লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
একজন দুঃখী মানুষ যে তার জিবন নিয়ে ছিল হতাশ এবং আত্মিক শক্তিমত্তা ও প্রেরণার পরিবর্তে তার হৃদয়কে ছেয়ে রেখেছিল বিষাদ ও দুঃখবোধ। তিনি উপায় খুঁজে চলেছিলেন মুক্তির এবং ঘুরছিলেন সাধুদের আস্তানা থেকে দরগায়। অবশেষে তিনি পৌঁছলেন দুর্গম একটি সাধুর আখড়ায় যেখানে একজন দুনিয়াবিমুখ সন্ত নিরন্তর ধ্যানে মগ্ন ছিলেন।
সাধুর নিকট যেয়ে লোকটি বিনয়ের সাথে প্রশ্ন করলেন, ‘আমি জিবনের দুঃখ কষ্টের মোকাবিলা করবো কিভাবে?’
মহান ঋষি ব্যক্তিটির দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমাকে দুঃখ থেকে মুক্তির উপায় বলবো। তার আগে তোমাকে একটি কাজ করতে হবে। একটি তেলভর্তি চামচ তিনি লোকটির হাতে দিলেন এবং বললেন, আমার শহরের ও প্রান্ত থেকে ঘুরে আসো, সাবধান চামচের তেল যেন পড়ে না যায়।
লোকটি একান্ত নিষ্ঠার সাথে চামচটি হাতে করে শহরের ও প্রান্ত থেকে ঘুরে আসলেন। আসার পর সাধু দুঃখী ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি শহরের চত্বরে সুন্দর ফুলের বাগানটি দেখেছো? লোকটি বলল, না। সাধু তাকে আবার প্রশ্ন করলেন, শহরের রাস্তায় ফুটফুটে বাচ্চাদের প্রাণোচ্ছল খেলাধূলা দেখেছো? লোকটি বলল, না। সাধু বলে চললেন, তুমি কি শহরের কেন্দ্রের সুন্দর পানির ফোয়াড়াটি দেখেছো? লোকটির উত্তর ছিল, না।
বলে চললেন ঋষিপ্রবর, তেলভর্তি চামচ তোমার মনোযোগ কে এতোটাই কেন্দ্রীভূত করেছে যে, আর কোনো সৌন্দর্য্যই তোমার চোখে পড়েনি।
চামচে রাখা সামান্য দুঃখবোধ আমাদের চেতনাকে এমনভাবে গ্রাস করে রাখে যে আমরা আমাদের চারপাশের সকল আনন্দ-সৌন্দর্য্য বেমালুম ভুলে থাকি। আমাদের অন্তরজুড়ে বাজতে থাকে শুধু সামান্য বেদনার বীণা। অথচ আমাদের চারপাশে কত প্রাণের উচ্ছাস, কত ফুলের সমারোহ, কত সুন্দরের হাসি – যা আমাদের জিবনকে মুহূর্তে স্বর্গে পরিণত করতে পারে।
আমাদের সমস্ত মনোযোগ জুড়ে থাকে আমাদের না পাওয়াগুলো, আমাদের ব্যর্থতাগুলো ও আমাদের যন্ত্রনাদায়ক স্মৃতিগুলো। যা আমাদেরকে জগতের সকল প্রাপ্তি, আনন্দ আর আত্মিক-প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত করে রাখে।
বললেন সাধু, অপ্রাপ্তির চামচে নয়, দৃষ্টিকে নিবন্ধ করো সীমাহীন আনন্দ-ভূবনে। প্রাণের অনাবিল আনন্দের মুক্তধারায়। জিবনের স্বতঃপ্রাপ্ত স্বর্গীয় বোধের অনন্ত স্রোতধারায়। জিবন স্বমহিমায় হেসে উঠবে। বিদায় নিবে সকল দুঃখ। স্বর্গ নেমে আসবে ধূলার ধরায়।
পার্সী সুফি গল্প অবলম্বনে।
রচনাকাল – 17/05/2022
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী