ব্লগ – মাওলা আলী (আ) এর ২০ টি বাণী – পর্ব ০২

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

১। মানুষের প্রতিটি নিঃশ্বাস মৃত্যুর দিকে পদক্ষেপ মাত্র।

২। জ্ঞানগর্ভ বাণী মোমেনের কাছে হারানো বস্তুর মতো। কাজেই মোনাফেকের কাছ থেকেও জ্ঞানগর্ভ বাণী পেলে গ্রহণ কর।

৩। আমি তোমাদের পাঁচটি বিষয় বলে দিচ্ছি। যদি তোমরা উটে চরে দ্রুত তা খুঁজে নাও (অর্থাৎ মানতে চেষ্টা কর) তবে এর সুফল পাবে। আল্লাহ ছাড়া আর কিছুতে আশা স্থাপন না করা; নিজের পাপ ছাড়া আর কোনো  কিছুকে ভয় না করা; যা নিজে জানো না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে ‘আমি জানি না’ বলতে লজ্জাবোধ না করা; যা নিজে জানো না তা অন্যের কাছ থেকে শিক্ষা করতে লজ্জা না করা এবং ধৈর্য ধারণ করার অভ্যাস করা, কারণ দেহের জন্য মাথা যেরূপ ইমানের জন্য ধৈর্য তদ্রুপ।

৪। ‘আমি জানি না’ বলা যে পরিত্যাগ করে সে ধ্বংসের মুখোমুখি হয়।

৫। হীনতম জ্ঞান জিহ্বায় থাকে এবং উচ্চমানের জ্ঞান কর্মের মাঝে প্রকাশ পায়।

৬। ভালো  মানে এ নয় যে, তোমার অনেক সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি থাকবে; ভালো মানে তোমার অনেক জ্ঞান থাকবে; তোমার ধৈর্য থাকবে অসীম এবং তুমি আল্লাহর ইবাদাতে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। যদি তুমি ভালো কাজ কর তবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। এ পৃথিবীতে ভালো শুধু দুব্যক্তির জন্য, যে পাপ করার পর তওবা করে এবং যে ব্যক্তি দ্রুত ভালো কাজের দিকে এগিয়ে যায়।

৭। দৃঢ় ইমানে ঘুমানো সংশয়পূর্ণ ইবাদত থেকে অধিকতর ভালো।

৮। যখন তুমি কোনো হাদিস শোনো তখন বুদ্ধিমত্তার সাথে তা পরিক্ষা করো, কারণ হাদিস বর্ণনাকারী জ্ঞানী লোকের সংখ্যা অনেক কিন্তু হাদিসের সঠিকতা রক্ষাকারীর সংখ্যা খুবই কম।

৯। সহসাই এমন এক সময় আসবে যখন এমন লোককে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হবে যারা অন্যের বদনাম করে বেড়ায়, যখন দুষ্ট প্রকৃতির লোককে বুদ্ধিমান বলা হবে এবং ন্যায়পরায়ণকে দূর্বল মনে করা হবে। মানুষ দানকে ক্ষতি বা লোকসান বলে মনে করবে, জ্ঞাতিত্বের বিবেচনা দায়িত্ব বলে মনে করবে না এবং ইবাদতের স্থ্ানসমূহ অন্যের ওপর মহত্ত্ব দাবির স্থান হবে। এ সময় নারীর পরামর্শে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করা হবে। অল্প বয়স্ক বালককে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা হবে এবং নপুংসক লোক দ্বারা প্রশাসন চালানো হবে।

১০। মানুষের মধ্যে এক টুকরো মাংস একটি শিরার সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং এটা এক অদ্ভুত জিনিস। এটাকে ‘কাল্ব’ বলে। এটাই জ্ঞান ও জ্ঞানের সাথে দ্বান্দ্বিক জিনিসের ভান্ড। যদি এটা কোনো আশার রশ্মি দেখে, উদ্বিগ্নতা এটাকে কলুষিত করে এবং যখন উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায় তখন লোভ এটাকে ধ্বংস করে। যদি হতাশা এটাকে ছেয়ে ফেলে তবে শোক এটাকে হত্যা করে। যদি এর ভেতর ক্রোধ জেগে ওঠে তাহলে একটা মারাত্মক ক্ষিপ্ততা জন্ম নেয়। যদি এতে আনন্দ বিরাজ করে তবে এটা সতর্ক হওয়ার বিষয় ভুলে যায়। যদি এটা ভয়ে ভীত হয় তবে এটা অমনোযোগী হয়ে পড়ে। যদি চারদিকে শান্তি বিরাজ করে তবে এটা গাফেল হয়ে পড়ে। যদি কেউ সম্পদ অর্জন করে তবে বেপরোয়া মনোভাব এটাকে ভুল পথে নিয়ে যায়। যদি এতে বিপদ আপতিত হয় তবে অধৈর্য এটাকে হীন করে দেয়। যদি এটা উপোস করে তবে দুস্থাবস্থা এটাকে পরাভূত করে। যদি ক্ষুধা এটাকে আক্রমণ করে তবে দুর্বলতা এটাকে স্থবির করে দেয়। যদি এর খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায় তবে শরীরের ওজন এটাকে ব্যথা দেয়। এভাবে প্রতিটি কমতি এবং প্রতিটি বাড়তি এর জন্য ক্ষতিকর।

