সংগ্রহ ও অনুবাদ – লাবিব মাহফুজ চিশতী
হজরত খাজা ফরিদুদ্দিন মাসুদ গঞ্জশকর (রহঃ) বা বাবা ফরিদ বা শেখ ফরিদ ১৩ শতকের প্রখ্যাত আউলিয়া, যিনি মধ্যযুগ তথা ইসলামী স্বর্ণযুগের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত একজন মহান ওলী।
বাবা ফরিদ ১১৭৩ সালে পাঞ্জাবের মুলতান হতে ১০ কিলোমিটার দূরে কোথেওয়াল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম ছিল জামালউদ্দিন সুলেমান এবং মাতার নাম ছিল মরিয়ম বিবি। ভারতবর্ষে চিশতীয়া তরিকার প্রচারক ও দ্বীনে মোহাম্মদীর নিশাণ উড্ডয়ণকারী হজরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহঃ) এর প্রধান খলিফা হযরত খাজা কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী (রহঃ) এর নিকট আধ্যাত্মিক দীক্ষা গ্রহণ করে তিনি হয়ে ওঠেন জগদ্বিখ্যাত আউলিয়া। ১২৩৫ সালে খাজা কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী (রহঃ) ওফাত লাভ করার পর তিনি দিল্লি থেকে পাকপত্তনের অজুধনে গিয়ে বসতি স্থাপন করেন। সেখানেই তার মাজার মোবারক অবস্থিত।
১.
যে শুভলগ্নে রচিত হলো দেহ-আত্মার মিলনকাব্য
তখনি বিধাতা নির্ধারণ করে দিলেন – নিঃশ্বাসগুলো!
শেষ নিঃশ্বাস অব্দি –
ফেরেশতারা জিবনকে টেনে চলে, মৃত্যুর পানে।
২.
জিবনটি হলো স্ত্রী এবং স্বামী হলো মৃত্যু
স্বামী তার স্ত্রীকে অধিগ্রহণ করবে।
মিলনের প্রস্তাব গৃহীত হলে –
কে আর তাদের ধরে রাখে?
৩.
পুলসিরাত তো চুলের চেয়েও সুক্ষ
যার ওপর পদচিহ্নগুলো পড়ে নিঃশব্দে!
যতই চেষ্টা করো শুনতে
একটি কন্ঠস্বরই ভেসে ভেসে আসে –
লোভের ফাঁদ থেকে সাবধান, সাবধান।
৪.
দরবেশেী দরওয়াজা খুবই কঠিন
হায়, যদি আমি জনতার সাথেই পাশ কাটাতাম!
কিন্তু ভনিতা স্পষ্টত –
নিক্ষিপ্ত হয় আস্তাকুড়ে।
৫.
যদি জিবন প্রদীপে কমে যায় তৈল
থেমে যাও, আগে পূর্ণ করো নিজের ভান্ড –
যদি তোমার দিশারী হন অপক্ক, গর্ব কোরো না
কারণ, অহৎকারের পতন অনিবার্য।
৬.
যদি তোমার চেতনা হয় শুদ্ধতর
তবে আপন অন্তরের শুভ্রতাকে কালো কোরো না।
মাথাকে নত করো, এবং দৃষ্টি নিবন্ধ করো-
আপন অস্তিত্বের গভীরে!
যাতে নিন্দুক তোমায় খুঁজে না পায়।
৭.
একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ যৌবন ছিল তোমার
সৎকাজের জন্য উপযুক্ত।
প্রতিটি আত্মা তো মৃত্যুকে ভালোবাসে!
আত্মার নৌকাটি নির্ধারিত নিঃশ্বাসের সাথে
পৌঁছে যায় মৃত্যুর দরোজায়।
৮.
যখন ছিল পূর্ণ যৌবন, মদমত্ত প্রাণ
তোমার পূজায় ছিলাম বেখবর!
এখন চুলগুলো ধূসর, দেহ বিবর্ণ
কি করে আসবো তব উপসনা-গাহে!
প্রভুপ্রেম, সেতো নিত্য! শাশ্বত! চিরজিবনের
যা ধূসরকেও করে তোলে চিরসবুজ।
৯.
কলঙ্ক ভয়, উপদেশ বা তিরষ্কার
সেই হৃদয়ে কি প্রভাব ফেলতে পারে?
যেখানে সিল মেরেছে –
স্বয়ং শয়তান!
১০.
আহ! প্রেমিক! যদি চাও প্রভুকে
নম্রতম ঘাস হও! পথের ধারে
পদদলিত, নিষ্পেষিত, নিয়ত প্রেমভারে নত
তবেই তোমার হৃদয় পূর্ণ হবে
ঐশ্বরিক জ্যোতিতে।