লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
স্বয়ং আল্লাহু’র মতোই, তাঁর ইসমে জাত “আল্লাহু” নামটিও অভূতপূর্ব ও অতুলনীয়। আল্লাহু নামের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, আল্লাহু নামের সবগুলো হরফ/অক্ষর পৃথক পৃথক ভাবে পূর্ণ অর্থবহ। এবং আল্লাহু নামটি থেকে যদি আপনি একটি একটি করে অক্ষর বাদ দিতেও থাকেন, তবু আল্লাহু নামের অর্থবহতার কোনো ত্রুটি ঘটবে না।
الله থেকে অক্ষর গুলো পৃথক করলে (ا, ل, ل, ه) প্রতিটি অক্ষরের মাহাত্ম্যও লিখে শেষ করা যাবেনা।
আল্লাহু নামের পূণ্যমান –
ا – 1
ل – 30
ل – 30
ه – 5
মোট পূণ্যমান = 66 (6+6=12) (1+2=3)
আল্লাহু লিখতে তিনটি হরফ ا, ل*, ه তে আলিফ ১ বার, লাম ২ বার এবং হা ১ বার মোট ৪ বার ব্যাবহৃত হয়েছে।
ا – আলিফ – ১ম হরফ এবং আবজাদ ক্রমেও ১ম হরফ। মান ১। ইসমে জাত আলিফ দিয়ে শুরু। বিশ্বব্রহ্মান্ডের অমিমাংসীত রহস্যাবলীল চাবিকাঠি হচ্ছে এই আলিফ। মহাশক্তির অপ্রকাশিত আদিমরূপ এই আলিফ। বিন্দুরূপ গঞ্জজাত বিন্দু থেকে আলিফ রূপের সিন্ধুপানে ধাবমান, এবং আলিফ সঞ্চরমান সকল শক্তিতে বিবর্ধিত হওয়ার গতিতে অগ্রসরমান।
ل – লাম – ২৩ তম হরফ এবং আবজাদ ক্রমে ১২ তম হরফ। মান ৩০। আলিফ এবং লাম পরস্পর সংযুক্ত হরফ হিশাবে হরফে মুকাত্তায়াতে ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ বার এবং যাদের পূণ্যমান পাওয়া যায় ৩১। অর্থাৎ আলিফ লাম মিলে ৪ টি প্রতিজ্ঞায়িত সত্য।
ه – হা – ২৭ তম হরফ এবং আবজাদ ক্রমে ৫ম হরফ। মান ৫। হা তথা হু শক্তি মূলত পরমের চূড়ান্ত বিকশিত রূপ, যা পঞ্চ রূপে তথা পঞ্চ তন্মাত্রায় সদা বিকশিত ও প্রকাশিত। যে পঞ্চরূপ পঞ্চ সালাত ক্রিয়ায় পঞ্চ মোকাম-মঞ্জিল সহযোগে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ে দৃশ্যমান হয়। পঞ্চ কোরাণ এই পাঁচ মোকামে লিসানে জারি হয়। হেদায়েতে শাহাদাহ এর পঞ্চস্তর এখানেই ক্রিয়াশীল।
الله এর অসৃষ্ট অনাদী শক্তি الله এর ৬৬/১২/৩ স্তরে ৪ আকসামে নিয়ত পাঁচ ও চারের মিলনে হুয়াজ জাহির হচ্ছে। এখানেই আলিফ লাম লাম হা এর মাহাত্ম্য।
এবার আসি আল্লাহ নাম হতে অক্ষর ধারাবাহিক বিয়োজনের রহস্যে। الله নামটি ইসমে জাত এমনভাবে স্তর থেকে স্তরে সজ্জিত, যদি الله থেকে একটি করে অক্ষর বাদ দেয়া হয় তবুও নামটি তাঁর সার্বজনীনতা ও অর্থবহতা হারাবে না।
الله থেকে ا (আলিফ) বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকলো لِلّٰہ (লিল্লাহ)। এটাও ইসমে জাত।
لِلّٰہِ مَافِی السَّمٰوٰتِ وَمَافِی الْاَرْضِ
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর। (বাকারা 284)
لِلّٰہ থেকে ل (লাম) বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকলো لَہُ (লাহু)। এটাও ইসমে জাত।
لَہُ الْمُلْکُ وَلَہُ الْحَمْدُ
সমগ্র রাজত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। (আত তাগাবুন 1)
لَہُ থেকে ل (২য় লাম) বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকলো ھْ (হু)। এটাও ইসমে জাত।
ھُوَ اللّٰہُ الَّذِیْ لَآ اِلٰہَ اِلَّا ھُوٰ
হু’ ব্যতিত কোনো মাবুদ নাই। (হাশর 22)
اَللّٰہُ নামটি এমন মাহাত্ম্যব্যাঞ্জক নাম, যার ভেতর সমগ্র সৃষ্টির সকল রহস্য নিহিত। এ নামটি তাই ইসমে জাত। যেখানে জাতি নূর ও সেফাতি নূরের পূর্ণ বিকাশ ও প্রকাশ ঘটে। এ নামের প্রতিটি হরফ এক একটি পূর্ণতর আধ্যাত্ম শক্তির উৎস, যেখান থেকে জগৎ ও জিবন নিয়ত পরিচালিত হয়। তাই ইসমে জাত তথা اَللّٰہُ কে সমগ্র জগতের রিজিক বলা হয়। আরো পরিষ্কার করে বললে, اَللّٰہُ তথা ইসমে জাতের অবিরাম জাতী ফায়েজ থেকে আহমদ ও মোহাম্মদ এর সেফাতী নূর জগতে ক্রিয়াশীল হয়। আহাদ আহাম্মদ ও মোহাম্মদ এর তিন স্তরের পূর্ণ রহস্য লুক্বায়িত আল্লাহু এর আলিফ লাম ও হা তিন অক্ষরে। আহাম্মদ ও মোহাম্মদ এর দুই মীমের পূর্ণ রূপায়ন ঘটে আল্লাহুর “হু” শক্তিতে= এখানেই জাত-সেফাত ও স্রষ্টার বিকাশ বিজ্ঞানের মর্ম নিহিত। ا থেকে ه – এই পাঁচ মোকামে (আলিফ -১, হা ৫) সকল মর্ম নিহিত।
প্রভুগুরু আমাদেরকে জীবন ও জগতের সকল রহস্যজ্ঞান তথা আসসারে এলাহী হৃদয়ঙ্গম করার তাওফিক প্রদাণ করুন। আমিন।
লাবিব মাহফুজ চিশতী
সম্পাদক – আপন খবর
চেয়ারম্যান – আপন ফাউন্ডেশন
রচনাকাল – 01/12/2024