লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
ওয়াজহুল্লাহ। হায়দারী কসম! আজ আমাদের মন-প্রাণ কেঁদে উঠেছে মাওলা হুসাইন এর জন্য, কারবালার জন্য। প্রেম যেখানে রক্ত হয়ে বয়ে যায়, তার নাম কারবালা, তাঁর নাম হুসাইন।
স্মরণ করছি সেই দিন, যেদিন সূর্য ডুবেছিল রক্তের সীমানায়, পৃথিবীর আকাশ বৃষ্টির বদলে ঝড়িয়েছিল রক্ত, নদীতে পানির পরিবর্তে প্রবাহিত হয়েছিল তাজা খুন, রাসুলে পাক সা. এর পবিত্র আহলে বাইতের তাজা রক্তে স্নাত হয়েছিল মরুর প্রতিটি ধুলিকণা। রক্তমাখা দিগন্তে সেদিন বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে এসেছিল রাসুলের কলিজার টুকরা, মাওলা আলী আ. এর বুকের ধন, জগজ্জননী মা ফাতিমার নয়ন মণি, বড় ইমাম মাওলা হাসানের আদরের ভাই মাওলা ইমাম হুসাইনের আকুল আহ্বান –
হাল মিন নাসিরিন ইয়ানসুরুনি?
মাওলা ইমাম হুসাইন ডেকে ডেকে বলেছিলেন, আমাকে সাহায্য করার মতো এখানে কি কেউ নেই? সেদিন কারো নিকট থেকেই কোনো উত্তর আসেনি। বরং তাদের রক্তলিপ্সু চক্ষু টগবগ করে উঠেছিল আহলে বাইতের রক্ত পান করার উদগ্র লালসায়।
আজ আমরা গুটিকতক আহলে বাইতের প্রেমিক এখানে এসেছি হৃদয়ের জলন্ত প্রদীপ হাতে – রক্তস্নাত কারবালার দরবারে। আমরা এসেছি রুহের জমিনে হাটু গেড়ে, সেদিনের হুসাইনের কাতর দৃষ্টির সামনে নিজেকে বিসর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করার অঙ্গীকারে। আমরা এসেছি আমাদের চেতনাকে হুসাইনি রক্তে রাঙিয়ে নিতে – দৃঢ় কন্ঠে ঘোষণা করতে –
হুসাইন শুধু এক ব্যক্তি নয়, হুসাইন এক আত্মবিসর্জনের মহাইমাম, হুসাইন শুধু কারবালার নয়, হুসাইন চিরকালের, মুক্তিকামী মানুষের একমাত্র মুক্তি ইমাম হুসাইন।
কারবালা শুধু ট্র্যাজেডি নয়, কারবালা এক রুহানী প্রতিজ্ঞা, যেখানে দাড়িয়ে মাওলা ইমাম হুসাইন বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁর সর্বস্ব, পবিত্র চক্ষু মোবারক দিয়ে অঝোড়ে নেমেছিল এশকে ইলাহীর প্রেমের রক্তাশ্রু, আর সেই রক্তকালিতে লিখা হচ্ছিল এক অলৌকিক চিঠি – যা পৌঁছে গিয়েছে প্রতিটি প্রেমিক আত্মার দরোজায়।
কারবালা আমাদেকে শিখিয়েছে, প্রেম যদি হয় রাসুলের, প্রেম যদি হয় আহলে বাইতের, প্রাণ দেয়াটাই তাহলে ইবাদত।
হুসাইন জানতেন কিভাবে রক্তে লিখতে হয় কোরআন, হুসাইন জানতেন আপন বুকের ধন শিশুটির রক্ত হাতে নিয়ে দ্বীন ইসলামকে জিন্দা রাখার অমোঘ নীতি।
আজো আশেকের হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হয় আসগর, আকবরের শুষ্ক-কন্ঠ বিদীর্ণ করা কান্না
আজো বাতাসে ভেসে বেড়ায়, রুকাইয়ার আর্তি, জয়নাবের অসীম ধৈর্য আজো লজ্জিত করে ফোরাতের কূল, আব্বাসের কাটা হাত আজ হাতছানি দেয় ইমাম শিবিরের পানে – ছিন্ন মস্তক যেন বলে ওঠে, আহলে বাইতের প্রেমে শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেই ইমান।
এ শোকসভা শুধু সভা নয়, এটি এক আশেকের মিলন মেলা, যা আমাদের শেখায় মাওলা হুসাইনের পথে অটল থাকা। ইয়াজিদি প্রলোভন যেন কভূ আমাদের ইমান হরণ করতে না পারে।
ইয়া শহিদে কারবালা, ইয়া রাহবারে হক্ব, ইয়া ইমামুল আশেকিন, ইয়া সাইয়্যিদুশ শুহাদা, ইয়া নূরে খোদা – আজ যারা আমরা তোমার প্রেমে শোকসভায় সমবেত হয়েছি, আমাদের হৃদয়কে পাক পাঞ্জাতনের প্রেমে রাঙিয়ে দাও, যেন আমাদের প্রতিটি হৃদয় হয়ে ওঠে কারবালা, আহা হুসাইন বলে যেন কেঁদে ওঠে আমাদের প্রতিটি আত্মা।
আমাদের প্রাণ কেঁদে ওঠে, কারণ আমরা জানি, কারবালায় হুসাইন হারেনি, হুসাইন মরেনি – হুসাইন চির অমর, যুগে যুগে হুসাইন চিরপ্রবাহিত, চিরজীবন্ত। আর ইয়াজিদ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত, ঘৃণিত।
ইয়া মাওলা হুসাইন, আমরা জানি –
কাতলে হুসাইন আসলে মে মরগে ইয়াজিদ হ্যায়
ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকে বাদ।
শাহ আস্ত হুসাইন, বাদশাহ আস্ত হুসাইন
দ্বীন আস্ত হুসাইন, দ্বীন পানাহ আস্ত হুসাইন
সারদাদ নাদাদ, দাস্ত দার দাস্তে ইয়াজিদ
হাক্কায়ে বানায়ে লা ইলাহা আস্ত হুসাইন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী