ছালমা আক্তার চিশতী
সুরা ইউনুসের ১০০ নম্বর আয়াত অনুসারে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ঈমান আনা যায় না। আবার সুরা ফাত্তাহর ১০ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, যারা নবীর হাতে বায়াত হয়েছে (বায়াতে রেদওয়ান) তারা আল্লাহর নিকটই বায়াত হয়েছে। ইহাই আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান আনা। সুরা ফাত্তাহর ১০ নম্বর আয়াতের শেষে বলা হচ্ছে, “এই অঙ্গীকার/বায়াত যারা রক্ষা করেছে তারা তাদের নিজেদের মঙ্গল করেছে। আর এই বায়াত/অঙ্গীকার যারা ভঙ্গ করেছে, তারা তাদের নিজেদেরই ক্ষতি করেছে।” মানে নিজেকে জাহান্নামী করেছে। যেহেতু বায়াতটি আল্লাহর হাতেই হয়েছে মানব গুরুর উছিলায়, কাজেই বায়াত ভেঙ্গে ফেলা মানে আল্লাহ ও রাছুল হতে তার ঈমান চলে গেছে, মানে সে আর মুসলমানই নেই, নবীর দ্বীনে নেই। আর গুরু/মুর্শিদ হতে খোদাকে আলাদা দেখলে বা গুরুকে গাইরুল্লাহ মনে করলে তার আর বায়াতই থাকবে না। আমার মুর্শিদ কেবলার কালাম, “নবুয়তে যাদেরকে নবী-রাছুল বলা হয় বেলায়তে তাদেরকেই অলি-আল্লাহ বলা হয়। কাজ একই শুধু উপাধি ভিন্ন। নবী পরিচয়ে আর কেহ আসবে না।”
সুতরাং বেলায়তের জগতে ওলিয়ম মুর্শিদের নিকট বায়াত হওয়া মানে আল্লাহর হাতেই বায়াত হওয়া। সুতরাং যারা বায়াত গ্রহণ করেনি, তারা ঈমানদার নয়। আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমানও নেই। কারণ, ঈমান আনতে হলে আল্লাহর অনুমতি/সমর্থন লাগবে। পিতার ঘরে জন্ম নিয়ে মুসলমান দাবী করছে যারা, তারা ঈমানদার নয় (স্ব-ঘোষিত ধার্মিক)। তাহলে ইবরাহীম ও ইয়াকুব নবী তাদের ছেলেদেরকে ‘মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’Ñ এ কথা বলতো না। পিতা নবী/মুসলমান, তবে পুত্রগণও মুসলমান হবার কথা, ফের মুসলমান হতে হবে কেনো ? নূহ নবীর ছেলে কেনান কেনো কাফের হলো ? বায়াত/আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান আনতে হবে, তবেই সে হবে মুসলিম। পরে হবে আমানু, মুত্তাকি এবং মুমিন।
নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেল, আবু লাহাবরা কখনো গুরুবাদী নয়, ওরাও স্ব-ঘোষিত ধার্মিক। নবুয়তে যেমন নবী-রাছুলদের বিরোধীতা করছে কাফের- মুশরিকরা, এখনো তারা পীর/মুর্শিদ/গুরুর বিরোধীতা করছে। যুগেযুগে বিভিন্ন সুরতে একই শয়তানের খলিফা নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেল, আবু লাহাবরা গুরু/মুর্শিদের এবং তাদের ভক্ত/ঈমানদারগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, ফতোয়াবাজি, শারীরিক, মানসিক অত্যাচার-নির্যাতন করছে। ঈমানদারগণ তাদেরকে চিনতে পারেন। পশু পাখিরাও আল্লাহর সালেহ বান্দাদের (নবী-রাছুল, অলি-আল্লাহদের) চিনতে পারে, কিন্তু শয়তানের বান্দারা চিনতে পারে না। তাই কিভাবে ঈমান নষ্ট করা যায় সে চেষ্টায় দিন-রাত কোশেশ করে থাকে। হাদিসে বলা হচ্ছে – যারা বায়াত হয়নি (নবুয়তে নবী-রাছুলের নিকট, বেলায়েতে মুর্শিদের/গুরুর নিকট) তাদের মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের তথা কাফের-মুশরিকের মৃত্যু (বোখারী ৫ খন্ড-১২৮ পৃষ্ঠা টিকা, মেশকাত শরীফ)। আমাদের এই অচেতন/মুর্দা সমাজের মাঝে মুসলমান বেশে ফেরাউন/আবু লাহাব/নমরুদ/আবু জাহেলরা বসবাস করছে। মুসা নবীর বিরোধীতা করছে ফেরাউন (স্ব-ঘোষিত ধার্মিক), ইবরাহীম নবীর বিরোধীতা করছে নমরুদ, মহানবীর বিরোধীতা করছে আবু জাহেল, আবু লাহাব। এরা সবাই স্ব-ঘোষিত ধার্মিক, গুরুবাদী নয়। এরা কখনই গুরুবাদী ছিল না, এখনো নেই। এরা নবীজির সাহাবাগণকে বিভিন্ন রকমের অত্যাচার-নির্যাতন করতো আর বলতো মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ করো, নইলে মেরে ফেলবো। নবীজির বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র করতো, এমনকি তাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। ঈমানদার আর কাফের-মুনাফেক সবই নবীজিকে কেন্দ্র করে। এখন বেলায়েতের যুগে স্ব-ঘোষিত ধার্মিক (মুসলিম বেশে নমরুদ/ফেরাউন/আবু জাহেলÑযারা গুরুবাদী নয়) মুর্শিদের বিরোধীতা করছে এবং ঈমানদারদেরকে দৈহিক-মানসিক অত্যাচার-নির্যাতন করে চলছে। সেই আবু জাহেল/নমরুদ আর এই আবু জাহেল-নমরুদগণের খাছিয়ত একই, শুধু চেহারা ভিন্ন। তাদের দ্বারা সব যুগেই আল্লাহর প্রেমিকগণ নির্যাতিত হয়। কারণ, ব্যক্তিস্বার্থ পূরণ করতে গিয়ে নিকট আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অনৈতিক আচরণ করে থাকে। ধর্মের ছদ্মাবরণে থেকে তারা অধর্মমূলক কর্ম করে বেড়ায়। ব্যবহারেই মানুষ বা শয়তানের পার্থক্য বোঝা যায়। লোকটি কি আনোয়ার না জানোয়ার তার ব্যবহারেই ফুটে উঠবে। আবু জাহেল বা আবু লাহাব যেমন নবীকে মানেনি, তেমনি অন্ধরাও গুরুকে মানে না। এমনকি তাদের পরিবারের কেউ যদি গুরুমুখী হয়, তারা তখন বিদ্বেষ পোষন করে। গুরু ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কারণ, তাদের নিকট দুনিয়াই মূখ্য। তারা এমন ভাবে বায়াত ভঙ্গ করে আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে, যেভাবে ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যায়। যারা সম্পদের মোহে অন্ধ হয়ে আখেরাতকে ত্যাগ করে, গুরুকে ত্যাগ বা ঈমান ভেঙ্গে ফেলে তারা নিশ্চিত জাহান্নামী (সুরা হুমাযা, ১-৪, সুরা ফাত্তাহ-১০)।
সম্পদ থাকাটা পাপ নয় কিন্তু সম্পদের মোহে পড়ে গৌরব-অহংকার করাটা পাপ। যারা দুনিয়ার সম্পদ নিয়ে অহংকার-গৌরব করে, গরীবের উপর জোর-জুলুম করে, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ হরণ করে, ভোগ দখল করে, প্রতিবেশীগণ যার আচার-আচরণে নিরাপত্তাবোধ করে না, ঐ সমস্ত লোক মুসলমান নয়, তারা হলো জালিম। হাদিস বলছে, “যার হাত এবং জিহ্বা হতে প্রতিবেশীগণ নিরাপত্তাবোধ করে না তারা মুসলমান নয়।” যারা জুলুম করে তারা জাহান্নামে যাবে। অহংকার, গৌরব হলো ইবলিশের গুণÑখাছিয়ত। ইবলিশ মানেই অহংকারী। শয়তান মানুষকে মেরে/অচেতন করে তার বান্দা বানিয়ে নেয়। সম্পদের মোহের জন্য বিবেক হারিয়ে অমানবিক আচরণ করে থাকে। কোরানের ভাষায় – যাদের বিবেক নেই তারা অপবিত্র (সুরা বনী ইসরাঈল-৩৬)। আমার মুর্শিদ হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী (কুঃ ছেঃ আঃ) বলছেন- “জ্ঞানীর (ধর্মজ্ঞানীর) সম্পদ আল্লাহর আশির্বাদ এবং অজ্ঞানীর (যারা জোর-জুলুম, অহংকার-গৌরব করে) সম্পদ হলো আল্লাহর অভিশাপ।” যুগে যুগে অন্ধ ফেরাউন, আবুজাহেল, আবুলাহাবের গুণ ধারণ করে নবী-রাসূল বা অলী-আউলিয়াদের অনুসারীদেরকে শারীরিক-মানসিক অমানবিক অত্যাচার বা নির্যাতন করে চলছে। খোদা প্রেমিকগণ তাদের সাথে এইরূপ আচরণ হওয়াকে বলতে থাকে, এইটা হলো তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ঈমানের পরিক্ষা। ঈমানদারদের মূল সম্পদ হলো তার ঈমান, আর শয়তান একজন ঈমানদারের ঈমান ভাঙ্গার জন্য মানবরূপে আশ্রয় নিয়ে এইরূপ অপকর্ম করে থাকে, এরাই হলো নমরুদ, ফেরাউন, আবু জাহেল, আবু লাহাব।
আল্লাহপাক নির্বাচন করছেন বা খলিফা বানিয়েছেন, নবুয়তে নবী রাছুল আর বেলায়েতে ওলী আল্লাহগণকে আর ইবলিশ বা শয়তান নির্বাচন বা খলিফা বানিয়েছে ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব, ইয়াজিদকে। দুইটিই চিরবর্তমান। শয়তানের খলিফারা গুরুবাদী নয়, স্বীয় প্রবৃত্তির উপাসক। ওরা কখনই গুরুবাদী ছিল না, এখনো গুরুবাদী নয়। হোক না সে আলেম, মুফতি, মুহাদ্দেস, মুফাচ্ছের বা পীর। কোরানের ভাষায় ওরা ‘আউলিয়া’ – আউলিয়া আল্লাহি নয়। ওরা শয়তানের বন্ধু, আল্লাহর বন্ধু নয়। আমাদের মুর্শিদ মাওলা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী প্রায়ই একথা আলোচনা করে থাকেন। শ্রী কৃষ্ণ বলছেনÑ “একটি প্রদীপ ও একটি সাপ অর্থাৎ একজন মানুষের মাঝে প্রদীপ রূপী আধ্যাত্মিক জ্ঞানের আলো যদি প্রবেশ করে, তবে সেই মানুষটির জ্ঞানের আলোতে অনেক মানুষ আলোকিত হয়, আর যেই মানুষের মাঝে সাপের স্বভাবের ক্রিয়া প্রকাশ পায় অর্থাৎ তার আচরণ হয় বিষাক্ত, তখন তার নিকট মানুষ এসে শান্তি লাভ করতে পারবে না।” ঠিক তেমনি দশা হয় একজন গুরু ভক্তের। কারণ, গুরুর নিকট যাওয়ার জন্য অনেক বিষাক্ত মানুষের (শয়তানের খলিফাদের) ছোবলের ব্যাথা তাকে অনুভব করতে হয়, কিন্তু যখন গুরুর কথা স্মরণ হয় তখন আর সেই ভক্তের মনের মাঝে কোনো কষ্টই থাকে না। ধৈর্যের চাদর গায়ে মাখিয়ে সে এই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে থাকে। মন যদিও অনেক সময় মানতে চায় তবুও মনকে গুরু জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করে খোদার দীদারের পথে অগ্রসর হতে থাকে।
অন্যায়-অত্যাচার বা জোর জুলুম এই জগতে করা যায়, কিন্তু যখন কালের হাতে অর্থাৎ যখন ঝড়ের মতো মৃত্যুর এসে নিয়ে যাবে তখন সবই চোখের সামনে দেখতে পাবে। দেখতে পাবে মানব ছুরতকে কর্মফলে পশুর ছুরতের রূপদান করছে, তখন আর ফিরে আসার সুযোগ থাকবে না। যেমন – ডায়বেটিক রোগীদের জন্য মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া নিষেধ, কিন্তু যারা এই রোগ থাকা সত্ত্বেও লোভে পড়ে বার বার মিষ্টি খেতে থাকে তখন সেই ব্যক্তিটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে, এই ফলাফলটি সে কর্মের দ্বারা লাভ করে থাকে। ঠিক তেমনি দশা হয় সেই মানুষটির করণ সে জোর- জুলুম করতে করতে করতে তার পাপের খাতা এতই ভারি করে তুলে যে, যার ফলাফলে সে নিজেই চরম বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু ইহজগতে যদিও সে তা বুঝতে পারে না। যদি গুরুর দয়া হয় তবেই সে এ ভয়ংকর পথ হতে উদ্ধার পেতে পারে। তাদের এই পাপের ফলে অমূল্য সম্পদ মানব সুরত হারিয়ে জানোয়ারের সুরত ধারণ করে জাহান্নামে যেতে হবে। কারণ, মানব সুরত কখনো দোযখে যাবে না। সুতরাং সেই ব্যক্তি যদি নিজের ভুল বুঝতে না পারে তবে সে মানব জনম হারাবে। দুনিয়ামুখী চিন্তা চেতনার দ্বারা একজন ব্যক্তি খোদা থেকে আলাদা হয়ে যায়। খোদার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়াই হলো মানব জনমের বাহিরে অবস্থান করা। অন্ধকার যেমন আলোকে আড়াল করে দেয় ঠিক তেমনি গুরুকে ত্যাগ করা ব্যক্তি কালো অজুদ ধারণ করে ফেলে।
অজ্ঞানতার মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে অচেতন মানবগণ খোদার প্রেমিক বান্দাদের সাথে যুগে যুগে অনৈতিক আচরণ করে গেছে। যেমন- সূর্যগ্রহন যখন হয় তখন সূর্যটি অন্ধকারে ঢাকা পরে যায় ঠিক তেমনি হয় অন্ধদের দশা তাদের হায়ানী স্বভাবের দ্বারা খোদাার রূপ দরশন করতে পারে না। খোদার ভেদ যারা জানে তাদের প্রতি বিদ্ধেষ পোষন করে নিজের ক্ষতি করতেছে ফেরাউনের দল কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না। কুকুরের লেজ যেমন সোজা হয় না তেমনি হয় ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাবদেও, ইয়াজিদদের দশা। মানবের মুখশদারী অন্ধদের দ্বারা ফেৎনার সৃষ্টি হয়েছে সব যুগে। কারণ, মানব রূপেই গুরু বা মুর্শিদ আর মানব রূপেই আবু জাহেল, আবু লাহাব, ফেরাউন, নমরুদ। তাই এই রূপ মুখোশধারী ব্যক্তিরা গুরু বা মুর্শিদের ভেদ জানে না। গুরু/মুর্শিদ পুজা সবার নছিবে থাকে না কারণ, গুরু/মুর্শিদ হলো আল্লাহর মূর্ত রূপ। আল্লাহ বলেন : ‘যেই বান্দা আমার হয়ে যায় আমি সেই বান্দার সর্বঅঙ্গের
কর্তা হয়ে যাই।’ যারা হায়ানী আত্মাতে বাস করে নফসে ইনসানির ভেদ তারা বুঝবে না। আর গুরু/মুর্শিদ বাস করে রূহ্-কুদসিতে। তাই ভেড়ার মগজ নিয়ে অর্থাৎ ভেড়ার স্বভাব হলো অন্য ভেড়ারা যা করবে সে তাই করে। ঠিক তেমনি হয় ফেরাউনদের অবস্থান সে তার হুঁশ, আক্কেল হারিয়ে অন্যের কান কথা অনুযায়ী গুরু/মুর্শিদ ও গুরু বা মুর্শিদের অনুসারীদের সাথে শত্রুতা করে থাকে। বাদুরের স্বভাব হলো সে মুখে খাবার খায় এবং মুখেই পায়খানা করে ঠিক তেমনি হয় ফেরাউনদের দশা। আমি নিজের চোখেই ফেরাউন, নমরুদ, আবু জাহেল, আবু লাহাব, ইয়াজিদদেরকে দেখেছি। আমি তাদের মোকাবেলা করেই তাওহিদের পথ চলছি। আমার ঈমান ভাঙ্গার জন্য অনেক প্রচেষ্টা করেছে/করছে। এই ধরনের ফেরাউন বেশী নরপশুরা সব যুগেই ছিল/আছে। এরা শয়তানের মানবরূপী খলিফা। মানবরূপী শয়তানের খলিফারা নারী-পুরুষ দুই রকমেরই আছে। এই ধরণের পশুদের দ্বারা আল্লাহর প্রেমিকগণ নির্যাতিত হয়েছে/হচ্ছে। তাদের দীলে, কর্ণে এবং চোখে আল্লাহপাকই মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তারা থাকবে কঠিন আযাবে (সুরা বাকারাÑ৭)। কারণ, ওরা নিজেদের প্রবৃত্তির/নফসের পূজা করছে, অথচ বুঝতে পারছে না। যেমনÑ একটি গাড়ির ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত তার যদি ইচ্ছা করে কোন ব্যক্তি কেটে ফেলে তবে গাড়িটিকে মিস্ত্রী দেখাতে হবে তবেই গাড়িটি ঠিক হবে। গাড়ির ইঞ্জিনটিকে মানুষের মনের সাথে তুলনা করা যায়, ফেরাউন বা আবু জাহেলদেরও (গুরুবাদী নয়, দুনিয়ার পূজারী) দ্বারা একজন ঈমানদারের মনে অনেক আঘাত আসতে থাকে, আর গুরুর কালাম/বাণী হলো সেই আঘাত ঠিক করার মহা ঔষধ।
একজন ঈমানদার তার ঈমানকে গুরুর দয়ার দৃষ্টি দ্বারা রক্ষা করে থাকে। একজন গুরু ত্যাগী (যে ব্যক্তি বায়াত ভঙ্গকারী) শয়তানের খলিফা দিশাহারা পাগলের ন্যায় একজন ঈমানদারের পিছনে লেগে থাকে, কিভাবে সে ঈমানদার ব্যক্তিটিকে তার দলের অন্তর্ভুক্ত করবে। শয়তান এ ওয়াদা’ই খোদার সাথে করেছে কিন্তু খোদার বান্দা (যারা খোদাকেই চায়, খোদাতেই ফানা হয়ে থাকে) তাদেরকে শয়তান কিছুই করতে পারবে না। দুনিয়ার আশা বা উদ্দেশ্য নিয়ে বায়াত হওয়া হলো হারাম। এইজন্য একজন মুরিদ/ঈমানদার ব্যক্তি যদি দুনিয়া লাভের জন্য গুরুর নিকট যায়, কামেল মুর্শিদ তাকে তা কখনো দিবে না। মুরিদকে দুনিয়া দান করা গুরুর নীতি বিরোধী কাজ। যারা শুধু জাগতিক রোগ ভালো হয়ে যাবে তার আর ডাক্তারের প্রয়োজন হবে না, এ নিয়তে মুরিদ হয় তবে তার মুরিদই হবে না এবং সে মুরিদই নয়। এ ধরনের চিন্তাই একজন মুরিদের ভুল ধরণা কারণ, আশা পূর্ণ না হলে ঈমান ভাঙ্গতে পারে। এ পথেই শয়তান তাকে তার বন্ধু করে নেয়। একজন মুরিদের যে ধরনের কাজ, চিন্তা-ভাবনা বা যাদের সাথে চলাফেরা করলে ঈমানের ক্ষতি হয় ঐ সমস্ত মানুষের সঙ্গ ত্যাগ করা ফরজ। তা না হলে ঈমান হারিয়ে বেঈমান হয়ে জাহান্নামে যেতে হবে। আমার মুর্শিদ কেবলার মুখে একটি গান শুনেছি, লেখক বলছেন –
ওরা চাহিতে জানে না দয়াময়,
ওরা চাহে ধন-জন, চাহে আরোগ্য বিজয়
ওরা চাহিতে জানে না দয়াময়।
যারা ঈমানদার হবে তারা রাছুলকে দেখেই ঈমান আনবে। না দেখে ঈমান আনা যায় না। কারণ, কচু পাতার মাঝে পানি ধরে রাখা যায় না, তাই ঈমান ধরে রাখতে হলে চাতক পাখির ন্যায় একদৃষ্টে গুরু/মুর্শিদের দাওন ধরে রাখতে হবে, চেতন থাকতে হবে। আমার মুর্শিদ কেবলার বানী “অচেতন ইহকাল আর চেতন হলো পরকাল।” অন্ধরা ভাবে গুরু সাধারণ একজন মানুষ, তাদের এই ধরনের করুণ অবস্থা হবে তা পূর্বেই লেখা ছিল। গুরুকে মনুষ্য জ্ঞান যার, অধঃপাতে গতি তার। মানব গুরু খোদা নয়, খোদা হতে জুদাও নয়। এ ভেদ শয়তান এবং তার খলিফারা জানে না। সেজন্যই শয়তান আদম গুরুকে সেজদা করেনি। এখনো শয়তানের বান্দারা আদম গুরুকে সেজদা করে না। শয়তান ইহাকে শেরেক মনে করে তার খলিফা বা বান্দারাও শেরেক জানে। আবু জাহেল/আবু লাহাবদেরকে যেমন নবীজি হাজারো বুঝিয়ে পারেনি, তেমনি এ যুগের আবু জাহেল, আবু লাহাবদেরকে হাজারো ঝুঝালেও বুঝবে না। কারণ, স্বীয় প্রবৃত্তি পূজার কারণে তাদের দ্বীলে, কর্ণে, চোখে আল্লাহপাক মোহর মেরে দিয়েছেন।
যারা গুরুবাদী নয়, বা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান আনেনি তারা কখনো বর্তমান যুগের আবু লাহাব, আবু জাহেল, নমরুদ, ফেরাউনকে চিনবে না। কারণ, তারা নিজেরাই তাদের অনুসারী হয়ে আছে। আর তাদেরকে চিনতে না পারলে ঈমান রক্ষা অবশ্যই কঠিন হয়ে পড়বে। শয়তানের খলিফা আবু জাহেল, আবু লাহাবরা সব সময়ই পিছনে লেগে আছে ঈমানদারের ঈমান ভাঙ্গার জন্য। শয়তানের খলিফারা পিতৃধর্মে বিশ্বাসী। আনুষ্ঠানিক নামাজ, রোজা ইত্যাদি খুব বেশী বেশী করে আদায় করে থাকে, কিন্তু তাদের কোনো বন্দেগীই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। একথা ঈমানদারগণ বাস্তবেই বুঝতে পারেন এবং চোখে দেখে থাকেন। তাদের মধ্যে আলেম-মাওলানা, মুফতি, মুহাদ্দেস, মুফাচ্ছের রয়েছে লক্ষ লক্ষ। রাছুলপাকের ভাষায় ওরা হবে ৭২ কাতারের লোক-জাহান্নামী। বর্তমানে শয়তানের খলিফা আবু জাহেল আবু লাহাবকে চিনবে একমাত্র তারাই যারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান এনেছে তথা মুর্শিদের/গুরুর নিকট বায়াত গ্রহণ করেছে। এরাই একমাত্র নাজাত প্রাপ্ত দল তথা ৭৩ কাতারের মধ্যে ১ কাতার। এখানেই গুরু বা মুর্শিদের শিক্ষা অতীতকে বর্তমানে দেখা। যে অতীতকে বর্তমানে দেখে না সে অন্ধ।