লেখক – শাহ্ এস এম বাহরায়েন হক ওয়ায়েছী
মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ, এ শ্রেষ্ঠত্ব এসেছে তার মেধা, গঠন ও সুরত শৈলীর কল্যাণে। সে সৃষ্টিকে এমন করে সৃজন করে কুল আলমকে করেছে সুশৃঙ্খল, প্রাধান্য পেয়েছে প্রভুত্বের। মহান আল্লাহ পাক এই মানুষের মননে ছাবেত হয়ে তার প্রশংসার সবটুকু কুড়িয়ে নিয়েছেন। তাই মানবতার মুক্তিদূত হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নিজেকে নিংড়ে, মহান আল্লাহ তায়ালার রুপায়নকে অবলোকন করেছেন নির্জন হেরাগুহায় ধ্যানমগ্নতার মধ্য দিয়ে। সেখানে আপন পরিবারের সমন্বয়ে দেখতে পেয়েছিলেন সুন্দর বিশ্বলয় (পাকপাঞ্জাতন)। দূরীভূত হয়েছিল অমানিশা। পেয়েছিল প্রেমময়তায় পরিপূর্ণ নির্ভেজাল এক জীবনদর্শন।
কিন্তু অযাচিতের দুষ্ট থাবা থেকে রেহাই মেলেনি তাদের। হয়তো বা রেহাই চাননি। যদিও আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য সব সময়ই প্রতিষ্ঠা পাবেই। তবে সংগ্রাম বিহীন নয়। ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা সে বাদ। কর্মময়তা তকদিরের উৎস মূল। সে সত্যকে সঙ্গী করে স্বজনদের সহ নিজকে উৎসর্গ করে দিয়ে আধ্যাত্মিকতা দেখিয়ে গেছেন হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)। তার আত্ম শুদ্ধিতে ছিলনা কোন ব্যক্তির স্বার্থ। যারা সেই আত্মশুদ্ধিতে নিবেদিত, তারা সব সময় সরলমনা জীবন যাপন করে। মনুষ্যত্ব কি তা তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন। আদি অনাদি কালের মানুষেরা সে আদর্শে লীন হয়ে অহিংস মনোভাব দেখিয়ে দিয়েছেন। আর দেখিয়ে দিয়েছেন সুন্দর আদৌ কি?
সে সুন্দর লাছানী মনের পরিতৃপ্ততার এক বিরল দৃষ্টান্ত। আজ সমাজ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে ভোগবাদীকে পুঁজি করে পশুত্বের আচরণকে সহনীয় করে যে তুষ্টতা, তা কেবল মনুষ্যত্ব হত্যা ছাড়া কিছু নয়। বস্তু মানব সৃষ্ট, আর মানুষ আল্লাহ সৃষ্ট। বস্তু রক্ষা করে মানুষ ধ্বংস এটা কোন ধর্মেই গ্রহণযোগ্য নয়। (ইন্নাদ্বীনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম) আর পরিপূর্ণ ধর্মে তো নয়ই। মানুষ হলো নিরাপত্তার পূর্ণ এক প্রহরী। তার দায়িত্ব সকল সৃষ্টিকে লালন করে নিজকে খুঁজে ফেরা। তার কর্তব্য যথাযথ পালন করা। আমরা মানুষ সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র ওয়াকেফহাল হচ্ছি না।
আমাদের উচিত নিজ দোষ থেকে কলুষমুক্ত থাকার প্রয়োজনীয়তায় ওলীয়াম মুর্শিদকে সহায়ক করে আত্মার নির্ভেজাল শুদ্ধতায় এসে মান আরাফায় পৌঁছানো। কিন্তু এখানে এসেও নানা রং বেরংয়ের নীতি কথায় সত্যকে বিশেষণ করে মেরাজ করা বড়ই কঠিন। কারও কারও জীবনে এমনও ঘটে সত্য রাহাতে পৌছাতে (পথভূল হলে) গিয়ে নিজের সর্বস্ব হারিয়ে কূলহীনা হতে হয়। তখনই সত্যপন্থীরা আড়ালে থেকে যায়। চলে যায় তারা একলা চলার নীতিতে। তাই সন্ধানেষু মানুষের দায়িত্ব মোড়কের পরিচ্ছন্নতা দেখে নয়, অভ্যন্তরীণ পরিচ্ছন্নতা যেখানে আছে সেখানে গিয়ে আত্মসমর্পণ করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ কি তা দৃষ্টিতে ধরা পড়বে।
সাগর সম চিন্তাকে আকড়ে ধরে সার্বজনীন প্রতিভার অবলোকনে মানুষ যখন নিবেদিত প্রাণ, তখন অন্যের দোষ ধরা নাগালের বাইরে চলে যাবে (মোশাহেদায় থাকলে)। সেই সময়ই তাকে খুঁজে ফিরবে মানুষ, একটু চিন্তামুক্ত থাকার জন্য। কোথায় একটু নিরাপদ স্থান। যখন কোন পেশীশক্তি বা অর্থশক্তিতে বলিয়ান হয়ে মানুষ তার চালাকি সভ্যতাকে বিকশিত করতে চাইবে (ভালবাসাবিহীন) সেখানে অনাড়ম্বর বিলাস বহুলতা থাকবে কিন্তু বিশ্বাস থাকবে না। আর বিশ্বাসী হতে হলে তাকে হেকমত ওয়ালা হতে হবে। হেকমতওয়ালা কভু জুলুমবাজী করে সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে না। ইনছানী সভ্যতা মমত্ববোধের সমন্বয়ে তার হৃদে সকলের আসন গড়ে ওঠে, হয়ে যায় সে মোহিত আলমে ঐশীপূর্ণ আলোয় আলোকিত।
তার স্মৃতি কখনো ম্লান বা বিনাশ হয় না। তার সুন্দর মোহনীয় আস্থায়, প্রত্যেকেই খুঁজে পায় স্বতন্ত্র এক মর্যাদা। ভক্তিভরে ঢেলে দেয় জানা-অজানা সমস্ত কথা। পাপ-পুণ্য আলাদা হয়ে ধরা দেয় নির্ভেজাল এক সত্তা। ভয় হীন হয়ে ওঠে মমতার নিগুড়ে রহস্য, প্রভাবিত করেনা, তখন কোন অযাচিত মোহে গৌরবান্বিত হয়ে দেখতে পায় প্রশান্তির পরশতা। লুটিয়ে পড়ে কত শির আদর্শিক সেই পদযুগলে আপনা আপনিই।
একসময় মনে হতো কতই না দূরে? আসলে সে দূর হতেই সর্বদাই থাকে কাছে, অতীব কাছে। এমন নিগুঢ়ত্ব দেখেছি কেবলা ছিল প্রথম জেরুজালেম (রুপক) ঘুরে গিয়ে (সালাতেই) কাবা এলো কেবলা হয়ে (সম্মুখে দুই ধনুকের বাকের সন্নিকটে)। এমন সুন্দরতম মেরাজ কবে হবে? তবে জীবন দাসত্বে চেষ্টা করলে অবশ্যই আয়নাল একিনে ধরা দিবে। আপন চেতনায় অর্জিত হয়ে মধুময়তায় তন্ময় হলেই মসৃণ পথ প্রশস্ত হয়ে যাবে-মিলবে বান্দার অস্তিত্ব নগদ মওলার বাহুডোর। আশেক মাশুক দেখে নিবে এলমে লাদুন্নির জাদুর মূর্ছনা। পেয়ে যাবে কোরানিক ভুবনে রক্ষিত ফলক আপন আপন অস্তিত্বে। ফতোয়া দিয়ে নয়, আদর্শিক এস্কের জোয়ারে উদ্ভাসিত হয়ে দৌড়াবে এস্কের ঘোড়া কারবালার ময়দানে একজন সঠিক মানুষের অন্বেষায়। আলাইছাফি মুসলেমুন হওয়ার জন্য। আমার এ লেখা কথাগুলো সার্থক হবে, আমার ভুলগুলো শুধরে দিলে। হয়তো আরও কিছু সুন্দর কথা অবতারণা করতে পারবো আগামী লেখায়। নিজ দোষ সহসা চোখে পড়েনা, নচেৎ পাশ কাটিয়ে যাই ভালো মানুষের অভিনবতায়। সবার মঙ্গল কামনায় আগামী লেখার প্রেরণার প্রত্যাশ্যায়।