লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী
জগত সংসার টাও এক বহতা নদীর মতো। বয়ে চলেছে নিরন্তর। তার নিজস্ব চলার ছন্দে। নিজস্ব ঢঙে। চিরায়ত তার চলার পথে মাঝে মাঝেই ঘটে ছন্দপতন। বিনাশশীল অসুর শক্তির তাপদাহে স্রোতস্বিনী নদীটিও শুকিয়ে যেতে চায়। হারিয়ে ফেলে তার গতি। তখনই প্রয়োজন হয় জগতের বুকে কোনো শক্তিশালী সত্ত্বার আগমনের। যিনি আবার গতিসিঞ্চন করেন ধরিত্রীর বুকে। আপনার সাধনার বলে ফিরিয়ে আনেন আবার নির্জীব বসুধার বক্ষে প্রাণ। তাদেরকেই বলা হয় অলী আউলিয়া। তারাই অন্তরে বাহিরে লালন করেন সুফিবাদ ।
তারাই যুগের অবতার। তাদের চরণ পরশেই ধরণী জেগে ওঠে আপন মহিমায়। যুগে যুগে পথহারা মানুষদেরকে তাঁরা দিয়ে বেড়ান পথের পরিচয়। সে পথের সন্ধান দেন যে পথে রয় সকলের শাশ্বত কল্যাণ। জ্ঞানের দরিয়ায় সকলকে স্নাত করে পৌঁছে দেন মানুষকে শাশ্বত প্রেমের অমর লোকে।
সর্বযুগে মানব জাতিকে অজ্ঞানতার বিষকূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য পৃথীবিতে আবির্ভূত হন এক একজন মহাপুরুষ। যারা আপনত্যাগী সিদ্ধযোগী। সাধনার বলে নিজেকে পরম সত্ত্বায় স্থিত করে জগতের মায়াশৃঙ্খলে আবদ্ধ মানবজাতির জন্য বয়ে নিয়ে আসেন পরমপ্রাপ্তির সুসংবাদ। তাদের চরণতলেই নিয়ত প্রবাহিত হয় মহাপ্রেমের আবহায়াত। তাদেরই অনুসরনেই আসে কাঙ্খিত মুক্তি। আর তাদের অস্বীকারের ফলে মানুষ আবদ্ধ হয় পশুত্বের জ্বালাময় দোযখ তথা শাস্তির স্থানে।
মানুষ প্রভুগুণে গুনান্বিত হয়েই জগতে আসে। এখানে এসে সে বিষয়মায়ার কালসমুদ্রে পতিত হয়ে হারিয়ে ফেলে সেই ঐশীগুণসমুহকে। প্রভূর গুণ হারিয়ে সে হয়ে পড়ে জগতের অধীন। ভুলে যায় নিজেকে। ভুলে যায় জগতে আশার উদ্দেশ্যের কথা। কালচক্রে মত্ত হয়ে সে কাটিয়ে দেয় সমগ্র জীবন । বিনিময়ে সে হারিয়ে ফেলে মানবীয় সুরত। তাকে আবার ভোগ করতে হয় নরক জ্বালা।
এ নরক জ্বালা থেকে পতিত মানব জাতিকে উত্তরণের জন্য স্বয়ং প্রভূ মানবীয় সুরতে ধরায় আবির্ভূত হন। মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে স্বয়ং স্রষ্টা মানবীয় সুরতে মানবমন্ডলীর নরকমুক্তির পথপ্রদর্শন করেন। পথ দেখান তিনি, কিভাবে ফের গুণান্বিত হওয়া যাবে প্রভূগুণে। মনে রাখা দরকার, প্রভূগুনে যিনি গুণান্বিত, তিনিই মুক্ত তথা প্রভূতে স্থিত। স্বয়ং প্রভূকে অনুসরণ করে, তার দেখানো পথে চলে, তার গুণে নিজেকে গুণান্বিত করলেই স্থিত হওয়া যাবে মানবীয় অস্তিত্বে।
মহাপুরুষ তথা অবতার রাসুল বা গুরুর আগমনেই খুলে যায় স্বর্গীয় অমরত্বের দ্বার। মানবীয় অস্তিত্বে গুরুজ্ঞানের জাগরনেই আসে কাঙ্খিত মুক্তি। প্রভূগুরুর আগমনেই মানবীয় অজুদে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বর্গরাজ্য তথা ইসলাম।
“মহান সত্ত্বা যখন মানুষ রুপে ধরায় এসে পথহারাদের পথ দেখান তাকেই বলে গুরু বা মুর্শিদ তথা পথপ্রদর্শক।”
দ্বিধাহীন ভাবে গুরুর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পন ও তার পূর্ণ আনুগত্যের মাঝেই আছে চিরমুক্তি। অবতার রাসুল বা গুরু সত্ত্বার দেখানো পথে যিনি চলেন তিনি প্রাপ্ত হন সঠিক পথ, যে পথে রয় তার শাশ্বত কল্যাণ। আর যারা স্ব স্ব স্বার্থ নির্মিত পথে চলছেন তারাই এগিয়ে চলছেন ধ্বংসের পথে। তারা নিশ্চিহ্ন হবেন। মহাকালের মহাযাত্রায় তারাই টিকে থাকবে যারা প্রভূগুণে তথা গুরুগুণে গুনান্বিত তথা তার স্বভাবে স্বভাবান্বিত।
সে নিত্যসত্য সত্ত্বা তথা গুরুসত্ত্বার আবির্ভাব ঘটুক প্রতিটি জীবনে। তিনি জাগ্রত হোন প্রতিটি মননে। সকলের চেতনায় তিনি চাষ করুন সত্যের ও প্রেমের ফসল। তবেই মানবের অনাবাদী জমি ভরে উঠবে মনুষত্বের শস্যে। তাঁর আগমনী গীত হোক প্রতিটি ঘরে ঘরে।
যুগে যুগে প্রভূগুরু তথা মহামানুষের আগমনীকে ত্বরাান্বিত করতে প্রয়াস চালিয়ে যায় কিছু কিছু অনুরাগী বাঁশিওয়ালা। যিনি তার বাঁশির সুরে সুরে চেতনায় জাগিয়ে তোলেন প্রভুগুরুর আগমনবার্তা। তেমন একটি বাঁশি হলো “আপন খবর”। যা তার সর্ব রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিত্য বাজিয়ে বেড়াচ্ছে যুগাবতারের আগমনী সংগীত। প্রেমিক জনার হৃদয়ে আলোড়ন তুলবে সে সঙ্গীত। তারা আকুল হয়ে উঠবে প্রভূপ্রাপ্তির জন্য। যেটাই হবে আপন খবরের স্বার্থকতা।
সকলের হৃদয়ে আকাশদীপ হয়ে জ্বলে উঠুক গুরুবাণীর বা গুরুসুধার রুপমঞ্জরী। সকলে প্রভূগুরুর দেখানো সিরাতুল মুস্তাকিমের সন্ধান লাভ করুক। জগৎব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হোক সত্য ও সুন্দর। জয় হোক সত্যের। প্রভূগুরু সহায় হোন সকলের।
রচনাকাল – 01/01/2015
লেখক – লাবিব মাহফুজ চিশতী