প্রবন্ধ – মহান আউলিয়া ‍উৎবা বিন গোলাম (র) এর জীবনী

লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

মহান আউলিয়া উৎবা বিন গোলাম (র)। তিনি ছিলেন কঠোর তপস্বী এবং সাধনায় সিদ্ধ একজন মুক্তপুরুষ। যার নির্মল হৃদয়টি ছিল আল্লাহপ্রেমে ভরপুর। সাধনার পথে আসার পেছনে রয়েছে তাঁর চমকপ্রদ একটি ঘটনা।

ধর্মসাধনার পথে

হঠাৎ উৎবা বিন গোলাম (র) এক সুন্দরী রমণীর প্রেমে পড়ে গেলেন। দূর্নিবার সে প্রেমের আকর্ষণ। প্রচন্ড আসক্ত হয়ে পড়লেন তিনি। প্রেমলিপ্সায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে নিজের প্রেমের কথা তিনি জানিয়ে দিলেন সুন্দরী রমণীকে। পরম ধর্মপ্রাণ তথা বিদূষী রমণীটি শুনলেন সব। তারপর নিজের দাসীকে পাঠিয়ে দিলেন উৎবা বিন গোলাম (র) এর নিকট। বলে দিলেন, জেনে আসো লোকটি কি দেখে বা কোন অঙ্গ দেখে আমার প্রেমে পড়েছে।

দাসী উৎবা বিন গোলাম (র) এর কাছে যেয়ে উত্থাপন করলেন প্রশ্নটি। উৎবা বললেন, আমি তার অন্য অঙ্গ তো দেখিনি। শুধু তাঁর অপূর্ব সুন্দর নয়নযুগলই আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর আঁখিযুগল দেখেই তাঁর প্রতি এতোটা আকৃষ্ট হয়েছি।

সুন্দরী বিদূষী রমণী, নিজের সুন্দর চোখ দুটি উপড়ে তুলে দাসীর মারফত পাঠিয়ে দিলেন উৎবা বিন গোলাম (র) এর নিকট। মারাত্মক শিউরে উঠলেন উৎবা বিন গোলাম (র)! কি করে সম্ভব এমন! এ যে সত্য! সুন্দরী তরুণী তাঁর চোখ দুটো তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে অবলীলায়! সুন্দরী তরুণী তার অমূল্য নয়নমনি উপঢৌকন দিয়েছেন তাঁকে!

প্রচন্ড আলোড়ন তোলপাড় তুলে গেলো উৎবা বিন গোলাম (র) এর অন্তরে বাহিরে। ভাবান্তর সৃষ্টি হলো মনে। মুহুর্তের মধ্যে তাঁর নিকট পুরো পৃথিবী মিথ্যা হয়ে গেলো। নয়ন সম্মুখ থেকে অপসারিত হয়ে গেলো মোহের কালোপর্দা। নতুন রুপে আবিষ্কার করলেন নিজেকে। প্রতিজ্ঞা করলেন, আর নয় এ মোহঅন্ধের জীবন। এবার থেকে তিনি পালন করবেন সত্যিকার সিদ্ধ যোগীর জীবনপ্রণালী।

ছুটে চললেন তৎকালীন ধর্মজগতের মহীরুহ, ইলমে তাসাউফের খনি, হযরত খাজা হাসান বসরী (রা) এর দরবারে। শুরু করলেন কঠোর জীবন-সাধনা ও তপস্যা। নিষ্ঠাভক্তির প্রাবল্যে অতি অল্প সময়েই লাভ করলেন মোক্ষ। হয়ে উঠলেন যোগ্য গুরুর যোগ্য ভক্ত। পরিণত হলেন অন্যতম আউলিয়ায়।

জীবন ও কর্ম

সাধনার পূর্ণতায় তাঁর থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বহু কারামত তথা অলৌকিক ঘটনা। কৃষি কাজ করতেন তিনি। নিজেই চাষাবাদ করে উৎপন্ন করতেন খাদ্যদ্রব্য। সামান্য আহারেই লিপ্ত থাকতেই বহুকাল ব্যাপী উপাসনায়। নিজের কৃতকর্মের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতরতা ছিল তাঁর। কখনো নিজের শুদ্ধতায় বিন্দুমাত্র ব্যত্যয় ঘটাতেন না। অত্যন্ত ভাব তন্ময়তার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হতো তাঁর জীবন। ধ্যান মগ্নতা ছিল তাঁর জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট। সারাক্ষণ প্রভুরুপের স্বরণে তন্ময় ও বিভোর থাকতেন উৎবা বিন গোলাম (র)। সারাজীবন অতিবাহিত করেছেন অত্যন্ত সাদাসিধাভাবে। খাবার দাবার বা বেশ ভূষার প্রতি তাঁর কখনো কোনো মনোযোগ ছিল না। মূলত তিনি সারাজীবন কৃচ্ছসাধনার মধ্য দিয়ে লাভ করতে চেয়েছেন পরম প্রভুকে। সারারাত জেগে ইবাদতে কাটাতেন তিনি। প্রার্থনা করতেন তিনি “প্রভুগো, আপনি যদি আমার কল্যাণ বিধান করেন, তবে আমি আপনার উপাসনা করবো। আর যদি শাস্তি দেন, তবুও আমি আপনার ইবাদত করবো। কখনো কোনো অবস্থাতেই আমার আপনার সম্পর্কের অবনতি হবে না।”

এক রাতের স্বপ্ন

উৎবা বিন গোলাম (র) এক রাতে স্বপ্ন দেখলেন, এক বেহেশতী হুর এসে উৎবা বিন গোলাম (র) কে বলছেন, হে উৎবা, আমি তোমার প্রতি আসক্ত। তাই অনুরোধ, এমন কাজ করোনা, যা তোমার আর আমার বিচ্ছেদের কারণ হয়। ‍উৎবা স্পষ্ট ভাষায় সমুচিত জবাব দিলেন, “আমি তো প্রভুপ্রেমে বিভোর হয়ে দুনিয়া বর্জন করেছি। অতএব, কিভাবে আমি আপনার প্রতি দৃষ্টি দিতে পারি?”

অন্তিম মুহুর্ত

উৎবা বিন গোলাম (র) এর সমসাময়িক বিখ্যাত তাপসী ছিলেন হযরত রাবেয়া বসরী (র)। তাঁর দরবারে যাতায়াত ছিল তৎকালীন বহু সাধক ‍ও অলী আউলিয়াগণের। একদিন, রাবেয়া বসরী (র) এর দরবারে উপস্থিত রয়েছেন সাধক হযরত সাম্মাক (র) এবং প্রখ্যাত সাধক হযরত জুননুন মিশরী (র)। হঠাৎ সেখানে হাজির হলেন হযরত উৎবা বিন গোলাম (র)। আজকে উৎবা বিন গোলাম (র) এর পরণে কোনো মামূলী পোষাক নয়। বরং বহুমূল্যবান এবং পরিপাটি পোষাক পরিহিত। তাঁকে দেখে হযরত সাম্মাক (র) বললেন, আপনাকে দেখে কিছুটা দেমাগী মনে হচ্ছে। হযরত উৎবা বিন গোলাম (র) বললেন, তা হতেই পারে। আমি এক অধম দাস। কিন্তু, মহাপ্রতাপশালী আল্লাহর দাস। তাঁর কিছুটা  প্রভাব কি আমার মধ্যে পড়বে না? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভূতলশায়ী হলেন হযরত উৎবা বিন গোলাম (র)। সবাই বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলেন, মহাপ্রভুর স্বানিধ্যে চলে গেলেন হযরত উৎবা বিন গোলাম (র)। চির প্রস্থান করলেন মহান মাশুকের অভিমূখে।

রচনাকাল – 08/09/2021
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর