কবিতা – কল্পনা

লাবিব মাহফুজ

আজি ওগো প্রিয়া তুমি মোর
সঘন আষাঢ় রবষণে, নিশিথ সুর।
গভীর মায়াবী নিশি, স্নিগ্ধ আলোকময় সাজে
বিন্দুস্ফুটিত বৃষ্টিজল! স্বচ্ছঢলে ঐক্যতান বাজে।

ঝলমলিয়ে শত রং সেথা ছড়ে আছে চারদিকে
নিস্তব্ধ চতুর্পাশ, হৃদ মঞ্জর বিকশি রাগিনী বাঁকে বাঁকে।
বাজিল চপলাসক্ত বীণা, ঢোল বাঁশি কুসুম রোলে
হরষি উঠিল সুর শব্দময়, প্রেমময় তান বোলে।

আকাঙ্খা নৃত্ত মত্ত মরম, কত শত এ পথে
ভাসিল অজান্তে, প্রেম গহ্বর হতে, উছলি সুরথে।
কত শত মুরতি হেরিয়ে এ প্রেম, সুপ্ত নয়ন দ্বারা
দেখিতে চাতে অজানা ধাম, পিছলে যেন দিকহারা।

মাতৃজঠর সম বন্ধ কুঠরী হতে, উপরি বুদবুদ
বাহিরে আসিল কত সে হৃদয়, আলোপ্রেম সবুদ।
কত সে পাষান প্রস্তরবৎ এরে কল্পনা মনে করে
বর্ণচ্ছটা করে উপভোগ, মর্ম সে রাখি দূরে।

বসি সে ভাবতলে, গৃহহারা পাখি সম একাকী নির্জনে
আনমনে সে সুর মূর্ছনা, বাজে মম প্রাণে।
উথলি উথলি ভর ভর দ্বার, শুণ্য হলো যবে পূর্ণ
হৃদয়েও বাজিল, সে বীণা গান, মম উৎসব হলো অনন্য।

হৃদয় জানালাগুলি পূর্ণতায় আজি কপাট মারিল ঘিরে
মাঝে ছিল চিরন্তর রাজাসন, তা শুণ্য রহিল পরে।
অনেক পেয়েছি তবু মনে হয়, কিছুই পাইনি আজ
মুরতি সে মোর নয়ন আড়ালে, পেলাম শুধু সাজ।

ধরিল এবার বিষম জ্বালায়, মুছে গেল হৃদয় তান
এত পেয়েও মোর নতুন চাওয়া হইলো মূর্তমান।
সংগীতাশ্রয়ে, কল্পনা ছোঁয়ায়, অস্পষ্ট ছিল যে ধ্যান
হঠাৎ বাধায় সে চাওয়া খানি, ছুটিল সম বান।

যারি আশ্রয়ে লইবো বরে, সংগীত সুখ ব্যাথা
এক্ষনে যদি নয়ন সম্মুখে হেরিতাম প্রিয়তা।
সুর মায়া ধ্যানে জাগরিত প্রেম, সঁপিতাম চরণ তলে
হলেও কিছু দূর, হৃদয় অর্ঘ্য বিছাতাম পলে পলে।

এমনি অতিবাঞ্ছিত আশায় যখন হৃদয় ছিল ঘিরে
খুঁজিতেছিলাম শত দৃষ্টিপথে, প্রেম বিলাব যার তরে।
নয়ন দুটি মোর শুকতারা সম চেয়ে ছিল আসর পানে
হটিল ছায়ামেঘ, উদ্ভাসিল চন্দ্র, কিরণ লাগিল মম প্রাণে।

অনিমেষে, নিজের অজান্তে আমি চেয়ে অনিবার
চাইলাম দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে, দৃষ্টিসে শতধার।
শত শত অসি উন্মিলিয়ে মোরে, কে যেন আসিল তেড়ে
কহিল রে হতভাগা, কোন বুদ্ধিবলে, ছাড়িবি এ ধন পেয়ে?

শুনি সে গম্ভীর মহেন্দ্রধ্বনী সম্বিৎ আসিল ফিরে
পূণর্বার হেরিলাম সে মুখখানি, স্তব ফল মম তরে।
প্রেমময়ী বীণা সুরে যতনে সোহাগে গড়া সে প্রেমডালা
কে যেন আমার নিজের অজান্তেই ডাকিল রে প্রেমবালা!