১১। আমরা (আহ্লুল বাইত) মাঝখানের বালিশের মতো। যে পিছনে পড়ে আছে তাকে এটা পেতে হলে এগিয়ে আসতে হবে এবং যে অতিক্রম করে গেছে তাকে ফিরে আসতে হবে।

১২। আহলুল বাইতকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে অনেক দুঃখ-দুর্দশা-লাঞ্ছনা-উৎপীড়ন-যন্ত্রণা পোহাবার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

১৩। প্রজ্ঞার চেয়ে আর লাভজনক সম্পদ আর নেই। আত্মশ্লাঘা অপেক্ষা বড় বিচ্ছিন্নকারী ও একাকিত্ব নিক্ষেপকারী কিছু নেই। কৌশলের মতো উত্তম প্রজ্ঞা আর নেই। খোদাভীতির মতো সম্মান আর নেই। নৈতিক চরিত্রের মতো উত্তম সাথী আর নেই। ভদ্রতার মতো উত্তরাধিকারীত্ব আর কিছু নেই। তৎপরতার মতো দেশনা আর কিছু নেই। সৎকর্মের মতো ব্যবসায় আর কিছু নেই। ঐশী পুরস্কারের মতো লাভজনক আর কিছু নেই। সংশয়ে মিথস্ক্রিয়ার মতো আত্মনিয়ন্ত্রণ আর কিছু নেই। নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকার মতো সংযম আর কিছু নেই। বিনম্রতা ও ধৈর্যের মতো ইমান আর কিছুই নেই। নিরহংকার হওয়ার মতো সাফল্য আর কিছু নেই। আলাপ আলোচনার মতো বিশ্বস্ত স্তম্ভ আর কিছু নেই।

১৪। দু-শ্রেনির লোক আমাকে নিয়ে ধ্বংসের মুখোমুখি হবে। এক শ্রেণি হলো, যারা আমাকে অতিরঞ্জনের সাথে ভালোবাসে এবং অপর শ্রেণি হলো, যারা আমাকে চরমভাবে ঘৃণা করে।

১৫। যে নিজেকে বিনম্র করে সে আর্শীবাদপুষ্ট। তার জীবিকা পবিত্র, হৃদয় পবিত্র ও অভ্যাসাবলী ধার্মিকতাপূর্ণ। সে তার সঞ্চয়কে আল্লাহর নামে খরচ করে। সে খারাপ কথা বলা থেকে তার জিহ্বাকে বিরত রাখে। সে মানুষকে পাপ থেকে নিরাপদে রাখে। সে রাসুলের সুন্নাহতে সন্তুষ্ট এবং দ্বীনের কোনো বেদাতের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

১৬। আমি ইসলামকে এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করছি যা পূর্বে আর কেউ করে নি; ইসলাম হলো সমর্পণ, সমর্পণ হলো প্রত্যয়-উৎপাদন,প্রত্যয় হলো সত্যতা সমর্থন, সত্যতা সমর্থন হলো স্বীকৃতি প্রদান, স্বীকৃতি প্রদান হলো দায়িত্বপালন এবং দায়িত্বপালন হলো আমল।

১৭। কৃপণদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে যারা দুর্দশার দিকে বেগে ধাবিত হচ্ছে; অথচ তারা দুর্দশা থেকে দৌড়ে পালাতে চায়। জীবনের আরাম-আয়েশ হারিয়ে ফেলছে; অথচ তারা ব্যাকুলভাবে তা কামনা করে। অহংকারী লোকদের দেখে আমার আশ্চর্য লাগে, যে কদিন আগেও বীর্যের ফোঁটা ছিল এবং আগামীকাল লাশে পরিণত হবে। যে লোক আল্লাহ্তে সন্দেহ করে তাকে দেখে আমার আশ্চর্য লাগে, কারণ সে তো আল্লাহ্ও সৃষ্টি দেখেছে। মানুষকে মরতে দেখেও যেসব লোক মৃত্যুকে ভুলে থাকে তাদের কথা ভেবে আশ্চর্য লাগে যারা দ্বিতীয় জীবনকে অস্বীকার করে, যদিও তারা প্রথম জীবন দেখেছে। তাদের কথা ভেবেও আশ্চর্য লাগে যারা চিরস্থায়ী আবাসকে ভুলে ক্ষণস্থায়ী আবাস নিয়ে ব্যস্ত।

১৮। কর্মবিমুখ লোক দুঃখে নিপতিত হয়। যে আল্লাহর নামে তার সম্পদ থেকে কিছুই ব্যয় করে না তার বিষয়ে আল্লাহর করণীয় কিছু নেই।

১৯। এ পৃথিবী থাকার জন্য নয়-যাত্রাপথের বিশ্রামস্থল। এখানে দুধরনের মানুষ আছে। এক হলো, যারা কামনা-বাসনার দাস হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে; আর হলো যারা কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করে মুক্তিপ্রাপ্ত হয়েছে।

২০। যে মধ্যপথাবলম্বী সে কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হয় না।

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর