হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
ওহাবীরা নবীজি (সাঃ) এবং তাঁর পবিত্র আহলে বাইয়্যেতের বিরোধী। রাছুলপাক (সাঃ) বলেন, “আমার আহলে বাইয়্যেতের বিরোধীতা করা কুফরী (মেশকাত)। আরো বলছেন, “আলীর প্রতি ভালোবাসা এবং ঘৃণার দ্বারা মুমিন-মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয় (মেশকাত)। সেজন্যই তারা ফতোয়া দিয়েছিল ইয়াজিদের পক্ষে আর ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর বিরুদ্ধে। মোল্লা-মুফতিরা ফতোয়া দিয়েছিল হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)-কে হত্যা করা জায়েজ। তাহলে কি বুঝা গেল না/চেনা গেল না ওরা কারা!! কারবালার যুদ্ধের সময় এ ফতোয়াটি শীমারের পাগড়ীর নিচে ছিল এবং এ ফতোয়া মাথায় নিয়েই হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর শিরোচ্ছেদ করেছিল শীমার ইবনে জিলজিশান। ওরা নবীজি (সাঃ)-এর আহলে বাইয়্যেতের শেষ সদস্য মাওলা হুসাইন (আঃ)-এর বিরোধী মুনাফিক। সহিহ বোখারীর (বঙ্গানুবাদ) ৫৬২ পৃষ্ঠা আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-এর বর্ণনায় হযরত মাওলা ইমাম হুসাইনের নামের শেষে ‘আঃ’ লেখা রয়েছে, মুনাফিকরা ‘আঃ’ অনুবাদ না করে ‘রাঃ’ অনুবাদ করেছে-ইহাই মুনাফিকদের কাজ, চরিত্র। ওরা ব্রিটিশ গোয়েন্দা মি. হামফ্রের দালাল-এটা আপনারা কেউ বিশ্বাস করতে পারেন বা নাও করতে পারেন, তাতে আমার কিছু বলার নেই, সবই তকদির।
বর্তমানে ওহাবী কওমীরা সৌদি সরকারের সমালোচনা করে চলছে। কারণ, সৌদি সরকার (সালমান) ওহাবী মতবাদের সমালোচনা করছে। বলছে, ওহাবী মতবাদ আমেরিকা-ব্রিটিশদের গড়া। এ মতবাদের জন্যই সৌদি আরব পশ্চাৎমুখী নীতিতে আবদ্ধ হয়ে আছে। মহানবী (সাঃ)-এর ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করলে যদি কওমী ওহাবী মুনাফিকদের বা তাদের সমমনাদের ভাষায় জঘন্য বিদআত হয় তবে আসমান জমিন, আল্লাহ, রাছুল, মুর্শিদ সাক্ষী আমি/আমরা আমৃত্যু ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করে যাবো। কারণ, এ ধরনের মুনাফিকদের আকিদার বিরুদ্ধে কায়েম থাকাই হলো উম্মতে মুহাম্মদীর/ রাছুল প্রেমিকদের ঈমান-আকিদা। হাবিবে খোদা মুহাম্মদ রাছুলকে প্রাণের চেয়ে ভালোবাসা মুমিনের লক্ষণ (সুরা আহযাব-৬), কওমী ওহাবীরা মুমিন তো নয়-ই, ওরা আমানুও নয়। আল্লাহর নাম নয়, আগে মুহাম্মদ রাছুলের নাম জপো, তাঁর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করো, তার ভালোবাসাই আল্লাহর ভালোবাসা এবং ইহাই একমাত্র মুক্তি সনদ (সুরা ইমরান-৩১)। কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ্ ও যাকাতের মূল হলেন হাবিবে খোদা মুহাম্মদ রাছুল (সাঃ)। আল্লাহপাক নিজেই ফেরেশতাসহ তাঁর হাবিবে খোদার ছালাতে রয়েছেন এবং আমানুদেরকেও তাঁর হাবিবের ছালাতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন (সুরা আহযাব-৫৬), রাছুৃলের আনুগত্যই হলো আল্লাহর আনুগত্য (সুরা নিসা-৮০)। এ ধরনের বহু আয়াত কোরানে রয়েছে। সুতরাং আল্লাহর আনুগত্য করতে চাইলে রাছুলের আনুগত্য করতে হবে। রাছুলের আনুগত্য না করলে কাফের হয়ে যাবে। রাছুলের হাতে বায়াতই হলো আল্লাহর হাতে বায়াত হওয়া (সুরা ফাত্তাহ-১০), সরাসরি আল্লাহর হাতে বায়াত হওয়ার কোনো নির্দেশ নেই, হওয়াও যায় না।
“কাজেই যারা নবুয়তে নবী-রাছুল এবং বেলায়েতে ওলিয়ম মুর্শিদ তথা গুরু তথা অলীর নিকট বায়াত না হয়ে আল্লাহর হাতে বায়াত হয়েছে বলছে, ওরা মুয়াহেদ কাফের।
ওলিয়ম মুর্শিদের নিকট বায়াত হওয়াই হলো আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান আনা (সুরা ইউনুছ -১০০, সুরা ফাত্তাহ-১০)। আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্য লাভ হবে মুর্শিদ-গুরুর মাধ্যমে (সুরা মায়েদা-৩৫)। রাছুলের ধূলি নিক্ষেপই আল্লাহ কর্তৃক ধূলি নিক্ষেপ করা (সুরা আনফাল-১৭)। মৌলবাদিদের এবং তাদের আকিদায় নিমজ্জিত অজ্ঞ-মূর্খদের কারণে এবং অন্ধ-গোঁড়া, মূর্খদের অজ্ঞতাপ্রসূত নানা ফতোয়া এবং সন্ত্রাসী ক্রিয়া-কর্মের কারণে বিশ্বের মাঝে খুব দ্রুত মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে-যা মহামারির আকার ধারণ করছে বলে মন্তব্য করছেন জাতি সংঘের মহাসচিব আ্যান্তোনিও গুতেরেস (যুগান্তর-২৩/৩/২০২১ই)। তাদের কারণে মানুষ চরমভাবে বিভ্রান্ত-পথভ্রষ্ট হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বের ২৫টি দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে অন্যায়-অত্যাচার, জোর- জুলুম। মনে রাখবে যতো ওহাবীদের (ওরা বহু দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে আছে) মাদ্রাসার ব্যাবসা/প্রচার-প্রসার বাড়বে ততোই মানুষের দুর্দশা বাড়বে, অন্ধ, গোঁড়াদের দৌরাত্ম্য বাড়বে, সাম্প্রদায়িকতা বাড়বে, দ্বন্দ-বিভেদ বাড়বে, মানুষের মনের নির্মল আনন্দ বিলুপ্ত হবে, মুক্ত মনের-জ্ঞানের শিক্ষার (ইলমে সিনা/ইলমে মারেফাত-যা হলো ধর্ম জ্ঞান) চর্চা বন্ধ হবে, বিশেষ করে ওহাবী কওমীদের মাদ্রাসার কারণে।
রাছুলপাক (সাঃ) বলছেন, কেয়ামতের পূর্বে জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে জ্ঞানীকে উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে, থাকবে শুধু অজ্ঞ-মূর্খরা। কারণ, সাধারণ মানুষ বেশ-ভূষণের প্রতি দুর্বল, নামাজ রোজার হাকিকত সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই, গুণ-খাছিয়ত দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও তাদের নেই বিধায় ওহাবী কওমীরা এদিক দিয়ে সুযোগটি লুফে নিচ্ছে। ওহাবী কওমীদের মাদ্রাসায় সভ্য হওয়ার কোনো শিক্ষা মাত্রই নেই, ওদের শিক্ষায় অন্ধ, গোঁড়ামী এবং সংকীর্ণ মন-মানসিকতা সৃষ্টি হয়। মুক্ত মনের শিক্ষার ধারে কাছেও মাদ্রাসার শিক্ষায় নেই। কোরানের জ্ঞান আল্লাহপ্রদত্ত, ইহা আত্মার জ্ঞান, আত্মার জ্ঞানই হলো ধর্ম জ্ঞান ; যে জ্ঞানে মুক্ত মনের মানুষ সৃষ্টি হয়, সাম্প্রদায়িকতার চারি দেয়াল ভেঙ্গে মুক্ত জীবনের স্বাদ উপভোগ করা হয়।
ধর্ম একটিই তা হলো মানব ধর্ম মানবতা, ইনছানিয়াত।
পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষের জন্য এ ধর্ম। অজ্ঞ-মূর্খরা তথা শয়তানের/নারদের/ইভিলের ধর্মে দাখিল হচ্ছে যারা তারাই খোদার ধর্মের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, অন্যায় অত্যাচার, মানুষ হত্যা করে চলছে।
বুঝা দরকার খোদার ধর্ম দ্বারা ঐক্যতা সৃষ্টি হয় আর শয়তানের ধর্ম দ্বারা বিভক্তি সৃষ্টি হয়।
যারা ইনছানিয়াতের ঐক্যতায় আছে তারাই হলো হিজবুল্লাহ/আল্লাহর দল (হিজবুল্লাহগণ বেশ-ভূষণে নয়, কোনো ভাষা শিখে নয়, কোনো শাস্ত্র-বিদ্যা শিখে নয়, সিবগাতাল্লাহয় সিক্ত হয়ে ইনছানুল কামেল-মোকাম্মেল হয়ে যান ; এরাই হলো গুরু/ মুর্শিদ/ বাকাবিল্লাহধারী)। আর শয়তানের ধর্মে দাখেল হয়ে যারা বিভক্তির সৃষ্টি করে ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি করছে, অন্যায় অত্যাচার, জোর-জুলম করছে, মানুষ হত্যা করছে তারা হলো হিজবুশ্শায়াতিন/শয়তানের দল। এরা পরগাছার মতো ধর্মের ছদ্মাবরণে বাস করে পশুত্বের আচরণ প্রকাশ করে চলছে। মানব ধর্ম/খোদার ধর্ম অবশ্যই তাদের মধ্যে নেই, আছে শয়তানের ধর্ম। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদিদের মধ্যেও এ ধরনের নরপশুগুলো ধর্মের আবরণে পাগলা কুকুরের মতো ধর্মের দোহাই দিয়ে, সাদা-কালোর দোহাই দিয়ে একে অন্যকে আক্রমণ করে চলছে। “অহিংসা পরম ধর্ম”- বুদ্ধ দেবের এ বাণীকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চিনের উইঘুরে মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে, তাদেরকে নামাজ-রোজা/ধর্ম কর্ম করতে বাধা দিচ্ছে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে, হত্যা, ধর্ষণ করে নিজ দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। খাঁটি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদিগণ কখনো একে অন্যের উপর বা পর ধর্মের মানুষের উপর আঘাত করে না, করবে না। কারণ, তারা ধর্ম কি জিনিস তা বুঝেন, তারা ধর্মকে ধারণ করে ধার্মিক হয়েছেন, শুধু অনুষ্ঠান পালন করে মেকি ধার্মিক সাজে নি। আর প্রত্যেক ধর্মে ছদ্মাবরণে যে নরপশুগুলো বাস করছে ওরা ধর্মের কিছুই শিখেনি, শিখেছে পশুত্বের/অসুরত্বের আচরণ, যেহেতু মানবরূপ তাই এরা হলো নরপশু। এরা ধর্মের হিজাব পড়ে কামড়া কামড়ি করছে (ইয়াজুজ-মাজুজ), খোদার সৃষ্টি এ সুন্দর ধরণীকে অশান্ত, উচ্ছৃঙ্খল- বিশৃঙ্খল, অসভ্যতা (এরাই আদিম জাতি) সৃষ্টি করে নরকে পরিণত করছে। খোদা সুন্দর, খোদার সৃষ্টি পৃথিবী সুন্দর কিন্তু খোদার সৃষ্টি মানুষগুলো নিজ আত্মা হারিয়ে (সুরা আনআম) হায়ানী আত্মার গুণ-খাছিয়তে আবৃত হয়ে আসফালা সাফেলিন হয়ে বিচিত্র পশুর সুরত নিয়ে বাস করছে। আর তার ভিতরে যখন যে পশুর লেজটি নড়েচড়ে উঠে তখন সে পশুরই আচরণ প্রকাশ করে চলছে। তাতে এ সুন্দর ধরণী নরকে পরিণত হচ্ছে, সভ্য মানুষগুলো অসভ্য লোকগুলোর দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে।