রেফারেন্স – মিলাদ কিয়াম প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

মিলাদ ও কিয়াম প্রসঙ্গে আলোচনা; দ্বন্দ্ব নিরসন ( দালিলিক আলোচনা)

মিলাদঃ নবী কারিম (সা) এর জন্ম উপলক্ষে আনন্দোৎসব করা, জন্ম কাহিনি বা ঘটনা সমুহ আলোচনা করা ।
কিয়ামঃ মিলাদ মাহফিলে নবী কারীম (সা)এর সম্মানার্থে দাড়িয়ে সালাম পেশ করা ।

“আল্লাহ পাক নিজে মিলাদ ও কিয়াম করেছেন, সকল ফেরেস্তারা মিলাদ কিয়াম করেছেন/করছেন, সকল নবীগন মিলাদ ও কিয়াম করেছেন, রাছুল (সা) নিজে মিলাদ কিয়াম করেছেন, সাহাবিরা মিলাদ ও কিয়াম করেছেন, সকল বুজুর্গ, আউলিয়া নবী প্রেমিকগণ মিলাদ ও কিয়াম করেছেন, উম্মতে মোহাম্মদী সকলেই মিলাদ কিয়ামের পক্ষে এবং মিলাদ ও কিয়াম করছেন।”

“যারা পবিত্র মিলাদুন্নবী এবং কিয়াম অস্বীকার করবে তারা নিঃসন্দেহে সুন্নিয়ত বহির্ভূত, নবী কারিম (সা) এর জন্ম জীবন, সম্মান অস্বীকারকারী দাজ্জাল দল ।”

অলিদ / মওলুদ অর্থ নবজাত শিশু, মাওলুদুর রেজাল অর্থ মানুষের জন্মকাল, মীলাদ অর্থ জন্মকাল, জন্মদিন। (লেসানুল আরব, তাজুল আরুছ, কামুছ, মুহকাম, তাহজীব, আছাছ, ছেহাহ, জওহরী, মিছবাহ)।

প্রচলিত অর্থে মিলাদুন্নবী হল নবী কারিম (সা) এর জন্ম ইতিহাস ও তৎসংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি আলোচনা করা বা ঐ সংক্রান্ত মজলিস।

কোরআনে মিলাদ ও কিয়াম –

সর্বপ্রথম মিলাদ ও কিয়াম পালন করেছেন স্বয়ং আল্লাহ পাক।

পবিত্র মিলাদ শরীফের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। মিলাদুন্নবীর সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা। রোজে আজলে সমস্ত আম্বিয়া কেরামকে নিয়ে আল্লাহ এই মিলাদের সূচনা করেছিলেন। নবীগণের মহাসম্মেলনে সভাপতি ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ পাক। ঐ মজলিসের উদ্দেশ্য ছিল নবীগণের সামনে মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা) এর মর্যাদা তুলে ধরা, তাদের থেকে নবী কারীম (সা) এর ওপর ইমান আনয়ন এবং সমর্থনের প্রতিশ্রুতি নেয়া। (সুরা আল ইমরান ৮১, ৮২)।

“হে প্রিয় রাসুল, আপনি স্বরণ করুন ঐ দিনের কথা, যখন আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর সমস্ত নবীগণ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন এ কথার উপরে যে, যখন আমি তোমাদের কে কিতাব ও হিকমত দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করব, তারপর যখন তোমাদের নিকট আমার সুমহান রাসুল (সা) যাবেন এবং তোমাদেরকে নবুয়্যত ও কিতাবের সত্যতার সাক্ষ্য দিবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তাকে সাহায্য করবে। আল্লাহ বলেন, তোমরা কি এসব কথার ওপর অঙ্গীকার করছো এবং এ শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছো? তাঁরা সমস্বরে বলল, আমরা অঙ্গীকার করছি। আল্লাহ বললেন, তাহলে তোমরা পরস্পর পরস্পরের সাক্ষী হয়ে থাকো এবং আমিও তোমাদের সাথে মহাসাক্ষী হয়ে রইলাম। অত:পর যে লোক এই অঙ্গীকার থেকে ফিরে যাবে সেই হবে নফরমান। (আল ইমরান ৮১, ৮২)।”

নবীজির সম্মানে এটাই ছিল প্রথম মিলাদ মাহফিল। যার উদ্যোক্তা ছিলেন আল্লাহ পাক, উপস্থিত ছিলেন সমস্ত আম্বিয়া কেরামগণ। যেখানে আল্লাহ স্বয়ং নবীজির আর্বিভাব এর গুরুত্ব বর্ণনা করছিলেন। সমস্ত নবীগণ সেদিন মিলাদ ও কিয়াম করেছেন। কারণ, খোদার দরবারে বসার কোনো অবকাশ নেই। অতএব মিলাদ ও কিয়াম কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। মিলাদ আল্লাহর সুন্নাত, মিলাদ ও কিয়াম সম্মিলিত নবীগণের সুন্নাত ও ইজমায়ে আম্বিয়া দ্বারা প্রমাণিত।

উপরোক্ত আয়াত দুটিতে ১০টি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে –

  1. ঐতিহাসিক সেই মিলাদ শরীফের প্রতি রাছুল (সা) এর দৃষ্টি আকর্ষণ। যেহেতু তিনিও ঐ মিলাদে উপস্থিত ছিলেন।
  2. আল্লাহ কর্তৃক অন্যান্য আম্বিয়া কেরামদের নিকট থেকে নবীজির শাণে অঙ্গীকার আদায়।
  3. যে কোনো নবীর সময় মহানবীর আগমন হলে তার ওপর ঈমান আনতে হবে।
  4. ঐ সময় অন্যান্য নবীগণের নবুয়ত স্থগিত রেখে মহানবীর ওপর ঈমান আনতে হবে।
  5. তার আগমন হবে অন্যান্য নবীগণের সত্যতার দলীল স্বরূপ।
  6. নবীজিকে সর্বাবস্থায় পূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার আদায়।
  7. নবীগণের স্বীকৃতি প্রদান।
  8. পরস্পর সাক্ষী হওয়া।
  9. সকলের উপরে মহাসাক্ষী আল্লাহ।
  10. ওয়াদা ভঙ্গের পরিনাম- কাফের।


শেষ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা এ অঙ্গীকার অস্বীকার করবে, তারা নাফরমান। অর্থাৎ এখানে, আহলে কিতাবের অন্যান্য জাতি যারা শেষ নবী কে মানেনা তাদের পরিণতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

কোরআন থেকে আরো কিছু আয়াত –

1. তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তার জিকির কর এবং আনন্দ কর। (আল ইমরান ১০৩)

2. হে রাসুল আপনি বলুন, আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের সমস্ত কর্মফলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। (ইউনুস ৫৮)

পৃথিবীতে যত নিয়ামত রয়েছে তার মধ্যে সবচাইতে বড় নিয়ামত হল হাবিবুল্লাহ (সা)। আল্লাহর এই নিয়ামত ও অনুগ্রহ কে কেন্দ্র করে আনন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা। নবীজির শুভাগমনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত আর কি হতে পারে?

3. নিশ্চয় আমি আপনাকে জগৎসমূহের রহমত করে প্রেরণ করেছি। (আম্বিয়া ১০৭) (হযরত আবুশ শাইখ রহ. হযরত ইবনে আব্বাস রা. হইতে বলেন, এখানে রহমত হলেন রাছুল (সা), তাফসির আদ্দররুল মনসুর, ৩য় খন্ড)।

4. নিশ্চয়ই আল্লাহ ও ফেরেস্তাগণ হাবিবের প্রতি দরুদ পাঠ করে। তোমরাও আমার হাবিবের প্রতি দরুদ ও সালাম প্রেরণ করো। (আহযাব ৫৬)

5. নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তাশরিফ আনয়ন করেছেন এমন একজন রাছুল যিনি তোমাদের দুঃখে দুঃখিত হন। (তাওবা)

অন্যান্য নবীগণের জন্ম ইতিহাস আল্লাহপাক নিজে বর্ণনা করেছেন। (সুরা মারইয়াম ০৭, ঈসা নবীর জন্ম, সুরা মারইয়াম ১৬, ২২ সহ বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন নবীর জন্ম ইতিহাস -যেমন, আদম, হাওয়া, ইসহাক, ইয়াকুব, ইসমাইল, মুসা, ঈসা- আলোচনা করেছেন)

মিলাদুন্নবীর পক্ষে শত শত সহি হাদিস থেকে কিছু হাদিস –

1. হজরত আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত, একজন সাহাবী হুজুর (সা) এর খেদমতে আরজ করলেন, ইয়া হাবিবাল্লাহ (সা), আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেনো? জবাবে রাছুল (সা) বললেন, এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং এই দিনে আমার ওপর কালামুল্লাহ শরীফ নাযিল হয়েছে। (মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড ৮১৯ পৃষ্ঠা, বায়হাকি ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃষ্ঠা, মুসনাদে আহমদ ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃষ্ঠা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃষ্ঠা, হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃষ্ঠা)।

2. বুখারি শরীফের বিখ্যাত ব্যাখাকারী আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারি শরীফের ব্যাখ্যায় লিখেন, হযরত আব্বাস বর্ণনা করেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি। সে আমাকে বলে, ভাই আব্বাস, মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগিতে আমি শান্তিতে নেই। কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্তি লাঘব করে দেয়া হয়। ইবনে আব্বাস বলেন, আবু লাহাবের এই শাস্তি লাঘব করে দেয়ার কারণ হলো হুজুর (সা) এর বিলাদাত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেদিন নবীজির শুভাগমণে খুশি হয়ে আবু লাহাব তার সুয়াইবা নামক দাসি আজাদ করে দিয়েছিলেন। (বুখারি, ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারি, অন্দাতুল কারি শরহে সহীহুল বুখারি, ফাতহুল বায়ান, মুছান্নিফ, দালায়িলুন্নবুয়ত, সীরাতু নুবুওয়ীয়াহ, হাদায়িকুল আনওয়ার, শরহুস সুন্নাহ, বাহজাতুল মাহাফিল)।

3. হযরত আবু দারদা (রা) হতে বর্ণিত, হুজুর (সা) একদিন হযরত আমির আনসারি (রা) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর (সা) দেখতে পেলেন, তিনার পরিবার এবং আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল (সা) এর বিলাদাত শরীফ পাঠ করছেন। এই ঘটনা শ্রবন করে হুজুর (সা) আনন্দিত হয়ে আমির আনসারি কে বললেন, আল্লাহপাক আপনার জন্য উনার রহমাতের দরজা প্রশস্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেস্তাগণ আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করছেন। যে আপনার মতো এইরুপ কাজ করবে সেও আপনার মতো নাজাত লাভ করবে। (আল্লামা জালালউদ্দিন সুয়ুতি, সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা (সা)।

4. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে হুজুর (সা) এর বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন। (এই দিনে হুজুর পৃথিবিতে আসছেন, স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের ওপর দরুদ ও সালাম দিয়েছেন) শ্রবণকারিরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময় নবীজি (সা) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে। (মাওলুদুল কবীর, আত তানভীর ফি মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার, হকিকতে মোহাম্মদী, দুররুল মুনাজ্জাম, ইশবাউল কালাম)

সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু হাদিস –

1. হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ (রা) যখন মসজিদে নববীতে উপস্থিত হন তখন হুজুর (সা) আনছারদের হুকুম দিলেন “কুম ইলা সাইয়্যিদিকুম” আপনাদের নেতার জন্য দাঁড়িয়ে যান। (বুখারি,মুসলিম, মিশকাত শরিফ, ১ম খন্ড, কিতাবুল জিহাদ)।

2. আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, যখন হুজুর (সা) বৈঠক থেকে উঠে যেতেন তখন আমরা দাঁড়িয়ে যেতাম। (বুখারি, মিশকাত)।

3. হযরত যায়েদ বিন হারেসা (রা) হুজুর (সা) এর দরজায় আসলেন এবং কড়া নাড়লে হুজুর (সা) চাদর বিহিন অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলেন এবং কোলাকুলি করলেন এবং চুমু খেলেন। (মিশকাত)

4. যখন হযরত ফাতেমা জহুরা (রা) হুজুর (সা) এর নিকট উপস্থিত হতেন তখন হুজুর (সা) দাঁড়িয়ে যেতেন, হাত ধরে চুমু খেতেন, নিজের জায়গায় বসাতেন। ফাতেমা (আ) ও অনুরুপ করতেন। (মিশকাত)

5. হুনাইনের যুদ্ধে হুজুর (সা) এর দুধ মাতা হালিমা (রা) তার নিকট আসলে তিনি দাঁড়িয়ে গায়ের চাদর বিছানা করে তাকে বসালেন। দুধ পিতার জন্যও অনুরুপ করলেন। (মিশকাত)

6. যে আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। (মুসলিম)। যে একবার সালাম পেশ করবে তার ওপর আমি দশবার শান্তি বর্ষণ করবো। (নাসায়ি ও দারেমী)।

7. আমি সালাম কারির সালামের জবাব দেই। (আবু দাউদ, বায়হাকি)।

8. দোয়া কবুলের শর্ত দরুদ। (তিরমিজি, আবু দাউদ, নাসায়ি)।

9. নবী কারিম (সা) এর জন্ম আলোচনা সাহাবিরা করতেন। (তিরমিজি / মিলাদুন্নবী)।

10. নবী (সা) জান্নাতুল বাকিতে এসে কিয়াম করতেন। (আশবাওয়ান্নাজায়ের ১৮০পৃষ্ঠা, মুসলিম শরিফ ১/৩১২ পৃষ্ঠা)।

11. ১২ই রবিউল আউয়াল নবী (সা) এর জন্মদিন। (মুছান্নাফ ইবনে আবি শায়বা, বুলুগুল আমানি, বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সিরাতে ইবনে হিশাম, তারিখুল উমাম)

  • কিয়াম – ফাতাওয়ায়ে শামি ১/৮৪৩ পৃষ্ঠা, মুসলিম শরিফ ২/৯৫ পৃষ্ঠা, বুখারি শরিফ ২/৫৯১ পৃষ্ঠা, মিশকাত শরীফ ৪০২, ৪০৩ পৃষ্ঠা, আহমদ ও মিশকাত ১৬ পৃষ্ঠা, তিরমিজি ও মিশকাত ৪০২ পৃষ্ঠা, মুসলিম ১/৩১৩ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালবিয়া ১/৯৯, ১০০ পৃষ্ঠা, ইনছানুল উয়ুন ১/১০০ পৃষ্ঠা, মাদারেজুন নবুয়ত ২/৬২১ পৃষ্ঠা, শামী ৮৪৩ পৃষ্ঠা, ফতোয়ায়ে আলমগীরি ১/১৩৬ পৃষ্ঠা, মিশকাত ২৪ পৃষ্ঠা।

কোরআন হাদিসের আলোকে কিয়াম কে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে

ফরজ – যেমন, নামাজের কিয়াম।
ওয়াজিব – যেমন, দ্বীনি মজলিসের পরিচালকের আদেশে কিয়াম।
সুন্নত – যেমন, সম্মানিত কোনো কিছুর সম্মানে কিয়াম।
মুস্তাহাব – যেমন, সম্মানিত ব্যাক্তির আগমনে কিয়াম।
মাকরুহ তাহরিমা – যেমন, রাজা বাদশাহর দরবারে বাধ্যতামুলক কিয়াম।
মোবাহ – যেমন, দুনিয়াবি প্রয়োজনে কিয়াম।
(আলমগীরী ১খন্ড ৩৬ পৃষ্ঠা, কবিরী ২৫৬ পৃষ্ঠা, মুসলিম ২য় খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা, বুখারি ২য় খন্ড৫৯১ পৃষ্ঠা, ইত্যাদি)।

নবী কারিম (সা) এর জন্ম ইতিহাস –
  • নুর মোহাম্মদী – (মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া ১- ৯ পৃষ্ঠা/ ১- ২১ পৃষ্ঠা, ২৬ পৃষ্ঠা, সীরাতে হালবিয়া ১- ৩১ পৃষ্ঠা, আহমদ শরহে সুন্নাহ ১৩ খন্ড ২০৭ পৃষ্ঠা, ১/৩৬ পৃষ্ঠা, মেশকাত শরীফ ৫১১, ৫১২, ৫১৩ পৃষ্ঠা, তিরমিজি ২/২০২ পৃষ্ঠা, দালায়েলুন নবুুয়ত, তিবরানি, ফতহুর রব্বানি ২০/১৮৯ পৃষ্ঠা, তফসিরে রুহুল বায়ান ২/২৭০ পৃষ্ঠা, ৩/৫৪৩ পৃষ্ঠা, রুহুল মায়ানী ৬/৯৭ পৃষ্ঠা, ১১ খন্ড ২০৫ পৃষ্ঠা, তাফসিরে নফসি ১/২৭৬ পৃষ্ঠা, তাফসীরে কবির ৬/১৯৪ পৃষ্ঠা, তাফসিরে কুরতুবি ১১৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে খাজেন ২/২৮ পৃষ্ঠা, তাফসিরে বায়জাবি ১১৪ পৃষ্ঠা, ওমদাতুন নকুল, তাফসিরে তাবারি ১১/৫৬১, তাফসিরে মাজহারি ৪/৩২৭, শরহে সুন্নাহ হাদিস শরীফ ১২২/২০৭, বুখারি শরীফ ১ খন্ড ১১ পৃষ্ঠা, বুখারি ১/২৫ পৃষ্ঠা, কেরমানি ১৫ পৃষ্ঠা, জুরকানি, সিরাতে ইবনে হিশাম, হাবিউল ফাতাওয়া ২য় খন্ড ২০২ পৃষ্ঠা, ২৫২ পৃষ্ঠা, ২৬০ পৃষ্ঠা, ১/২৬০ পৃষ্ঠা, ১/২৬২ পৃষ্ঠা, বুখারি ২/৭৬৪, তিরমিজি ২/২০২ পৃষ্ঠা, ২/৩৬ পৃষ্ঠা।
  • ইমদাদুল মুশতাক ৩৮ পৃষ্ঠা, মাওয়ারিজে আশরাফিয়া, আশরাফুল জাওয়াব, মাকতুবাতে মাদানি, মুরকুমাতে ইমদাদিয়া, হাশিয়ায়ে হায়দারি, তাছাউফ তত্ব ৩৯-৪৩ পৃষ্ঠা, ফায়সালায়ে হাফতে মাসায়েল ৭ পৃষ্ঠা, বুখারি ১/১৭৮, ২/৫৯১ পৃষ্ঠা, মুসলিম ২/৯৫, ১/৩১২, ৩১৩ পৃষ্ঠা, মিশকাত ৪০১, ৪০২ পৃষ্ঠা, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুসতাদরাকে হাকিম, সুনানুদ দারিমি, দারে কুতনি, মিলাদে আহাম্মদী ১/৪৭ পৃষ্ঠা, তাফসিরে রুহুল বায়ান, মিসবাহুয যুজাজাহ আলা সুনানে ইবনে মাজাহ, ফতহুল মুবিন লি ইমাম নবভী, জামিউল ফাতওয়া, মজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযিযিয়া, ফতওয়ায়ে বরকতিয়া, রুদ্দুল মুহতার, হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা, আহকামে শরিয়ত, সুন্নিহ বেহেশতি জেয়র, জায়াল হক্ব, কিতাবুত তানবির, ফি মাওলিদিল বাশির ওয়ান নাজির, ছুবুলুল হুদা ফি মাওলিদিল মুস্তাফা।
  • হুসনুল মাকসিদ, সীরাতে শামি ১/৮৪৩, ১/১৪৫ পৃষ্ঠা, সীরাতে নবভী, যুরকানি, মা সাবাতা বিছ সুন্নাহ, আদ দুররুল মুনায্যাম, ছাবিলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল ইনতিবাহ, মিয়াতে মাসাইল, মিরআতুয যামান, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১/১১ পৃষ্ঠা, আল মাওলুদুল কাবির, ইশবাউল কালাম, আশ শিফা, আল মুলাখ্খাস, কিতাবুস সিরাতিল মুহাম্মদিয়া, আল জাওহারুল মুনাজ্জাম, আল ইনসানুল উয়ুুন ১/১০০ পৃষ্ঠা, ইক্বদুল জাওহার, আস সুলুকুল মুয়াজ্জাম, ক্বিয়ামুল মিল্লাহ, নুযহাতুল মাজলিস, হাবিউল ফাতওয়া ১/২৬২ পৃষ্ঠা, সিরাতে হালাবিয়া, আলমগীরি, আশবাউন নাযায়ের, ইমদাদুল ফাতওয়া ৪/২৭১ পৃষ্ঠা, শিফাউছ ছুদুর ১/১০ পৃষ্ঠা, আকাইদে দেওবন্দ ১/১৯ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম ১/২৩৯ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতে মুজাদ্দিদে আলফেসানি ১/৩৫৩ পৃষ্ঠা।
হুজুর পাক (সা) নিজের মিলাদ কিয়াম নিজেই করেছেন –

1. একদিন হুজুর (সা) মিম্বারে দাঁড়িয়ে সমবেত সাহাবিগণকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা বল, আমি কে? সাহাবায়ে কেরামগণ বললেন, আপনি আল্লাহর রাসুল। হুজুর (সা) বললেন, “আমি আব্দুল্লার পুত্র মুহাম্মদ, আব্দুল মোত্তালিবের নাতি, হাশেমের পৌত্র এবং মানাফের প্রপৌত্র।” রাসুল (সা) নিজেই নিজের মিলাদ কিয়াম করছেন।

