পত্রিকা – একটি গানের তাফসির – ৬ষ্ঠ সংখ্যা ৩য় পর্ব

হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী

সুনামগঞ্জের শাল্লায় মার্চের ১৯ তারিখে (২০২১ ইং) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতের নেতা মৌলবী মামুনুল হক ও মৌলবী বাবুনগরীর উত্তেজনামূলক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বন্য পশুর মতো (নরুপশুই) আক্রমণ, ভাংচুর, লুটপাট এবং হত্যাকান্ড চালিয়েছে তাদের মতাদর্শে উজ্জীবিত জঙ্গি মৌলবাদীরা। এর পূর্বে শাপলা চত্ত্বরেও আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজ এ সমস্ত নরপশুগুলোকে গ্রেফতার করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানিয়েছেন। বিষয়টি এমন যে, বিএনপি নামক চুলায় কওমী হেফজতের কাড়াই বসিয়ে জামায়াতে মুওদুদীর লাকড়ী জ্বেলে দিয়েছে, আর হেফাজতের মৌলবাদী মোল্লারা টগবগ করে জ্বলছে আর তান্ডব চালাচ্ছে। ৭১’এর স্বাধীনতার পর জামায়তে মওদুদীরা মৌলবী ইলিয়াছের তাবলিগ জামাতের হিজাবের আড়ালে লুকিয়ে ছিল এবং সেখান থেকে ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ লাভ করে তারা আবার সংগঠিত হয়ে মন্ত্রিত্বের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল।

বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ ওরা আবার ২০১০ ইং সালে হেফাজতের হিজাব পড়ে আত্মপ্রকাশের ধান্ধায় তান্ডবলীলা করে চলছে। আওয়ামী-লীগ সরকারের সতর্ক এবং কঠোর দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে ওরা নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য কেউ দলের সমালোচনা করছে, কেই পদত্যাগ করছে, কেউবা হেফাজতের বিচার চাইছে। ধর্ম জ্ঞানশূন্য মির্জা ফখরুল বলছে, “আলেমে দ্বীনকে’ কে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তিনি তাদের পক্ষে আছেন। ধর্মীয় নেতা আলেম-ওলামাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছেন। কতটুকু ধর্ম জ্ঞান শূন্য হলে এ ধরনের কথা বলতে পারে। সেজন্যই মির্জা ফখরুল শুধু জুব্বা-টুপিধারীকেই ‘আলেমে দ্বীন’ বুঝেছেন। ‘আলেমে দ্বীন’ কাকে বলে সে সম্পর্কে তার হুঁশ-আক্কেলও নেই। তাদের ঘাড়ে মৌলবাদি ভূতে আছর করেছে বিধায়ই বিএনপির আজ এমন করুন পরিণতি, লেজে গোবরে অবস্থা। তাতেও তাদের হুঁশ-আক্কেল জাগেনি। বলা হয় গন্ডারের গায়ে গুলি লাগলে নাকি দুই ঘন্টা পরে লাফ দেয়, কিন্তু ফখরুল সাহেবদের ১০ বৎসরেও হুঁশ-আক্কেল জাগেনি। আপনারা যাদের কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছেন তারাই আপনাদেরকে টেনে হেচড়িয়ে নামিয়ে ময়লার স্তুপে নিক্ষেপ করে দিবে। এ দেশকে আফগানিস্তান বানানোর ধান্ধায় আছে। ধর্মের হিজাব পড়ে লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে হত্যা করার ইতহিাস যারা রচনা করছে। আমার মতে কোনো আলেমকে গ্রেফতার করা হয়নি, হয়েছে আলেমের ছদ্মবেশে ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীদেরকে, জালেমদেরকে।

যারা স্বীয় সআর্থেদ্ধারের জন্য ধর্মের নামে, ধর্মের ছদ্মবরণে অসুরত্বের শক্তি প্রদর্শন করে চলছে। এ ধরনের আরো বহু ঘটনা মৌলবাদী জঙ্গিরা ঘটিয়ে চলছে ধম্যের হিজাব পড়ে। এই তো ৫ই এপ্রিল’২১ হেফজতের নেতা মৌলবী মামুনুল হক ঝর্ণা নামে এক বিউটি পার্লারের নারীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এক রিসোর্টে আসার ঘটনায় লঙ্কাকান্ড বাঁধিয়েছে। এ ধরনের আরো এক নারীর সাথে তার গোপন সম্পর্কের কথা মিগিয়ায়/খবরের কাগজে এসেছে, তা বিশ্ববাসী দেখেছে/ফোনালাপ শুনেছে। এখন এক নম্বর, দুই নম্বর, তিন নম্বর-নম্বরওয়ালা স্ত্রী বের হচ্ছে। কিন্তু সোনারগাঁও ধরা পড়ার আগে কি কোনো নম্বরের স্ত্রীর কথাই তার প্রথম স্ত্রী বা তার পরিবারের কেহই জানতো? জানতো না তার দলীয় কোনো লোকজনও। তাও প্রথম স্ত্রী ব্যতিত বাকি স্ত্রীদের কোনো কাবিন নামা (রেজিস্ট্রি) নেই বলে নিজেই স্বীকার করছে (যুগান্তরসহ সব পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে)। এর মানে চুক্তি বিবাহ (মুতা বিয়ে), তারা যা হারাম বলছে, তা আবার তারাই করছে! সুবিধাবাদীরা এখন ইজ্জত হেফাজত করার জন্য বলছে, ইহা তার ব্যক্তিগত ব্যপার। এ বিষয়টি নিজেদের বেলায় এখন যে ফতোয়ার আমদানি করছে তা অন্যদের বেলায় হলে তা অন্যরকম ফতোয়া দিয়ে ওরা অপপ্রচার, তান্ডব চালাতো- যা ওদের সহজাত প্রবৃত্তি। হেফাজতের নেতারা বেকায়দায় পড়ে এখন বলছে, ইহা তার ব্যক্তিগত ব্যপার। জেল হতে বের হলে বা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হেফাজতের নেতারা হয়তো বলেই ফেলবে- ইহা ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা, আসলে কিছুই হয়নি।

এ সমস্ত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য হেফাজতের নেতারা এখন ইজ্জত হেফাজত করার বিভিন্ন দাওয়াই’ও প্রয়োগ করে চলছে। হতে পারে হেফজতের ইজ্জত হেফাজত করার জন্য, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চেষ্টা করছে। কিন্তু মাছটি এত বড় এবং বেয়ারা যে তা শাক দিয়ে ঢাকা যাচ্ছে না। মৌলবী মামুনুল হক উচ্চস্বরে চিৎকার করে বক্তব্য দিয়ে মানুষকে বুঝাতে চাচ্ছে, সে-ই একমাত্র সঠিক পথে আছে, সে-ই একমাত্র ধর্ম জ্ঞানের অধিকারী আর বাকি সবাই কচু!!! ইহাই অজ্ঞতা-মূর্খতার পরিচয়। এত মহাজ্ঞানীই যখন মৌলবী মামুনুল হক তবে একটি কাজ করে বিশ্বের মুসলমানদেরকে তাক লাগিয়ে দেয়া হোক দেখি! আর সে কাজটি হলো “৭২ ফেরকার (এক কাতার মুক্তিপ্রাপ্ত, ৭২ কাতার হতে বের হয়ে এসে এক কাতার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান এনেছে, পিতৃধর্মের অনুসারী নয়) লোকদেরকে একটি ফেকরাকয় পরিণত করে দেখিয়ে দিন? তা আপনি/আপনারা কোনো দিনই পারবেন না, আপনার সাথে এ বিষয়ে আমার চ্যালেঞ্জ রইলো। আপনার মতো তাদের মধ্য হতে ও নিজেরাই সঠিক বলে দাবী করে উচ্চস্বরে চিৎকার করছে, মহিষের গর্জ্জন করেছে। আর বড়ার (আমের আটি) মন্ত্র পাঠ করছে, “আমার বাঁশি বাইজো, আর কারো বাঁশি বাইজো না।” আর যার যার ফেরকার সাইনবোর্ডটি উপরে তুলে ধরার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত ছিল/আছে। তাদের মধ্যেও আপনাদের মতো লক্ষ লক্ষ মুফতি, মুফাচ্ছের, মুহাদ্দেস রয়েছে।

তারা এক অন্যকে পথভ্রষ্ট বলে গালা-গালি করছে, কাফের-ফাসেক বেদআতি বলে ফতোয়াবাজি করছে, মারামারি, খুনাখুনি করছে। আপনিও তার মধ্যে একজন। সুতরাং আপনার অবস্থান কোথায় তা আশা করি এবার বুঝতে পারেছেন, যদি সামান্যও হুঁশ-আক্কেল থেকে থাকে! অন্যান্য ফেরকার মধ্যেও আপনার/আপনাদের মতো লক্ষ লক্ষ আলেম-মোল্লারা সত্য সত্য বলে বৃথা চিৎকার করে তাদের সাইনবোর্ডটি উপরে তুলে ধরার প্রতিযোগিতায় রতো ছির/আছে। আপনি এবার নিজের বিবেকের সিদ্ধান্ত নিয়ে বলুন আপনি/আপনারাও কতটুকু সত্য, কোন ফেরকায় আছেন। আপনিও ফেরকাবন্দির চারি দেয়ালে খোঁয়ারে বাধা ষাঁড়ের মতো নিস্ফল অস্ফালন করছেন। চেয়ে দেখুন আপনি/আপনারা যে ফেরকাই দাবী করবেন, আপনাদের বিপরীত ফেরকা রয়েছে। সুতরাং এ সমস্ত মহিষের নিস্ফল গর্জন ছেড়ে অলি আউলিয়াদের পথে ধাবিত হয়ে সুন্দর একজন মানুষ হতে চেষ্টা করুন; আদব-নম্রতা-ভদ্রতা প্রকাশ করুন। আপনার/আপনাদের মধ্যে অজ্ঞতার মিথ্যা মিথ্যা অহংকার-অহমিকা, হিংসা, দলাদলি, মারামারি করার যে আগুনটি (নারুল্লাহি মুকাদ্দাতু) দাউ দাউ করে জ্বলছে, তারই প্রভাবে উগ্রতা, উচ্ছৃঙ্খলতা মাদ্রাসার ছোট ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে, পথভ্রষ্ট হচ্ছে। আপনাদের ভুল শিক্ষা-আচরণে শত শত ছোট ছেলেরা পথভ্রষ্ট হচ্ছে, আক্রান্ত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে। হিংসা-প্রতিহিংসার অগ্নি যারা দীলে পোষণ করছে তারাই অগ্নিপূজক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আলেম-মোল্লা আর অলিআল্লাহর/ফকিরের মধ্যে রয়েছে আসমান-জমিন প্রভেদ- এ বুঝ জ্ঞান আপনাদের কতটুকু আছে তা আপনাদের ভাব-ভাষা-বক্তব্য হতেই বুঝা যাচ্ছে।

এ সব কামড়াকামড়ি থেকে বের হয়ে এসে একজন মুর্শিদের/গুরুর খেদমতে আত্মনিয়োগ করে নিজেদের বাস্তবে মুক্তি জগতে নিয়ে যেতে চেষ্টা করুন। আদব-নম্রতা, ভদ্রতা, প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববন্ধন সুন্দর আচরণ শিখতে চেষ্টা করুন এবং মানুষের সাথে সে ধরনের ব্যবহার করুন, সে যে ধর্মেরই হোক। জানি, এ ধরনের আচরণ করতে আপনাদের মহা কষ্ট হবে। কারণ, এধরনের শিক্ষা নেয়ার মাদ্রাসায় আপনারা নিজেরাও পড়েন নি, শিক্ষা নেন নি, শিক্ষা দেন ও না। তা আপনাদের ঈমান-আকিদা, আচার আচরণ হতেই স্পষ্ট প্রমাণিত। ওয়াজ নামক আওয়াজে আপনার মতো মহিষের গর্জ্জন সাড়ে তের শত বছর পূর্ব হতেই শুরু হয়েছে, এখনো কেরছেন; আর কত দিন এ ধরনের চিৎকার করবেন? আপনাদের এ সমস্ত আচরণের ফলাফল এক সত্য সনাতন ইসলামকে তেহাত্তর তালি পোশাক পড়িয়ে জোকার সাজিয়ে অন্যান্য জাতির সামনে তুলে ধরেছেন, পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কলঙ্ক করছেন। আর কী করতে চান? তারপরও আপনাদের বোকামিপূর্ণ মহিষের গর্জ্জনসম আস্ফালন বন্ধ হচ্ছে না? বোকায় বুঝে না সে কতো বড় বোকা। আপনার/আপনাদের ভাবখানা “মুই কী হনু রে।” আপনি/আপনারা কিছুই হন নি, হয়েছেন সত্যভ্রষ্ট। সত্যকে স্বীকার করা সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি ব্যতীত আর কারো দ্বারা মোটেও সম্ভব নয়।

আপন খবর