পত্রিকা – কবিতার খেলা; গালিব থেকে সাকী ফারুকী

সংকলন – আপন খবর ডেস্ক

কবিরা সত্য ও সুন্দরের পূজারী। তাঁরা তাঁদের সমস্ত জীবনের সাধনার দ্বারা জগতের বুকে নিয়ে আসেন ঐশী প্রেমের ফোঁয়াড়া। তাঁদের শাশ্বত বাণীর সলিলে আবগাহন করে মুক্তিপ্রিয় ও চিন্তাশীল মানুষেরা খুঁজে পায় আত্মার খোরাক। তাদের প্রতিটি কথায় উন্মোচিত হয় এক একটি রহস্যের দ্বার।

কবিতা এমনিতেই সুন্দরের প্রকাশ। তা আরো সুন্দর হয়ে উঠে যখন জগতের শ্রেষ্ঠ কবিরা মেতে উঠেন কবিতার খেলায়! অদ্ভুত সুন্দর এ খেলা, হৃদয়ে রহস্যের মুক্তধারা প্রবাহিত হয় এসব বাণীর মাধূর্যে ও চমকপ্রদ যুক্তিবিন্যাসে। প্রাণকে করে আন্দোলিত।

মির্জা গালিব একদিন মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। মুসল্লিরা তাকে বাধা দিলো। তারা বললো,
“মসজিদ খুদা কা ঘর হ্যায়, পিনে কে লিয়ে নেহি”
অর্থাৎ – মসজিদ খোদার ঘর। পানশালা নয়।
গালিব তাকালেন মুসল্লিদের দিকে। আরেক চুমুক পান করে আওড়ালেন –
“শারাব পিনে দে
মসজিদ মে ব্যায়ঠ কার,
ইয়ে ও জাগা বাতাহ
যাঁহা খুদা নেহি”
অর্থাৎ – আমাকে মসজিদে বসেই মদ খেতে দাও। নয়তো এমন জায়গা দেখাও যেখানে আল্লাহ নেই।
মুসল্লিরা নির্বাক! খোদা নেই এমন জায়গা দেখানো কি করে সম্ভব!

বহু বছর পর আরেক কবি আল্লামা ইকবাল গালিবের কথার জবাব দিলেন। বললেন,
“ইয়া গালিব, মসজিদ খুদা কা ঘর হ্যায়
পিনে কি জাগা নেহি,
কাফির কে দিলমে যা
ওঁয়াহা খুদা নেহি”
অর্থাৎ – হে গালিব, মসজিদ খোদার ঘর। পানশালা নয়। তুমি বরং কাফিরের হৃদয়ে যাও। সেখানে খোদা নেই।

কবি আহমাদ ফারাজ প্রতিউত্তর করলেন ইকবালের কথার।
তিনি আল্লামা ইকবালকে লক্ষ্য করে বললেন,
“কাফির কে দিল মে
আয়া হু দেখ কার,
খুদা মওজুদ হ্যায় ওঁয়াহা
উসসে পাতা নেহি”
অর্থাৎ – কাফিরের হৃদয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম, সেখানেও খোদা আছেন। কিন্তু কাফির তা জানেই না।

এরপর লিখলেন কবি ওয়াসি শাহ। বললেন,
“খুদা কা মওজুদ
দুনিয়া মে হার জাগা,
তু জান্নাত মে যা
ওঁয়াহা পিনে সে মানা নেহি”
অর্থাৎ – খোদা দুনিয়ার সব জায়গাতেই আছেন। বরং তুমি জান্নাতে যাও। সেখানে পান করতে নিষেধ নেই।

এবার জবাব নিয়ে এলেন কবি সাকী ফারুকী। তিনি বললেন,
“পীতা হু সাকি
গাম-এ দুনিয়া ভুলানে কে লিয়ে,
জান্নাত মে কৌন সা গাম হ্যায়
ইসি লিয়ে ওঁয়াহা মাজা নেহি”
আমিতো পান করি দুনিয়ার যাতনা ভুলতে। কিন্তু জান্নাতে কোনো যাতনা নেই। তাই সেখানে মদ খেয়েও কোনো মজা নেই।

আপন খবর