ব্লগ – কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী এর বাণী

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী এর কয়েকটি অত্যন্ত মূল্যবান বাণী সমূহ একত্রিত করা হলো। বাণীগুলো তরিকতের জ্ঞানপিপাসুদের জন্য চিন্তার খোরাক জোগাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। যারা পূর্ণ ঈমান সহযোগে মানুষ গুরু নিষ্ঠা করে মুক্তির পথে সাধনরত আছেন, বাণীগুলো তাদেরকে পথের প্রদীপ জ্বালতে সহায়তা করবে।

১। যার দীলে আল্লাহর কালাম আছে সে কখনো দোযখে যাবে না।

২। কোরানুল কারিম সমস্তটাই মুহাম্মদ এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইয়্যেতের নিকট বুঝে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

৩। ধর্মত্যাগ বলতে কিছু নেই, যা আছে তা হলো হায়ানী আত্মার ধর্ম ত্যাগ করে ইনসানী আত্মার ধর্মকে ধারণ করা, নফসে মুৎমাইন্নাহ্ অর্জন করা।

৪। মানুষের ইবাদত হলো খন্ডকালের ইবাদত হতে অখন্ড-কালে স্থিতি লাভ করা তথা দায়েমীতে কায়েম হয়ে যাওয়া তথা নিজেই নামাজ রোজা হয়ে যাওয়া এবং নিজের নামাজকে হেফাজত করা।

৫। যারা মুর্শিদের সাথে আত্মার পবিত্র সম্পর্ক স্থাপন করেছে তথা বায়াত বা আনুগত্য স্বীকার করেছে কোরান মতে তারাই হলো ঈমানদার।

৬। মূলতঃ ধর্ম ত্যাগ কথাটিই অবান্তর। কারন, মানব ধর্ম একটিই, তার দুই হয় না।

৭। নামাজের মূল মাহাত্ম্য মনের আমিত্বটিকে দূর করে দেয়া।

৮। যার নিজের বুকে মানবাত্মার রঙের আলপনা ফুটেনি, সে চিত্রে রঙ ফুটবে কেমন করে?

৯। ধর্মরাজ্য বিস্তার মানে মানুষকে দয়া, মায়া, প্রেম, ভালোবাসা দান করা তথা সৎস্বভাব যোগে চৈতন্য ভাব জাগ্রত করা তথা মানবতা বা ইনছানিয়াত প্রতিষ্ঠা করা এবং ¯্রষ্টা বা খোদাকে চেনা।

১০। জ্ঞানীর কাছে জেনে নিলে একটি বিষয় পরিষ্কার হবে যে, নবুয়তে যাদেরকে নবী-রাছুল বলা হয়, বেলায়েতে তাদেরকেই অলি-আউলিয়া বলা হয়।

১১। ইয়াজিদ ধ্বংস হলেও তার পেতাত্মা সহ¯্র-লক্ষ ভাগে বিস্তার লাভ করে জঙ্গি ওহাবী মৌলবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আছে ধর্মের ছদ্মাবরণে।

১২। বিশ্বাস-ভক্তি-প্রেম এ তিন তত্ত্বে ইসলামের ভিত্তি।

১৩। আল্লাহর রঙে রঞ্জিত হয়ে যাওয়া বা আল্লাহর গুণে ভূষিত হওয়া মানেই হলো ইসলামে দাখেল হওয়া।

১৪। কোরান হলো আল্লাহর নূর, কদিম, কোরান অসীম এবং তা অখন্ডকালের সাথে সম্পৃক্ত রাছুলের আহলে বাইয়্যেতসহ।

১৫। কোরানের ভাষা হলো রূপক-প্রতীক-মুতাশাবেহাত, আসল বা মুহকামাত হলো এই মানুষ মানে খোদার তরফ থেকে মানবসত্ত্বা বিশ্বস্ত আত্মাসহ নাজিলই আল্লাহর তরফের নাজিল কোরান।

১৬। মানব সুরত কায়েম হলেই বাকশক্তি রক্ষা হয় আর বাকশক্তি রক্ষা হলেই আল্লাহর কালাম কোরান পাওয়া যায়, যে কোরান শ্রবণযোগ্য।

১৭। কোরান শুধু মুসলমানের জন্য নয়, এটা বিশ্ব মানবজাতির জন্য নাজিলকৃত আল্লাহর বাণী।

১৮। আসলে যারা আমিত্ব নাস্তি করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’ য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লাম এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইয়্যেতের মহব্বতে আছে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত দল।

১৯। সেই চিরন্তন শ্বাশত আহলে বাইয়্যেতের পরিচয় যারা জানে তথা নিজেকে চিনে তারাই হলো জ্ঞানী, আর জ্ঞানীগণই হলো অলি-আউলিয়া।

২০। একজন পাক মানুষ বা পরকাল প্রাপ্ত মানুষ নিজেই বেহেশত।

২১। মানবাত্মার গুণ খাছিয়ত অর্জন করাই হলো মানবধর্ম বা আল্লাহর দ্বীন মানে দ্বীন-এ-মুহাম্মদী বা ইসলাম।

২২। যারা সত্যিকার ভাবে স্বধর্মে নিষ্ঠ, তাদের উদার বিশ্বপ্রেম আপন হতেই জেগে উঠে।

২৩। বহু মতভেদের বেড়াজাল হতে বের হলেই তাওহীদ জ্ঞানের সন্ধান লাভ হয়। আর মানুষতত্ত্বই তাওহীদতত্ত্ব, তাওহীদতত্ত্বই জ্ঞানের ভান্ডার। সেই তাওহীদ জ্ঞানই কোরানের মুহকামাত।

২৪। যে খোদাকে দেখে, খোদার পাক জাতে বাস করে, খোদার কালাম শুনে, খোদার কথা বলে সে-ই মুমিন, অলি।

২৫। আল্লাহর নাম নয়, আগে মুহাম্মদ রাছুলের নাম জপো, তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করো, তার ভালোবাসাই আল্লাহর ভালোবাসা এবং ইহাই একমাত্র মুক্তি সনদ।

২৬। রূহে ইনছানির অধিকারীত্বে আসাটাই মানব ধর্ম, দ্বীন ইসলাম।

২৭। কাজেই যারা নবুয়তে নবী-রাছুল এবং বেলায়েতে ওলিয়ম মুর্শিদ তথা গুরু তথা অলীর নিকট বায়াত না হয়ে আল্লাহর হাতে বায়াত হয়েছে, ওরাই মুয়াহেদ কাফের।

২৮। ধর্ম একটিই। তা হলো মানব ধর্ম মানবতা, ইনছানিয়াত।

২৯। খোদার ধর্ম দ্বারা ঐক্যতা সৃষ্টি হয় আর শয়তানের ধর্ম দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি হয়।

৩০। মূলতঃ শয়তান মুক্ত মানুষটিই হলো খাঁটি মুসলমান, খাঁটি হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিষ্টান (আল ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত)।

৩১. যিনি পরকালের খবর ইহকালের মানুষদের দিতে পারেন তিনিই মুর্শিদ।

৩২. যারা আল্লাহর রঙে রঞ্জিত তথা সিবগাতাল্লাহ এ ভূষিত তথা প্রভুসত্ত্বার বৃত্তিতে সিক্ত, তারাই ধার্মিক।

৩৩. যারা আদম কাবায় আল্লাহকে সেজদা করেছে, তারা আল্লাহর বান্দা। তাদের সেজদাই কবুল হচ্ছে।

৩৪. জগত জুড়ে এক মানুষই বাস করছে। এ ভেদ রহস্য জেনে, আল্লাহর পাক জাতে বাস করাই হলো তাওহীদে বাস করা।

৩৫. মানব সুরত কে অটল রাখতে নফসানিয়াত খায়েশকে দৃঢ়তার সাথে দমন করো।

৩৬. আত্মপরিচয় লাভ করতে পারলে বা মান আরাফার তালিম জানলে সে অখন্ড আমিকে এ আমিতে দর্শন করা যায়।

৩৭. কোরান বোঝা মানে নিজেকে চেনা জানা। আমাকেই খুুঁজে বের করা তথা সেই আমিকে এই আমিতে দেখা।

৩৮. সেফাতে আলিমুন হৃদয়ে জাগ্রত করে যে তা কায়েম করে নিয়েছে তথা আল্লাহর এলেমের দরিয়ার ভেতর ডুব দিয়ে আছে, সেই হলো আলেম তথা জ্ঞানী।

৩৯. যে অন্তরে মুর্শিদের প্রতি ঈমান, এশক, মহব্বত নাই, সে অন্তর মৃত।

৪০. যে কালেমাকে কে চিনে কালেমাকে ধারন করে আছে, সেই মুক্তিপ্রাপ্ত মানুষ।

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর