মাওলানা মোফাজ্জল হোসাইন চিশতী
আহলে বাইত পাক পাঞ্জাতন, তাঁদের নামের শেষে আলাইহিস সালাম সংক্ষেপে (আ.) ব্যবহার নিয়ে মতভেদ বিদ্যমান। এক শ্রেণীর লোকদের অভিমত আলাইহিস সালাম কেবল নবী-রাসুলগণের নামের শেষে ব্যবহার করা জায়েজ। কিন্তু কোরআন হাদীস দ্বারা প্রমানিত যে, আহলে বাইতগণের নামের শেষে (আ.) ব্যবহার করা জায়েজ।
‘আহল’ অর্থ অধিবাসী এবং ‘বাইত’ অর্থ ঘর। তাহলে “আহলে বাইত” অর্থ মহানবী (স.) এর ঘরের অধিবাসী। ‘পাক’ অর্থ পবিত্র বা পরিশুদ্ধ এবং ‘পাঞ্জাতন’ অর্থ পাঁচটি শরীর। কাজেই পাক পাঞ্জাতন মানে পবিত্র পাঁচটি শরীর বা ব্যক্তি তথা হযরত মুহাম্মদ (স.), হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতেমা (আ.), হযরত ইমাম হাসান (আ.) ও হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)। (আয়াতে তাৎহির)। সৃষ্টির মূল ধারক বাহক হলো পাক পাঞ্জাতন এবং তাঁর নবুয়তী ছুরত হলো উক্ত পাঁচজন। তাদের বেলায়তি রূপ সমগ্র সৃষ্টিব্যাপী স্থিত আছে এবং তাঁদের সেই স্থিতাবস্থা হতে উপস্থিত রূপ হলো নবুয়তি সুরত। যাদেরকে ভালবাসা হলো ঈমানের মূল ভিত্তি (সুরা শুরা-২৩ আয়াত)।
“আলাইহিস সালাম” শব্দের অর্থ তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইহা একটি উত্তম প্রার্থনা। যেমন আমরা (মুসলমান) সবাই একে অপরকে সালাম দিয়ে থাকি। এখন আলাইহিস সালাম যদি শুধুমাত্র নবী রাসুলগণের নামের পাশেই ব্যবহার জায়েজ ,অন্য কারোর জন্যে জায়েজ না থাকতো, তাহলে হযরত হাওয়া (আ.) হযরত মরিয়ম (আ.), হযরত খিজির (আ.), হযর লোকমান (আ.), ইমাম মাহাদী (আ.) এবং জিবরাইল, মিকাইল, ইসরাফিল ও আজরাইল তিনাদের নামের শেষে (আ.) শব্দটি ব্যবহার করা হতো না, কেননা উনারা কেউই নবী রাসুল নন। ইমাম মেহেদী (আ.) শুধু নবীবংশের হওয়ার কারণে যদি তাঁর নামের শেষে (আ.) ব্যবহার করা হয়, তাহলে আহলে বাইয়াতদের নামের শেষে (আ.) ব্যবহার করা হবে না কেনো? প্রমাণ হলো নবী রাসুল ছাড়াও অন্যান্যদের নামের শেষে (আ.) ব্যবহার বৈধ বা জায়েজ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক, মুমিন, পরহেজগার ও বেহেশতীদের সালাম দিয়েছেন। যেমন- সুরা ইয়াসিন ৫৮, সুরা ত্বহা ৪৭, সুরা আরাফ ৪৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য। আমরা সালাতে তাশাহুদ বৈঠকে দরূদ শরীফ পাঠকালে আলে মোহাম্মদ অর্থাৎ আহলে বাইত পাক পাঞ্জাতনকে সালাম দিচ্ছি (বুখারী শরীফ কিতাবুত তাফসীর ৪৪৩৪ নং হাদিস)। সকল মাযহাব অনুসারীগণ ইমাম মাহদী (আ.) এর নামের শেষে আলাইহিস সালাম লিখা বা বলা জায়েজ এতে একমত পোষণ করেছেন। কিছু দলিল তুলে ধরছি।
১। বুখারী শরীফ (৩৭/৬২নং অধ্যায়) হযরত ফাতিমার নামের শেষে (আ.)।
২। কিতাব নম্বর ৫০ বাব নম্বর ৬১ তিরমিজি শরীফ।
৩। তিরমিজি শরিফের মানাক্বিব আল হাসান ওয়াল হুসাইন আলাইহিম ওয়াসাল্লাম।
৪। মানাক্বিবে ফাতেমা। পৃষ্ঠা নং – ৪৬, ৮, ১১, ১৭, ২১, ও ২৪।
৫। রাহাতুল কুলুব। পৃষ্ঠা নং – ২৮, ১০৭, ১৬১, ১৮৪ ও ১৯৪।
৬। মাদারেজুন নবুয়ত – ২য় খন্ড ৫৪৫ নং পৃষ্ঠা।
৭। ফাতওয়ায়ে আজিজি – ১ম খন্ড ৮৪ ও ২৩৪ নং পৃষ্ঠা।
৮। তারিখে তাবারি – ৬ষ্ঠ খন্ড ১৯৪, ২১৬, ২৩৩, ও ২৬৯ নং পৃষ্ঠা।
৯। সহীহ আল বুখারী ৫ম খন্ড – হাদিস নং ৫৫ ও ৯১।
১০। সফরনামা। পৃষ্ঠা নং ১২০, ১৬১, ১৮৪ ও ১৯৪।
১১। হযরত আলী (আ.) এর নামের সাথে (আ.)। তাফসীরে মাজহারি।
১২। আল মোস্তাদরাক ৫ম খন্ড ১৭৬৩ পৃষ্ঠা।
সুতরাং প্রমাণ হলো, আহলে বাইতের নামের শেষে আলাইহিস সালাম বলা জায়েজ।