হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
মাজার বা রঁওযা জিয়ারত আর কবর পূজা আসমান জমিন প্রভেদ তা অজ্ঞ-মূর্খ গোঁয়ার গোবিন্দের দলেরা বুঝে নি। আল্লাহপাক তাদের তকদিরে সে বুঝ জ্ঞান দান করেন নি, দোয়া করি যেন সে বুঝ-জ্ঞান দান করেন। যদি তাদের সামান্যও ধর্মজ্ঞান থাকতো তবে দেখতে পেতো, বুঝতে পারতো যে সমস্ত মাদ্রাসার আলেমরাই (সামান্য কিছু খাঁটি সুন্নী আলেম ব্যতীত) কবর পূজা করছে, কবর পূজার শিক্ষা দেয়ার বা গন্দম খাওয়ার শিক্ষা দেওয়ার জন্য মাদ্রাসা খুলেছে। এরা এতো অন্ধ যে তা বুঝার জন্য কোনো জ্ঞানীর সঙ্গও বিষতুল্য মনে করে, মিথ্যা অহংকার-অহমিকা সর্বদায়ই তাদের মনে বিরাজ করছে, ইহাই অজ্ঞানান্ধকারের বহিঃপ্রকাশ। ফকিররা কোনো দিনই কবর পূজা করে না, তারা রঁওযা বা মাজারে জিয়ারত করে/করছে এবং নিজেকেও রঁওযা বা মাজারে পরিণত করে নিবার শিক্ষা নিচ্ছে এবং তাতে তারা তা প্রাপ্ত হচ্ছে বিধায় ঈমানদারগণ/ভক্ত-মুরিদান, আশেকানগণ ওরশ পালন করছে। অজ্ঞ-মূর্খ এ সমস্ত আলেম-মোল্লাগণ যুগে যুগেই নবী-রাছুল অলিদের বিরোধীতা করেছিল/করছে। অন্যান্য ধর্মের ছদ্মাবরণেও এ সমস্ত ধর্ম সন্ত্রাসীরা বাস করছে। তাদের কামড়াকামড়িতে মানব সমাজে নাভীশ্বাস উঠে গেছে। এ কথা কেই বিশ্বাস করতে পারেন আবার বিশ্বাস নাও করতে পারেন সবই তকদির। তবে আগতকাল এসে তার প্রমাণ উপস্থাপন করবে, সেদিন চোখ খুলে যাবে, সবই দেখতে পাবেন-বুঝতে পারবেন। কোরান মহা জ্ঞানভান্ডার তা কখনো সম্প্রদায়িকতা সমর্থন করে না, তাহলে আর কোরানের সার্বজনীনতা থাকে না। কোরানের আক্ষরিক ব্যাখ্যা-বয়ান করে কোরানকে সাম্প্রদায়িকতার পোশাক পড়িয়েছে তারা।
৬শত হিজরীর পূর্বে মাদ্রাসার শিক্ষা অনেকটা অলি-আউলিয়াদের অনূকুলেই ছিল, ৬শ হিজরীর পরে সে সমস্ত শিক্ষা পরিবর্তন করে অন্ধ-গোঁড়া মৌলবাদী শিক্ষার প্রচলন করা হয়েছে-যা আল্লাহর অলিদের/দ্বীনে মুহাম্মদীর সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমানে আল্লাহর অলিদের শিক্ষা, আকিদা, আচারানুষ্ঠানের সাথে মাদ্রাসার শিক্ষা, আকিদা আকাশ-জমিন প্রভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তাতে তাদের শিক্ষা-আকিদার ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রচার ও প্রসারের জন্য পীর/গুরু/অলিদের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, নির্যাতন এমনকি প্রয়োজনে গুরু/অলিদের হত্যা পর্যন্ত করছে। ইহাই ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা মি. হামফ্রেশের নির্দেশ।তিার জন্য পড়ে দেখতে পারেন ‘পরহেজগারীর আড়ালে ওরা কারা!!!’, “মি. হামফ্রের ডাইরি, ওহাবী পরিচয়, নজদ পরিচয়, ওহাবীদের আসল পরিচয়, ওহাবী মাযহাবের হাকীকত, যায়যালা- এ ধরনের খাঁটি সুন্নি আলেমদের লেখা আরো অনেক কিতাব রয়েছে। এ সমস্ত পথভ্রষ্ট ওহাবীদের ভ্রান্তিপূর্ণ ঈমান-আকিদা হতে বের হয়ে এসে মুক্ত মনের অধিকারী তথা ইনছানিয়াতে দাখেল হতে হলে একমাত্র অলি-আউলিয়াদের পথেই ধাবিত হতে হবে, তাদের শিক্ষাকে গ্রহণ করে নিতে হবে। সুরা ফাতেহায় তাদের পথে চলার/থাকার জন্যই প্রার্থনা করা শিক্ষা দিয়েছেন খোদা নিজেই। একমাত্র আল্লাহর অলিদের পথই হলো সিরাতিম মুস্তাকিম। আলেম-মোল্লাগণ সিরাতিম মুস্তাকিমের নাম শুনেছে কিন্তু দেখেনি কি জিনিস সিরাতিম মুস্তাকিম। মুক্ত মনের মহা সাধক হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজহ (রাঃ) প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ব বন্ধন, সেনহ-মমতা, সম্যগুণ তথা ফিৎরাতে আহসান দ্বারা ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। সমস্ত আল্লাহর অলিগণই এ পথে দ্বীনে মুহাম্মদী প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছেন, এখনো প্রচার করছেন।
পাশাপাশি মাদ্রাসার আলেম-মোল্লাগণ যুগে যুগে তার বিরোধীতা করে আসছে, ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম করছে। ইতিহাসে তার ভুরি ভুরি নজীর রয়েছে, এখনো আছে। দ্বীনে মুহাম্মদী/দ্বীন ইসলামের তরিকাকে বিকৃত করার জন্য তাদের দলের মাদ্রাসার বিদ্যাধীকারী কিছু মৌলবাদীদেরকে পীর বা অলি বলে প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের মধ্যে ইলমে মারেফাতের বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই, না জানে তারা কালেমার তাহকিক, সম্বল শুধু মাদ্রাসার আক্ষরিক বিদ্যা-ইলমুল কালাম। আমাদের দেশে এ ধরনের ইমিটেশন মার্কা পীর/অীরলর অভাব নেই। ওরা কোরান-হাদিসের আক্ষরিক বিদ্যাকে ধর্ম জ্ঞান বুষিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হচ্ছে, অন্যকেও পথভ্রষ্ট করছে। মাওলানা মজিবুর রহমানের লেখা ‘তাজকেরাতুল আউলিয়া’ বইটির ৫ম খন্ডের মধ্যে দেখতে পাবেন সাত জন ওহাবী খারেজীকে (গোঁড়া এবং ওহাবী আকিদা ত্যাগ করতে না পারার কারণে তাদের জীর হাজি ইমদাদুল্লাহ সাবেরী তাঁর তরিকা হতে তাদেরকে খারিজ করে দিয়েছিলেন। সেই কথা গোপন করে এ ওহাবী মোল্লাগণ সাবেরী তারিকা প্রচার করে চলেছে) অলি বলে প্রচার করে দিয়েছে।
যাক, বর্তমানে মানুষের মন এক প্রকার যান্ত্রিক পর্যায়ে চলে গেছে। আগের মতো এক অন্যের প্রতি দয়া-মায়া, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা, ভ্রাতৃত্ব-সৌহার্দ্যভাব দেখা যায় না। যুবসমাজ নষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, গ্রামের পরিবেশ এখন পুরোটাই কলুষিত হয়ে গেছে। আদব-নম্রতা সবই বিলুপ্তির পথে দ্রুত ধাবিত হচ্ছে। হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার, প্রতারণা, অন্যায়-অবৈধ উপার্জন দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছে। যুবসমাজ নৈতিকতা হারিয়ে হারিয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, মুরুব্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি এক প্রকার উঠেই গেছে। অল্প বয়মের ছেলেরা রাজনৈকিত ছত্রছায়ায় জোর-জুলুম করছে, বিচার আসনে বসছে, টাকা উপার্জনের অবৈধ পথে দ্রুত গতিতে ধাবিত হচ্ছে। কিছু অভিবাবক আছে ওরাও ওদের ছেলেদের এ ধরনের পরিণতি দেখে গৌরব অহংকার করছে, তার ছেলে নেতা হয়েছে, বিচারক হয়েছে, ইহাইও পাপেরই ফল। কারণ, ওরা ধর্মানুষ্ঠান পালন করলেও ধর্মকে ধারণ করেনি/অর্জন করেনি। কারণ, ধর্ম কি তা মূলতঃ ওরা বুঝেইনি বিধায় পুণ্যার্জন হয়নি তাই মানুষ হতে পারছে না। তার মূল কারণ, মাদ্রাসার আলেম-মোল্লাগণের, মসজিদের মৌলবীদের আক্ষরিক শিক্ষা-আকিদায় ডুবে অন্ধ-অনুমানে অন্ধকারে দৌঁড়িয়ে নিজেদের আত্মা হারিয়ে (সুরা আনআম-১২) তাদের অজান্তেই অজ্ঞ-মূর্খ, গোঁড়া মৌলবাদে পরিণত হয়ে নিজেদেরই ক্ষতি করছে আসফালা সাফেলিন হচ্ছে। তাতে তাদের কোনো পুণ্য লাভ তো হচ্ছেই না, বরং পাপে নিমজ্জিত হচ্ছে, তারই বহিঃপ্রকাশস্বরূপ নৈতিকতার অধঃপতন। সেই পাপের ফলেই আলেম-মোল্লাগণ ধর্মকে তেহাত্তর ফেরকায় বিখক্ত করে একে অন্যের প্রতি ফতোয়ার কাঁদা ছোড়াছুড়ি করছে, দ্বন্দ্ব-বিভেদ, জোর-জুলুম, মারামারি, কাটাকাটি করছে, কামড়াকামড়ি করছে, মানুষ হত্যা করছে। তাদের এ ধরনের ক্রিয়া কর্মে সাধারণ মানুষ চরমভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছে। সঠিক কোনো দিক নির্দেশনা পাচ্ছে না। কারণ, মাদ্রাসার আলেমরা বহুমুখী ঈমান-আকিদায় বিশ্বাসী, দ্বন্দ্ব-বিভেদের ঘূর্ণিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছে, তাদের মধ্যে ঐক্যতা নেই। ভুল অংকের ফল কখনো একটি হয় না, বহু-ই হয়। এ ইয়াজুজ-মাজুজদের ইশারাই রাছুল যুগে যুগে দিচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন মতবাদের-আকিদার শিক্ষায় আক্রান্ত ইসলাম ও সমাজ। এ সত্য কথাটি তুলে ধরলেই ওরা তাদের আদিম চরিত্রটি প্রকাশ করে গোঁয়ার গোবিন্দের প্রেত নৃত্য শুরু করে। তাই বলছি, ওরা শান্তিবাদী নয়, মুক্ত মনের নয়, মহা মন সৃষ্টি করতে পারেনি, সে পথে যেতেও রাজি নয় শুধু আক্ষরিক বিদ্যা বা কিছু ইলমুল কালামকে ধর্ম জ্ঞান বুছেঝে আর ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাকেই ধর্ম কর্ম বুঝেছে বিধায় দ্রুত অন্ধকার কবরের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই বলা হচ্ছে, ‘আল হাক্কু মুররুণ।’ তারই বহিঃপ্রকাশস্বরূপ অন্ধ-মূর্খ আলেম-মোল্লাদের ফতোয়াবাজির দৌরাত্ম্য বেড়ে চলছে, ধর্ম জ্ঞানীদের উপর জোর-জুলুম চলছে, তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে।
রাছুল বলেন, “কেয়ামতের পূর্বে ‘ইলেম’ উঠিয়ে নেয়া হবে।” আর তা হবে ধর্ম জ্ঞানী আল্লাহর অলিদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমে। তখন থাকবে শুধু মাদ্রাসার আক্ষরিক বিদ্যার/ইলমুল কালামের অধিকারী পন্ডিতগণ(মাদ্রাসার আলেমগণ), ওরা কামড়াকামড়ি করবে/করছে। রাছুলের ভাষায় ওরা আসমানের নিচে এবং জমিনের উপরে সবচেয়ে নিকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী হবে, মসজিদ পাকা হবে মানুষের ঈমান কাঁচা হবে, কোরানের অক্ষর থাকবে তার কোনো জ্ঞান থাকবে না (সুনানে বাইহাকী, মেশকাত)। তাদের ফাঁদে পড়ে মানুষ পথ ভ্রষ্ট হবে। ওরা এক এক জনে এক এক মতবাদ (যার যার ফেরকার কথা বলবে, তার মধ্যে কওমী ওহাবী ফেরকাটি উগ্র, গোঁড়া, ফতোয়াবাজ, ওরাও নানা দলে বিভক্ত। বারো আনা মসজিদ-মাদ্রাসাই ওহাবীদের দখলে। তার সঙ্গে জড়িত মোল্লাপীর বা রাজনৈতিক পীরেরা) শিক্ষা দিবে, প্রচার করবে এবং যার যার মতে ওয়াজ করার ফলে সমাজে দ্বন্দ্ব-বিভেদ সৃষ্টি হবে/হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মৌলবী কোন ফেরকার লোক তা চিনতে না পেরে তাদেরকে দিয়ে ওয়াজ করাবে তাতে দ্বন্দ্ব বিভেদ আরো চরম আকার ধারণ করবে/করছে। ফতোয়াবাজি করবে/করছে, উত্তেজনামূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে দ্বন্দ্ব বিভেদ সৃষ্টি করবে/করছে, দলাদলি-মারামারি করবে/করছে। শুধু ওয়াক্তিয় নামাজকে, বৎসরে এক মাস রোজা, মক্কায় গিয়ে হজ্জ করাকে, অর্থের যাকাতকে আর শুধু মৌখিক কালেমা পাঠকেই একমাত্র দর্ম কর্ম মনে করবে/করছে ( ইহাই ইয়াজিদের মতাদর্শ-শিক্ষা)।