নব নির্মাণ – ফার্সী সাহিত্যের আধ্যাত্মিক কাব্য – এশকের দহন

সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী

পারস্যে গোলাপ,বুলবুল আর শারাব-সাকীর মধূর আবেশে কবির ছন্দে ছন্দে, সুরে সুরে প্রস্ফুটিত হয়েছে আধ্যাত্মিকতা। সানায়ী, আত্তার, রুমী, জামী, খৈয়াম, হাফিজ, সাদী, রুদকী সহ আধ্যাত্মআকাশের ‍উজ্জলতর নক্ষত্রবৃন্দের সমাহারে পারস্য সাহিত্য / ফার্সী সাহিত্য চির-মাধূর্যমন্ডিত। পারস্য আধ্যাত্মিকতার অসীম মণি-মাণিক্যের রাজ্য হতে কিছু মণি-মুক্তা বাংলার পিপাসুদের জন্য নিয়ে আসাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। কয়েকটি বিষয়ে ওলীকুল শিরোমণি আধ্যাত্মসাধক পারস্য কবিদের বাণীসমূহ সংকলিত হলো।

বিষয় – জ্ঞান

১.
ইলমে না বুওয়াদ গায়রে ইলমে আ’শেকী
মা বাকী তালবীসে ইবলীসে শক্বী।
– একমাত্র প্রেম ব্যাতিত আর কোনো ইলম নেই। প্রেম ব্যাতিত যত কিছু ইলেম নামে প্রচলিত আছে তা সবই অভিশপ্ত শয়তানের চালবাজি।

২.
ইলমে কেহ না, মাখূয যে মিশকাত তে নববীস্ত
ওয়াল্লাহ কেহ সায়রাবী আযা তিশনাহ লাবীস্ত।
– যে জ্ঞান নবুয়্যতের সীনা থেকে আহরিত নয়, তা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করো।

৩.
ইশকে মাওলা হায় জিসে ওহ হায় মাওলভী
জেয়সে হযরতে মওলভী মা’নভী।
– মুর্শিদ প্রেম যার মধ্যে আছে সেই হলো মৌলভী। যেমন মৌলভীয়ে মানূভী বা মাওলানা রুমী র.।

৪.
মওলভী গাশতীও আগা হ নীসতী
তূ কুজাও আয কুজাও কীসতী।
– নিজের আত্মপরিচয় না জেনে কি করে তুমি মৌলভী বা জ্ঞানী হলে?

৫.
ইলমে আদাঁ পে শে রাব্বুল আলামিন
কো রেহা নাদ মরদ রা দর ইয়াওমে দী।
– জেনে রাখ, সে জ্ঞান’ই প্রকৃত জ্ঞান যা মানুষকে ধ্বংসের পথে মুক্তি প্রদান করে।

৬.
ফা ইন্নাল ইলমা নূরুম মিন ইলাহী
ওয়া নুুরুল্লাহি লা ইউত্বালি আছী।
– জ্ঞান হলো আল্লাহর নূর। যা পাপীদেরকে প্রদান করা হয় না।

৭.
রযীনা কিসমাতাল জাব্বারি ফিনা
লানা ইলমুন ওয়া লিল আদাই মা-লূ।
– আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি ক্ষমতাশালী আল্লাহর বন্টনে। তিনি আমাদের জন্য রেখেছেন জ্ঞান আর শত্রুদের জন্য রেখেছেন ধন-দৌলত।

৮.
আ ও সুনওয়া ঈ তুমহে ওহ নাগমায়ে মাশরুভী
পারা জিসকী লাহান সে তুরে হুদা হোনে কো হায়।
– এসো! আমি তোমাদের কে বিধি সম্মত এমন গান শুনাবো যার সুরে হেদায়াতের প্রতিক তূর পাহাড় ও খন্ড খন্ড হয়ে যাবে।

৯.
গর চেহ তাফসীরে যবা রওশন তরাস্ত
লেকে তাফসীরে বে যবা রওশন গরাস্ত।
– মুখের ভাষা যদিও খুব সুন্দর, কিন্ত জবান বিহীন বাকহীন ভাষা আরোও সুন্দর।

