লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
“ওয়াস সালাতু, ওয়াস সালামু, আলা রাসুলাল্লাহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী ওয়া আউলিয়ায়ে উম্মাতিহি আজমাইন।”
‘রমুজে এশক’ বা প্রেমের রহস্য – হলো মহান মুর্শিদ প্রেমের রহস্য যা বিরাজিত রাসুল (দ:) এর প্রতিটি কথাতেই। রাসুল (সা) বর্ণিত 17 টি হাদীস বা বাণী হতে সেই আব-হায়াত বা মহাপ্রেমের অনন্ত ফোয়ারার সামান্য দ্বারোৎঘাটন করার চেষ্টা করা হলো।
17 টি হাদীস কে 17 টি কবিতা আকারে প্রকাশ করা হলো।
সুন্নত কি? মাওলা আলী (আঃ) এর এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাছুল (দঃ) 17 টি বিষয় উল্লেখ করেছিলেন- যা রাছুল (সাঃ) এর সুন্নত বলে বিধৃত।
17 টি সুন্নত নিন্মরূপ –
- মারেফত আমার সম্পদের মূল।
- বুদ্ধি আমার ধর্মের শিকড়।
- আল্লাহর জিকির বা ধ্যান আমার বন্ধু।
- প্রেম আমার ভিত্তি।
- অনুরাগ আমার বাহন।
- মহব্বত আমার ভান্ডার।
- জ্ঞান আমার হাতিয়ার।
- ধৈর্য্য আমার চাদর।
- ফকিরী আমার অহংকার।
- যুহদ বা বৈরাগ্য আমার পেশা।
- সত্য আমার রক্ষক।
- বিনয় আমার গর্ব।
- ইয়াকিন আমার শক্তি।
- জেহাদ আমার স্বভাব।
- সন্তোষ আমার সৌন্দর্য।
- আত্মনির্ভরতা আমার সম্পদ।
- ছালাত আমার চোখের পুত্তলী।
সূত্র – আশ শেফা, বেহুঁশের চৈতন্যদান – কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী ।
1. মারেফত আমার সম্পদের মূল
আমার আছে যত ধন
যত সৎ মহৎ অতি, যত আছে প্রাণ –
আমার সর্ব অস্বিত্বে যে রত্ন বহমান
সেতো দীল দরিয়ায় পাওয়া তব পরিচয় জ্ঞান।
তোমারে পেয়েছি আমার করে এইতো আমার মহাজয়
তব চরণ আলোকে গড়েছি আমায়, তোমার পূর্ণতায়।
তব ভেদ আজ জানিয়াছি আমি, আমাতে তুমি থাকো
আমার প্রাণের রূপে অরূপে, তুমি তোমারী রূপ আঁকো।
এইতো তোমার অনিন্দ্য সুর, যা বাজে সর্বদায়
আমারে কেন্দ্র তুমি, ধরা মাঝে তুমি প্রকাশিছ আপনায়।
এ ভেদ জানিয়া ধরেছি তোমারে, যতনে আমার মাঝে
জেনেছি প্রভু সদা সৎ আত্মায়, তোমারি গুণ বিরাজে।
এ আমার মারেফত, সকল ধনের মাঝে অতি মূল্যবান
আসরার তব আশেক হৃদয়ে, মারেফত রূপে বর্তমান।
2. বুদ্ধি আমার ধর্মের শিকড়
আমার ধর্ম গড়িয়াছি আমি
আমার সচকিত প্রাণ আপন ধ্যানে, করিয়াছে তোমারে স্বামী!
আমি আমারি হৃদয়ে আপন তোমায় করেছি অর্ন্তযামী
বারে বারে তব চরণ প্রনমী।
আমার প্রাণের যত সংস্কার আজি, ত্যাজিছি সযতনে
আমার সকল চেতনা প্রভু বিলুপ্ত তব চরণে।
শুধু অবচেতনে হেরিতেছি সদা তোমার চিন্ময় রূপ,
সে রূপ সুধা মোর অঙ্গে জ্বালিছে, গন্ধ বিধুর ধূপ।
আজ আর প্রভু নাই আমাতে আমার সচেষ্ট প্রাণ
আমি আজ ভবে আমিহীন হয়ে, তোমাতে রয়েছি মগন।
আমার সকল আকল নকল লুপ্ত মানস গগনে –
শুধু জানি প্রভু এ প্রাণ আমার, রয়েছে তোমার ধ্যানে।
জানিনা প্রভু এ প্রাণ কভু তোমারে পাইবে কিনা
জানি শুধু মোর হিয়ায় বাজিছে, তোমারই সুরের বীণা।
3. আল্লাহর জিকির বা ধ্যান আমার বন্ধু
তোমার স্বরনেরে লইয়াছি বন্ধু করে
ক্ষণে ক্ষণে মোর হৃদয় বনে, আপন পরাণ অন্দরে।
তব রূপ ধ্যান সদা জাগ্রত আমার হৃদয় মন্দিরে
তোমারী স্বরণ প্রভু ঘিরিয়া রয়েছে মোরে।
তব স্বরণ আনে প্রেমের অনিন্দ্য ধারা, হিয়ার গহীন তলে
আনে মরমে মোর মহাপ্রেমও বারি হৃদ যমুনার কূলে।
সে সুধাস্রোতে আমি গাহন করিয়া পূজিগো তোমারে সদা
তব মোহন মুরারী রূপ নয়ন হতে, হবে না কখনো জুদা।
তোমারী স্বরণ ধ্যান সায়র মোর জাগায় আপন প্রাণ
সে প্রাণের প্রতি পলে পলে প্রভু, তোমারী অধিষ্ঠান।
তোমার রূপের অচিন্ত্য মোহ প্রাণে রবে চিরকাল
যদিও বা ফিরে আসি বার বার, ধরণীর ধরাতল।
আমি ছাড়িব না কভু স্বরণ তোমার, করিয়াছি যারে আপন
সে মোর বন্ধু, সতত যেনো আমাতেই রহে বহমান।
4. প্রেম আমার ভিত্তি
আজিকে গাইব প্রেমের গান
যে প্রেম মোরে দানিয়াছে মহাপ্রেম, আপনার সন্ধান!
গুণেতে যাহার পেয়েছি আমার, আমারি প্রাণের ধন
আমার অন্তহীন কল্যাণ।
আমার এ প্রাণ পিঞ্জরে বসি ভুলিয়া ছিলে মোরে
লুকায়ে ছিলে এতদিন একা, আপনাতে অন্তরে –
আজ তব প্রতারনা শেষ হল প্রভু, চিনে গেছি তব পথ
তাই তোমারে আনিতে বাহিরে আমার, সাজায়েছি স্বর্ণরথ।
সে রথ আমার হৃদয় অনুরাগ, ভালোবাসা তব তরে
কেমনে রহিবে আঁখি মুদিয়া, না জাগিয়া মোর অন্তরে।
আমি জাগাইব প্রভু আমারি হৃদয়ে, হেনে মহাপ্রেম বান
সে প্রেমবানে আসিবে তুমি, আমারি বাসর কানন।
আমার সকল সাধনা, বাসনা, তোমারি চরণ পানে
প্রেমোরথে চড়ি চলিয়াছি প্রভু, তোমারী সন্ন্যিধানে।
5 . অনুরাগ আমার বাহন
তুমি যে ধনের ভিখারী
যে ধন লোভে মর্তে আসিয়াছ অনন্ত জগৎ ছাড়ি –
পাইতে যাহা ত্যাজিয়াছ আপনারে, আপনত্ব উৎসারী!
আমার প্রেম পাইতে নিজেরে, গড়িয়াছ রূপে আমারী।
সে ধন লভিয়া হে প্রেমোময় চিরদিন তোমা তরে
তব চরণ বাঞ্ছা করিয়াছে প্রাণ হৃদয় অন্দরে।
সে ধনে ধনী আরো করে মোরে, যেনো পাই তোমারে সদা
এ তিয়াস যেনো না মিটেগো প্রভু, বাড়ে যেনো সদা ক্ষুধা।
আমি চড়িয়াছি আজি অনুরাগ রথে, ধরিতে তোমারে হায়
জানি তুমি দিবে ধরা, যে প্রাণ তোমাতে সদা নিমগ্ন রয়।
ত্যাজিয়া তাহারে কি লাভ তোমার, যে তোমারে বাসে ভালো
যে তোমারে চায় একান্তে আপনায়, তারে কেমনে ত্যাজিবে বলো।
প্রভু জানি তুমি প্রেমোময়
আমার অনুরাগ চরণে তোমার, প্রেমের স্তুতি সদা গায়।
6. মহব্বত আমার ভান্ডার
রিক্ত না হয় কভু প্রেমিকের ভান্ডার
অফুরন্ত প্রেমোবারি সদা ঝড়ে পড়ে হইতে সে অন্তর!
প্রেমিক সদা ভাসে আঁখিনীড়ে, প্রেমও বানে যে নিথর –
প্রেমিক প্রেমও ধনে ধনী নিরন্তর।
এশক তোমার এ দীলে জ্বালায়, প্রেমাগ্নি অনল শিখা
এ প্রাণ যাচে দিবস নিশিথে সদায় যেনো পাই দেখা।
ভালোবাসা এ প্রাণের তোমারে টানিছে, আমার নিকটে অতি
আমার এ প্রেম সদা তোমারে, নিকট করিছে নিতি।
তোমার ভান্ড না হবে খালি, তুমি তো পরম প্রেমময়
যে শারাবে প্রাল হয়েছে মাতাল, পাইতে বুকে তব শ্রী চরণ।
আমার অন্তর আজ পেয়েছে তোমায় এশক সুধা বিছানায়
এ যে আমার মহব্বত প্রভু তোমার তরে যা তোমাময়।
তোমার ভান্ড না হবে খালি, তুমি তো পরম প্রেমময়
আমার ভান্ডার না ফুরাতে প্রভু, এসো মোর হৃদয় দরজায়।
7. জ্ঞান আমার হাতিয়ার
আমি পেয়ে গেছি আমার হাতিয়ার
আজ মহারণের প্রভু বাজিছে দামামা, মহাভারতে পূণর্বার!
আজি দূর্যোধন, দুঃশাসন, সকল দমনে, পেয়েছি রুদ্র-ধার
এ মহারণে জ্ঞান আমার হাতিয়ার।
কুরু-পান্ডুর বাঁধিছে লড়াই, হৃদয় ফোরাতের কূলে
সীমার, ওমর, এজিদে আজি এসেছে অস্ত্র তুলে।
কতল করিতে এ প্রাণ আমার, করিতে তাদের দাস
এ প্রাণ প্রভু তোমাতে সঁপেছি, কেমনে ত্যাজিব তব আশ।
একাই আজিকে দাড়ায়েছি রণে, হাতে লয়ে জুলফিকার
এ জুলফিকার মোরে পৌঁছাইয়া দিবে তোমারি চরণ পাড়।
হানিয়া আঘাত অসুরের শিরে সুর বাঁধিয়াছি প্রাণে
হারিয়াছে প্রভু জালিম রাজ্যপাল, কুরুক্ষেত্রের মহারণে।
আমার হাতিয়ার ব্রহ্মাস্ত্র বাণ, যা ভেদ করে অজ্ঞান
আমার নয়ন পর্দা সরায়ে, শ্রীরূপ করায় দর্শন।
8. ধৈর্য্য আমার চাদর
জগৎ মাঝারে যিনি ধৈর্যবান
সমগ্র বাঁধা পেরিয়ে সে সদা লভিবে সুন্দর প্রাণ!
প্রভু সেতো রহে তাদেরী সাথে যারা নিত্যের নন্দন
নিত্য সত্ত্বা প্রাপ্ত হতে ধৈর্যের কূলে দাও বাঁধন।
তোমার তরে রয়েছে দয়াল দয়াময় রূপ ধরে
পাইতে তারে হৃদয়ে তোমার ডাকো অবিরাম সুরে।
সে সুর যেনো না থামে কভূ বাজে যেনো অন্তহীন
সে সুরে মজিয়া আসিবে দয়াল তোমার চিত্ত কানন।
তোমার পরাণর শিষমহলে দেখো, সে রূপে জ্যোতি রয়
সে নূর সদা জাগিয়া তোমারে জাগায়ে রাখে এ ধরায়।
ধরিতে তারে পারিলে তুমি হইবে তাহার সখা
সেই আসিবে তব বাসর মাঝে, হৃদে আঁকিয়া চন্দন রেখা।
প্রাণবন্ধু সেতো আদরে ডাকিও পাইতে তারে বুকে
পরম ধৈর্য নিষ্ঠার সাথে ডাকিলে পাইবে তাকে।
9. ফকিরী আমার অহংকার
এইতো আমার অহংকার
আমার দলিত হৃদয় কুসুমে, প্রাপ্তির সুধাকর।
আমার ফকিরীর এ মহাদান, হিয়াশুন্য পিঞ্জর
ফকিরী আমার অহংকার।
আমারে লইয়াছো শুণ্য করে, একাকার করে চরণে
ছাড়িয়াছ মোরে অন্তহীনের, পথিক করে নির্জনে!
এ সৌভাগ্য-ডালি শিরে তুলে লয়ে, চলিলাম পথ পরে
আমারে ছাড়িয়া তোমার হেঁটে চলা পদচিহ্ন ধরে।
রাখিও ঐ চরণ আলোকে সর্বহীনা অভাজনে
আমার শুণ্যরে পূর্ণ করিও, তোমার নয়ন বানে।
শুণ্য হয়ে এসেছি গো প্রভু – এ মোর অহংকার
নব সাজে আজ চরণ ধূলায়, রাঙিব পূনর্বার।
এ আমার ফকিরী – তোমার ভিখারী, হয়ে রব চিরকাল
তোমার চরণে জড়ায়ে রাখিব, আমার মহাকাল।
10. যুহদ বা বৈরাগ্য আমার পেশা
ছাড়িয়াছি সকল আজ
পাইতে তোমারে হৃদয় মাঝারে, ভুলিয়াছি সকল কাজ!
যেনো প্রভু তুমি করো সতত মোর হৃদপদ্মে বিরাজ
আজ ধরিয়াছি বিরাগীর সাজ।
জানি প্রভু তুমি তারেই করো কৃপা, যে তোমার হয়ে যায়
সকল ত্যাজিয়া শুধু যে প্রেমিক, তোমাতেই শরণ নেয়।
শুধু তোমার প্রেম সুধা পিয়ে যার মিটে পিপাসা
তারেই তুমি কর সুধাদান, নিবাড়ী তাহার তৃষা।
একা হয়ে যে এ ধরাতলে শুধু, তোমারে রাখে মনে
তার তরেই তুমি বহাও আব হায়াত, প্রেমের বৃন্দাবনে।
তাইতো প্রভু পাইতে তব চরণ আলোক ধারা
তোমা বিনা সব ছাড়িয়া প্রভু, হয়েছি আপন হারা।
আমার সকল আমি ত্যাজিয়া আজি, তোমাতে নিয়েছি শরণ
বিরাগী আমি সকল হতে পাইতে তব রাঙা চরণ।
11. সত্য আমার রক্ষক
আমার হৃদয়েতে রয় আমার সত্য
হৃদয় উজার করি সে- হৃদয়ে জ্বালে, আলোক ধারা অনন্ত!
সে আলো মোরে দেখায় তব পথ, তোমার পথের মাহাত্ম্য
হে প্রভু, তোমার নূরে করো মোরে নূরান্বিত।
জগৎ মাঝে রয়েছে কত নাছুতের অগ্নি-ধারা
কত হিংস্র পশু, ব্যাঘ্র, শার্দুল, কত লোভের মোহনচূড়া!
কত জড়া ব্যাধি, মরণ, শমণ, কত অনিত্য কলুষ ভরা
এসব হতে বাঁচিবি কি করে, হে পথিক পথহারা!
বাঁচাইবে তোমারে এসব হতে তোমারি হৃদয়ের আলো
যে আলো জ্বালাইয়াছে সত্যের প্রদীপ, যে হৃদয় গহীনে ছিলো।
সকল ছাড়িয়া ধরিও সত্য যে করে তোমায় রক্ষণ
কভু ও সে ত্যাজিবেনা তোমায়, না ছাড়িবে অনুক্ষণ।
হৃদয়ে আমার জ্বালাও প্রদীপ দয়াল দয়াময়
সে প্রদীপ শিখায় যেনো খুঁজে পাই, তোমার চরণাশ্রয়।
12. বিনয় আমার গর্ব
আমি ধূলি তব চলা পথে
তোমার চরণস্পর্শে লভিব কাওসার – এ মোহ নিবৃত্তে –
চিরকাল রব পড়ে, ধূলি হয়ে তব চরণ বাহিত রথে!
তোমার অনন্ত প্রেমের স্রোতে!
প্রেম তো তোমার আদি অন্তহীন, যা নাহি ফুরায়ে যায় কভূ
সে প্রেম আশে তোমারি সকাশে, চাহিয়া রয়েছি প্রভু।
দাও মোরে সে শ্রীরূপ দর্শন, দাড়ায়ে মোহনরূপ ত্রিভঙ্গে
প্রেমরূপ তব হেরিব আমি, ধরিব আমার অঙ্গে।
আমি তব চরণের দাস তব দাসের দাসী অভাজন
বিনয় আমার তোমার চরণে প্রভু, যেনো রহে সর্বক্ষণ।
আমি সদা যেনো প্রভু ভজিগো তোমায়, ভরিয়া আমার ডালি
বিনয়ে যেনো হৃদয় উপারি, সাজাই সে পূজাঞ্জলী।
সে পূজা প্রভু গ্রহণ করিও হনন করিয়া মোরে
মরিব আমি শ্যামরূপে মোর, যে মুরলীধারী সংসারে।
13. ইয়াকিন আমার শক্তি
আমার অন্তরাত্মার প্রতি শাখায় শাখায়
তুমি দয়াময়, প্রভু আমার, অনাথের আশ্রয়।
তব শ্রীচরণ তলে, ব্যাপিত রহিব চিরকাল সর্বদায়
তুমি আমার শ্রীরূপ মহিমাময়।
অনন্ত হইতে প্রভু আসিয়াছ হেথা আমার স্বরূপ ধামে
ছিলে গঞ্জজাতে, একাকী একত্বে, প্রচারিলে বহু নামে।
বহু মাঝে তুমি একেরই ধারা তাওহীদে তব বাস
তুমি পরম প্রভু এ দেহ ধামে, লইয়াছ ক্ষনিক আবাস
পতিত পাবন হয়ে এ ধরায় ত্বরাইতে ভক্তজনে
জগতের হরি, নারায়ণ তুমি, নর হয়ে এলে ভূবনে!
তব জাতজগতে প্রভু উঠিয়াছে ঢেউ, প্রেমের সুধা বানে
তাইতো তুমি এলে ধরামাঝ, প্রেমের বৃন্দাবনে।
আমি অনন্ত প্রেমের গাহি জয়গান, প্রেমেতে পাব তোমায়
বিশ্বাস জোড়ে বাঁধিয়াছি প্রভু, তোমারে আমার আপনায়।
14. জেহাদ আমার স্বভাব
ফিরিতেছি তব দ্বারে
ধরিতে আপনত্বে তোমারে –
ত্যাজিয়া সকল কাল ফনী জ্বালা, ফেলিয়া ধরার ক্রোড়ে
আসিয়াছি তোমার দুয়াড়ে।
আত্মারে আমার করিয়াছি দাস তোমার চরণের তরে
আত্মার যত ছিল অনাত্মীয়, ভুলিয়া তাদের সকলেরে।
আজ অনন্ত শক্তিমত্তা বাহুতে আমার, ছিড়িতে সব মায়াজাল
সব ত্যাজি প্রভু চরণে তোমার রহিব স্থির অটল।
জিহাদ প্রভু দুনিয়া ধনে, যতই বাঁধন আনে
ছিড়িব সকল মুহূর্ত মাঝে, উন্মাদনার বানে।
আমি তেজী মহাকালে মহারথী আজ, নাই মোর কোনো ভয়
সব ভয় ত্যাজি আপন করিয়া লইব আজ তোমায়।
হে দয়াময় দাও নির্ভয়, এ মোর প্রার্থনা
এ জিহাদে প্রভু জিতিয়া আমি, তোমাতে হইব ফানা।
15. সন্তোষ আমার সৌন্দর্য
তুমি রহ যাতে খুশি
তাতেই পরম তৃপ্তি যে আমার, তাতেই আমি উল্লাসি।
তোমার এরাদায় যে স্রোত বয়ে যায়, তাতেই আমি স্রোতস্বী
আমি তোমাতেই রব খুশি।
বিভুতি তোমার ছড়ায়ে রয়েছে জগতের সবখানে
ভালোমন্দ সকল বহিছে ধরায় আমাদের কল্যাণে।
তোমার ইশারায় নদী বয়ে যায়, বয়ে যায় মহাকাল
তোমার সকল ইচ্ছা প্রভু রবে অধিষ্ঠিত চিরকাল।
আমি তো তোমার দাসের দাসী তব চরণের ভিখারী
আমার তরে প্রভু সদায় বহিতেছে তোমার করুণাবারী।
তব কৃপা তলে রহি নিরবধি, শিরেতে বাঁধিয়া তব দান
তোমারি ধ্যান সদায় আমায় করেছে মৃত্যুহীন।
কি ক‘বো তারে হৃদয়ের কথা, হৃদয়ের যে অধিশ্বর
তোমা তরে প্রভু সদা যেনো থাকে, উন্মুখিয়া এ অন্তর।
16. আত্মনির্ভরতা আমার সম্পদ
আমারি পরাণে আমি পেয়েছি তোমায়
আমার এই বুকের গহীনে হৃদয় পিঞ্জরায়।
খোদবি নাস্তি করে খোদাবি প্রাপ্ত হতে, তোমার রূপের দরিয়ায়
পরমেরে করে ধারণ প্রাণে, হয়েছি গুরুময়।
আপনত্বে আমার ছিল যে প্রাণ চির বহমান
অনন্ত কালের স্রোতে, অন্তহীন চির মূর্তমান।
সে খোদ খোদা আজি গুরুরূপে মোর ধরা দিল আপনায়
দয়াল তব শ্রী রূপে আজ, সে রূপ পেলাম নিত্যতায়।
তব রূপ আর সে রূপ প্রভু নাহি কভু হয় জুদা
পরম খোদা তুমিই দয়াল তোমাতেই সে রয় বাধা।
আমার তরে হৃদয়ে আমার রয়েছিলে জাগি নিশিদিন
ত্যাজিলে আমিত্ব পরম তুমি জাগিবে নিত্যপ্রাণ।
আমিতো প্রভু ওগো আমি নহি আর তোমারে ধরিতে প্রাণে
হয়ে গেছি তুমিময়, তুমিই আমি, আনাল হক্বের ধ্যানে।
17. ছালাত আমার চক্ষের পুত্তলী
তব মিলন আমার জীবনের সাধনা
আঁখিধারে বয়ে যাওয়া স্রোতশীল কামনা
মোর মরমও মাঝে প্রভাত সাঝে, তোমার চরণ বন্দনা
আমার জীবনের সাধনা।
মাশুক তুমি এ হৃদয়ে রাধামনের অনঙ্গে
আঠারো দন্ড নিশায় আসো, কাব কাওসাইনে ত্রিভঙ্গে।
আওআদনাতে আরো নিকট ধরা দাও মোর ত্রিলোচনে
প্রেম বাসরে ওরাওলে মাশুক রূপ দরশনে।
হেরিব ঐ শ্রীরূপ সুন্দর আঁখি যুগল ভরিয়া
মোর ব্যাকুল নয়ন শান্ত হবে, সে রূপ সুধা হেরিয়া।
শত জনম কাটুক প্রভু সে রূপ হেরী পলকে
অবিরত আসবে প্রাণে দীদার তোমার আলোকে।
শ্রীরূপ তব আঁখি মাঝে সদায় রবে অঙ্কিত
সে রূপ সাগরে ডুবে আমার নয়ন হবে শিতলিত।
রচনাকাল – 01/01/2017
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
17 হাদীস রহস্য “রমুজে এশক” সমাপ্ত ।