2. হুজুর (সা) আরও বলেন, “আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ হতে আমার একটি বিশেষ মর্যাদা এই যে, আমি খাতনা অবস্থায় ভুমিষ্ঠ হয়েছি এবং আমার লজ্জাস্থান কেউ দেখেনি।” (তাবারানি,জুরকানি)।

3. অন্যান্য রেওয়ায়েতে পবিত্র, নাভি কর্তৃত, সুরমা পরিহিত, বেহেস্তী লেবাস পরিহিত অবস্থায় ভুমিষ্ঠ হওয়ার বর্ণনা এসেছে। (মাদারেজুন নবুয়্যত)।

4. অতএব মিলাদ ও কিয়াম রাছুল পাক (সা) এর সুন্নত। (কথাগুলো মিলাদ সম্পর্কিত এবং কথাগুলো নবীজি দাঁড়িয়েই বলেছিলেন)।

5. আমি এই দিনে জন্মগ্রহন করিয়াছি এবং এই দিনেই আমার উপর কোরআন নাযিল হইয়াছে। (মুসলিম শরিফ, সিয়াম অধ্যায়)।

সাহাবাদের যুগে মিলাদের মাহফিল –

1. হযরত আবু দারদা (রা) বলেন, আমি নবী কারীম (সা) এর সাথে মদিনার আবু আমের আনসারির গৃহে গমন করে দেখি, তিনি তার সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজনদের হুজুর (সা) এর জন্ম বৃত্তান্ত শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন আজই সেই দিন। ইহা দেখে রাছুল (সা) বললেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘য়ালা তোমার ওপর রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেস্তাগণও তোমাদের সকলের জন্য মাগফিরাত কামনা করছে। (দুররে মুনাজ্জাম আব্দুল হক এলাহাবাদি)।

2. ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, একদিন তিনি কিছু লোক নিয়ে নিজগৃহে রাছুল (সা) এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করছিলেন এবং তাঁর প্রসংসাবলী আলোচনা সহ দরুদ ও সালাম পেশ করছিলেন। এমন সময় হুজুর (সা) সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আমার সাফায়াত অবধারিত হয়ে গেল। (ইবনে দাহইয়ার আত তানভির)।

হযরত হাসসান বিন সাবিত (রা) মিম্বরে দাঁড়িয়ে কবিতার মাধ্যমে মিলাদ পাঠ করছেন –

ইয়া রাসুলাল্লাহ (সা)…
আপনি সর্ব দোষত্রুটি হয়ে মুক্ত হয়েই জন্মগ্রহন করেছেন।
আপনার বর্তমান সুরত মনে হয় আপনার ইচ্ছা অনুযায়ি সৃষ্টি হয়েছে।
আল্লাহ তার প্রিয় নবীর নাম আযানে নিজের নামের সাথে যুক্ত করেছেন। ইত্যাদি…

হাসসান বিন সাবিত (রা) এর কন্ঠে মিলাদ পাঠ শুনে রাছুল (সা) বলতেন, “আল্লাহুম্মা আইয়্যিদ বি রুহিল কুদস” হে আল্লাহ তুমি তাকে রুহুল কুদস মারফত সাহায্য করো।

যারা হুজুর (সা) এর প্রশংসা গীতি করে তাদের পেছনে জিবরাইল এর গায়েবি মদদ থাকে। (তাফসিরে খাজাইনুল ইরফান)।

নবী গনের যুগে মিলাদুন্নবী –

1. হযরত আদম (আ) মিলাদুন্নবী (সা) পালন করেছেন। (জুরকানি শরিফ)।

2. হযরত ইবরাহিম (আ) মিলাদ ও কিয়াম করেছেন, মিলাদ ও কিয়াম ইবরাহিম (আ) এর সুন্নত। (হে আল্লাহ, তুমি আরব ভুমিতে আমার ইসমাইলের বংশ হতে সেই মহান রাছুলকে প্রেরণ করো, যিনি তোমার আয়াত সমুহ পাঠ করে শুনাবেন, কোনআন সুন্নাহর বিশুদ্ধ জ্ঞান শিক্ষা দেবেন, বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন।) (আল বাকারা ১২৯)।

3. মিলাদ ও কিয়াম ইবরাহিম (আ) এর সুন্নত। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

4. হযরত ঈসা (আ) এর মিলাদ ও কিয়াম – (আমি এমন এক রাসুলের সুসংবাদ দিচ্ছি যিনি আমার পরে আসবেন, তার নাম হবে আহমদ)। (আছ সাফ ৬) (ইবনে কাছির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম সহ অনেক নবীর জন্ম ইতিহাস কোরআনে আলোচিত হয়েছে।

খেলাফত আমলে মিলাদ ও কিয়াম –

1. হযরত আবু বকর (রা) – যে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে। (আন নিয়ামাতুল কোবরা আলাল আনাম, পৃষ্ঠা ৭)।

2. হযরত উমর (রা) – যে মিলাদুন্নবী কে সম্মান করলো , সে অবশ্যই ইসলামকে জীবিত করলো। (আন নিয়ামাতুল কোবরা আলাল আনাম, পৃষ্ঠা ৭)।

3. হযরত উসমান (রা) – যে মিলাদুন্নবী পাঠ করার জন্য এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক হলো। (আন নিয়ামাতুল কোবরা আলাল আনাম, পৃষ্ঠা ৮)।

4. মাওলা আলি (রা) – যে মিলাদুন্নবীকে সম্মান করবে সে ঈমানের সাথে মৃত্যুবরন করবে ও বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আন নিয়ামাতুল কোবরা আলাল আনাম, পৃষ্ঠা ৮)।

ফেরেশতাদের মিলাদ ও কিয়াম-

ফেরেস্তারা সার্বক্ষণিক মিলাদ ও কিয়ামে লিপ্ত – কোরআন (দারেমি, মিশকাত, বাবুল কারামাত হাশিয়াহ, লোময়াত, আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত)।

সংক্ষেপে আলেমদের অভিমত-

আল্লাহ যদি আমাকে উহুদ পাহাড়ের সমপরিমান স্বর্ণের মালিক করতেন তবে তা আমি মিলাদুন্নবী উদযাপনে দান করতাম। (হাসান বসরি রা.)।

যে মিলাদ অনুষ্ঠানে হাজির হলো ও উহার প্রতি সে অত্যাধিক সম্মান প্রদর্শন করল সে অবশ্যই ঈমানের দ্বারা সাফল্যমন্ডিত হল। (জুনায়েদ বাগদাদি)।

যে মিলাদে যাওয়ার ইচ্ছা করল সে বেহেশতের বাগানে যাওয়া ইচ্ছা করল। (সিররি সাকতি)।

ফকিরের এই মত যে, আমি মৌলুদ শরীফে শরীক হই, ইহাকে বরকতের কারণ মনে করি, প্রত্যেক বৎসর অনুষ্ঠান করিয়া থাকি এবং কিয়াম করার সময় খুবই স্বাদ ও আনন্দ উপভোগ করি। (হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কী (রহ),সমস্ত দেওবন্দী আলেমদের ওস্তাদ) (ফায়সালায়ে হাফতে মাসায়েল পৃষ্ঠা ০৫)।

আমি মিলাদ কিয়ামের পক্ষে। মিলাদে রাছুল (সা) হাজির হন এই বিশ্বাস রাখা দোষের কিছু না। (হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজির মাক্কি (রহ), শামায়েলে এমদাদিয়া পৃষ্ঠা ০৮)।

হুজুর (সা) এর মিলাদ মাহফিল সম্পুর্ন জায়েজ ও মুস্তাহাব। (মাওলানা আশরাফ আলি থানভী, এমদাদুল ফতওয়া, ৪র্থ খন্ড, ৪২০ পৃষ্ঠা)।

মিলাদ কিয়াম অবশ্যই ভালো কাজের অর্ন্তভুক্ত। (মাওলানা আশরাফ আলি থানভী, তরীকায়ে মিলাদ, ৮ পৃষ্ঠা)।

হুজুরের জন্ম আলোচনার সম্মানার্থে যখন সবাই দাঁড়িয়ে যাবে, তখন বসে থাকা বেয়াদবী মুক্ত নয়। হুজুরের জন্ম আলোচনা হচ্ছে খায়ের ও বরকত লাভের মাধ্যম। (মাওলানা আবুল কাসেম নানুতুবি, খাতেমায়ে দুররুল মুনাজ্জার)।

মিলাদ এবং কিয়াম জায়েজ এবং ফায়সালায়ে হাফতে মাসায়েল এর মিলাদ প্রসঙ্গে আমি একমত। (রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি, ফতোয়ায়ে রশিদিয়া)।

হুজুর (সা) এর শানে যে কাসিদা পড়া হয় তাতে মতব্বত বাড়ে, ওই মহব্বতে যদি কেউ দাঁড়িয়ে যায় তাকে বিদাত বলা যাবে না। হুজুর (সা) কে বসে বসে সালাম দেয়া বড়ই বেয়াদবি। (মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী, তাসাউফ তত্ব ৩৫-৪৭ পৃষ্ঠা)।

শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলবী (রহ) বলেন, যারা হাবিবুল্লাহ (সা) এর বিলাদাত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারি হবে। (মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড, খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা)।

আমি একবার পবিত্র মক্কা শরিফে রাছুল (সা) এর জন্ম স্থানে এক মিলাদ শরিফে উপস্থিত ছিলাম। তথায় রাছুল (সা) এর জন্মের সময় যেই সব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তার আলোচনা চলছিল। এমন সময় হঠাৎ আমি সেই মাহফিল হইতে উর্ধ্বদিকে এক উজ্জল আলোকধারা দেখিতে পাইলাম। যা ছিল এই পবিত্র মাহফিলে যোগদানকারি ফেরেশতাগণের এবং আল্লাহর রহমতের আলোকধারা। – শাহ উয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (ফুয়ুজুল হারামাইন)।

নবী করীম (সা) এর মৌলুদ শরীফের মাহফিল করা, তাহার আলোচনা সম্পর্কে গুরুত্ব প্রদান করা, তাহার জীবনী বর্ণনা করা, সারা বৎসর ই ওয়াজিব। তাহা কোনো স্থান ও কালে সিমাবদ্ধ নয়। (আল্লামা সাইয়্যিদ মুহাম্মদ ইবনে আলাভী আল মালিকি আল হাসানি, ইমামে বাইতুল্লাহ)।

মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা স্বরণ ও আলোচনা জায়েজ। যেমন, সাফা মারওয়ায় দৌঁড়ানো, মিনায় কংকর নিক্ষেপ, কোরবানি করা ইত্যাদি। অতএব, মুসলমানদের জন্য নবী কারীম (সা) এর জন্ম অপেক্ষা বেশি ঐতিহাসিক আর কি হতে পারে? (ইমামে বাইতুল্লাহ)।

মিলাদ মাহফিলে শ্রোতা মিলাদুন্নবীর খুশিতে আনন্দে আত্মহারা হইয়া দাঁড়াইয়া যাইবে ইহা স্বাভাবিক বিষয়। যাহারা উম্মত নয় তাহাদের তো গাত্রদাহ হইবেই। (ইমামে বাইতুল্লাহ)।

রাছুল (সা) এর জন্মদিনে সকলে একত্রিত হওয়া, আলোচনা করা, মেহমানদারি করা, ইবাদত করা, আনন্দ প্রকাশ করা মুস্তাহাব। (আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ুতি, হুসনুল মাকচ্ছাদ ফি জামালিল মৌলুদ)।

যে মুমিন রাছুল (সা) এর জন্মদিনে আনন্দ প্রকাশ করে সে নিশ্চিত জান্নাতি হইবে। (আল্লামা হাফেজ শামসুদ্দিন ইবনু নাসিরুদ্দিন দামেশকি রহ. মাওয়ারিদুচ্ছাওয়ী ফি মাওলাদিল হাদি)।

মৌলুদ শরীফের সময় কিয়াম করা আলেমগণ মুস্তাহাব বলিয়াছেন। যারা নবী (সা) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন কে জীবনের উদ্দেশ্য ও কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে স্থির করিয়াছেন তাহাদের জন্য সুসংবাদ। (আল্লামা বরজিঞ্জি, মৌলুদে বরজিঞ্জি)।

মক্কা ও মদিনা শরীফ এর মুফতিগণের ফতোয়া-

আল্লামা আব্দুর রহীম তুর্কমানী (রা) ১২৮৮ হিজরি সনে মক্কা ও মদিনা এবং জেদ্দা ও হাদিদার উলামায়ে কেরামগনের দ্বারা মিলাদ কিয়াম সর্ম্পকে একটি ফতোয়া লিখিয়ে নিজ গ্রন্থ “রাওয়াতুন নাঈম” এ প্রকাশ করেন। (আনওয়ারে ছাতেয়া)।

“মিলাদ ও কিয়াম শরীফের অনুষ্ঠান মুস্তাহাব। আল্লাহ ও সমস্ত মুসলমানগণের নিকট ইহা উত্তম। ইহার অস্বীকারকারিগণ বিদয়াত ও গোমরাহ। মিলাদ ও কিয়াম কে যারা অস্বিকার করবে তাদের যথাযথ শাস্তি দেয়া উচিত”।

ফতোয়ায় সাক্ষরকারি মুফতি গনের নাম –

  • আল্লামা আব্দুর রহমান সিরাজ,, আল্লামা আহনদ দাহলান,, আল্লামা হাসান,, আল্লামা আব্দুর রহমান জামাল,, আল্লামা হাসান তৈয়ব,, আল্লামা সোলাইমান ঈসা,, আল্লমা আহমদ দাগেস্তানি,, আল্লামা আবদুল কাদের শামস,, আল্লামা আব্দুর রহমান আফেন্দি,, আল্লামা আব্দুল কাদের সানখিনি,, আল্লামা মুহাম্মদ শারকী,, আল্লামা আব্দুল কাদের খোকির,, আল্লামা ইবরাহিম আলফিতান,, আল্লামা মুহাম্মদ জারুল্লাহ,, আল্লামা আব্দুল মুত্তালিব,, আল্লামা কামাল আহমেদ,, আল্লামা মুহাম্মদ ছায়ীদ আল আদাবি,, আল্লামা আলি জাওহাদ,, আল্লামা সৈয়দ আব্দুল্লাহ কোশাক,, আল্লামা হোসাইন আরব,, আল্লামা ইবরাহিম নওমুছি,, আল্লামা আহমদ আমিন,, আল্লামা শেখ ফারুক,, আল্লামা আব্দুর রহমান আযমি,, আল্লামা আব্দুল্লাহ মাশশাত,, আল্লামা আব্দুল্লাহ কুম্মাশী,, আল্লামা মুহাম্মদ বা বাসিল,, আল্লামা মুহাম্মদ সিয়ুনি,, আল্লামা মহাম্মদ সালেহ জাওয়ারী,, আল্লামা আব্দুল্লাহ জাওয়ারী,, আল্লামা সালেহ জাওয়ারী,, আল্লামা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ,, আল্লামা আহমদ আল মিনহিরাভি,, আল্লামা সোলাইমান উকবা,, আল্লামা সৈয়দ শাত্বি ওমর,, আল্লামা আব্দুল হামিদ দাগেস্তানি,, আল্লামা মুস্তফা আফিকী,, আল্লামা মনসুর,, আল্লামা মিনশাবি,, আল্লামা মুহাম্মদ রাযি।

“মিলাদ ও কিয়াম – সুন্নতে হাসানা এর অন্তর্গত। যাহারা ইহা অস্বীকার করবে, তাদেরকে শাস্তি দেয়া ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের পরিচালকদের ওপর ওয়াজিব। (মদিনা)।

ফতোয়ায় সাক্ষরকারি আলেমদের নাম-

  • আল্লামা মুহাম্মদ আমিন,, আল্লামা জাফর হোসাইন,, আল্লামা আব্দুল জব্বার,, আল্লামা জামালউদ্দিন,, আল্লামা ইবরাহিম,, আল্লামা ইউসুফ,, আল্লামা মুহাম্মদ আলি,, আল্লামা ওমর ইবনে আলি,, আল্লামা কাশেম প্রমুখ।

“যাহাদের অন্তরে রয়েছে মুনাফেকি, তাহারা ব্যাতিত কেউই মিলাদ ও কিয়াম অস্বীকার করতে পারে না। (জিদ্দা)।

ফতোয়ায় স্বাক্ষরকারি আলেমদের নাম-

  • আল্লামা আলি ইবনে আহমদ,, আল্লামা আব্বাস ইবনে জাফর,, আল্লামা আহমদ ফাত্তাহ,, আল্লামা সুলাইমান,, আল্লামা আহমদ আব্বাস,, আল্লামা সালেহ,, আল্লামা ওসমান,, আল্লামা আজলান প্রমুখ।

“মিলাদ শরীফ শুধু জায়েজ’ই নয়, ওয়াজিবও। বিপথগামি বেদাতি লোক ছাড়া কেই মিলাদ কিয়াম অস্বীকার করতে পারে না। (হাদিদি)।”

ফতোয়ায় স্বাক্ষরকারি আলেমগনের নাম-

  • আল্লামা আলি শামি,, আল্লামা ছালেম আবেশ,, আল্লামা আলি ইবনে আব্দুল্লাহ,, আল্লামা মোহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম,, আল্লামা আলি আতহান,, আল্লামা ইয়াহিয়া প্রমুখ।
মিলাদ কিয়াম বিয়য়ক কিছু কিতাব-
  • ইমামুল মুহাদ্দিস হাফেজ ইবনে আলি – ‘আল আরুস’
    ইমামুল মুহাদ্দিস হাফেজ ওমর ইবনু আলী ইবনু মুহাম্মদ – ‘আত্তানভির ফী মাওয়ালিদিলবাশি রিন্নাযর’
    ইমাম মুহাম্মদ ইবনু আব্দুল্লাহ শাফিয়ি – ‘আরফুত্তারীফ বিল মাওলাদিস শারিফ’
    ইমাম,মুফতি,মুহাদ্দিস,হাফেজ ইবনে কাসির – ‘মাওলাদ’
    ইমাম আলমিছরি,হাফেজ ইরাকি – ‘আল মাওরাদুলহানী ফিল মাওলাদিশ সানি’
    ইমাম হাফেজ ইবনু আদদামিশকি – ‘জামিউল আছার ফী মাওলাদি নাবিয়্যিল মুখতার’
    হাফেজ সাখাভী – ‘আল ফাখরুল উলুওয়ী ফীলমাওলাদিন্নবুবী’
    আল্লামা সাইয়্যিদ যইনুল আবেদিন – ‘আল মাওয়ারিদুল হানিয়াহ ফী মাওলাদি খাইরিল বারিয়্যাহ’
    হাফেজ আশশাইবানি – ’ইবনুদ্দাইবু ’
    আল্লামা হাইতুমি – ‘ইতমামুন্নি মাতি আলাল আলামি বিমাওলাদি সাইয়্যিদি উলদি আদাম’
    আল্লামা ফকিহ – ’আল খাত্বিব’
    আল্লামা আলি ক্বারি – ‘আল মাওলাদুর রাওয়ি ফিল মাওলাদিন্নাবুয়ি’
    আল্লামা বারজিঞ্জি – ‘মৌলুদে বারজিঞ্জি’
    আল্লামা ইবনে আহমাদ – ‘আল ক্বাওলুল মুনজি আল মাওলিদিল বারজিঞ্জি’
    মুহাম্মদ ইবনু জাফর – ‘আল ইয়ুমনু ওয়াল আসআদ বিমাওয়ালাদি খাইরিল ইবাদ’
    আল্লামা শাইখ অন্নাবহানি – ‘জাওয়াহিরুন্নাযমিলবাদিয়ি ফী মাওলিদিশ শাফিয়ি;
    আব্দুল আযিয ইবনে মুহাম্মদ আশ শাইখ – ‘বিসাতুল মুসতাফা (সা)’

তাছাড়া উল্লেখযোগ্য –

  • ফায়সালায়ে হাফতে মাসাইল, আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, দুররুল মুনাজ্জাম, সিরাজুম মুনিরা, আদ দুররুস ছামীন, আকায়েদে আরবায়াহ, কিশোরগঞ্জে মিলাদ কিয়ামের বাহাছ, মিলাদ বিরোধী ফতোয়ার রদ- তকী উসমানি, মদিনার আলো, হাকিকতে মিলাদ, ইদে মিলাদুন্নবীÑ কোরআন হাদিস সমর্থিত এক নুরানি মাহফিল।

বাতেল পন্থিদের তথা পবিত্র মিলাদ ও কিয়াম শরিফের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কারী ভন্ড আলেম সম্প্রদায়ের বিরদ্ধে সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে সুন্নিদের সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাহাস। যে সকল বাহাসে দেখা যায়, হয় ভন্ডরা বাহাসে উপস্থিতই হয়নি অথবা উপস্থিত হয়ে পালিয়ে গেছে।

দৈনিক সবুজ সিলেট – ২০ ফেব্রুয়ারি, শনিবার ২০১৬
দৈনিক ইনকিলাব – ২৫ এপ্রিল, বুধবার ২০১২ ইত্যাদি।

অতএব যারা পবিত্র মিলাদ বা কিয়াম শরীফ কে বিদাত, ভুল বা নাজায়েজ ফতোয়া দিবে তারা দ্বীন ইসলামের শত্রু এবং তাদের উদ্দেশ্য হল ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে মুসলমানদের হৃদয় থেকে নবীপ্রেম তথা ধর্মের মুলভিত্তি উঠিয়ে নিয়ে মুসলমানদেরকে ঈমান শুন্য করা। তাই সাধারন মুসলমানদের সাবধান থাকতে হবে যেন আখেরি যামানার ঈমান ধ্বংসকারী দাজ্জাল দল আমাদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের ঈমান হেফাজত করুন। আমীন।

সংকলন – লাবিব মাহফুজ চিশতী

আপন খবর