লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
মহাত্মা লালন ফকিরের ভাব-দর্শনের অনুসারী মৃত গাজীর উদ্দিন ফকিরের স্ত্রী চায়না বেগম। বয়স ৯০। স্বামীর রেখে যাওয়া এক টুকরো ভিটেয় ছোট্ট বাঁশ টিনের ঘর তুলে স্বামীর কবরের পাশে বসবাস করেন। তার ইচ্ছা, স্বামীর কবরে মাথা ঠেকিয়ে কাটিয়ে দিবেন বাকী জিবনটুকু। ভিটেটিতে প্রতিদিন জ্বালবেন সন্ধ্যেবাতি।
আফসোস! পূরণ হলোনা ৯০ বছরের বৃদ্ধার স্বপ্ন। হঠাৎ ভোরে মসজিদের মাইকে হলো ঘোষণা! দল বেঁধে ভিটেটিতে হাজির হলো উগ্র হায়েনার দল! পাশবিক হিংস্রতায় ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিলো বৃদ্ধার বাঁশ টিনের ছোট্ট ঘরটুকু। বলা হয়, বাড়িতে পাওয়া গেলে হত্যা করা হবে বৃদ্ধাকে।
বাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদ করায় পরদিন এলাকার এক মোল্লার হাতে সরাসরি মারধরেরও শিকার হন বৃদ্ধা। আইনী সহায়তা চাওয়া হলে, ভিটেটিতে আপাতত থাকা যাবেনা মর্মে জানিয়ে দেয় পুলিশ এবং ক্ষতিপূরণের ও আশ্বাস দেয়। তবে অপরাধীদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শেষ বিকেলের আলোয় স্বামীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে চায়না বেগম বলেন, “আমার স্বামী মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, কোথাও জায়গা নাহলে তুমি আমার কবরের পাশেই থাকবা। প্রতিবছর বাতাসার সিন্নি হলেও করবা। তার কথা রাখতেই ঘরখানা তৈয়ার করি। কিন্তু এলাকার লোকজন আমাকে না জানিয়েই সব ভেঙে ফেলেছে।”
পাশবিকতা কতটা প্রবল হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে! মসজিদ থেকে যদি পরিকল্পনা করে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে এমন হিংস্রতা ঘটানো হয়, সেসব মসজিদ নামক সন্ত্রাসীদের আতুরঘর ভেঙ্গে দেয়া জরুরী মনে করি। উগ্র-ধর্ম সন্ত্রাসীদের আড্ডাখানা ভেঙে বরং বৃদ্ধার মতো সাধু-আশ্রম তৈরী করলে সমাজ সু্ন্দর হবে।
মসজিদ থেকে যদি প্রেম-সম্প্রীতি-সৌহার্দের বাণী প্রচারের পরিবর্তে ছড়ানো হয় বিভেদ-হিংসার বিষবাস্প, তবে ভেঙ্গে দেয়া হোক সেসব মসজিদ নামক শয়তানের ঘর! কঠোরতর শাস্তি দেয়া হোক ধর্মান্ধ নরপশুগুলোকে। সুন্দর প্রেমপূর্ণ আধ্যাত্ম সমাজ বিনির্মাণে গাজির উদ্দিন বা চায়না বেগমেরাই যথেষ্ট।
আমাদের সমাজ নরপশু মুক্ত হোক, ধর্মান্ধতা মুক্ত হোক, এটাই আমাদের চাওয়া।
ছবি – কুষ্টিয়া সদর উপজেলার টাকিমারা গ্রামে ভেঙ্গে ফেলা ঘরের পাশে চায়না বেগম।
তথ্যসূত্র – Channel 24, Bd 24 live, আজকের পত্রিকা, ডেইলি স্টার, Rtv online ইত্যাদি।