লেখক – কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
একই কথা বা শব্দ স্থান বিশেষে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে তা আগে বুঝতে হবে, নয়তো তার দ্বারা কখনো আসল বিষয়টি বুঝা সম্ভব হবে না। যেমন ‘রব’ কথাটির অর্থ আওয়াজ বা শব্দ, কালামও হয়। আবার ‘রব’ অর্থ প্রতিপালক বা প্রভু। যেমন রাব্বিল আলামিন অর্থাৎ জগতসমূহের প্রতিপালক বা প্রভু ইত্যাদি। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামই হলেন উম্মতের দ্বীনি বা ধর্ম পিতা; আওলা এবং মাওলা। মুহাম্মদ রাছুল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াচ্ছালামের পরে ধর্ম পিতা,আওলা মাওলা হলেন শেরে খোদা হযরত আলী আলাইহি ওয়াচ্ছালাম। (রাছুল বলেন, মান কুনতুম মাওলাহু, ফাহাজা আলীউন মাওলাহু)।
মুহাম্মদ চিরন্তন শাশ্বত অখন্ড কালে প্রবাহিত এক পবিত্র সত্ত্বা বিধায় চিরবর্তমান। সেই অখন্ডকালে প্রবাহিত মুহাম্মদ রাছুলকে যারা জানেনি, চিনেনি, তারা দ্বীনে মুহাম্মদী বা দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়। ঈমানদারগণ ব্যাতিত তাকে কেউ চিনবে না, দেখবে না, অন্যেরা দেখলেও চিনবে না (সূরা হিজর)। আসলে বেলায়েতে এক রাছুলই প্রবাহিত হয়ে চলেছে যা চির বর্তমান। বেলায়েতের ধারায় ধর্মপিতা তথা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করা হয় সমস্ত পরকাল প্রাপ্ত মানুষকে তথা ইনছানি আত্মার অধিকারী মানুষকে এবং এরাই হলো হাকিকতে পিতা বা বাবা তথা আব্বা। ইহা একটি পবিত্র এবং সম্মানিত সম্বোধন। এ ধর্মপিতাকে বা পরকাল প্রাপ্ত মানুষকে ফার্সী ভাষায় ‘পীর’ বাংলা ভাষায় ‘গুরু’ এবং আরবীতে ‘মুর্শিদ’ বলে অভিহিত করা হয়। কেউ বা’জান (বা-জান) বা বাবাজান বলে। কারণ মুর্শিদের আত্মার সাথে ভক্ত বা মুরিদের সম্পর্ক।
কোরানের ঘোষনা, “নবীকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতে হবে” (সুরা আহযাব)। নবুয়তে যাদেরকে নবী রাছুল বলা হয় বেলায়েতে তাদেরকেই অলিআল্লাহ বা অলিয়ম মুর্শিদ বলা হয়। সুতরাং প্রত্যেক চেতন মানুষ বা পরকাল প্রাপ্ত মানুষই হলো বা’জান –যার নিকট নিজ আত্মাকে আহুতি করা হয় বা ফানা করে দিয়ে দু’আত্মার মধ্যে একত্ম ঘোষণা করা হয় বা করার সাধনা করা হয়। সেজন্য কেহ কেহ গুরুকে ‘বাজান, বা ‘বাবাজান’ বলে ডাকে। আবার জাগতিক জগতের জন্মদাতা পিতাকেও ‘বাবা’ বা ‘বাবাজান’ বা জনকও বলা হয়। একই কথার বা একই শব্দের ভিন্নার্থ স্বীকার্য এবং তাদের সন্তান বা আওলাদদেরও ভিন্নার্থ-ভাবমর্ম স্বীকার্য। সামাজিক আইনে বা জাগতিক বিধানে তাদের উভয় দেশেই ভিন্নার্থ প্রকাশ করছে। তবে জাগতিক জগতের বিষয়টি ক্ষনস্থায়ী এবং পারলৌকিক বা আধ্যাত্মিক জগতের বিষয়টি বা সম্পর্কটি চিরস্থায়ী। একটি রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-যা আপেক্ষিক সত্য, ইহা নফসের সৃষ্টি এবং ইহলোকের সাথে সম্পর্ক (এ সম্পর্ক বা আত্মীয়কে ফেৎনাস্বরুপও বিবৃত করা হয়েছে কোরানে ), অপরটি আত্মার (ইনছানি আত্মার) সম্পর্কের আত্মীয়-যা চির সত্য এবং চির বর্তমান। এ সম্পর্ক ইহলোক এবং পরলোকের মুক্তিপ্রাপ্ত বা মুক্তির পথে সাধনাকারীদের সম্পর্ক।
গুরুকে কেউ বলে হুজুর। ‘হুজুর’ হাজির (উপস্থিত) শব্দ হতে আগত – এর মানে যিনি খোদাকে হাজির-নাযির তথা উপস্থিত দেখেন তিনিই হলেন ‘হুজুর’। এজন্যই বলা হচ্ছে, “লা ছালাতা ইল্লা বেহুজুরিল ক্বালব” অর্থাৎ ছালাত নেই খোদাকে উপস্থিত দেখা ব্যতীত। রাছুল সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লামের কালাম হলো, “তোমরা এমন ভাবে ইবাদাত করো যেনো আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছো” (মেশকাতÑ২ নম্বর হাদিস)। রাছুলের খাস অনুসারী বা উম্মত যারা (যারা জান ও মাল দিয়ে মুর্শিদের প্রতি নিজেকে উৎসর্গ করেছে, কোরানের ভাষায় ইহাকে বলে এতায়াত করা) তারা খোদাকে দেখেই ইবাদাত করেছে। এজন্যই হাবিবে খোদার উম্মতগণের ছালাতই হলো মেরাজ। সুতরাং যারা খোদাকে চিনে না, দেখে না, তাদেরকে কখনো হুজুর বলা যাবে না, সঙ্গত নয়, তাদেরকে হুজুর বললে তা চরম অন্যায় এবং ধর্ম বিরোধী কথা হবে।
কেউ ‘দয়াল’ বলেও মুর্শিদকে সম্বোধন করছে। এর কারণ, আল্লাহর দয়া-করুণা পতিত মানব জাতির জন্য একমাত্র লাভ হয় মানবগুরু বা ইনছানি আত্মার অধিকারী বা পরকাল প্রাপ্ত মানুষের মাধ্যমেই। এখানেই ঈমান আমান; পতিত মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক হিসেবে আল্লাহ নিজেই। আল্লাহর মতলেক কালাম তার হাবিবের মাধ্যমে কালামে নাতেক হচ্ছে, “হে রাছুল, আমি আপনারই মাধ্যমে দান করি এবং আপনারই মাধ্যমে গ্রহণ করি”। সব কিছুর কর্তা আল্লাহপাকই কিন্তু তার মাধ্যম হলেন হাবিবে পাক মুহাম্মদ রাছুল সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লাম (ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াছিলাতা)। বিমূর্ত আল্লাহর মূর্তরুপ হলেন মুর্শিদ; একজন চেতন বা পরকাল প্রাপ্ত মানুষ। আল্লাহর সদৃশ নেই, তবে সাদৃশ্য আছে; এ সাদৃশ্যই হলেন মানবগুরু মুর্শিদ। আর এ কথাও বুঝতে হবে সদৃশ আর সাদৃশ স্থূল দৃষ্টিতে প্রভেদ দেখালেও সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে বা দিব্যদৃষ্টিতে অভেদ হয়েই আছে। দিব্যদৃষ্টিতে একমাত্র অদ্বৈত লীলারই প্রকাশ ও বিকাশ হয়ে চলছে, ইলমে সীনা হতে তাই জানা যায়। আরো বুঝতে হবে, মুহাম্মদ রাছুলই একমাত্র মুর্শিদ – যা চিরবর্তমানে বিদ্যমান । আল্লাহ আদিতে বা অদৃশ্য জগতে আদম রূপেই ছিলেন তাই আদম রূপেই তিনি ব্যক্ত হলেন (ইন্নাল্লাহা আদামা আলা সুরাতিহি) । এখানেই আদম আল্লাহ হুবাহু। আল্লাহ আদম আর মুহাম্মদ আর মুহাম্মদ এ তিনের প্রভেদ আর অভেদটি না বুঝলে এ আলোচনা বুঝা সম্ভব নয়। কাজেই, জ্ঞানীগণ বা ঈমানদারগণ বিদ্যুতের তার দেখলেও সে তারের মধ্যে বিদ্যুৎই দেখতে পান, আর সে দেখাটি তারের আকৃতিতেই । ঈমাসদারগণ ঈমানের দৃষ্টিতে অদ্বৈত-লীলা দেখতে পান বিধায়ই তাকে দয়াল বলে সম্বোধন করছে। আল্লাহই হলেন দয়াল, পরম দয়ালু; দয়া করা না করা দয়ালেরই ইচ্ছা। কোরানে বলা হচ্ছে “ওয়ামা ইয়ানতিকু আনিল হাওয়া” অর্থাৎ, (হাবিবে খোদা) নিজের প্রবৃত্তি হতে কোনো কথা বলেননি। তাহলে হাবিবে খোদার মাধ্যমে তার জবানে আল্লাহর মতলেক কালাম নাতেক হচ্ছে। তার হস্ত, পদ, চক্ষু, কর্ণে আল্লাহরই এরাদা প্রকাশ হচ্ছে। আল্লাহপাক পরম দয়ালু ক্ষমাশীল রাহমানুর রাহিম, তার হাবিবে খোদার মহব্বতকারীগণকে নিজেরই মহব্বতকারী হিসেবে গণ্য করে তাদের জীবনের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন (সুরা আলে ইমরান-৩১)। তাইতো মুর্শিদ বা গুরু রূপেই ঈমানদারগণ দয়াল কে দেখতে পাচ্ছেন।
‘ কেউ কেউ মাধ্যম বা উছিলা স্বীকার করতে চায় না, সরাসরি আল্লাহকে মানে; এর অর্থ সে বিমূর্ত আল্লাহকে মানে; বিধিকে মানে কিন্তু বিধাতাকে মানে না। এ মত এবং পথটিই ইবলিশ এর আকিদা, এরা হলো মোয়াহেদ -কাফের।’
এজন্যই ইবলিশ অহংকার করে আদমের আনুগত্য করতে রাজি নয় তথা আদমকে সেজদা করতে রাজি নয়; রাজি নয় তার ধর্মে যারা দীক্ষিত হয়ে আছে তারাও। আদমকে সেজদা করতে অস্বীকৃতি মানে মূলতঃ আল্লাহকেই সেজদা করতে অস্বীকার করা হলো। মানুষের বাহিরে সবই শূণ্যকার, প্রয়োগহীন, ক্রিয়াশূণ্য-অভেদ্য জুলমাত। তারই সৃষ্টি মানুষ, বেমেছাল নূরের মেছাল (সুরা নূর ৩৫) তথা হুবাহু প্রকাশ। পরকালপ্রাপ্ত মানুষই হলো পতিত মানুষের বা অচেতন মানুষের বা নিজ আত্মা হারানো লোকের আল্লাহ প্রাপ্তির উছিলা (সুরা মায়েদা ৩৫)। যারা বুঝতে চায় না, জন্মদাতাকে ছাড়া আর কাউকে পিতা বা বাবা বলা যাবে না, তাদের যুক্তিটা একেবারেই খোড়া এবং অজ্ঞতাপ্রসূত। কারণ, তারা ধর্মপিতা বা দ্বীনি পিতা মুর্শিদ বা মানবগুরু আর জন্মদাতা পিতার মধ্যে নিশ্চই প্রভেদ বুঝেনি। যেহেতু মেয়ে, তাই মা আর বউকে একটিই মনে করে ফেলেছে মূর্খরা। এ অজ্ঞতা -মূর্খতার জন্যই মুর্শিদকে বাবা সম্বোধন করাকে জন্মদাতা পিতার মতোই মনে করে থাকে এবং ঈমানদারগণকে (যারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান এনেছে বা বায়াত গ্রহণ করেছে) নানা রকম টিটকারী, রসিকতা বা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে থাকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিশেষ এক শ্রেনীর আলেম-মোল্লাগণ এবং সমাজে তাদের অনুসারী অজ্ঞ-মূর্খ কিছু লোক। আসলে আল্লাহর সৃষ্টি জীব ছাগলের তকদিরই এমন যে, তার নাকে আতরের শিশি বা গন্ধরাজ ফুল ধরলেও গন্ধ নিতে পারবে না, হাজার চেষ্টা করলেও। কোনো কোনো জীব ঘি খেলে নাকি গায়ের পশম ঝড়ে যায়, অবস্থা ঠিক তেমন। এ শ্রেনীর লোকগুলোর লিখার ডিগ্রি নেই, তবে মুছে ফেলার ডিগ্রি আছে। ধর্মজ্ঞান সবাইকে বুঝানো যাবে না, যার না; আল্লাহ হেদায়েত না দিলে । তাছাড়া ‘বাবা’ বা বা’জান বললেই যদি জন্মদাতা পিতার মতো হয়ে যায় তবে বাংলাদেশের বাঙালী জাতির পিতা বলা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে, এর অর্থ কি তিনি সব মায়েরই স্বামী? মুসলমানের জাতির পিতা বলা হয় ইবরাহিম নবীকে, তাহলে কি তিনি সব মুসলমান মায়েদের স্বামী? না। তিনি হলেন দ্বীনি পিতা। মানব জাতির আদি পিতা বলা হয় হযরত আদমকে, তাহলে তিনিও কি সব মায়েদের স্বামী?
দু’পাওয়ালা মানব জাতির মধ্যে যিনি প্রথম আত্মপরিচয় জ্ঞান লাভ করেছেন বা নিজকে চিনেছেন তথা খোদাকে চিনেছেন তিনিই মানব, পতিত মানব বা অচেতন, ঘুমন্ত, উলঙ্গ মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম; ইহা দ্বীনি পিতা। নিজকে চেনার শিক্ষার ধারক-বাহক তিনি, তিনিই মুর্শিদ। তাকে কেউ বাবা, বাজান বা আব্বা সম্বোধন করছে। তিনি চিরবর্তমান। কারণ আদম হলেই মৃত্যুঞ্জয়ী হয়, অখন্ডকালে স্থিত হয় বা লা মউতের অধিকারী হয়। আবার ছেলেদেরকেও মা-বাবা ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করে, তাই বলে কি ঐ ছেলে মা বাবার জন্মদাতা? বাবার মার স্বামী? একলক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রাছুল যদ লোককে মুসলমান করেছেন বা দ্বীনে মোহাম্মদীতে দাখেল করেছেন, তার চেয়েও বারো গুন বেশি মুসলমান করেছেন যিনি সেই হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীকেও পৃথিবীর সব ঈমানদারগণই ‘খাজা বাবা’ বলে সম্বোধন করছে, তাকে কি তিনি সব মায়েরই স্বামী হয়ে গেলেন! অনেক সময় মেয়েদের তার স্বামীকে বলতে শোনা যায় ‘আরে বাবা, রাখো না’। তাতে কি স্বামী পিতা হয়ে গেলো? ‘বাবা’ শব্দটি যখন কোনো সাধু, দরবেশ, গুরু বা অলী মুর্শিদকে বলা হয় তখন তা হয় চিরন্তন শাশ্বত এক পবিত্র সম্মানসূচক উপাধি। আবার ‘বাবা’ শব্দটি অনুনয়, আদর- ¯েœহ ইত্যাদিসূচক সম্বোধনেও ব্যবহৃত হয়। যেমন ‘বাবা আমার সোনামণি’। বন্ধু-বান্ধবদের পরস্পরের প্রতিও ‘বাবা’ বলা হয়ে থাকে। যেমন ‘এ মেয়ে পুরুষেরও বাবা’। দুঃখ যন্ত্রণা ইত্যাদি সূচক ‘বাবা’ শব্দও ব্যবহার করা হয়। যেমন ‘বাবাগো, মাগো বলে চিৎকার করা হয়। জামাতা বা জামাতৃস্থানীয় ব্যক্তিকেও স¯েœহে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করা হয়। শ্বশুরকেও বাবা বলে ডাকা হয়। ছোট ছেলেদেরকে আদরের দৃষ্টিতে ‘বাবা’ বলা হয়; যেমন ‘বাবা গাছের ফুল ছিঁড়ো না’। আরবে চাচাকেও বাবা বলা হয়, তাই বলে কি জন্মদাতা পিতা হয়ে গেলো? এভাবে বললে অনেক উদাহরণই দেয়া যায়।
যার দ্বারা বুঝা ‘বাবা’ বললেই জন্মদাতা পিতা বা জনক হয়ে যায় না বা জন্মদাতা পিতার মতোও হয় না। গুরুকে বা মুর্শিদকে বাবা বা বা’জান বলে সম্বোধন করাটা অনেক উঁচুস্তরের একটি সম্মানজনক উপাধি; এটাকে যারা জাগতিক জগতের পিতা বা বাবা বলে বুঝে বা বুঝায় তাদেরকে গর্দভ বললেও কিছুই বলা হয় নি। এভাবে জাগতিক জগতে সামাজিক পরিসরে ভাই-বোন, চাচা-চাচী, মামা-মামী, দাদা-দাদী ইত্যাদি আমরা অনেক লোকদের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করে থাকি অথচ তারা কেউ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়তো নয়ই, বরং কোনো আত্মীয়ই নয়, অপরিচিত লোকও হতে পারে। বুঝতে হবে একই শব্দ স্থান বিশেষে ভিন্ন অর্থ হয় – এটা যে না বুঝে তাকে বুঝাতে যাওয়া আর গাধার নাকে গোলাপ ফুল ধরা একই কথা। বুঝতে হবে মানবগুরু হলো বাবারও বাবা, মায়েরও বাবা তথা তিনি পতিত মানবজাতিরই ‘বাবা’ বা পিতা। ‘বাবা’ কথাটির অর্থ অনেক, তার মধ্যে ‘দরজা’ (বাবা) ও বলা হয় (সুরা বাকারা -৫৮)। কিসের দরজা? ইলমে ইলাহী মানবগুরুর মাধ্যমে লাভ হয় বিধায় তিনি ‘বাবা’ ইলমে ইলাহী লাভের মাধ্যম বা দ্বার। ‘দারবেশ বা দরবেশ’ কথার মর্মার্থও এখানে প্রণিধানযোগ্য। এ দরজা দিয়েই শহরে প্রবেশ করে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে কোরানে এবং তাতে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে (সুরা বাকারা ৫৮)। একটি জন্মদাতা পিতা তথা বাবা, আরেকটি কর্মদাতা বা মুক্তির পথপ্রদর্শক পিতা বা বাবা। দুটোই বাবা তবে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করছে, দুয়ের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। জন্মদাতা পিতা-মাতা আপেক্ষিক সত্য, কিছু দিনের জন্য। আর ইনছানি আত্মার অধিকারী বা পরকালপ্রাপ্ত মানুষ হাকিকি পিতা, চির দিনের পিতা, মানুষের মুক্তির পথপ্রদর্শক। হাবিব খোদার কালাম হতে ‘মাওলা আলী’ হলেন ইলমে ইলাহীর দরজা। (রাছুলের কালাম হলো, “আনা মদিনাতুল ইলমী ওয়া আলীউন বাবুহা”।
কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
মহান মুর্শিদ কেবলা, ঝাউগড়া বেনজীরিয়া চিশতীয়া দরবার শরীফ
আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