লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
যুগের পবিত্র মানুষের তথা ওলী মুর্শিদের বা সহজ মানুষ এর অনুকরণ অনুসরণের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে সকল ধর্মে। মূলত এটিই মুক্তির একমাত্র পথ পদ্ধতি। যদি আমরা সর্বান্তকরণে ধারণ করতে পারি পবিত্রাত্মাদের আদর্শ, তবেই ত্বরান্বিত হবে মুক্তি। মুক্তির পথটা নিতান্তই দুর্জেয়। বিপদসংকুল। নানান বাধা বিঘ্ন ও জাগতিক সংকটে পূর্ণ। যদি সে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে আমাদের সহায় থাকে একজন পবিত্র ও সিদ্ধ মানুষ, যিনি পথ প্রদর্শন করবেন প্রতি ঘটে, তাহলে মুক্তি পথ টা হয়ে ওঠে একান্তই আনন্দের ও সহজ।
সাধু বা মহাপুরুষ যারা, পবিত্র ও জ্ঞানী মানুষ যারা, তাদের দেখানো পথই সিরাতুল মুস্তাকিম তথা প্রভুর পথ। জ্ঞানীদের পথে চললেই আল্লাহর পথে চলা হয়। জ্ঞানীদের পথে চলতে গেলে জ্ঞানীদের আদর্শকে অন্তকরণে ধারণ করতে হয়। সাধু পুরুষদের কথা মতো না চলে শুধু শুধু ভক্তি করে কোনো লাভ হবে না। প্রকৃত সাধুসেবা বলে সাধুর আদর্শকে ধারণ করাকে।
ত্রিকালদর্শী মহাপুুরুষ বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারী বলেছেন, আমার চরণ নয়, আমার আচরণ ধর। মহামানবের আচরণ আঁকড়ে ধরার মাঝেই মানব জীবনের স্বার্থকতা নিহিত। মহামানবের আচরণের মাঝে স্বয়ং প্রভুর আচরণ নিহিত। প্রভুর স্বভাবেই স্বভাবিত হয়ে তাঁরা হয়েছেন মহাপুরুষ। অর্থাৎ সাধু মহাত্মাদের আচরণ অনুসরণ করলে মহাপ্রভুর আচরণ অনুসরণ করা হয়। প্রভুর আচরণ তথা প্রভু গুণ বা প্রভুর রং কে যে ব্যক্তি ধারণ করে দীলে তথা সর্ব-অস্তিত্বে, তখন সেও হয়ে ওঠে মহাপুরুষ।
জগতের সকল কিছু প্রকাশিত হয় সূর্যের আলোক বিকিরণ করার ফলে। সে আলোকে সমস্ত কিছু মূর্ত হয়ে ওঠে। দেখা যায়। ঠিক তেমনি যদি কেউ আলোকিত করতে চায় তার ভিতরকে, তবে অবশ্যই কোনো না কোনো পবিত্র মানুষের সুস্বভাবের নূরে নূরান্বিত করতে হবে অন্তকরণকে। পবিত্র মানুষের সুস্বভাবের নূর ব্যতিত অন্তর্লোক আলোকিত হওয়ার দ্বিতীয় কোনো পদ্ধতি নেই।
স্বয়ং দয়াময়ের দয়া বা করুণা গুণে গুণান্বিত হয়ে একজন পবিত্র মানুষ সকলকে পথ দেখানোর নিমিত্ত মুর্শিদ রূপে বসে আছেন। আমাদের মতো পাপী জীবের পতিতপাবন হয়ে। তিনি কখনো আমাদের থেকে বিমুখ হন না। অপার দয়ায় তিনি আমাদের মুক্তি পথের দেশনা দান করেন। বরং রিপু নিচয়ের তাড়নায় আমরাই পরিত্যাগ করি তাকে। বিমুখ হই তাঁর থেকে।
মহাপুরুষের বা সহজ মানুষ এর প্রদর্শিত পথে অবিরাম ধ্যান সাধনার মধ্য দিয়ে একজন সাধক ধীরে ধীরে উত্তীর্ণ হয় জাগতিক সকল বন্ধন থেকে। সকল রিপু সমুহের দূভেদ্য কারাগার থেকে অবমুক্ত করে নিজেকে। তখন সে সংসারে থেকেও আর সংসারী হয় না। জগতে থেকে সে সদা বাস করে প্রভুর অনন্ত প্রেমের দরিয়ায়। সাধনার জগতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা হলো, “জগতের সঙ্গে সম্পর্ক যত কমতে থাকবে, প্রভুর সাথে সম্পর্ক তত বাড়তে থাকবে।” সেই তো সাধক যিনি তার সকল হাল হাকিকত সম্পর্কে সদা সচেতন।
গুরু মুর্শিদ তথা যুগের আউলিয়া বা রাসুল অবতারের নিকট নিজেকে সমর্পন করেই লাভ করতে হয় চিরমুক্তি। যতদিন অন্তকরণে অবশিষ্ট থাকবে আপন ব্যক্তিত্বের আভাস, ততদিন সাধকে সাধনা পূর্ণ হয় নি। সাধনা পূর্ন হলে সাধকে আমিত্ব ভাব পূর্ণ দূরীভূত হবে। তখন তাঁর ক্ষুদ্র অস্তিত্বের মধ্যে জেগে উঠবে বৃহৎ তথা মহৎ অস্তিত্ব। তখন সে মহৎ অস্তিত্বের বলে বলীয়ান হয়ে সে সাধক পুরুষটিও রূপান্তরিত হবে মহাপুরুষে তথা গুরু বা মুর্শিদ তথা রাসুল বা অবতারে। জগতের নিয়ম হচ্ছে, একজন ধনী অপর সবাইকে চাকর বানায়, আর একজন গুরু সবাইকে গুরু বানায়।
স্বার্থরহিত সত্ত্বাটিই সাধক সত্ত্বা। যে চিত্তে জগতের কোনো লালসা নাই, যে চিত্তে দুনিয়াবী কোনো বাসনা নাই, কোনো স্বার্থ নাই, যে হৃদয়টি জগতের কোনো কিছুর নিকট বন্দী নয়, সে চিত্তটিই প্রভুর সিংহাসন। সে হৃদয়টিতেই প্রভু সদা বসত করেন। স্বার্থশূণ্য মানুষটিই প্রভূকে ধারণ করে। অহংকার বা অর্জিত অবস্থানের অভিমান পরিত্যাগ করে সাদা অন্তকরণে নিয়ে প্রভুর তথা মহাত্মার সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখলেই হাসিল হবে সাফল্য।
মহাপুরুষদের দেখানো পথই প্রভুর পথ।
রচনাকাল – 20/10/2020
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী