সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী
কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর বিশাল বিপুল সৃষ্টিভান্ডার হতে সামান্য কিছু উক্তি নিয়ে আপন খবরের এবারের আয়োজন “কাজী নজরুল ইসলাম এর প্রেরণামুলক কিছু উক্তি সমাহার”।
১. ভাঙো দাসত্বের নিগঢ়। এ বিশ্বে সবাই স্বাধীন। মুক্ত আকাশের এই মুক্ত মাঠে দাড়াইয়া কে কাহার অধীনতা স্বীকার করিবে? এই খোদার ওপর খোদকারী শক্তিকে দলিত করো। এই স্বার্থের শাসনকে শাসন করো।
২. আত্মজ্ঞান অহংকার নয়, এ হচ্ছে আপনার ওপর অটল বিরাট বিশ্বাস। এই আত্মবিশ্বাস না থাকলে মানুষ কাপুরুষ হয়ে যায়। ক্লীবত্ব প্রাপ্ত হয়।
৩. মনের পরাবলম্বন বা গোলামীই আমাদের চির গোলাম করে রেখছে।
৪. তোমার আত্মশক্তি যদি উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠে তবে বিশ্বে এতো বড় দানব-শক্তি নেই যা তোমাকে পায়ের তলায় ফেলে রাখে।
৫. যিনি নিজে স্বাধীন হলেন না, তিনি দেশের, জাতির স্বাধীনতা আনবেন কেমন করে?
৬. বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেনো বিসর্জন না দেই।
৭. আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ স্রষ্টা। প্রকান্ড তাঁর সৃষ্টি। এই বৃহৎকে বুঝবার সাধনাই জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনা। এজন্য চাই সে মুক্ত ও বিরাট জীবন।
৮. দুঃখ সয়েছি, আঘাত হাসিমুখে বরণ করেছি, কিন্তু আত্মার অবমাননা কখনও করিনি। নিজের স্বাধীনতাকে কখনও বিসর্জন দেইনি।
৯. আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন হোক, যাহা আমাদের জীবনশক্তিকে ক্রমেই সজাগ, জীবন্ত করিয়া তুলিবে। যে শিক্ষা ছেলেদের দেহ-মন দুটোকেই পুষ্ট করে, তাহাই হইবে আমাদের শিক্ষা।
১০. তোমাদের শিক্ষা, তোমার জ্ঞান অর্জন যদি তোমাদের মাঝেই নিঃশেষিত হয়ে যায়, তবে ভুলে যাও এ শিক্ষা, বর্জ্জন করো এ জ্ঞানার্জন।
১১. বার্ধক্য তাহাই- যাহা পুরাতন কে, মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে।
১২. যাহারা অটল-সংস্কারের পাষাণ স্তুপ আঁকড়িয়া পড়িয়া আছে, তাহারা জীব হইয়াও জড়।
১৩. বার্ধক্যকে সবসময় বয়সের ফ্রেমে বাধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি, যাহাদের যৌবনের উর্দ্দির নীচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘ-লুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন।
১৪. তারুণ্য দেখিয়াছি আরবের বেদুঈনের মাঝে, তারুণ্য দেখিয়াছি মহাসমরের সৈনিকের মুখে, কালাপাহাড়ের অসিতে, কামাল-করিম-জগলুল-সানইয়াৎ-লেলিনের শক্তিতে।
১৫. ধর্ম আমাদের ইসলাম। কিন্তু প্রাণের ধর্ম আমাদের তারুণ্য, যৌবন। আমরা সকল দেশের, সকল জাতির, সকল ধর্মের, সকল কালের।
১৬. জাতি-ধর্ম-কালকে অতিক্রম করিতে পারিয়াছে যাহাদের যৌবন, তাহারাই আজ মহামানব, মহাত্মা, মহাবীর।
১৭. খোদার দেওয়া এই পৃথিবীর নিয়ামত হইতে যে নিজেকে বঞ্চিত রাখিল, সে গত মুনাজাতই করুক, খোদা তাহা কবুল করিবেন না।
১৮. সম্মুখে আমাদের পর্বত প্রমাণ বাধা, নিরাশার মরুভূমি, বিধি-নিষেধের দুস্তর পাথার; এই সব লংঘন করিয়া, অতিক্রম করিয়া যাইবার দুঃসাহসিকতা যাহাদের, তাহারা তরুণ।
১৯. আমরা যৌবনের পূজারী, নব নব সম্ভাবনার অগ্রদূত, নব নবীনের নিশানবর্দ্দার।
২০. ঝঞ্ঝার নূপুর পড়িয়া নৃত্যায়মান তুফানের মতো আমরা বহিয়া যাইবো। যাহা থাকিবার তাহা থাকিবে, যাহা ভাঙিবার তাহা আমাদের চরণাঘাতে ভাঙিয়া পড়িবেই।
২১.কত কাজ তোমাদের- ধরণীর দশদিক ভরে কত ধূলি, কত আবর্জ্জনা, কত পাপ, কত বেদনা- তোমরা ছাড়া কে তার প্রতিকার করিবে? তোমাদের আত্মদানে, তোমাদের আয়ূর বিনিময়ে হবে তার মুক্তি।
২২. সকল বিশ্বকে, সকল সৃষ্টিকে জানব, বুঝব ও উপলদ্ধি করব- এই আত্মবিশ্বাস আমাদের তরুণদের জীবনে রূপায়িত হোক।
২৩. জীবনের পাত্র আমরা আবর্জ্জনা দিয়া বোঝাই করে রেখেছি। এই আবর্জ্জনা হতে আমাদের জীবনকে মহতের উপযুক্ত আধার করতে হবে।
২৪. নদীতে নুড়ি থাকে, এক ফোঁটা জল সে পায় না। কারণ তার অন্তর শূণ্য নয়। এমন করে আমাদের অন্তর মুক্ত করে, বৃহৎকে জীবনে বরণ করে আনতে হবে।
২৫. সকল ভীরুতা, দূর্বলতা, কাপুরুষতা বিসর্জ্জন দিতে হবে। ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে নয়, ন্যায়ের অধিকারের দাবীতেই আমাদিগকে বাঁচতে হবে।
২৬. আমাদের মাতৃভূমি পৃথিবীর স্বর্গ, নিত্য সব্বৈশ্বর্য্যময়ী।
২৭. বাংলা সর্ব ঐশীশক্তির পীঠস্থান।
২৮. আমাদের বাংলা নিত্য মহিমাময়ী, নিত্য সুন্দর, নিত্য পবিত্র।
২৯. আজ আমাদের আলস্যের, কর্মবিমুখতার পৌরুষের অভাবেই আমরা হয়ে আছি সকলের চেয়ে দীন।
৩০. ভেঙে ফেলো, ভেঙে ফেলো ভাই, এদের এ সংকীর্ণ স্বার্থ বন্ধন।
সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী