লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
অন্ধকার যখন প্রবল হয়ে নেমে আসে
আর ভেতরটা দগ্ধ হতে থাকে –
হাহাকার নিজের ছায়াকেও হারিয়ে ফেলে
অনন্ত নীলিমার গভীরে!
দীর্ঘশ্বাসেরা ছুটে চলে দলছুট পাখির মতো
স্তব্ধতার গহন গুহা ভেদ করে
যখন অসীমতার পর্দা উন্মুক্ত হয়,
ঠিক সেই মুহূর্তেই –
আমি প্রথম দেখতে পাই তোমাকে।
তোমার ও আমার সকল আবরণ
অহংকারের জমাট অন্ধকার
ভয়ের কণিকা –
যখন শূন্যতার অনলে ছাই হয়ে যায়,
তখন অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে
একা দাঁড়িয়ে থাকো শুধু তুমি।
অস্বীকৃতির দাবানল যখন সব গ্রাস করে
যখন সব পথ, সব চিহ্ন, সব নিশ্চয়তা
ভস্ম হয়ে মিলিয়ে যায় –
তখনও দৃষ্টির একমাত্র দীপ্তি হয়ে
আমার ত্রিনেত্র স্বরণে জেগে থাকো – শুধু তুমি।
এই চোখ – যাকে আমি বলি ‘আমার’,
আসলে সে তো স্বয়ং তোমারই প্রদীপ।
এ দেখা আমার নয়;
আমার অস্তিত্বের ভেতর দিয়ে –
তোমার সর্বময় উপস্থিতিকে অনুভব করা।
আমি শুধু সেই শূন্য পাত্র,
যার ভেতর দিয়ে তুমিই দেখো –
নিরন্তর দেখে যাও – তোমাকেই।
কোনো পথ নেই, কোনো দরজাও নেই –
এ বয়ে চলা তো তুমিই – শাশ্বত গন্তব্য!
আর পরিসমাপ্তিও তুমিই।
স্বয়ং অন্তরের নীরব অন্দরে
ধ্যানের মৃণালে দুলে ওঠে যে সুক্ষ্ম আলো
আর আমিত্বের ফুলে যে অলি-মধূকর বসে –
সে তো তুমিই;
আমার অনঙ্গ ভঙ্গুরে তোমারি যে অসীম দ্যূতি!
আমাকে হারিয়ে
আমি পেয়েছি যে দৃষ্টি –
সে দৃষ্টিই তোমার দর্শন।
আমি নেই; এই যে না থাকা –
এই অনুপস্থিতির মধ্য দিয়েই
আরো প্রবল হয়ে ওঠো – তুমি!
অমানিশার আবরণে যখন হারিয়ে যায় সকল রং
আরো গভীর হয়ে ফিরে আসে আমার নিঃশ্বাস
দম-ভেজা প্রার্থনায় প্রকটিত তরঙ্গে
আমি দেখতে পাই – আমি নই –
তুমি!
অস্তিত্বের দেয়াল ভেঙে
যখন ‘আমি’ ঝড়ে পড়ি তুষারের মতো –
ঠিক সেই শূণ্যতার কোলে শুভ্র প্রজাপতি –
সেকি আমি! তুমি!
দুজনে মিলে সেখানে – জীবন!
শুভ্রতা, অনন্ত শুভ্রতা।
লাবিব মাহফুজ চিশতী
রচনাকাল – 11/12/2025