যেই হও তুমি, নাহি জিজ্ঞাসিব, পরিচয় তোমা তরে
জানিব তুমি আপনি হাটিয়া, এসেছো মম প্রেম ডোরে।
আকাঙ্খী আমি অমনি জড়ায়ে ধরিয়াছি তব আঁচল
চাওনি তুমি ছিড়িতে সে মায়া, তাইতো এ প্রেম অঞ্জল।

প্রসারিয়ে হাত ডালা হতে লয়ে প্রেম মালাখানি
সম্মুখে দাড়ায়ে দোহে চোখাচোখি, হইলো জানাজানি।
তব গলে বাঁধিলাম অদৃশ্য হাতে মোর, প্রেম ভরা মালা
তুমি চেয়ে মোর নয়নও পাতে, কি জানি কি কহিছ নিরালা।

কে যেন কহিল হৃদয় উদগারি, ওরে পাষাণ প্রাণ
তব সম্মুখ দাঁড়ায়ে প্রেম, চাহিছে আরো প্রণয় দান।
বলিলাম সে মালাতে প্রিয় মম জিবন বাতি
দিয়াছি বাঁধিয়া হৃদয় নৈবেদ্য, মম মানস আরতী।

কহিলে চঞ্চল বায়ুসম ফুকারী হে প্রেমিক প্রেমময়
তোমারী মতো আমিও দিলাম, চড়িলাম তব নায়।
এতেক বলি সে সরায়ে শ্রীমুখ, চলিল আবার পিছে
কাতর স্বরে ডাকি কহিলাম, প্রেয়সী! চলিছ কোন নিরুদ্দেশে?

দাড়ায়ে সে ঈষৎ হাসি, কহিল আমা পানে
আমি নিরুদ্দেশ নই, তুমি স্বপ্নময়, রয়েছ মোহধ্যানে।
ওঠো জাগরণে, হে মোাহাবিষ্ট, নয়ন খুলিয়া দেখো
চাহিনা তুমি হৃদয় স্খলিত প্রেমে, মোরে পূণর্বার ডাকো!

ধ্যান ভঙ্গ হলো মোর! চকিত হল নয়ন পর্দা
অনুভবি রহিলাম, সে মন্ত্রমায়া সুরে, যা হৃদয়ে বাজিছে সদা।
আঁখি খুলি হেরিলাম সে যে আসর কোনে বসি
হেরিলাম সুর কল্পিত ব্যাথায় তার নয়নে ফুটিছে অশ্রুশ্রী।

বুঝিলাম তার হৃদয়ে সুর, উঠিছে বাজিয়ে বীণা
ডাকিলাম নীরবে, কহিলাম ওরে, তুইতো জানিসনা।
কত যুগ যুগান্তের সঞ্চিত স্বপন, আজ তোরে ঘিরে
পরশিল প্রেম সুখ দুঃখ মোর, হৃদয় তট তীরে।

কহিলাম ওরে ‍তুইতো নীরবে শুনেছিস সুর মায়া কথা
জানিস কি আজ, প্রেমন্ময়ী সেজে, মোর হৃদয়ে জাগালি কত ব্যাথা।
ক্ষনিক ভালোবাসা হয়ে প্রেমময়, ভেসেছিল হৃদ গগণে
পরক্ষণে মোর কাড়িলি সে সুখ, যাতনা আনিলি প্রাণে।

নিরিবিলি বসি সংগীত শ্রবা, নিঃঝুম নিরালা
সুবর্ণময়ী, জানিসনি কিছুই, মম হৃদি ঘর উজালা।
তোরে লয় আজ মাতিছিনু প্রেমে বিরহ যমুনায়
তোরি তরে প্রেম মোর, একাকী অকূল সাঁতরায়।

আসর কোনে আনমনে তুই মেতেছিলি লয়ে সুর
তোরে লয়ে প্রেম মোর দিশাহারা, তুই আজন্ম দূর!
তোরি চরণ পরে বিলায়ে দেয়া মোর সাধন সন্ধ্যা মালতি
আজি বিবর্ণ প্রেমে ঝড় ভাঙা নীড় সম পক্ষী মুরতি।

জানিসনি তুই কিছুই, তোরে লয়ে এক শুণ্য ঘর
কোনায় কোনায় ফুকারি উঠিছিল ‍উৎসব, প্রশান্ত চরাচর।
বাধ ভাঙা নদী সম উজাড় করি সব, লুকাইলি কোথা
আজ তুই আজন্মদূর, মানস সুন্দরী, পূর্ণিমা চন্দ্র বিথীগীতা।

হঠাৎ মনে হল, কে তুই, নসতো কেউ আপন
শুধু এক নিমেষের পলক পরিচয়, দোহে দেখা ধ্যাননয়ন।
আবার কে যেন ঠেলি সব ভীড়, কহিল মোর কানে
কি জন্য এ তাপ! সে তো চেনা- অচেনার বন্ধনে।

লয়ে সান্তনাটুকু শিরোপরি করে বলিলাম মম তরে
অবাঞ্ছিত বন্ধন শুধুই বঞ্ছনা, গঞ্জনা সে প্রেম নিহারে।
অচেনা বলে তারে দূরে ঠেলে দিয়ে, ফিরিলাম পিছু পথে
বুকে লয়ে হেন স্মৃতি, পূর্ব তীরে, অতীত রথে।

রচনাকাল – 04/07/2014

আপন খবর