1.
ঈশ্বর
কাজী নজরুল ইসলাম
কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে?
কে তুমি ফিরিছো বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ –
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি, খোঁজো তারে দেশ-দেশ!
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে, তুমি আছো চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো? আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেখো দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে, প’ড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি উঠো না শাস্ত্রবিদেরে, ক’রো না’ক বীর-ভয়
তাহারা খোদার খোদ প্রাইভেট সেক্রেটারী তো নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কূলে
রত্নাকরের খবর তা ব’লে, পুছো না ওদের ভুলে’!
উহারা রত্ন বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তা’রা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।
2.
আছি আমি বিন্দুরূপে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আছি আমি বিন্দুরূপে, হে অন্তর্যামী
আছি আমি বিশ্বকেন্দ্রস্থলে! ‘আছি আমি’!
এ কথা স্মরিলে মনে মহান বিস্ময়,
আকুল করিয়া দেয়, স্তব্ধ এ হৃদয় –
প্রকান্ড রহস্যভারে! আছি আর আছে’
অন্তহীন আদি প্রহেলিকা, কার কাছে –
শুধাইব অর্থ এর! তত্ত্ববিদ তাই
কহিতেছে, ‘এ নিখিলে আর কিছু নাই।
শুধু এক আছে।’ করে তারা একাকার
অস্তিত্বরহস্যরাশি করি অস্বীকার।
একমাত্র তুমি জান এ ভবসংসারে
যে আদি গোপন তত্ত্ব, আমি কবি তারে –
চিরকাল সবিনয়ে স্বীকার করিয়া
অপার বিস্ময়ে চিত্ত রাখিব ভরিয়া।