কবিতা – সর্বোতোপ্রায় বন্দীত্ব

লাবিব মাহফুজ

অসহ্য, সর্বদিকে বিরাজিত এ বন্দীত্ব
উপরে আকাশ, নিচে মাটির এ পুরু দেয়াল –
দৃষ্টির সিমানায় ঘেরা চারিদিকের অভেদ্য কারাগার
মেঘের ছাতাধরা নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকা
জগৎটাতো এই আবদ্ধতার জঞ্জাল।

এ তো বন্দী জীবন!
নদীর একঘেয়ে স্রোত, সবুজের আবরণ
মেঘের ওপরে যদি নেই অবাধ গতি
নদীর ওপরে যদি নেই অবিরাম ভেসে থাকা,
শুণ্যে যদি নেই নৈশ আড্ডা
হৃদয়ের কামনার যদি নেই যথার্থ জাগতিক অনুরণন,
এতো শুধু পীড়িত ধৈর্য ধারণ।

সকল অক্ষমতাকে হাসিমুখে মেনে নেয়াই এ বন্দীত্ব!
সকল অজানাকে সুখচিত্তে ভুলে থাকাই এ বন্দীত্ব!
অপূর্ণ চিত্তে সকল অপূর্ণতাকে পূর্ণ ভাবাই এ বন্দীত্ব!

জগৎ তো বন্দীত্বের কারাগার…
ফুল যদি শুধু বসন্তেই হেসে ওঠে
পাখি যদি শুধু প্রভাতেই নেচে ওঠে
কাশফুল শুধু শরতের
নদী স্রোত শুধু বরষার
আর কত বন্দীত্বে বাধা হবে জগৎ এর প্রাণ!
হৃদয় কে বন্দী করা, দিয়ে হৃদয়ের বন্ধন!

অভিজ্ঞতা মানবকে বন্দী করেছে জ্ঞানের বদ্ধ ঘরে
আধার বন্দী হয়েছে আলোতে, আলো অন্ধকারে!
চতুর্দিকে দেখি শুধু এ বন্দিত্বের জয় জয়কার
সকল বন্দী মুক্তানন্দে নাচিতেছে অনিবার।

আকাশ বন্দী করেছে বাতাস কে
মাটি পানিকে অথবা পানি মাটিকে
আমি বন্দী করেছি আমিত্বকে
প্রভু তো নিয়ত বন্দী প্রভুত্বে।

বন্দীত্ব আজ বন্দী করেছে আমাদের
বন্দীত্বের হাতকড়া মুক্তির হাতে –
জগৎ বন্দী মহাজগতের কক্ষপথে
আবার অসীম বন্দী সিমানার মহাস্রোতে।

ইন্দ্রিয় বন্দী করেছে আমাদের,
শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধে,
আনন্দ আজ বন্দী বেদনার মাঝে
বেদনা বন্দী আনন্দে।

গান বন্দী কন্ঠে আজি, ছিদ্রে বন্দী সুর
স্থবিরতায় পরিল বাধা সকল পাহাড়চূড়!
জগতের সবখানে আজ এ নিঃশব্দের কোলাহল
বন্দী সকল করিতেছে পান বন্দীত্বের হলাহল।

এতো বন্দিত্বের মাঝে আমার এ বদ্ধ প্রাণ
বন্দীত্বের বাঁধনরে করিল সানন্দে বরণ!
হে আবরণ, হে বন্ধন, বাধো আরো শক্ত করে
এ প্রাণ আমার ধরার মাঝে, নিত্য মুক্তি তীরে!

রচনাকাল – 13/11/2018

আপন খবর