সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
খাজা আহাম্মদ কওসার আলী শাহ আল চিশতী নিজামী (জিন্দাশাহ) (র)
খাজা কওসার আলী শাহ (র). একজন মহান ওলী। তিনি মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকায় তরিকত প্রচার করেন। তাঁঁর রচিত “নেয়ামতে খোদা” সত্যানুসন্ধানীদের জন্য সহায়ক গ্রন্থ। তিনার কিছু বাণী –
1.
হে মানব গণ –
শ্রীঘ্রই অর্ন্তবাহ্যে পবিত্র হইতে চেষ্টা করো।
2.
ভালোবাসে বলে সবে দিলো এত ধন
ধন পেয়ে প্রভু হতে ফিরাইলে মন,
আশরাফী সরদারী সবে দিল সেই জন
দেমাগে মাতিয়া সবে মজাইলে মন।
3.
আশরাফ হইয়া সবে ধরিয়াছো কিনা
ছাড়িয়া কেবের কিনা সাফ করো সিনা।
4.
সুর বাজা শুনিলেই শরা ছুটে যায়
শরা গেলো শরা গেলো বলে বেশরায়।
5.
বেঁহুদা খরচ করনেওয়ালা শয়তানের ভাই।
অর্থ্যাৎ দায়মুচ্ছালাত হইতে গাফেল থাকাই বেঁহুদা খরচ।
6.
শরার মুল মানি সরেওয়ার জানা,
অর্থাৎ আউয়াল আখের জাহের বাতেন সম্পূর্ন রূপে জ্ঞাত হওয়া।
7.
বোরখায়ে মোহাম্মদী অজুদ ইনছান
অজুদ ভুলিল যে সেইতো বেইমান।
8.
নফসে আম্মারা আছে দেলেতে সবার
নাপাকির জড় সেই জান বেরাদার,
সেই জড় উপাড়িতে পীর ধরা চাই
বুনিয়াদ খুড়ি তিনি তুলে দিবে ভাই।
9.
কালেমা সন্ধান করো বস্তু কিবা হয়
জানিলে সে বস্তু কিন্তু পাইবে তোমায়।
10.
আলস্য ত্যাগ করিয়া মৃত্যুঞ্জয় হইতে চেষ্টা করুন।
ইসলামের মুল মানি মৃত্যুঞ্জয়।
11.
নামাজেতে ওয়াছেল হওয়া সবে চাই
নহেত নামাজ পড়া বৃথা যাবে ভাই।
12.
হামেশা কায়েম থাকা চাই নামাজেতে
গাফেল না থাক কেহ নামাজ হইতে।
13.
মোমিন মেরাজ পায় নামাজেতে
রুহুল আযম যবে আসে নজরেতে।
14.
রুহুল আযম বিচে এছরার আল্লাহর
এছরারে ডুবিল যিনি মেরাজ তাহার।
15.
সেজদা মানে মিলে যাওয়া জানো বন্ধুগণ
মিলনে নামাজ আদায় কর সর্বক্ষণ।
16.
জাহেদের নামাজ পড়ে রুকু ও ছজুদ
আশেক নামাজ পড়ে ছাড়িয়া অজুদ।
17.
আমাদের পয়গাম্বর আহাম্মদ,
নামাজের কদ আহাম্মদ,
ইনছানের সুরতও আহাম্মদ।
18.
হুজুরী দেল বা মনোলয় ব্যাতিত নামাজ কায়েম হইবে না।
19.
কামেল পীর ঐ ব্যাক্তি, যিনি বহুকাল পীরের খেদমত করিয়া
তাহার নিকট হইতে মানবী এলেম হাছিল করিয়াছেন।
20.
নামাজের মূল মানি ধ্যানযোগে মনকে সরল করিয়া বিলয় করা।
21.
স্ব-জাকাতে নামাজ কায়েম করা চাই
নইলে নামাজ পড়া বৃথা যাবে ভাই।
22.
জাকাতের মুল মানি নফসের ফেলকে দুর করা
বা প্রবৃত্তিকে নিবৃত্তি করিয়া দেয়া।
23.
রোজার মূল অর্থ শাহওয়াতকে দুরীভূত করিয়া হুজুরে রজ্জুয়াত হওয়া
তথা কামনাহীন হইয়া আল্লাহর স্বানিধ্য লাভ করা।
24.
সর্বঘটে আছে খোদা দেখিতে না পাও
কলুর বলদ মতো ঘুরিয়া বেড়াও।
25.
আকাশ পাতাল ঘুরো কিবা সে মক্কায়
মসজিদ মন্দিরে ঘুরে নাহি পাবে তায়,
আপন দেল কাবায় খুঁজিবারে হয়
আরশ আজিম দেল দেখা পাবে তায়।
26.
যিনি এই দেল কাবায় হজ্ব করিয়াছেন তাহার হজ্ব সর্বতীর্থেই আদায় হইবে।
হজ্বের মুল মানি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা।
27.
নুর আলা নুর দেখো সঙ্গেতে করিয়া
প্রেমের মজুরি যাহা দিবেন আনিয়া,
নুর আলা নুর যদি পাইবে দেখিতে
অজুদ দেখিবে এক সেই তাজাল্লিতে।
28.
হে মোহাম্মদী মিত্রগণ
ডাক্তার জ্ঞান-সিন্ধু নাড়ী জ্ঞানীকে ডাকিয়া
মাথার চিকিৎসা করিয়া জ্ঞান কুঠুরী পবিত্র করিয়া
একচিত্তে পীর কামেলের খেদমতে নিযুক্ত হউন।
29.
মোহাম্মদের মানি জান নুর আলা নুর
তামাম জাহান হয় নুরেতে মামুর।
30.
ভেদের ভিতরে ভেদ রেখেছে রহমান
ঘোরের ঘোরেতে ঘুরে বরজখ জাহান।
হযরত খাজা দেওয়ান আব্দুর রশিদ আল চিশতী নিজামী র. (দেওয়ান রশিদ)
খাজা দেওয়ান রশিদ র. একজন মহান ওলী। তিনি মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকায় তরিকত প্রচার করেন। তাঁঁর রচিত বেশ কয়েকটি কিতাব সত্যানুসন্ধানীদের জন্য সহায়ক গ্রন্থ। তিনার কিছু বাণী –
1.
ভ্রমি জনা অভিমানী
গুরু না পাইল যিনি,
শয়তান তাহার গুরু জানিবে নিশ্চয়রে।
2.
শয়তানের মুরিদ যারা
বড় অহংকারী তারা –
ভ্রমেতে লাফায় তারা – গুরু না চিনিয়ারে।
3.
রূপের গাছে পাখির বাসা
ধরতে যে জন করে আশা
সাত নলেতে ভাঙলে বাসা – দেখা যায় পাখি।
4.
রূপের বানে জ্ঞান হারা
ক্ষণে হয় পাগল পাড়া,
ক্ষণে হাসে ক্ষণে কান্দে
মজিয়ে পীরিতে।
5.
রসরাজ প্রেমরত্ন সৃজন করিয়া
আবার প্রেমের আশায়,
প্রেমিকা দিগের মুখপানে চাহিয়া আছে।
আমার কি পোড়া কপাল, ভ্রমে পতিত হইয়া
একবারও তাহার দিকে লক্ষ্য করিতেছি না।
6.
গোলচক্রে ঘুরিতে ঘুরিতে ভ্রম অন্ধকার
জ্ঞান নয়নকে আচ্ছন্ন করিয়া
একেবারে গোলক ধান্ধা লাগাইয়াছে।
ভ্রমান্ধতা না ছুটিলে গোলোক ধাম দর্শন হইবে না।
7.
ভ্রমি জনা অচৈতন্য
ভুল সেরে হও স্বচৈতন্য
কাল নিদ্রায় ধরবে না তোমায় কখনো,
মনের গোল সেরে রও চেতন ঘরে
ঘুমের ঘোরে আর যেওনা।
8.
সদা চৈতন্য যারা
মৃত্যুঞ্জয় হলো তারা
ভুলকে মৃত্যু বলে সাধুজনা,
এমন মানব জনম পেয়ে ভবে
ভুলে পড়ে হারাইওনা।
9.
থেকো মন স্বচেতনে জ্ঞান নয়নে ঘুমাইওনা
ঘুমাইলে পড়বি ভুলে হারাবি মূল ষোল আনা।
10.
দেখিতে বাসনা যার ভবার্ণবেরে
নিশ্চয়ই হইবে দেখা মান আরাফাতেরে।
11.
আমি ডুব দিয়া রূপ দেখিলাম প্রেম নদীতে
আল্লাহ মুহাম্মদ আদম তিনজনা এক নুরেতে।
12.
আপন ঘরে খুঁজলে পরে যায় তারে চেনা
আপন অজুদ না চিনিয়া হইছিস দিন কানা।
13.
চেন চেন আমার মন, চেন পাঞ্জাতন
যাতে রুহ পঞ্চজন, বিরাজও করে,
চেন আদম ও অজুদ, পাবে অজুদে মৌজুদ
তবে রুহুল আজম দেখবি নজরে।
14.
দিন থাকিতে মনের মানুষ ধর
এই কালেবে আল্লাহ আদম নবী সাবেত করো।
15.
সেজেছো যে সাজ, করিবে সে কাজ
নইলে পাবে লাজ, বিচারের সময়।
16.
নদীর পাড়ে আছে বড় ভয়
চালাও তরী মন বেপারী পাড়ি ধর এ সময়।
17.
কি কিনিতে বলেছিলো কে জানে
হাটের গোলমালে সব গেছি ভুলে কিছুই পড়ে না মনে।
18.
কলমা চিনে কলমা পড় ওরে আমার মন
না চিনিয়া পড়লে কলমা পড়া হবে অকারন।
19.
তত্ব জানোরে আমার মন,
সে তত্বে হইলে মত্ত প্রাপ্ত হবি নিরাঞ্জন।
20.
নোক্তা হতে আলিফ লাম মীম হইল সৃজন
আলিফ মীম লামের ছায়া, লুকাইল নিজ কায়া,
মিশে প্রকাশিল সেই রূপের কিরণ।
21.
মক্কা তায়েফের ঘরে খাকের খামির করে
কালেব তৈয়ার করে আদি আদমের,
কালেবে দম ফুকিল কালেব চৈতন্য হলো
আদম বসিল এসে বিচার আসনে।
22.
অচিনের চিন আল্লাহ গঞ্জমুখফি জাত
নিশানী তাহার এই জাহানী সিফাত।
23.
দর্পনে নয়ন দিয়া দেখ নিরখিয়া
নিয়ামতে খোদা পাবে অজুদ চিনিয়া।
24.
জাত ও সিফাত পাবে রুহ নফস দেল
আল্লাহ মুহাম্মদ বান্দা একই শামেল,
আলিফ লাম মিম জানো আলমের চিন
জ্ঞান নয়ন খুলে বুঝ রেছালায়ে দ্বীন।
হযরত খাজা ইয়ার আলম আল চিশতী নিজামী (র)
হযরত খাজা ইয়ার আলম আল চিশতী নিজামী র. একজন মহান ওলী। তিনি মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকায় তরিকত প্রচার করেন। তাঁঁর রচিত “গজলে ইয়ার” সত্যানুসন্ধানীদের জন্য সহায়ক গ্রন্থ। তিনার কিছু বাণী –
1.
জুদা খোদা বুঝাবে যে জন, মিলবে না তার অমূল্য ধন
আমি তুমি দুই একজন, এক আকারের নিশানা।
2.
তুমি সুক্ষ পথে রও, যদি ভুল সারিতে চাও
মুর্শিদ তোমায় দয়া করলে, জানবে তাহার মুল বিবরণ
কালেমার ভেদ মাজেরা জানো আমার মন।
3.
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে ডাকরে আমার মন
আপন অজুদ চিনলো যে জন, কালেমার পেল দরশন।
4.
দিন গেলো মন কর সাধনা
গুরুর রূপ নিহারে নয়ন দেনা।
5.
তুমি চাও যদি মানুষে
ভক্তি রসের বাদাম দিয়া যাওনা সরল দেশে।
6.
আদমকে চিনবে যদি ধর গিয়ে মুর্শিদের চরণ
আদম হাওয়া গন্ধমের ভেদ, করবে যদি অন্বেষণ।
7.
দেল দরিয়ায় ডুব দিলে মন, মিলবে তাহার নিশানী
আউয়াল আখের জাহের বাতেন, খেলছে খেলা রাব্বানী।
8.
কর গুরুর প্রেমের উপাসনা, পারের ভয় রবেনা
সুক্ষ বস্তু গুপ্ত ভাবে, প্রেমের করো লেনাদেনা।
9.
স্বভাব করোরে শোধন, পাবে সে রতন, গুরু ধরে আগে শিক্ষা করোনা
গুরু মহাজন পারেরই রতন, চরণ ধরে কেনো পড়ে থাকোনা।
10.
মন আমার ঘুরো কেনো মিছে
আত্মতত্ব যে করেছে যাওনা তার কাছে।
11.
গুরুকে অমূল্য জেনে যে ভজেছে নিশিদিনে
ওগো মন হারাইছে নয়ন কোনে, সে বিনে তার প্রান বাঁচেনা।
12.
ভজ মানুষ রতন, পাবে খোদার পরিচয়
মানুষ রতন না ভজিলে, কেবা তাহার সন্ধান পায়।
13.
গুরুকে যে মানুষ জানে সে অজ্ঞানে কি তারে পায়?
এমন পীর ধরা ধরেছো কোথায়, আসল বস্তু জানতে হয়।
14.
গুরু রূপ ব্রম্মান্ডে বাকা, দেখ এ তিন সংসারে
গুরুর মহিমা দেখো তুমি নয়ন ও ভরে।
15.
চিনতে যদি আশা থাকে, চিনিতে তারে
হওনা গুরুর প্রেমে মত্ত, চিনাবে তোরে।
16.
নিকটে কি পাবে দুরে, পর্বতে কি আছে ঘরে
গুরু যদি দেখায় তোরে, তবে জনম হয় উজালা।
আত্মজ্ঞান না হলে, পাবেনা দর্শন
আত্মজ্ঞানই তত্ত্বের কুঞ্জি, শুন ওরে পাষাণ মন।
17.
তৌহিদ ভান্ডারে ডুবেছে যেজন, মানুষের গুণ করেছে অর্জন
বেলা তাহকিকে পায়না সে ধন, ইয়ার আলম এর ব্যাকুল মন।
18.
মুল বিচারে থাকে যেজন, দেহ জমি চাষের কারণ
মানুষ রূপ করিয়া ধারন, জমিতে ফলায় সোনা।
19.
ভ্রান্ত মন ক্ষান্ত হওনা, আর খুঁজোকি বনে বনে
তাহাকে খুঁজিতে গিয়ে একি পেলাম নিকেতনে।
সংকলক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
(ধারাবাহিক বাণী যুক্ত হবে)। ধন্যবাদ।