হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
হযরত গেসু দারাজের মুর্শিদ হযরত খাজা নাসিরউদ্দিন মাহমুদ চেরাগে দেহলী (রাঃ) এর ওফাত লাভের সময় তাঁর ভাগিনা শেখ কামালউদ্দিন এবং শেখ রুকুনুদ্দীন বেরুনীকে বললেন, চিশতীয়া খান্দানের পূর্বকালের পীর-মুর্শিদগণের যে সমস্ত নেয়ামত আমার নিকট গচ্ছিত ছিল, উহা হতে যে যা প্রাপ্য আমি তাকে তা দিয়েছি। তোমাদের প্রতি আমার নির্দেশ হলো যে, “আমার ওফাত লাভের পর আমাকে সমাধিতে রাখা হলে আমার খেরকাটি আমার সীনার উপর, কাষ্ঠ পাত্রটি মাথার নীচে, তসবীহ ছড়াটি আমার আঙ্গুলের ফাঁকে, কাষ্ঠের খড়ম জোড়া এক পার্শ্বে এবং লাঠিটি অপর পার্শ্বে রেখে দিও।” হযরত গেসু দারাজ তাঁর পীরের খেরকা না পেয়ে যে চার পায়ার উপর তাকে গোসল করানো হয়েছিল সে চার পায়ার বানা হতে রশি খুলে তা নিজের গলায় ঝুলিয়ে বললেন, ‘ইহাই হযরত শেখের নেয়ামতস্বরূপ আমার খেরকা।’ এ বলে দাক্ষিণাত্যের দিকে রওয়ানা হয়ে গেলেন। দাক্ষিণাত্যে যাবার পথে উক্ত রশি হতে সামান্য যার গলায় পড়িয়ে দিয়েছেন, তিনিই ওলীআল্লাহ হয়ে গিয়েছেন।
হযরত সাইয়্যেদ মুহাম্মদ গেসু দারাজ (রাঃ) ২২ বৎসর গুলবর্গায় অবস্থান করেন এবং ৮২৫ হিজরীর ১৬ই জিলক্বদে ওফাত লাভ করেন। সুলতান আহমাদ শাহ্ বাহ্মানী হযরত গেসু দারাজের খুব ভক্ত ছিলেন। তিনি হযরত গেসু দারাজের মাজার শরীফে অনেক বড় গম্বুজ তৈরী করেন এবং মাজার শরীফের দেয়ালের গায়ে সোনালী হরফে পূর্ণ ত্রিশ পারা কোরান মজিদ লিখিয়ে দেন। গম্বুজের গায়েও স্বর্ণ খচিত বহু নক্শা করিয়েছিলেন। দিল্লীর একজন খ্যাতিমান আলেম নাসিরুদ্দিন তার প্রথম জীবনে কোনো বুযুর্গ লোককে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন না। শেষ বয়সে তিনি হযরত গেসু দারাজের নিকট বায়াত হলে তার ওস্তাদ তা জানতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি শ্রেষ্ঠ আলেম হয়ে গেসু দারাজের নিকট মুরিদ হলেন কেনো ? তখন মাওলানা নাসিরুদ্দিন উত্তর দিলেন, ‘আমি আগে শুধু আলেমই ছিলাম, এখন হযরত গেসু দারাজের হাতে বায়াত হয়ে মুসলমান হয়েছি। বুঝা গেল যতো বড় আলেমই হোক না কেনো বায়াত না হলে সে মুসলমান হতে পারবে না, বুঝতে হবে সে ঈমানদারই নয়- ইহাই কোরানের নির্দেশ (মজিবুর রহমান রচিত ‘তাজকেরাতুল আউলিয়া’-১৪৩ পৃষ্ঠা)।
হযরত সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী দাতা গঞ্জে বখ্স হাজবেরী (রাঃ) এর রচিত বিখ্যাত ‘কাশফুল মাহজুব’ কিতাবের ১১২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে, আশেকে রাছুল (সাঃ) এবং খলিফায়ে মাওলা আলী হযরত ওয়ায়েছ করণী (রাঃ) এর (তাঁর গুরু মাওলা আলী আ.) কেশ মোবারক অনেক দীর্ঘ ছিল। অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, তিনি তাঁর লম্বা কেশ মোবারক মাথার তালুতে মুঠির মতো পেঁচিয়ে রাখতেন। তাঁর এ দীর্ঘ চুলের কথা রাছুলপাক (সাঃ) নিজেই হযরত ওমর (রাঃ) এবং মাওলা আলী (আঃ) কে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি কোনো মানুষজনের সাথে সংশ্রব রাখতেন না, সর্বদা নির্জনে বাস করতেন।
রাছুলপাক (সাঃ) বলেন, “মান ইস্তার ছাল শারাহু ফি কেফাহা হুশেরা লাহু ইয়াও মা কিয়ামাতে মাআল মুহছেনীন।” অর্থাৎ যে লোক নিজের মাথায় চুল পিছনের দিকে লম্বা করে ছেড়ে দিবে কিয়ামতের দিন নেককারদের সাথে তার হাশর হবে (রূহে তাসাউওফ-৭২ পৃষ্ঠা)।
উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে মাহবুবে এলাহী হযরত খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) বলেন, এ হাদিসটির শুদ্ধতা প্রমাণিত। আমি নিজে এ হাদিসটি কারো নিকট হতে শুনিনি। বরং স্বয়ং হুজুর (সাঃ) এর জবান মোবারক হতে আমি শুনেছি। আল্লাহর ওলীদের পক্ষ হতে তা অবশ্যই সম্ভব, তার বহু নজীরও রয়েছে।
সাধক পীর-ফকিরগণ নির্জন বা একাগ্রচিত্তে অধিক কাল সাধনায় থাকাটাও তাদের চুল গোঁফ/মোচ লম্বা হওয়ার একটি কারণ। এ সম্পর্কে দলিলাদী ধর্মীয় কিতাবসমূহে এবং ইতিহাসে সাবেত আছে। ওলী-আউলিয়া বা ফকির, দরবেশ , সুফি সাধকগণের ক্রিয়া-কর্ম রাছুলপাক (সাঃ) এর নবুয়ত ও বেলায়েতের আলোকেই সম্পন্ন করেন এবং তারা যা বলেন তা-ই একমাত্র পতিত মানবজাতির বাস্তব মুক্তির বিধান এবং তাদের নির্দেশিত পথই হলো শরীয়ত, তাদের মুখের কথাই হলো ঐতিহাসিক বাস্তব দলিল। তাদের নিকট দলিল চাওয়া যায় না। যেমন রাছুলের কালামের বিরুদ্ধে কোনো ঈমানদার কখনো দলিল প্রমাণ চায়নি, দলিল-প্রমাণ চাওয়া ঈমানের দূর্বলতার প্রমাণ। যারা চেয়েছে তারা ছিলেন কাফের-মুনাফিক। তেমনি আল্লাহর ওলীদের নিকট হতেও দলিল-প্রমাণ চাওয়া যায় না, তাহলে ঈমানের দূর্বলতার প্রমাণ সাব্যস্ত হবে। কোরানে বর্ণিত হযরত মুসা ও খিজির (আঃ)-এর ঘটনা মধ্যেও তার নজীর রয়েছে। যারা সত্যিকারের ঈমানদার/ভক্ত/মুরিদান তারা কখনো কোনো মতেই গুরুর নিকট সত্যতার দলিল প্রমাণ চাইতে পরে না বা তাদের কালামের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কোনো মোল্লা-মুফতির নিকট জিজ্ঞাসা করবে না।
সুরেশ্বর দরবারের আদি পীর হযরত জান শরীফের প্রণীত ‘জামে হক জামে নূর’ কিতাবে বর্ণিত আছে, ভারতের বিখ্যাত সাধক হযরত বু-আলী কলন্দর (তাঁর তরিকার আকিদা আলেম-মোল্লাদের আকিদার বিরোধী কাজ করা) বাকাবিল্লাহ প্রাপ্ত মোকামে মাহমুদায় স্থিত ছিলেন, মজনু-মজ্জুব হালরত অবস্থায় তাঁর দাঁড়ি, চুল, গোঁফ মাত্রাধিক লম্বা হয়ে গিয়েছিল। তাতে একদল অন্ধ-বধির আলেম-মোল্লাগণ তাঁর গীবত-নিন্দা, ফতোয়াবাজির ডিগবাজি খেলতে শুরু করলো। এ সংবাদ আলেম- মোল্লাদের নিকট হতে শুনে ধর্ম ব্যাপারী নগরের কাজী তেলে-বেগুণে জ্বলে উঠলো এবং অনন্তর তাঁর লম্বা দাঁড়ি, চুল, গোঁফ কাটার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কেহ সাহস করে রাজি হয়নি বিধায় কাজী সাহেব নিজের ছেলেদেরকে পাঠালো ফকিরের লম্বা চুল, দাঁড়ি-গোঁফ কাটার জন্য। বু-আলী কলন্দর শাহ্র লম্বা চুল, দাঁড়ি, গোঁফ কাটতে গিয়ে কাজীর তিন ছেলেই মৃত্যুবরণ করে। তাতে কাজী সাহেব আরো অগ্নিশর্মা হয়ে নিজেই লম্বা মোচ কাটতে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে মোচ হতে রক্ত প্রবাহিত হতে শুরু করলো। তা দেখে কাজী সাহেব ভয়ে কম্পমান হয়ে মোচ কাটা বন্ধ করে দিলেন। তখন হযরত বু-আলী কলন্দর (রাঃ) বললেন, ‘হে বেকুফ! কাজী! তোর মতো কুকুরের মোচ-গোঁফ আমার নয়। আমার গোঁফ-মোচ খোদার জিকিরে মশগুল থাকে। এরপর কাজী সাহেব বু-আলী কলন্দর সাহেবের নিকট নতশীরে চরণে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি লাভ করেন। কলন্দরী তরিকার নিয়ম হলো ওরা দাঁড়ী-মোচ-চুল মুন্ডন করে ফেলে, নয়তো তা আর কখনো কাটেই না। বড় বড় চুল-দাঁড়ি গোঁফ রেখে থাকে। ইলমে মারেফাতের দেশে প্রচলিত শরীয়তের আইন অকেজো-অচল। ঠিক তেমনি ইলমে মারেফাতের দেশের বিধি-বিধান শরীয়ত শাস্ত্রে অচল-অকেজো। কারণ, ইলমে শরীয়তের কালাম মুতাশাবেহাতের অন্তর্ভূক্ত আর ইলমে মারেফাতের কালাম মুহকামাতের অন্তর্ভূক্ত। যে ইলমে মারেফাত অর্জন করেনি তার শরীয়তের ইলেম কোনো কাজেই আসবে না। অপর দিকে দ্বীনে মুহাম্মদী বা দ্বীন ইসলামের শরীয়ত হলো খোদাকে চিনার মূল ভিত্তি, ইসলামের মধ্যে এ শরীয়তই হলো প্রধান বিষয়। শরীয়তের মধ্যেই আল্লাহ খোদাস্বরূপ মূর্তমান-বর্তমান বিধায় উম্মতে মুহাম্মদীগণ খোদাকে দেখেই ছালাত কায়েম করছে (আচ্ছালাতু মেরাজুল মুমিনীন)। ইলমে মারেফাতের দেশে একমাত্র পুরুষগণই বিহার করতে পারেন এবং তাদের অনুসারীগণ সে দেশের যাত্রী।
ধর্ম ব্যাপারী কাঠ মোল্লা-মুফতিরা শুধু ধর্মীয় শাস্ত্র-পুথি আওড়িয়েই ধর্মজ্ঞানী সেজেছে। এ এক ধরনের তোতা পখির শিখানোর বুলির মতো। কিন্তু তার নিগূঢ় রহস্য উপলদ্ধি করতে পারেনি। এ ধরনের বিদ্যা পরকালে কোনো কাজেই আসবে না-এ বুঝ-জ্ঞানটুকুও যদি তাদের মধ্যে জাগতো তবে হয়তো শুভবুদ্ধির উদয় হতো। যার ইলমে মারেফাত জানা নেই সে তো আলেমই নয় ! আশ্চর্য যারা আরবী ভাষার পন্ডিত হয়ে তিন কুড়ি তেরটি টাইটেল গলায় ঝুলিয়ে অহংকার অহমিকায় আকণ্ঠ ডুবে আছে, তারা কিন্তু ‘আলিফ’ অক্ষরটির ভেদও জানে না। তাদের ওয়াজ নামক আওয়াজের উচ্চ চিৎকারে রাস্তা-ঘাট, হাট-মাঠ গরম করে তুলছে। মূল উদ্দেশ্য জনতাকে উত্তেজিত করে বড় বড় মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দেস, মুফাচ্ছের, জেহাদি ইত্যাদি বলে নিজেকে তুলে ধরা, প্রচার করা আর টাকা কামাই করার ফন্দি-ফিকির করা। তাতে নানা রকম দ্বন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি করে ইসলামকে সাম্প্রদায়িকতার ভিতর আবদ্ধ করে মুসলিম সমাজকে ধ্বংসের এক অন্ধকার গহ্বরে নিক্ষেপ করছে। এরাই ইসলামের বারোটা বাজিয়ে চলছে। দ্বীনে মুহাম্মদী বা দ্বীন ইসলামের মধ্যে শরীয়ত এবং মারেফাত অবিচ্ছিন্নাবস্থায় আছে। দ্বীনে মুহাম্মদীর মধ্যে শরীয়তই সবার বড়, শরীয়তের উপরই তরিকত, হাকিকত, মারেফাত এবং অহেদানিয়াত। কিন্তু তথাকথিত মুসলিম সমাজ সে শরীয়ত হতে বিস্মৃত আছে। যা আছে তা তাদের মনগড়া শরীয়ত। এ শরীয়ত বাকি চার রাহা হতে বিচ্ছিন্ন বিধায় ইহা শরীয়তই নয়। ইসলামের মধ্যে শরীয়তই প্রধান বিষয় এবং শরীয়তেই আল্লাহ খোদা হয়ে মূর্তমান-চিরবর্তমান।
হাদিস হতে (মুসলিম) জানা যায় রাছুল (সাঃ) বলেন, “ইন্নাল্লাযিনা লা ইয়ানজিরু ইলা সওয়ারিকুম ওয়ালা ইলা আমালিকুম, ওয়া লাকিন ইয়াজুরু ইলা কুলুবিকুম নিয়াতিকুম।” অর্থাৎ নিশ্চয়ই আল্লাহপাক তোমাদের বাহ্যিক এবং তোমাদের আমল দেখেন না। তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর এবং নিয়ত। তাই অপর একটি হাদিসে বলা হচ্ছে, ‘ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়াত।’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমল নিয়তের উপর। বিচার হবে নিয়তের, কর্মের নয়। শুদ্ধ নিয়তের ছোয়াব সাথে সাথেই পেয়ে যায়, তা বাস্তবায়ন না হলেও। সুতরাং যারা লম্বা চুল-গোঁফ ইত্যাদি রাখে অথবা রাখে না, তারা যার যার নিয়তানুসারেই তার ফল পবে। লম্বা চুল-গোঁফ দেখলে যাদের মধ্যে এলার্জির চুলকানি উঠে, পশুত্ব-অসুরত্বের চরিত্রটি প্রকাশ পায় তারা পশুই- যদিও মানব সুরতের আড়ালে বাস করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক পশুর লেজ, শিং, বিষাক্ত দাঁত। যখন যে লেজটি নড়েচড়ে উঠে তখন সে পশুর মতোই আচরণ করতে থাকে। মানবরূপ পশুগুলো দ্বারাই পীর-ফকির, সুফি, দরবেশ এবং তাদের অনুসারীগণ আক্রান্ত হচ্ছে যুগে যুগে। এরা কখনো কোনো কালেই গুরুকে স্বীকার করে নেয়নি। তাদের দেহ ত্যাগের সাথে সাথেই সুরত বদল হয়ে যাবে (সুরা রহমান দ্রঃ)।
মূলতঃ লম্বা চুল, গোঁফ, দাঁড়ি রাখা প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে ফতোয়াবাজি করা অজ্ঞতা-মূর্খতারই নামান্তর। মানব মুক্তির বিধান মানব ধর্ম ইসলাম (নফস মুৎমাইন্নাহর অধিকারী হওয়া) কখনো ধর্মের নামে জোর-জুলুম স্বীকার করে না (লা ইকরাহা ফিদ্দ্বীন)। কিন্তু আলেম-মোল্লা-মুফতিরা জোর-জুলুম করবে, ফতোয়াবাজি করবে। তাদের অহংকার-অহমিকাপ্রসূত মতলবটিকে কোরানের দোহাই দিয়ে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিবে, তাতে কার্য সিদ্ধি না হলে পশুত্বের চরিত্রটির বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করবে ; ফেরকাবাজির ডিগবাজি খেলতে শুরু করবে। এ ধরণের লোকগুলোই হলো জালেম।
কোরানের বিধান মতে কোথাও লম্বা চুলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসেনি, দাঁড়ি রাখার বিষয়েও কিছু আসেনি, আসতে পারে না। কারণ, মানব মুক্তি বিধান মানব ধর্ম বা দ্বীন ইসলামের মূল বিষয় এখানে নয়। রাছুল (সাঃ) বলেন, “আল ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত।” অর্থাৎ ইসলাম হলো স্বভাব ধর্ম। খান্নাছমুক্ত স্বভাবের অধিকারী মানুষটিই হলো মুসলমান। ভক্ত/মুরিদান/সাধক/আমানুগণের উপর নির্দেশ হলো এ শয়তান বা খান্নাছের অনুসরণ না করা (কোরান দ্রঃ)। এর মধ্যে কোনো জাতি বর্ণ গোত্র নেই। যে মানুষই শয়তান বা খান্নাছ/ইভিল/নারদ মুক্ত হয়েছে সে-ই খাঁটি মুসলমান বা হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান। এখানেই কালেমার মূল মন্ত্র-শিক্ষা। অজ্ঞ-মূর্খরা ভেদ না বুঝে মানব জাতির মধ্যে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি, মারামারি করছে, দ্বন্দ্ব-বিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে চলছে, ইহা কোরান বিরোধী কাজ। ইহাই হলো শয়তানের কর্ম এবং ধর্ম। এরা কখনো এক হতে পারে না বিধায় এরা ‘হিজবুশ্শায়াতিন।” এ ধরনের ‘হিজবুশ্শায়াতিনদের’ মধ্যে দ্বীন ইসলাম বা দ্বীনে মুহাম্মদীর তাবলিগ করতে হবে যেন তারা ইসলামে দাখেল হয়ে মুসলমান হয়ে যায়। ‘হিজবুশ্শায়তিনদের’ মধ্যে মৌলবী ইলিয়াছের খোয়াব নামা তরিকা ‘তাবলিগ জামাতকেও’ দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে ইসলামে দাখেল করতে হবে। কারণ, ওরা প্রতারক, চরমভাবে পথভ্রষ্ট।
দ্বীন ইসলাম বা দ্বনে মুহাম্মদীর তাবলিগ আর মৌলবী ইলিয়াছের প্রবর্তিত তাবলিগের মধ্যে রয়েছে আসমান-জমিন প্রভেদ। দ্বীন ইসলামের তাবলিগের মূল আল্লাহপাক এবং তাঁর হাবিবে খোদা মুহাম্মদ রাছুলের প্রতি নাযিলকৃত ওহী। আর মৌলবী ইলিয়াছের তাবলিগ জামাতের মূল ইলিয়াছ নিজেই এবং তার প্রচারিত তাবলিগের ভিত্তি হলো খোয়াব/স্বপ্ন। দ্বীনে মুহাম্মদীতে পাঁচ উছুল আর ইলিয়াছের প্রবর্তীত তাবলিগের মধ্যে হলো ছয় উছুল/ভিত্তি/স্তম্ভ। একটির মূল আল্লাহপাকের ওহী আর অপরটি সাধারণ এক মৌলবীর খোয়াব/স্বপ্ন। সেজন্যই মৌলবী ইলিয়াছের ‘তাবলিগ জমাত’ যারা আছে (যা শয়তানের ধর্ম) তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে যেন তারা প্রতারণার আশ্রয় ছেড়ে দ্বীন ইসলামের দখেল হয়ে ‘হিজবুল্লাহ’তে দাখেল হয়ে আখেরাতে মুক্তি লাভ করতে পারে।