হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
কথায় কথায় নারীদের পর্দার স্লোগান দিয়ে, মাদ্রাসায়ই একমাত্র ধর্ম শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, মাদ্রাসায় না পড়লে ধর্ম কর্ম হবে না, জান্নাতে যেতে পারবে না, আরবী না শিখলে/শুদ্ধ করে না পড়লে বেহেশতে যেতে পারবে না”-এ স্লোগান দিয়ে/ক্যানভাস করে যখন এ ধরনের দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের ঘটনা ঘটে, অপর দিকে মুক্ত মনের অধিকারী পীর/ফকিরদের সমালোচনা করবে তখন তো ইহাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেই ! হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে না করানো হচ্ছে তা কি ভাবনার বিষয় নয় ! তাহলে মোল্লাদের ভাষায়, মাদ্রাসার দাতাগণ এবং মাদ্রাসায় পড়ানোর ইচ্ছা ছিল যে সমস্ত পিতা-মাতার তারা কেনো ছেলেমেয়েদেরকে মাদ্রাসায় দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে? নিশ্চয়ই মাদ্রাসার ক্রিয়া-কর্ম এবং পরিবেশকে কলুষিত/বিশ্রী জেনেই আগ্রহ হারাচ্ছে? তার জন্য দায়ী কারা? অবশ্যই মাদ্রাসার শিক্ষা, ঈমান-আকিদা, পরিবেশ এবং উস্তাদগণই দায়ী। যদিও এ কথাটি তাদের একদম ভালো লাগার কথা নয়, সহ্যও হবে না। তাতে কিছু বলার নেই, সবই তকদির। নারায়ণগঞ্জের ভুঁইঘরের মৌলবী (বড় হুজুর নামে পরিচিত) ১১ জন মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, খুলনার এক মৌলবী তার মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষণ করার খবর পত্রিকায় এসেছে। এক মাওলানা মেয়েকে ধর্ষণ করে তাকে হত্যা করে গাছে ঝুলিয়ে এসে আযান দিয়ে নামাজের ইমামতি করেছিল (পত্রিকার খবর)! বলুন, দাড়ি, টুপি, পাগড়ীধারী এর চেয়ে পরহেজগারী ইমাম আর কোথায় পাওয়া যাবে! হ্যাঁ, তাই তো বলছি, যা-ই করুন, নামাজ পড়–ন! বেহেশতে হুর – পরী পাবেন ! তার জন্য এখনই ব্যবহারের কলাকৌশল জানতে হবে না !
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বক্সগঞ্জ ইউনিয়নের শুভপুর “ওয়াছাকিয়া কোরআনিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার” ৯ বৎসরের ছাত্রীকে মাওলানা বিল্লাল হোসেন ধর্ষণ করেছে (যুগান্তর/৭ই এপ্রিল/২১ইং)। তনু, নুসরাত জাহান রাফিদের মতো অনেক ঘটনাই সমস্ত পৃথিবী ব্যাপী প্রচার পেয়েছে। ধর্ম শিক্ষা, পর্দার দোহাই দিয়ে তারাই আবার পর্দা উন্মোচণের বা দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের লীলা করে নারীদের পোষ্টমর্টেম করে চলছে। কোথাও পর্দার বরখেলাফ দেখলে তাদের চোখ রাঙানীর আস্ফালনে মাঠ গরম হয়ে যায়। কওমী ওহাবী মৌলবীদের বা তাদের সমমনা মৌলবীদের ওয়াজ মানেই নারীদের পোষ্টমর্টেম করা, পীর/ফকির/অলি-আউলিয়াদের সমালোচনা করা, রঁওযা বা মাজার, ওরশ, গান বাজনা, মিলাদ কিয়ামের বিরুদ্ধে আলোচনা করা আর রাজনৈতিক আলোচনা করা। আর তাদের বেলায় হলে পর্দা উন্মোচনের নিত্য লীলাটি জায়েজ হয়ে যায়। এজন্যই তো হেফাজতের নেতা মৌলবী শফি বলছে “মেয়েদেরকে স্কুলে দিবেন না, পর পুরুষেরা নাকি টেনে-হিছড়ে নিয়ে যাবে।”
আরো কতো কি বলছে। এর কারণ মনে হয় ওহাবী মৌলবাদি মোল্লারা আপন পুরুষ, তাই তাদের কাছে দিলে সুবিধা বেশী, জান্নাতের চাবি পাওয়া যাবে! ধর্মের হিজাব পড়ে আন্তর্জাতিকভাবে যতোগুলো জঙ্গি সংগঠন আছে সবারই ঈমান-আকিদা এক ও অভিন্ন, শুধু দলের নামটি ভিন্ন ;একই গাছের বিভিন্ন ডালপালা। তার মধ্যে হেফাজত একটি। তাদেরকে চিনতে পারাটাও তকদির আবার চিনতে না পারাটাও তকদির। ওরাই আবার পীর-ফকিরদের সমালোচনা করছে, বেদআতী, বেপর্দার স্লোগান দিচ্ছে-ক্যানভাস করছে, লজ্জাহীনতা কাকে বলে। প্রবাদ বাক্যে বলে, “ঝানযুর সুইকে বলছে তোমার গায়ে এতো ছিদ্র কেনো ?” ঝানযুরের গায়ে যে হাজার ছিদ্র তা দেখে না, সুইয়ের গায়ে একটি ছিদ্র তা দেখে সমালোচনায় ওরা পঞ্চমুখ। পীর/ফকিরগণ তো আপনাদের ভাষায় বেপর্দাই, বেদআতিই। পর্দার গুদামের মহাজন হয়ে মৌলবীদের/মাদ্রাসার মধ্যে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের নিত্য লীলা কেনো চলছে তা কি ভাবনার বিষয় নয় ! হাতিয়ার হবে কেনো সত্যই তো বলা হচ্ছে, আপনারাই তো বলাচ্ছেন, এখন সহ্য হয় না কেন ? ধর্ম ব্যবসাটি বন্ধ হবার ভয়ে! না বন্ধ হবে না, বন্ধ হওয়া উচিত ; মানব জাতির মুক্তির জন্য/কল্যাণের জন্য/শান্তিতে বাস করার জন্য। আপনাদের শিক্ষা এবং আকিদাগুলো অতি দ্রুত জঙ্গি মৌলবাদের দিকে ধাবিত করছে সমাজকে ; তা আপনাদের বক্তব্য এবং আচার-আচরণ হতেও তা স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে।
সেজন্যই বলা হচ্ছে, “আল হাক্কু মুররুণ।” এ ধরনের হাজার হাজার ঘটনা তুলে ধরা যায় – যা মাদ্রাসায় ঘটে চলছে। যদি বলেন, মাদ্রাসার বাইরেও তো শত শত ধর্ষণ হচ্ছে, তা ঠিক। কিন্তু ওরা তো আর আপনাদের মতো ধর্ম শিক্ষা, পর্দার দোহাই দিয়ে ধর্মালয়/মাদ্রাসা দাবীদার নয় ! তাও পর্দা নিয়ে আপনাদের এক ঘেয়েমী, গোঁড়ামীপূর্ণ ভুল ব্যাখ্যার কারণে হচ্ছে। আমি বলছি পশু আত্মার বলয় থেকে যার মন সুরক্ষিত হয়ে ইনছানি আত্মায় কায়েম আছে তারই একমাত্র পর্দা আছে-সে দৈহিক নারী হোক আর পুরুষই হোক। কোরানে পুরুষের জন্য পর্দার নির্দেশ প্রথমে এসেছে (সুরা নূর-৩০), সে সম্পর্কে আপনারা কিছুই বলেন না ওয়াজে? যেখানে/যে সমস্ত মজলিশে নারী-পুরুষ উভয়েরই ইজ্জত-সম্মান-আব্রুর হেফাজত হয় সেখানে পর্দা আছে বলে বুঝতে হবে। নয়তো হাজারো কাপড়ের পর্দায় থাকলেও বস্ত্র হরণের লীলা চলবেই। শুধু কাপড়ের পর্দায় তা কোনো দিনই রক্ষা পাবে না, আর ধর্ষণ-বলাৎকারও বন্ধ হবে না/হচ্ছে না ; তা যে বা যারাই হোক। আসল জায়গায় পর্দা নেই, তাই এ দশা।
রাছুলপাক (সাঃ)-এর সময় মেয়েরা মসজিদে, ঈদগায়, পরামর্শ সভায় পুরুষদের সাথে যোগদান করছে, মেহমানদারী করেছে, একে অন্যের সাথে কুশল বিনিময় করেছে, কাজ করছে। আপনারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ওহাবী মত প্রবর্তন করে তার বিপরীত করছেন, তারই কুফল ইহা। চেয়ে দেখুন, তালেবান, আল কায়দা, আইএস, বোকো হারাম, আল-শাবাব নামে জঙ্গি সংগঠন গুলো কি ধরনের ভয়ংকর তান্ডব লীলা ধর্মের ছদ্মাবরণে চালাচ্ছে, কিভাবে নারী ধর্ষণ করছে। ওরা ধর্মের জন্য জেহাদ (?) করে মানুষ হত্যা করে চলছে আর কি সুন্দর দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণের লীলা খেলা চালাচ্ছে। কথায় বলে চোরের মার বড় গলা। ২০/২৫ জন জঙ্গিদের অধীনে একটি মেয়ে যৌনদাসী নিয়োগ দিচ্ছে, আর বলছে, যারা তাদের যৌনদাসী হবে তারা বিনা হিসাবে বেহেশতে চলে যাবে। তাতে একশত সৌদি নারী জঙ্গিদের যৌনদাসী হওয়ার জন্য রাজি হয়ে তাদের দলে যোগ দিয়েছে। যারা তাদের যৌনদাসী হবে তারা জান্নাতে যাবে বলে ফতোয়া দিয়েছে ! ভালো, বেহেশতের পাসপোর্ট-ভিসা পাওয়া যায় যৌনদাসী হলে, মানে একটু .. .. ..।
তাহলে আর ইবাদতের প্রয়োজন কি ? এতো পর্দা পর্দা করছেন কেনো ! নারীদেরকে ধরে এনে বস্ত্র হরণের লীলা-খেলার পর জান্নাতে পাঠিয়ে দিলেই হলো। বাহ্ কতো সুন্দর সহজ সরল পথ আবিস্কার করে ফেললো ! এ ধরনের ‘সিরাতিম্ মুস্তাকিমের (?)’ পথে বাচ্চা ছেলেদেরকেও জান্নাতে পাঠানোর ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্যই মনে হয় বলাৎকার করা হচ্ছে। কিন্তু বেরসিক গার্ডিয়ান বা বাচ্চা ছেলেরা জান্নাতে দিতে/যেতে একদমই রাজি হচ্ছে না যে ! আইএস জঙ্গিদের দ্বারা ধর্ষিত হতে রাজি না হওয়ায় (তাদের ভাষায় জান্নাতে যেতে রাজি না হওয়ায়) ১৭৩ মেয়ের শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল (যুগান্তরসহ সব পত্রিকায়/টিভি সংবাদ)। আফ্রিকার সোমালিয়ার জঙ্গি সংগঠন ‘বোকো হারাম’, ‘আল শাবাব’ দুই দলে ১২-১৫ বৎসরের ৩৪২ জন মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তারা আর ফিরে আসেনি। এক বৎসর পরে ৪/৫জন কোনো মতে ফিরে এসেছিল কিন্তু তাদের কোলে বাচ্চা ছিল। তালেবানদের অবস্থাও একই। আফগানিস্তানের এক নারী জঙ্গিদের এ সমস্ত ক্রিয়া-কর্মের প্রতিবাদ জানানোর জন্য লোহার ব্রা এবং অন্তর্বাস পড়ে রাস্তায় নেমেছিল। এর মানে মেয়েটি বুঝাতে চাইেছে আমরা নারীরা তো শত পর্দা করেও তালেবানদের হাত হতে ইজ্জত সম্মান রক্ষা করতে পারছি না, তাহলে কি লোহার পোশাক পড়ে থাকবো ? দল ভিন্ন হলেও তাদের সবারই ঈমান-আকিদা, উদ্দেশ্য এক ; জঙ্গি মৌলবাদ প্রতিষ্ঠিত করা। মনের পশুত্ব দূর করে ইনছানিয়াত কায়েম না হলে লোহার পোশাক ভেঙ্গে হলেও বস্ত্র উন্মোচণের লীলা খেলা চলবেই। সেজন্যই যারা পরকালপ্রাপ্ত মানুষ/ফকির/বস্তুমোহের উপরে বাস করছে তাদের নিকট নারীগণ নিরাপদপ্রাপ্ত বিধায় তাদের নিকট নারীগণ যাতায়াত করে। যাদের নিকট নারীদের ইজ্জত-সম্মান-আব্রু নিরাপদ নয় তাদের নিকট হতে দূরে থাকা বা পর্দা গ্রহণই উত্তম, জরুরী-সে যেই হোক। সেজন্যই পর্দা ব্যতীত মোল্লাদের নিকট নারীগণ কখনো যায় না, কারণ, মেয়েরা তাদের নিকট নিরাপদ নয়, তা তারা অবশ্যই জানে। তবে পোশাকের শালিনতা অবশ্যই স্বীকৃত, যার দেশে যে পোশাকের প্রচলন আছে সে পোশাকেই, ভিন জাতির পোশাক পড়তে হবে তার কোনো শর্ত নেই।
তবে হ্যাঁ, ফকিরদের অনুসারীদের মধ্যেও ২/৪টি এ ধরনের ঘটনা কোথাও না কোথাও অবশ্যই থাকতে পারে। হযরত ওমর (রাঃ)-এর সময় তারই নিকটে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও যা ঘটছে মনের পর্দার অভাবেই ঘটছে। বস্তুমোহে বা হায়ানী আত্মার গুণÑখাছিয়তে যারা আবৃত বা হায়ানী আত্মার বংশধর যারা তারাই একমাত্র সমালোচনা করছে পীর/ফকিরদের। আমরা পীর/ফকির তাদেরকেই বলছি যারা রাছুলের ইলমে মারেফাতে/ইলমে সিনা/ইলমে এলাহীর অধিকারী/আত্মার জ্ঞানে জ্ঞানী এবং বস্তুমোহের উপরে বাস করছে, বাকাবিল্লাহ-র অধিকারী। এ ধরনের আল্লাহর অলিগণ/ ফকিরগণই হলেন একমাত্র ধর্মীয় নেতৃত্ব দানকারী হিসাবে স্বীকৃত। দাজ্জাল এবং তার অনুসারীরা তাদের বিরোধীতা করছে। আত্মার জ্ঞানই ধর্ম জ্ঞান। আউলিয়া মানেই হলো জ্ঞানী/আত্মার জ্ঞানে জ্ঞানী। অলিদের সম্পর্কে আল্লাহ নিশ্চিত আশ্বাসবাণী প্রেরণ করছেন, অলিগণই হলেন ফকির। মাদ্রাসার আক্ষরিক/ইলমুল কালামের/বিদ্যার অধিকারীদেরকে আমরা কখনোই পীর বা ফকির/অলি বলি না।
ইসলাম প্রচার হয়েছে একমাত্র অলি-আউলিয়াদের দ্বারা, কোনো আলেম-মোল্লা দিয়ে অবশ্যই নয়। বরং ওরা সত্য সনাতন এক ইসলামের গায়ে তিয়াত্তুর তালির পোশাক পড়িয়ে জোকার সাজিয়েছে। তার পরিণতি কতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে তা সচেতন মানুষের অবশ্যই জানা থাকার কথা। এ কথা স্বীকার করাও তকদির, স্বীকার না করাও তকদির। কারণ, লা ইকরাহা ফিদ্দ্বীন। আমাদের মহানবী (সাঃ) হতে সমস্ত অলি-আউলিয়াদের নিকটই নারীগণ দেখা সাক্ষাত, জ্ঞানার্জন করেছে/করছে, হাদিস-ইতিহাসে তার ভুরিভুরি প্রমাণ রয়েছে। তবে কখনো কখনো পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে কোথাও তার ব্যতিক্রমও হতে পারে। সমকামী ও নারী ধর্ষণকারী আলেম-মোল্লাগণই পীর/ফকিরদের সমালোচনা করছে।