মুহাম্মদ আরশেদ আলী
ফাছাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ানহার – সঠিক অনুবাদ : সালাত কর (কৃতজ্ঞ হও) তোমার প্রতিপালকের প্রতি এবং ত্যাগের প্রবাহ সৃষ্টি কর।
প্রচলিত অনুবাদে ‘ফাসাল্লি’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে ‘নামাজ পড়’ এবং ‘ওয়ানহার’ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে – ‘কুরবানি দাও’।
আরবি ‘সালাত’ শব্দের অর্থ ফার্সি ‘নামাজ’ এবং ‘অনহার’ শব্দের অর্থ আরবি ‘কুরবানি’ কি করে হয়?
‘করা’ আর ‘পড়া’ কি এক কথা? মানুষ ওজু-গোসল পড়ে না, করে। উপবাস পড়ে না, করে। সংযম পড়ে না, করে। হজ পড়ে না, করে। অথচ নামাজ করে না, পড়ে! সালাত বাস্তব জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়। কুরআনে অনেকবার সালাতের কথা বলা হয়েছে। কোনো উত্তম গ্রন্থই এক কথা বারবার বলে না। সর্বোত্তম গ্রন্থ কুরআন একই কথা বারবার উল্লেখ করেছে এ ধারণা সঠিক নয়। সালাত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। আরবি ভাষায় প্রত্যেকটি শব্দের গড়ে দশটি অর্থ আছে।
পৃথিবীর সব ভাষাতেই পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী শব্দ ও বাক্যের সাথে যোগ সাধন করে শব্দের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য নির্ণীত হয়। যেমন – ‘বইটির উপর হাত রাখ’ এবং ‘তার উপরে হাত আছে’ বাক্য দুটিতে ‘হাত’ এবং ‘উপর’ শব্দের অর্থ এক নয়। ‘আমাকে দেওয়া হয়েছে প্রচুর (ইন্না আতাইনা কালকাওছার – ‘নিশ্চয়ই তোমাকে দান করেছি প্রাচুর্য’। মানুষকে শক্তি ও গুণের যে প্রাচুর্য দান করা হয়েছে তাকেই বলা হয়েছে – কাল কাওসার) সুতরাং আমার নামাজ পড়া উচিত এবং কুরবানি করা উচিত’ ব্যাকরণ এবং ভাব উভয় দিক থেকে এই অনুবাদ ত্রুটিপূর্ণ। উক্ত আয়াতে ‘ফাসাল্লি’ শব্দের ভাবার্থ হবে ‘কৃতজ্ঞতা জানানো’ ; ‘অনহার’ শব্দের ভাবার্থ – ‘ত্যাগ করা’। কারণ, যখনই আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণে কিছু দেওয়া হয় তখনই আমাদের উচিত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
লেখক – মুহাম্মদ আরশেদ আলী
সুফি ধারার লেখক ও সম্পাদক।