বিষয় – পীর

১.
বে রফিকে হারকে, শুদ দর রা হে ইশক
উমরে ব গুযাশ্তো নাশুদ আগাহে ইশক।
– কামেল পীরের সঙ্গ ছাড়া কেউ যদি ইশকের পথে চলে, তাহলে জীবন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু সে ইশকের সন্ধান পাবেনা।

২.
আগার খাহী হাম নাশীনি বা খোদা
গো নাশী নাদ দর হুজুরে আউলিয়া।
– যদি তুমি আল্লাহর সাথে থাকতে চাও, আহলে আউলিয়াদের সাথে বসো।

৩.
দর হাকীকাত গাশতা ঈ দুর আয খোদা
গর শভী দুর আয ছোহবতে আউলিয়া।
– যদি তুমি আউলিয়াদের থেকে দুরে থাকো তাহলে তুমি খোদা হতে দুর হয়ে গেলে।

৪.
গার তূ সাঙ্গে খারা ওয়া মর মর’শভী
চূঁব ছাহেবে দিল রসী গাওহার শভী।
– যদি তুমি হয়ে থাকো কঠিন শীলা অথবা মর্মর পাথর, যখন তুমি কোনো ওলীয়ে কামেল ব্যাক্তির নিকট বসবে তখন তুমি অমূল্য প্রস্তরে পরিণত হবে।

৫.
কাল রাব গুযার ওয়া মরদে হাল শো
পেশে মরদে কামেলে পা মাল শো।
– আলোচনা সমালোচনা ছেড়ে দাও এবং প্রভূকে পাওয়ার জন্য তৈরী হও। ওলীয়ে কামেলের পদদলিত হও।

৬.
ব মায় সাজ্জাদা, রঙ্গী কুন গরত পীরে মুগাঁ গূয়াদ
কে সালেকে বে খবর না বূদ যে রাহো রুসমে মানযিল হা।
– তোমার মুর্শিদ যদি বলে শারাব দিয়ে জায়নামাজ রঙ্গিন করতে তবে তাই করো। কারন আধ্যাত্মিক পথের খবর মুর্শিদ ই পূর্ণরুপে জানেন।

৭.
এক যামানা ছোহবতে বা আউলিয়া
বেহতর আয সালাহ তাআত বেরিয়া।
– কিছু সময় আউলিয়ার সঙ্গ করা, শত বছরের নির্ভেজাল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।

৮.
মিটাদো আপনী হাস্তি কো আগার কুছ মরতবা চাহো
কে দানা, খাক মে মিলকর গুলো গুলযার হোতা হায়।
– যদি তুমি মর্যাদা চাও তাহলে নিজের অস্তিত্বকে ধূলিস্যাত করো। কারন বীজ মাটির সাথে মিশেই বাগান তৈরী করে থাকে।

৯.
আয় তামাশা গাহে আলম রুয়ে তূ
তূ কুজা বাহরে তামাশা মীরভী।
– তোমার মুখ সারা জাহানের দর্শনীয়, কিন্তু তামাশা দেখার জন্য তুমি কোথায় যাচ্ছো!

বিষয় – প্রার্থনা

১.
রুখসা-র সে বোরখা’কা যারা, পরদাহ উঠা দো
লিল্লাহ মুঝে হুসনে খোদা দাদ দেখা দো।
– হে মুর্শিদ, তোমার চেহারাখানা অনাবৃত করো এবং আমাকে তোমার অপার সৌন্দর্য্যরাশির কিঞ্চিৎ দর্শন করাও।

২.
জূলোগ কেহ কাহলা তে হায় সাগ তেরী গলীকে
উন লূগুঁকে দফতর মেঁ, মেরা নাম লেখা দো।
– হে মুর্শিদ, যারা নিজেকে তোমার গলির কুকুর মনে করে, দয়া করে তাদের দফতরে আমার নামখানা লিখে দাও।

৩.
হিজর মে মুশকিল হ্যায় জি না,দিল হুওয়া চাক আওর সিনা
থামিয়ে মিয়ে মেরা সফিনা, ইয়া শাফিউল মুযনাবিন।
– বিরহের বেদনায় আমার জীবন খুব কঠিন হয়ে আছে । হৃদয় ও বুক খুবই আহত। এমতবস্থায় আমার এ নৌকায় হাল ধরুন হে শাফিউল মুযনিবীন।

৪.
কাশ হাছেল হো হুযুরী, দূর হো জায়ে ইয়েহ দোরী
দিল কী ইয়েহ হাসরাত হো পূরী, দেখ লো ওহ শিকলে নূরী।
– যদি আমার সকল দুরুত্ব দূরীভূত হয় ও আমি সমীপবর্তী হতে পারি তোমার, তবেই আমার সকল আকাঙ্খা পূরণ হবে এবং আমি নয়ন ভরে তোমার ঐ নূরাণী চেহারা দর্শন করবো।

৫.
ইশকে কী রাহ মে হুয়ে জূ আউলিয়া আকছার শহীদ
খঞ্জরে তাসলীম সে আপনে মুঝে ভী কর শহীদ।
– তোমার প্রেমে উন্মত্ত হয়ে কত শত আউলিয়া আত্ম-বিসর্জন করেছে। তোমার আনুগত্যের তরবারী দ্বারা তুমি আমাকেও শহীদ করে দাও।

৬.
এইসে মরনে পর করোঁ কুরবান ইয়া রব লাখো ঈদ
আপনী তেগে ইশক সে কর লে আগার মুঝ কো শহীদ।
– হে মুর্শিদ, এমন মরণের তরে উৎসর্গ করবো লাখো ঈদ, সে মরণ হবে তোমার প্রেমের তরবারীতে।

৭.
হায় তূ মেরে পাস, হারদম লেকে মাই আন্ধা হূ পর
বখশ ওহ নূরে বছীরাত জিস সে তূ আবে নযর।
– তুমি তো সদা সর্বক্ষণ আমার কাছেই থাকো। কিন্ত আমি অন্ধতাবশত তোমাকে দেখতে পাইনা।

৮.
আয়শো ইশরাত সে দূআলম কে নাহী মতলব মুঝে
চশমে গিরয়া সীনা বিরয়া কর আতা ইয়া রব মুঝে।
– দোজাহানের ভোগ বিলাস আমি কখনোই চাইনা। হে মুর্শিদ, আমাকে দাও ক্রন্দনরত চোখ ও তোমার প্রেমে আহত অন্তর।

৯.
ইয়া এলাহী মুঝকো মুঝ সে দূর কর,
তাকে দেখূ মুঝ মে তুঝ কো এক নযর।
– হে মুর্শিদ, আমার হতে আমার আমিত্বকে দূর করো। যেনো আমার মধ্যে তোমার এক নযর দেখতে পাই।

১০.
গর চেহ মাঈ বদকার না লায়েক হূ আয় শাহ জাহা
পর তেরে দার কো বাতা আব ছোড় কর জাউ কাহা।
– হে মুর্শিদ, আমিতো পাপী, অযোগ্য। হে জগতের বাদশাহ! তোমার দূয়ার ছেড়ে বলো যাবো কোথায়?

১১.
আ পড়া দর পর তেরে মাঈ হার তরফ সে হূ মালূল
কর চিশতিয়াহ পীর কী বরকত সে দুয়া মেরী কবূল।
– আমি সকল দিক হারিয়ে এখন তোমার দরবারে এসে পড়েছি। চিশতিয়া তরিকার পীরদের বরকতে আমার দোয়া কবূল করো।

বিষয় – প্রেম

১.
বাশে দায়েম তূ মুবাকেব আয় হাবীব
তা বয়া বী ইয়া রে খূদ রা বস করীব।
– হে বন্ধু, তুমি সর্বদা তোমার বন্ধুর প্রেমে মগ্ন থাকো। তাহলেই তুমি কাছে পাবে তোমার প্রানবন্ধুকে।

২.
গর নাবা শাদ লূৎফে তু ফরইয়া দে রাস
বা শাম আন্দার বাহরে ইছইয়া মিছলে খাস।
– তোমার দয়া যদি আমার ভালোবাসার সহায়ক না হয়, তাহলে আমি গুনাহের সাগরে খড়কুটার মতো ভাসতে থাকবো।

৩.
নূরে এরফান কুন আত্বা আয় জুল জালাল
আয শরাবে ইশকে তূ কুন মস্তে হাল।
– হে মহিমান্বিত, তোমার পরিচয় জ্ঞান আমাকে দান করো। তোমার প্রেমের শারাবে আমাকে পাগল করো।

৪.
আশেকা রা শশ নিশা নাস্ত আয় পেসার
আহে সারদো রঙ্গে যরদো চশমে তার।
– হে বৎস! প্রেমিকের ছয়টি লক্ষন। যেমন, ঠান্ডা চিৎকার, শরীরের রঙ হলুদ, অশ্রুসিক্ত চোখ।

৫.
গর তুরা পুরসান্দ সার দীগার কুদাম
কম খোরদানো, কম গুফতানো, খুফতান হারাম।
– এবং বাকী লক্ষন গুলো হলো- কম খাওয়া, কম কথা বলা, ও ঘুম হারাম করা।

৬.
আশেকী চীস্ত? বগু বান্দায়ে জানাবূ দান
দিল বদস্তে দীগার দাদান ওয়া হায়রাবূ দান।
– যদি প্রশ্ন করো প্রেমিক কাকে বলে? বলো, প্রেমিকার দাস হয়ে যাওয়া। নিজের মন অপরকে দেয়া ও পেরেশান হওয়া।

৭.
পুরসীদাম আয ত্ববীবে আহওয়ালে দোস্ত গুফতাহ
ফী বুদিহা আযাবুন ওয়া ফী কুরবিহা নামাদাহ।
– আত্মার আরোগ্যকারীকে প্রশ্ন করলাম, বন্ধু কাকে বলে? সে বললো, প্রেমিকার দুরে থাকা আযাব ও নিকটে থাকা লজ্জার।

৮.
আশেকা দায়েম লেকায়ে দোস্ত মীদা রান্দ দোস্ত
দর গমো রা হাত রেযা যে দোস্ত মীদা রান্দ দোস্ত।
– যেজন প্রেমিক তার প্রিয় হলো সর্বদা তার প্রানবন্ধুর সাক্ষাৎ, শান্তি অশান্তি উভয় অবস্থাতেই বন্ধুর সন্তুষ্টির জন্য পাগল হওয়া।

৯.
উস ইশক মে কিয়া মযাহ হায় জিসমে রুসওয়া ঈ না হো
মিছলে মাজনূন দর বদর লায়লা কে শায়দা ঈ না হো।
– যে প্রেমের মধ্যে কলঙ্ক নেই সে প্রেম মজার নয়। মজনূর মতো লাইলীর জন্য দুয়ারে দুয়ারে পাগল প্রায় হয়ে ঘূরে বেড়ানোর মধ্যেই প্রকৃত প্রেমের মজা।

১০.
ইশকে বাযী বুত পরস্তী তূ নে মুঝ কো দে দিয়া
লে গায়া তূ বা কারারী বে কারারী দে দিয়া।
– তুমি তো আমাকে দিয়েছো প্রেমের খেলা ও প্রেমিকার পূজা। আমার শান্তি তুমি নিয়ে গেছো, আমাকে দিয়েছো পাগলামি।

১১.
ইশকে বাযী বুত পরস্তী ঈ মেরা দরকারে নীস্ত
হার রগে মান তারে গাশতা, হা জাতে যুন্নারে নীস্ত।
– প্রেমের খেলা প্রেমিকার পূজা আমার দরকার নেই। আমার সবগুলো ধমনী বাদ্যযন্ত্রের তারে পরিনত হয়েছে। আর আমার পৈতার দরকার নেই।

১২.
কাফেরে ইশকাম মুসলমানী মেরা দরকারে নীস্ত
হার রগে মান তারে গাশতা, হা জাতে যুন্নারে নীস্ত।
– আমি প্রেমের কাফের, মুসলমানিত্ব আমার দরকার নাই। আমার সবগুলো ধমনী বাদ্যযন্ত্রের তারে পরিনত হয়েছে। আর আমার পৈতার দরকার নেই।

১৩.
মা গরীবা রা তামাশাঈ চমন দারকারে নীস্ত
দা গহায়ে সীনায়ে মা কমতর আয গুলযারে নীস্ত।
– আমি দরিদ্র। এ জগতের রঙ ঢঙ আমার দরকার নেই। আমার হৃদয়ের প্রেমের দাগ সমুহ বাগানের চেয়ে কম নয়।

১৪.
যিন্দাহ কুনী আত্বায়ে তু ওয়া রাবকুশি ফেদায়ে তু
দিল শুদাহ মুবতালায়ে তু হারচেহ কুনী রেযায়ে তু।
– আমাকে যদি বাঁচিয়ে রাখো, এ তোমারই দান। আর যদি আমাকে হত্যা করো এও তোমারই দান। আমার মন তো শুধু তোমারই জন্য পাগল। তোমার যা ইচ্ছা করো।

১৫.
ইয়া বাম ঊরা ইয়া নায়া বাম জুসতেজু ঈ মী কুনাম
হাছেল আয়াদ ইয়া নায়া ইয়াদ আরযু য়ে মী কুনাম।
– আমি তোমাকে পাই অথবা না পাই আমি চেষ্টা করে যাবো। তুমি আসো বা নাই আসো আমি আকাঙ্খা করে যাবো।

১৬.
দস্ত আয ত্বলব নাদারাম তা কারে মান বর আয়াদ
ইয়া জা রাসাদ বজানা ইয়া জা যে তন বর আয়ায়।
– আমার উদ্দেশ্য তো প্রেমিকাকে পাওয়া। হয় আমার প্রেমিকা আমার সাথে মিলিত হবে নয়তো আমার এ জীবন আমার শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে।

১৭.
আশেকা রা মিল্লাতো মাযহাব জুদাস্ত
আশেকা রা মিল্লাতো মাযহাব খোদাস্ত।
– প্রেমিকের ধর্ম নীতি আলাদা। প্রেমিকের নীতি হলো শুধূই প্রভূ।

১৮.
আশেকা রা রোয মাহশার বা কিয়মাত কারে নীস্ত
আশেকা রা জুয তামাশা জামালে ইয়ারে নীস্ত।
– হাশর কিয়ামতে আশেকদের কোনো কাজ থাকবে না। সেদিন শুধু আশেকরা প্রভুর সৌন্দর্র্য্য দর্শনে ব্যাস্ত থাকবে।

১৯.
তেরে ফুরকাত সে দিলে গম যাদাহ এতনা চোর হায়
রখনাহ রখনাহ হায় কে, গোয়াখা নায়ে যাম্বুর হায়।
– তোমার বিরহ বেদনায় মন এমন চূর্ণ বিচূর্ন হলো যে ভীমরুলের বাসার মতো ছিদ্র ছিদ্র।

২০.
আয় দোস্ত! আগার জা ত্বালবী জা বা তূ বখশম
ওয়ায জা চেহ আযীযাস্ত বগূ আঁ ব তূ বাখশম।
– হে বন্ধু, তুমি যদি আমার প্রাণ চাও আমি তোমাকে তাই দিবো। আর যদি প্রাণের চেয়ে প্রিয় কিছু চাও তাহলে আমি তোমাকে তাই দিবো।

২১.
আজব দরদীস্ত আন্দরে দিল আগার গূয়াম যবাঁ সূযাদ
ওয়াগার দর দিল নেহা দারম দেমাগো উস্তখা সূযাদ।
– আমার অন্তরে প্রেমের এমন বেদনা তা যদি মুখে বলি তাহলে আমার মুখ জ্বলে যাবে। আর যদি অন্তরের মধ্যে গোপন রাখি তাহলে মস্তিষ্ক ও হাড় জ্বলে যাবে।

২২.
এক চশমে যাদান গাফেল, আযা শাহে নাবাশি
বা শদ কেহ ঊনেগাহে কুনাদ আগাহে নাবাশি।
– এক পলকের জন্যও প্রভুর স্বরণ থেকে ফিরিও না। এমনও হতে পারে যে, তিনি তোমার দিকে তাকাবেন আর তোমার খবরও থাকবেনা!

২৩.
সা কিয়া বরখীযো দর দহ জামেরা
খাক বর সার কুন গমে আইয়্যামে রা।
– হে সাকী! প্রেমের শারাব দাও। মাথায় মাটি দাও এবং শেষ করে দাও সকল চিন্তাকে।

২৪.
বে লেকায়ে রুয়ে জানা যিন্দেগীনী মুশকিলাস্ত
যিন্দেগানী মুশকিলাস্তো কামেরানী মুশকিলাস্ত।
– প্রেমিকার মুখ না দেখে জীবন ধারণ করা খুবই কষ্টকর। জীবন ও সফলতা খুবই কঠিন।

২৫.
লাও কানা হুব্বুকা ছাদিকান লা আতাতাহু
ইন্নাল মুহিব্বা লিমাই ইউহিব্বু মুতীউ।
– তোমার মহব্বত যদি সত্য হতো, তাহলে তুমি তার অনুকরণ করতে। কারন যাকে যে ভালোবাসে সে তার অনুগত হয়।

২৬.
ফরদে ওয়াহেদ হায় ফক্বত মাওযু এ মাকূলা তে ইশক
ছিনফো ফছলো নাও ও জিনসো আলী ওয়া সাফেল নেহী।
– প্রেমের জগতে কোনো জাত বিভাগ, উঁচু নিচু বলে কিছু নেই। এখানে শুধু একটিই বিষয় আর তা হলো প্রেম।

২৭.
রমযে ইশকী সে কিরামান কাতেবী কো কিয়া সুঝে
জব রেফাকত কে লিয়ে জিব্রাইল ভী কা বেল নেহী।
– প্রেমের গোপন রহস্য কেরামান কাতেবীন কি করে বুঝবে? যেখানে মিলন মুহুর্তে জিব্রাইল ও যোগ্য সঙ্গী নয়!

২৮.
খাকা উস ইনসান কা হোগা জাহান্নাম কা হাত্বাব
জিসকে উনছুর হী মে নারে আশেকা শামেল নেহী।
– যার দেহমনে প্রেমিকের হৃদয় জ্বালা সংমিশ্রিত নয়, তার শরীর হবে জাহান্নামের ইন্ধন।

২৯.
ইশকে মাহবুবে খোদা আয় দিল জিসে হাসেল নেহী
লাখো মূমিন হো মাগার ঈমান মে কামেল নেহী।
– খোদার মাহবুবের প্রেম যার হাছিল হয় নাই, সে কখনোই মুমিন নয়।

৩০.
আশেকু কা দীল রানায়া আয়েনা , আল্লাহ নে
উসকো রওশন করদিয়া ফের ইশকে রাসুলুল্লাহ নে।
– আল্লাহ প্রেমিকের অন্তরকে বানিয়েছেন আয়না। আর তাতে রাসুল প্রেমের বাতি প্রজ্জলিত করেছেন।

বিষয় – বন্ধুর স্বরণ

১.
যংগে দিল আয ছায়ক্বালে লা পাক কুন
সীনায়ে বা তে গে মহব্বত চাক কুন।
– লা এর শান দিয়ে দীলের ময়লা দুরীভূত করো। তারপর তোমার হৃদয় কে ভালোবাসার তরবারী দ্বারা দ্বিখন্ডিত করো।

২.
তেগে লা দর কাতলে গায়রে হক বরান্দ
দর নেগার আখের কে, বাদে লাচে মান্দ।
– লা এর তরবারিতে প্রভূ ব্যতিত সকল কিছুকেই শেষ করে দাও। তারপর দেখো লা এর পরে কি আছে।

৩.
মান্দ ইল্লাল্লাহ বাকী জুমলা রফত
মারহাবা আয় ইশকে শিরকাত সূযো রফত।
– এখন তুমি দেখো শুধু প্রভূই আছে। আর সকলি শেষ হয়েছে। সাবাশ হে প্রেম! শিরিক শেষ হয়ে গেছে।

৪.
পরদায়ে হাস্তী আগার সূ যী বনারে লা ইলাহা
আযমা বে পরদা, বীনী নূরে ইল্লাল্লাহ রা।
– হাস্তির বা অস্তিত্বের পর্দাকে লা ইলাহা এর আগুনে জ্বালিয়ে দাও, তাহলেই সরাসরি প্রভুকে দেখতে পাবে।

৫.
মান না গানজাম দর যমীনে আ’সমা
লেকে গানজাম দর ক্বলবে মু’মিনা।
– আসমান জমীনে কোথাও প্রভুর স্থান হয় না। তাহার স্থান হয় বিশ্বাসীর হৃদয়ে।

৬.
হাম খোদা খাহী ওয়া হাম দুনিয়া য়ে দূ
ঈ খেয়া লাস্তো মহা লাস্তো জূনূ।
– তুমি দুনিয়াও চাও, আবার প্রভূকেও চাও! এটা নিছক কল্পনা ও পাগলামি ছাড়া আর কিছুই না।

৭.
ছদ তামান্না দর দিলাস্ত আয় বুল ফুজুল
কায় কুনাদ নূরে খোদা দর ওয়ায নযুল।
– তোমার মনে হাজারো কামনা বাসনা, প্রভূর জ্যোতি কিভাবে তোমার হৃদয়ে স্থান পাবে?

৮.
হার তামান্না দিল সে রুখছত হো গায়ী
আব তূ আজা আব তো খালওয়াত হো গায়ী।
– হে প্রভূ, সকল কামনা বাসনা আমার মন থেকে দূরীভুত হয়েছে। এখন এ নির্জনতায় তুমি এসো।

বিষয় – প্রভুর নৈকট্য ও মিলন

১.
ইশক সে বে তাব জূ দিল হায় নেহী ওহ দিল নেহী
জালওয়ায়ে জা না সে খালী হায় জূ ওহ মনযিল নেহী।
– যে হৃদয়ে মুর্শিদের প্রেম নেই তা কখনোই হৃদয় নয়। প্রেমাস্পদের আলোচ্ছায়াহীন কি করে হৃদয় হতে পারে?

২.
ফযলে হায়ওয়ানাত পর হারগেয উসে হাসেল নেহী
নাম জিসকা দফতরে উশশাক মে শামিল নেহী।
– যে ব্যাক্তি প্রেমিক নয় সে কখনো পশু পাখির চাইতে উচ্চ নয়।

৩.
মাশুকু কাজূ নিশানা সব তোমহারে পাস হায়
ইস লিয়ে আশেক হুওয়া মাই তূ মেরা মাশুক হ্যায়।
– প্রেমাস্পদের যত লক্ষণ সবই তোমার মাঝে আছে। এ জন্যই আমি হয়েছি প্রেমিক আর তুমি প্রেমাস্পদ।

৪.
মাশুকু সে কিয়া মযাহ হায় আশেকূ সে পুছিয়ো
শাখে গুলমে কিয়া মযাহ হায় বুলবুল সে পূছিয়ো।
– প্রেমাস্পদের মাঝে যে কি আনন্দ তা প্রেমিকদের জিজ্ঞাসা করো, বাগানের ফুলের মাঝে যে কি আনন্দ তা জিজ্ঞাসা করো বুলবুলকে।

৫.
আয় পিয়ারে ইশক সে দেওয়ানা, খুদ রা সা খতাম
যুলফে তূ যিনজির করদাহ দর গুলু আনদা খতাম।
– হে প্রিয়, আমিতো তোমার প্রেমের মধ্যে ডুবে রয়েছি এবং নিজেকে পাগল বানিয়েছি। আমি তোমার চুলের বেণীকে মালার মতো গলায় পরলাম।

৬.
লা মকা পর ঘর বানায়া ইয়ারনে
দর বদর হামকো ফেরা ইয়ারনে।
– বন্ধু আমার ঘর বানিয়েছে লামাকানে। আর আমাকে ঘুরিয়েছেন দুয়ারে দুয়ারে।

৭.
ইশকে আউওয়াল দর দিলে মাশুকে পয়দা মী শাওয়াদ
তানা সূযাদ শমআ কায় পরওয়া না শায়দা মী শাওয়াদ।
– ইশকের আগুন প্রথম জ্বলে মাশুকের অন্তরে। মোমবাতি না জ্বললে পতঙ্গ জ্বলবে কিভাবে?

৮.
জূ জ্বালাতা হায় কেসী কো ওহ ভী জলতা হায় যরুর
শমআ ভী জল জাতী হায় পরওয়া না, জল জানে কে বাদ।
যে কাউকে জ্বালালো, সে নিজেও নিশ্চয় জ্বলতে থাকে। কীটপতঙ্গ জ্বলে গেলেও মোমবাতি ঠিকই জ্বলতে থাকে।

বিষয় – লাইলী মজনূ

১.
দীদে মাজনূ এক ছহরা নো ওয়ারাদ
দর বিয়া বা গমশ বনাশাস্তায়ে ফরদ।
– এক আগন্তুক একদিন মজনূকে দেখতে পেল যে সে জঙ্গলে একা বসে চিন্তায় মগ্ন আছে।

২.
রেগে কা গয বুওয়াদ আঙ্গাশতা কলম
মী নামূদে বাহরে কাস নামা রকম।
– মনে হয় সে কারো কাছে পত্র লিখছে। বালি হলো তার কাগজ, আঙ্গুল হলো তার কলম।

৩.
গুফত আয় মজনূনে শায়দা চীস্তঈ
মী নবীসী নামা বাহরে কীস্তঈ।
– আগন্তুক জিঙ্গাসা করলো হে মজনূ, এ গুলো কি লিখছো? এ পত্র কাকেই বা লিখছো?

৪.
গুফতে মশকে না মে লায়লা মী কুনাম
খাত্বেরে খোদ রা তাসাল্লী মী দেহাম।
– মজনূ বলল, লাইলীর নাম চর্চা করছি আর নিজের মনকে শান্তনা দিচ্ছি।

৫.
এক শবে মাজনূ ব খলওয়াত গাহে রায
গুফত আয় পরওয়ারদেগারে বে নিয়ায।
– এক রাতে নির্জনে মাজনূ বললো, পরম পরওয়ারদেগার!

৬.
তূ চেরা নামাম বা, মাজনূ করদা ঈ
ঈশকে লায়লা দর দিলাম তূ দাদা ঈ।
– তুমি আমার নাম মজনূ কেনো রেখেছো? লাইলীর প্রেম কেনো আমার অন্তরে দিয়েছো?

৭.
করদা ঈ খারে মুগীলা বা লিশাম
মী বরম শাবহা ব গেরদো না লিশাম।
– বাবলা কাঁটাকে আমি বানিয়েছে আমার শয়নের বালিশ, লাইলীর প্রেমের এখন আমি রাতদিন বিলাপ করি।

৮.
লায়লা মাশুক পর জূ কায়স সা মজনূ নেহী
লুতফে যওকে আশেকী হারগেয উসে হাছেল নেহী।
– লায়লী যেখানে প্রেমাস্পদ সেখানে প্রেমিকও হতে হবে মজনূর মতো। তা না হলে প্রেম হবে নিতান্তই রুচিহীন।

৯.
গোরে মজনূ পর কেসী নে জাকে পূছাঈ সুখন
ইশকে লায়লা আব ভী বাকী হায় তুঝে আয় খাস্তাতন।
– মজনূর কবরে গিয়ে কেউ জিজ্ঞেস করলো, হে মজনূ, তোমার মাটিতে মিলিত এ দেহে এখনো কি লায়লার মহব্বত আছে?

১০.
কবর সে চিল্লাকে উঠা, মুহ সে ফাড় কর কাফন
সুযে বুলবুল কম না গরদাদ, গুল রাওয়াদ চূ আয চমন।
– কবরে কাফন ফেড়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো মজনূ, “বুলবুলিদের হৃদয়ের উত্তাপ কখনো কমেনা, বাগানে ফুল যদি নাও থাকে”।

বিষয় – সঙ্গ

১.
ছুহবতে ছালেহ তুরা ছালেহ কুনাদ
ছুহবতে তালেহ তুরা তালেহ কুনাদ।
– সৎ লোকদের সঙ্গ তোমাকে সৎ বানাবে। পাপীদের সঙ্গ তোমাকে পাপী বানাবে।

২.
আয় বেরাদার দূর বাশ আয ইয়া রে বদ
ইয়া রে বদ বদ তর বুওয়াদ আয মারে বদ।
– খারাপ বন্ধুদের থেকে সবসময় দুরে থাকো। কারণ খারাপ বন্ধু বিষধর সাপের চেয়ে বেশি বিপদজনক।

৩.
ইয়ারে বদ আরাদ তুরা সূয়ে জাহীম
ইয়ারে নে কূ গীর তা ইয়া বী নাঈম।
– খারাপ বন্ধু তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। ভালো বন্ধু তোমাকে জান্নাত উপহার দেবে।

৪.
তূ ভী আয় রফীক! আগার হো হুশিয়ার
ছুহবতে জাহেল না; করনা এখতিয়ার।
– হে বন্ধু, যদি তুমি জ্ঞানী হয়ে থাকো তাহলে মূর্খদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো।

৫.
হারকে খেদমত করদ উ মাখদুম শুদ
হারকে খূদ রা দীদ উ মাহরুম শুদ।
– যে লোকের খেদমত করে সে সম্মানিত হয়। আর যে নিজেকে বড় মনে করে সে বঞ্ছিত হয়।

সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
(ধারাবাহিক বাণী যুক্ত হবে)

আপন খবর