লেখক – নূর মেহেদী আব্দুর রহমান
আমি যে আমি’র খোঁজে
আমি ছাড়া আমার দুঃখ আর কে বা বুঝে।
জীবনে তো ঘুরলাম কতো? ঘুরে কোথাও পাইনা যে!
অনাহারে থাকলে আমি ক্ষুধা ক্লিষ্ট হই,
কেমন লাগে আমার তা’কি বুঝবে আর কেহই?
আমার সবই আমি বা কই? আমি রই আমার মাঝে।
যাহা কিছু দেখি আমি আমার দুই নয়নে,
একবার দেখলে তাহার ছবি ভাসে হৃদয় মনে!
কেনো ভুলে যাই দর্পনে, দেখিয়াও নিজকে নিজে।
খুশি আর আনন্দে কভু হাসি পায় বদনে,
দুঃখ ব্যাথা পাইলে কভু জল ঝড়ে নয়নে,
আমি’র খোজে রহমানে, বেড়াইলো বাউল সেজে।
চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা, ত্বক ইন্দ্রিয়াদি আর এই দেহ ভূবনে সকলি আমার। আমি কোন জন? নাহি মিলে সন্ধান তার। আমারই ইচ্ছাতে পরিচালিত হস্তপদ আঙ্গুলী সকল- সবই ইচ্ছাতে আমার।
আমি খাই, আমি ঘুমাই, করি কত কাজ, সবই তো ইচ্ছাতে আমার। আমি কোন জন- তার নাহি মিলে শুমার।
আমি আশরাফুল মাখলুকাত। আমাতে নিহিত আব, আতশ, খাক, বাদ একটি জাতের চার এতবার- তা লইয়া পাঁচ জাত। আর সাত সেফাত। যাহা অগ্নি নয়, নহে পানি, মাটি, বাতাস। গুণাগুণ সাতটি তার। এমনি কতই বেশুমার।
হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (র) জিজ্ঞাসিত হলো, হুজুর! লৌহ মাহফুজ কি? বলিলেন ‘আমি’। প্রশ্ন হলো, আরশ কুরসি কি? উত্তর ‘আমি’। চন্দ্র সূর্য কি? উত্তর ‘আমি’। তাহলে ঈসা, মুসা, দাউদ? উহাও ‘আমি’। প্রশ্নকারীগণ বলিল- হুজুর, কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। বায়েজিদ বোস্তামী বললেন, ‘যখন কোনো মানুষ হক তায়ালার মধ্যে লয় হইয়া যায়, তখন সব কিছুই হক তা’য়ালা হইয়া যায়’।
গোস্তে মনসুরে আনাল হক গাস্তে পোস্ত
গোফতে ফিরাউনে আনাল হক গাস্তে হাস্ত।
মনুসর বললো ‘আমি খোদা’ মিশিল সে আল্লাহর জাতে, ফেরাউন বললো আমি খোদা, সে পতিত জাহান্নামে।
মানতু শুদাম তুমান শুদি, মানতু শুদাম তু জাশুদি,
আকশ কেনা গোয়েদ আজি মান দিগর তু দি গরী।
হে খোদা, তুমি তোমার আপন কুদরতে চেয়ে দেখো, আমি আর আমি নাই, আমি তুমি হইয়া গেছি। আর তুমি আমি হইয়া গেছো।
আর ফেরাউনের আমিত্বে গর্ব, অহংকার, দেমাগ। বড়াই ক্ষমতার দাপটে তার নীজের আমিত্ব।
বুদ্ধদেব বলিলেন,
কা তব কান্তা কান্তেপুত্র, সংসার হয়ম তব বিচিত্র, কসৎ তং বা কুত আয়াত, তত্বং চিন্তনং তদিদং ভ্রত।
কে তুমি? কে তোমার পুত্র পরিবার? কোথা হইতে আসিল? এ সংসার অতি বিচিত্র। হে ভাই, নিগুঢ় তত্ব বিশ্লেষন করো।
আত্মনং বৃদ্ধি, ভূমৈব, স্ততব্য সিতিব্য নাল্পে সুখ মস্তি।
আত্মাকে চিনো, তোমাকে জানো, অল্পে সুখ নাই।
গীতা বলছেন,
নৈনং ছিন্দন্তি সন্ত্রামী নৈনং দহাতি পাবক নচেনং ক্লেদয়ন তাপনে শোধয়াতি মারুত।
অস্ত্র নারে করিবারে আত্মার ছেদন, বহ্নি নাহি পারে তারে করিতে দাহন। সলিলের শক্তি নাই সিক্ত করিবারে, অনলের শক্তি নাই দগ্ধ করে তারে।
অগ্নি যাকে দাহ্য করতে পারে না, সলিল যাকে পারে না সিক্ত করতে, রৌদ্র যাকে নাহি পারে শুকাইতে, বৃষ্টি নাহি পারে তাকে ভিজাইতে- তার মৃত্যু নাই। সে এক অবিনাশী চেতনা। যখন আমাতে সে নাই, তখন আমিও নাই। নাই আমার কোনো অস্বিত্ব। তাহলে আমি কোন? তাই ‘আমি’র খোজে ‘আমি’।