হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী
যারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ঈমান এনেছে তারা দাজ্জাল এবং তার অনুসারীদেরকে চিনে, দেখে। ইয়াজুজ-মাজুজগুলো কামড়াকামড়ি করছে এবং তাদের কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাও তারা দেখছে। দাজ্জাল অলি-আউলিয়াদের এবং তাদের শিক্ষার বিরোধীতা করবে/করছে, তাদের অনুষ্ঠানাদির বিরোধীতা করবে/করছে। ধর্মজ্ঞান আত্মার জ্ঞান দাজ্জাল এবং তার অনুসারীরা সে জ্ঞানের বিরোধীতা করবে/অস্বীকার করবে/করছে। তাদের বিকৃত ওহাবী আকিদা কেহ না মানলে/তাদের বিকৃত ওহাবীয়াত সমর্থন না করলে ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, আক্রমন, এমনকি খুনাখুনি পর্যন্ত চালাবে/চালাচ্ছে। ইহাই ছিল ব্রিটিশ গোয়েন্দা মি. হামফ্রের ছয়টি শর্তের মধ্যে একটি। যেখানে অলিদের অনুষ্ঠান হবে সেখানে বাধা দিবে, ফতোয়াবাজি করবে/করছে, তাদের বিরোধীতা করে পাশে ওয়াজের ব্যবস্থা করবে/করছে। ওয়াজে অলি-আল্লাহদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক/অশালীন ভাব ভাষা ব্যবহার করবে/করছে (অলি- আউলিয়াদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে ওয়াজ করার কারণে আমাদের আড়াইহাজার উপজেলার এমপি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু আমাদেরই এলাকায় এ ধরনের একটি ওহাবী দাজ্জাল মোল্লাদের অনুষ্ঠান ইচ্ছে মতো ধোলাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন, তাকে ধন্যবাদ জানাই, দোয়া রইলো (১৮-৩-২০২১ইং)। অলি-আউলিয়াদের, আল্লাহ প্রেমিকগণের মাহফিলের গান-বাজনার বিরোধীতা করবে/করছে। মিলাদ কিয়াম, গান বাজনা হারাম, ওরশ হারাম বলে ফতোয়াবাজি করবে/করছে।
মসজিদে উত্তেজনামূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে দল সষ্টি করে, সমাজকে বিভক্ত করে জোর-জুলুম করবে/করছে। স্বীয় স্বার্থে কোরানকে ব্যবহার করবে, চুক্তি করে মসজিদে ইমামতির চাকরী নিবে, চুক্তিবদ্ধ হয়ে ওয়াজ করে তাদের বিকৃত মতবাদ প্রচার করবে। তাদের চুক্তিবদ্ধ ওয়াজের, ইমামতি ব্যবসা জায়েজ করার জন্য নানা রকম কুযুক্তির আমদানী করবে/করছে। চুক্তি বদ্ধ হওয়া মানেই গোলামী করা গোলামের পিছনে নামাজ জায়েজ নেই, চুক্তিবদ্ধ হয়ে ওয়াজ করাও জায়েজ নেই। সিলেটের এক মোল্লা পীরের (অলিপুরীর) ভাষায়, “যারা চুক্তিবদ্ধ হয়ে নামাজ পড়ায়, ওয়াজ করে তাদের উপার্জন বেশ্যা নারীর উপার্জনের মতো।” ইহা কোনো দিনই দ্বীনের খেদমত নয়, হতে পারে না ; তবে ইহা ধর্ম ব্যবসা হতে পারে।
দ্বীনে মুহাম্মদী বা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে তাদের ধারণা নিছক পুথিগত – ইহা ইহকালের বিদ্যা, পরকালের ইলেম অবশ্যই নয়। কারণ, কোরান রূপক (মুতাশাবেহাতুন) সাহিত্য, ্ রূপকের আড়ালে রয়েছে ধর্ম জ্ঞান। মাদ্রাসার আক্ষরিক বিদ্যা ধর্ম জ্ঞান নয়, ধর্ম জ্ঞানের খোসা/আবরণ/ ইলমুল কালাম। ওরা এক মসজিদ ছেড়ে অন্য মসজিদে গিয়ে তাদের মতবাদ প্রচার করে সমাজে/মুছুল্লিদের মধ্যে দ্বন্দ-বিভেদ সৃষ্টি করবে/করছে। এ ভাবে তারা যেখানেই মসজিদে চাকরী নিবে সেখানেই তাদের বিকৃত মত প্রচার করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে/করছে। রাছুল বলেন, “আলেমদের (মাদ্রাসার) ভিতর হতে দাজ্জাল বের হবে, তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মানুষের ঈমান নষ্ট করবে/করছে।” তাদের বাহির বেশ-ভূষণে সুন্দর হবে, ভিতর ময়লায় আবৃত থাকবে (হাদিস)। রাছুলপাক (সাঃ)-কে সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলো দাজ্জালকে চিনবো কি করে, দেখতে কেমন ? তিনি বললেন, দাজ্জালের বেশ-ভূষণ দেখতে আমার মতোই হবে। রাছুল দাজ্জালের পরিচয় দিয়েছেন রূপক ভাষায়, ঈমানদারগণ দাজ্জালকে চিনেন। দাজ্জালকে দাজ্জাল বললে বা চিনিয়ে দিলে ওরা আক্রমন করবে/করছে। ‘আক্রমণ করবে’ ইহা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস বা চিন্তা-চেতনার কথা, আর ‘আক্রমণ করছে’ ইহা মুমিনদের কথা। রাছুলপাক (সাঃ) বলছেন, একমাত্র যারা মুমিন তারাই দাজ্জালকে চিনবে, তার কপালে ‘কাফ-ফে-রে’ তিন অক্ষর লেখা থাকবে। কেউ শুধু বিশ্বাস করে আর কেউ তা বর্তমানেই দেখে। ওরা চাঁদাবাজি করবে/করছে, ওয়াজ, মসজিদ, মাদ্রাসার নামে ব্যবসা-ভিক্ষাবৃত্তি, চাঁদাবাজি চালু করবে/করছে, নারী ধর্ষণ, শিশুদের বলাৎকার (যা লুত নবীর কওমের প্রথা) করবে/করছে। তারা নারীদের পর্দা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে, অথচ তারাই নারীদের পর্দা উন্মোচন/বস্ত্র হরণের লীলা করবে/করছে, ধর্ষণ-বলাৎকার প্রথা মাদ্রাসায় চালু রাখবে/রাখছে।
দিনাজপুর শহরের পুলহাটে কাশিমপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা এতিমখানা শিক্ষক মাওলানা রবিউছ সানী মাদ্রাসার ১৩ বৎসরের এক ছেলেকে বলাৎকার করছে। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের রছুলবাগ (মাঝিপাড়া) মাদ্রাসার শিক্ষক ১৪ বৎসরের এক ছাত্রকে পিঠিয়ে হত্যা করেছে (যুগান্তর ১৩/৩/২০২১ইং)। বরিশালের গৌরনদীর মাদ্রাসা ছাত্র ইসমাঈল হাওলাদার মিদুলকে (১৫ বৎসর) হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের “জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার” সুপার মাওলানা জাকির হোসেন, সহকারী শিক্ষক মাওলানা ফোরকান, রুহুল আমিন এবং মাওলানা বিল্লাল হোসেন। ছেলেটি ঐ মাদ্রাসারই হেফজখানার ছাত্র ছিল। ৫ই মার্চ ২০২১ইং যুগান্তরের প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুরে অবস্থিত “রহমানিয়া তাহফিজুল কোরান বালক-বালিকা একাডেমি” অধ্যক্ষ মাওলানা নাজিমউদ্দীন শিকল বন্দি করে ১০-১৩ বৎসরের ৭ জন বালককে অনেক দিন যাবৎ পর্যায়ক্রমে বলাৎকার করেছে। যুগান্তরের খবরে এসেছে এক মাদ্রাসার ছাত্রকে সরিষার তেল মেখে প্রায়ই বলাৎকার করাতে তার পায়ু পথে মারাত্মক ঘা হয়ে গেছে। আমাদের ঝাউগড়া গ্রামের উত্তর পাশের একটি গ্রামের ৯ জন ছেলেই মাদ্রাসা ত্যাগ করেছে বলাৎকারের কারণে। আমাদেরই গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের একটি গ্রামে মাদ্রাসার হেফজখানার ছাত্র ছিল।
ঝাউগড়া বেনজীরিয়া চিশতীয়া দরবার শরীফের পিছনে (আধা কিলোমিটার দূরে) নোয়াপাড়া গ্রামে এক মৌলবী একটি ঘর ভাড়া নিয়ে মাদ্রাসা খুলেছিল। প্রায় ৭/৮ মাসের মধ্যেই একটি বাচ্চাকে বলাৎকার করে ধরা পড়ে লোকজনের হাতে ইচ্ছে মতো মার খেয়ে পালিয়েছে। এখন আবার অন্য মৌলবী এসে নতুন করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে মাদ্রাসার নামে, হয় তো নতুন কোনো দুলহানীর সন্ধানে আছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে মাওলানা সিরাজুল ইসলাম ঝাড়ফুঁকের কথা বলে এক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। রাঙ্গুনিয়ায় রুটিন করে মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রতি রাতে বলাৎকার করতো মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নাছির। ফরিদপুরে বলাৎকারের শিকার হয়ে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। ফেণীতে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে বলাৎকারের খবর যুগান্তরে এসেছে। তেমনি ময়মনসিংহে এক মাদ্রাসা ছাত্রকেও বলাৎকারের খবর যুগান্তরে এসেছে। নারায়ণগঞ্জে মাদ্রাসার ছাত্রকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বলাৎকার করতো মাদ্রাসার শিক্ষক। মাদ্রাসার এক মৌলবীকে জুতাপেটা করছে মহিলারা ছেলেকে বলাৎকার করার কারণে। চিটাগাং রোডের এক মাদ্রাসার শিক্ষক (অনিবার্য কারণে নামটি লিখলাম না) ছাত্রকে বলাৎকার করার কারণে তার চাকরী চলে গেছে, অন্য মাদ্রাসায় গিয়ে চাকরী নিয়েও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণে আবারও চাকরী হারাতে হয়েছে। শেষে নিজের বাড়ির ভাড়াটিয়ার ছোট বাচ্চা মেয়েকেও ছাদের মধ্যে যৌন নির্যাতন করে ধরা পড়েছিল।
একুশে টিভির সংবাদ হতে জানা যায় মৌলবীরা ৫ বৎসরে ৮৩৪ জন ছেলেকে বলাৎকার করেছে। যতোগুলো বলাৎকারের খবর তার ৮০ভাগই মাদ্রাসার মৌলবীদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। মাদ্রাসার ১০-১৪ বৎসরের বালকদের বলাৎকারের ঘটনা প্রায় অধিকাংশই গোপন থাকে লোকলজ্জায় বা শিক্ষকদের ভয়ে ছাত্ররা প্রকাশ করছে না। যে কয়টি প্রকাশ পাচ্ছে তাতেই মাদ্রাসার ভয়ংকর চিত্র উঠে আসছে। প্রতিদিনই ২/১টি এ ধরণের খবর পত্রিকায় আসছে। মনে হচ্ছে লুতনবীর কওমের ঐতিহ্য মাদ্রাসায় স্বগৌরবেই ধরে রেখেছে। গত নভেম্বর মাসেই (২০২০ইং) মাদ্রাসার ৪০ জন ছাত্র মৌলবীদের দ্বারা বলাৎকারের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে তিনজন মারা গেছে, আত্মহত্যা করেছে একজন (ডিবিসি নিউজ, ৯ই ডিসেম্বর/২০২০ইং)। আর মাদ্রাসার ছাত্রীদের অবস্থাতোও আরো ভয়ংকর, তা পত্রিকা পাঠ করলেই জানা যাবে, অনেকে লজ্জায় নিরব থেকে যাচ্ছে। মসজিদ-মাদ্রাসার মৌলবীরা মনে হয় এ ধরণের ক্রিয়াকমর্কে কিছুই মনে করেন না বা জায়েজ জানেন। কেনোই বা কিছু মনে করবে ? কারণ, তারা তো জানেই এবং বলছেই, যা-ই করুন নামাজ পড়–ন ! ওরা তো তাই করছে আর নামাজ পড়ছে ! মাদ্রাসার এ সমস্ত অশ্লীলতার সাফাই গাওয়ার জন্য তিনজন মৌলবী বক্তব্য হলো “এ ধরনের ক্রিয়াকর্মের ফলে ধর্মীয় মানসিকতা লালনকারী ব্যক্তিরা তাদের সন্তানকে হেফজখানায় দিতে আগ্রহ হারাচ্ছে, আগ্রহ হারাচ্ছে দাতারাও (যুগান্তর/ ১৯-৩-২০২১ইং)। দাতারা কেনো যে কিছু মনে করে আগ্রহ হারাচ্ছে আমি বুঝলাম না, আমার মনে হয় এ সমস্ত দাতারা বোকা !
কারণ, মৌলবীরা তো বলছেই, যা কিছুই করো, নামাজ পড়িও। ওরা যা-ই কিছু করেই তো নামাজ পড়ছে, পড়াচ্ছে, শিখাচ্ছে ! ধর্ষণ, বলাৎকার যা-ই করুক জান্নাতের চাবি তো আর ছাড়া যায় না। যে সমস্ত পিতা-মাতা ছোট বাচ্চাদেরকে কওমী মাদ্রাসায় পাঠায় নিশ্চয়ই তারাও জান্নাতের চাবির অংশীদার হবে, তাতে একটু-আধটু এমন হলে কি আর তেমন হবে। বাচ্চাদের ইহকালের একটু কষ্টের জন্য যদি সবাই জান্নাতের চাবিটা পেয়ে যায় তাতে কি সৌভাগ্যের কথা নয়! তথাকথিত জ্ঞানান্ধ/ধর্মান্ধ একদল মুসলমানগণ তাই মনে করে। এগুলোকে জ্ঞান দান করা আর গাধার নাকে গন্ধরাজ ফুল ধরা একই কথা।
আমি ইহাও জানি মাদ্রাসার অনেক মৌলবী বা তাদের স্ত্রীগণ নিজেদের মেয়েদেরকেই এ সমস্ত কারণে মাদ্রাসায় দিতে রাজি নয়। আর বড় বড় অনেক মৌলবীরা তাদের সন্তানকে মাদ্রাসায় লেখা পড়া না করিয়ে বিদেশে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলছে, অথচ ছোয়াবের ব্যাপারী’রা অন্যদের ছেলে মেয়েকে মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য অলীক ছোয়াবের কিসসা-কাহিনীর গজল গেয়ে চলছে। যাক, তিনজন মৌলবীর (হয়তো তাদের সমমনাগণও) পরবর্তী বক্তব্য হলো “এ সমস্ত ঘটনা নিয়ে ধর্মবিদ্বেষীরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।” মানে যারা এ সমস্ত ঘটনাগুলো তুলে ধরবে তারা ধর্ম বিদ্বেষী/মাদ্রাসার বিরোধী। আর যদি এ সমস্ত ক্রিয়াকর্মকে তুলে না ধরে, জায়েজ জানে বা কিছু মনে না করে বা কিছু না বলে তাহলে বুঝতে হবে সে ধর্মপ্রাণ-এ হলো তাদের মতলবী বয়ান। অপর দিকে ধর্মবিদ্বেষীরা নাকি ইহাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে।