা পরিত্যাগ কর এবং কবরকে স্মরণ কর।

১০। যে  কেউ অসঙ্গত কিছুর জন্য লালায়িত হয় সে কৃতকার্য হওয়ার পথ খুঁজে পায় না।

১১। বিজ্ঞদের মতো ধৈর্য ধারণ করতে হবে, না হয় অজ্ঞদের মতো চুপ করে থাকতে হবে।

১২। মানুষের কল্যাণ কর। কল্যাণকর কাজের কোনো অংশকে ক্ষুদ্র মনে করো না; কারণ এর ক্ষুদ্রাংশও অনেক বড়। কল্যাণকর কাজের বেলায় কখনো এ কথা বলো না যে, ‘আমার অপেক্ষা অন্য ব্যক্তি এ কাজের জন্য অধিক উপযুক্ত।’ যদি এরকম বল, তবে মনে রেখ, আল্লাহর কসম, বাস্তবে তাই ঘটবে। সমাজে ভালো ও মন্দ উভয় ধরনের লোক আছে। তুমি যেটা ফেলে  রাখবে অন্যরা সেটা করে ফেলবে।

১৩। ধৈর্য দুর্বলতা ঢাকার এক প্রকার পর্দা এবং জ্ঞান তীক্ষ্ণ তরবারি। সুতরাং তোমার স্বভাবের দুর্বলতা ধৈর্য দ্বারা ঢেকে রেখ এবং জ্ঞান দ্বারা কামনা-বাসনাকে হত্যা  কর।

১৪। সম্পদ আর স্বাস্থ্য নিয়ে গর্ব করার কিছু নেই। কারণ এখন যাকে স্বাস্থ্যবান দেখছো একটু পরেই সে রুগ্ন পড়তে পারে এবং এখন যাকে ধনবান দেখছো একটু পরেই সে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।

১৫। জীবিকা দুপ্রকার; অনুসন্ধানকারী ও যা অনুসন্ধান করা হয়েছে। সুতরাং যে এ দুনিয়ার প্রতি লালায়িত হয় মৃত্যু তাকে সন্ধান করে নেয় দুনিয়া থেকে মুখ ফেরানোর পূর্বেই। আর যে ব্যক্তি পরকালের প্রতি লালায়িত থাকে জাগতিক আরাম-আয়েশ তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে দুনিয়া থেকে জীবিকা গ্রহণ না করে।

১৬। যখনই মানুষ হাসি-তামাশায় লিপ্ত হয় তখনই সে তার প্রজ্ঞা থেকে কিছুটা সরে যায়।

১৭। দু ধরনের লোভী ব্যক্তি কখনো তৃপ্ত হয় না। এদের একজন হলো জ্ঞান অন্বেষণকারী আর অপরজন হলো দুনিয়া অন্বেষণকারী।

১৮। ইমান হলো-তুমি সত্যকে আঁকড়ে ধরবে যদি তাতে তোমার ক্ষতিও হয় এবং মিথ্যাকে বর্জন করবে যদি মিথ্যা দ্বারা তোমার লাভও হয়। তোমার কথা যেন কাজের চেয়ে বেশি না হয় এবং অন্যদের সম্পর্কে কথা বলতে আল্লাহকে ভয় কর।

১৯। ক্ষমা আর ধৈর্য জমজ এবং দুটি উচ্চ স্তরের সাহসের ফল।

২০। পরিতৃপ্তি এমন এক সম্পদ যা কখনো শেষ হয় না।

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর