পত্রিকা – যাদের কোনো ধর্ম নেই – ২য় সংখ্যা ২য় পর্ব

হযরত খাজা কাজী বেনজীর হক চিশতী নিজামী

দিল্লীর বাদশাহ মহামতি আকবরও ছিলেন তার পিতা-পিতামহের মতোই আদর্শবাদী। তিনি শিয়া-সুন্নী কোনো মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি জানতেন এসব মতবাদ, ফেরকাবাজি-ফতোয়াবাজি ইসলামকে দুর্বল করেছে। সম্রাট আকবরের দ্বীন-ই-ইলাহীর সঠিক ইতিহাস আজো আমাদের সমাজে পৌঁছেনি ধর্মান্ধ আলেম-মোল্লাদের কারনে। এ ধরাধামে আমরা সবাই মানুষ- এ বিশ্বাসই তার ছিলো, বিধায় তিনি মৌলবাদের উর্দ্ধে ছিলেন। কিন্তু এক দল আলেম-মোল্লারা তার এ নীতির বিরোধীতা করেছে। বিশেষ করে শায়েখ আহামদ শেরহিন্দি সাহেবই এ সমস্তের নাটের গুরু ছিলেন, এজন্য তিনি জেলও খেটেছেন। তিনি জাতে বাহাত নামক এক কল্পিত স্থানে আল্লাহকে রাখলেন আর বললেন, সৃষ্টিতে ¯্রষ্টা নেই। আল্লাহ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে আর সমস্ত সৃষ্টি হলো আল্লাহরই প্রতিবিম্ব। এ ধরনের কল্পিত স্থানে আল্লাহ সাব্যস্ত করাই যে এক প্রকার মূর্তি পূজা তা অধিকাংশ আলেম সমাজ বুঝেনি। তিনি জিল্লিয়াতবাদ বা প্রতিবিম্ববাদ প্রবর্তন করে স্বীয় পীরের নীতিরও বিরোধীতা করলেন। যাক, ঠিক তেমনি আমাদের দেশের ওহাবী জঙ্গি মৌলবাদীরাও সাধারণ মানুষকে বুঝাতে পেরেছে যে, তারাই খাঁটি বা সাচ্চা মুসলমান।

“ইয়াজিদ ধ্বংশ হলেও তার পেতাত্মা সহস্র-লক্ষ ভাগে এখন বিস্তার লাভ করে, জঙ্গি ওহাবী মৌলবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আছে ধর্মের ছদ্মাবরণে।”

যুগে যুগে এরা যে কতো রকমের বাহারী চটকদার নামের আশ্রয় নিয়ে সউদিদের লেবাছের আবরণে থেকে তাদের কুৎসিত মতবাদগুলো প্রচার করে চলেছে এবং মাদ্রাসায় সরলমনা শিশুদেরকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে তা ইয়ত্তা নেই। যদিও এই অজ্ঞ-মূর্খরা সাধারণ মানুষকে বুঝাতে পেরেছে যে, ইহাই ইসলাম ধর্মের শিক্ষা। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লাম এদের বিষয়েই মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব আলায়হিস সালামের নিকট ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, “এরা ধর্মীয় ছদ্মাবরণে এবং নিরাপত্তা সহকারেই বাস করবে”। ইমাম গাযযালী রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলায়হি কে এক লোক বললো, হুজুর আমাকে একটি ফতোয়া লিখে দিন। ইমাম গাযযালী রাহমাতুল্লাহি তা’য়ালা আলায়হি ঐ লোকটিকে বললেন ঃ তুমি কি আমাকে সেই বাতিলকৃত দিনগুলোর দিকে ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছ ? আমি যতদিন মাদ্রাসায় পড়েছি এবং পড়িয়েছি সেই সময়টিই আমার বরবাদ হয়ে গেছে। ঠিক তেমনি মাওলানা রুমী, হাফেজ সিরাজি, মাওলানা শরাফুদ্দিন (বু-আলী কলন্দর) সহ আরো বহু সত্যপথ প্রাপ্তদের বেলায়ও তাই ঘটেছে। যখনই কেউ সত্য সঠিক জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন, তখনই এ ধরনের চরমসত্য কথাটি তাঁরা প্রকাশ করেছেন। আর তখনই অজ্ঞ-মূর্খরা তাদের বিরোধীতা করেছে। যারা নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লামের বিরুদ্ধে কটুক্তি করেছে তারা হলো মানসিক বিকারগ্রস্থ লোক এবং তাদের শাস্তি প্রদান করার সুন্দর পথ থাকা সত্ত্বেও ওহাবী আলেম- মোল্লারা যে পথ বেঁছে নিয়েছে তা নাস্তিকদের চেয়েও বেশী অসুস্থতার প্রমাণ দিয়েছে, এ বিষয়ে রাজ-সরকারও কম ভূল করেনি। যার যার স্বার্থোদ্ধারের জন্য যুগে যুগে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বিকৃত করা হয়েছে মানবধর্ম ইসলামকে। সবচেয়ে বেশী বিকৃত করা হয়েছে ধর্মের নামে রাজনৈতিক (?) দলের দ্বারা। তাছাড়া ঐ সমস্ত আলেম-মোল্লাদের লেখার মাঝেও তো নবীজিকে এবং অলি-আউলিয়াদেরকে খাটো করার বা অপমান করার জন্য বহু কথাবার্তা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষ জানেই না। এ সমস্ত ওহাবী মোল্লাদের শাস্তি দিবে কে ? তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন কোথায় ? তাদের ইতিহাস জানার জন্য পড়ুন “পরহেজগারীর আড়ালে ওরা কারা !!!” বইটি। তাদের মাঝে জাগ্রত আছে হায়ানী আত্মা, তা তাদের ভয়ংকর হিংস্রতা দেখেই প্রমাণ হচ্ছে। রাজনীতির নামে হিংস্রতার নীতি দেশের এবং ধর্মের ক্ষতি ব্যতীত আর কিছুই হচ্ছে না। হায়ানী আত্মার কাজই হলো ধ্বংশ করা, অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম করা আর ইনছানি আত্মার কাজ হলো রক্ষা করা। হায়ানী আত্মার অধিকারী মানুষই হলো জারজ, তার কোনো পিতৃপরিচয় নেই। তাদের আত্মা বদল হয়ে গেছে। মানুষের হলো ইনছানি আত্মা-যা মানুষকে, সৃষ্টিকে রক্ষা করে, দয়া-মায়া, প্রেম-ভালোবাসা, ঐক্যতা, ভ্রাতৃত্বভাব বজায় রেখে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করে। ইহা চিরন্তন-শাশ্বত পবিত্রতম আত্মা মানে রুহুলুল্লাহ। এ আত্মার কোনো জাত-ভেদ নেই বিধায় এ আত্মার অধিকারী মানুষই হলো খাঁটি মুসলমান, খাঁটি হিন্দু, খাঁটি খ্রিষ্টান ইত্যাদি। এ রুহুলুল্লাহ-ই হলো ইসলাম- যা আল্লাহর হেফাজতে আছে। মানুষের সাধ্য নেই তাকে বিকৃত করা বা পরিবর্তন-রূপান্তর করা। ঈমানের মাধ্যমে সেই ইসলামকে লাভ করতে হয়।

‘বিশ্বাস-ভক্তি-প্রেম এ তিন তত্ত্বে ইসলামের ভিত্তি।’

এ তিন তত্ত্বের প্রয়োগক্ষেত্র হলো মুর্শিদ। সমস্ত নবী-রাছুল, অলি-আউলিয়াগণই হলেন মুর্শিদ। যারা চিনে তারা অবশ্যই জানে আল্লাহ-ই হলেন মুর্শিদ। আঠার হাজার মাখলুকাতের মধ্যে একমাত্র জিন- ইনছানের জন্য ইবাদতের নির্দেশ। সে ইবাদত হলো নিজকে চেনা মানে খোদাকে চেনা এবং তাঁর পাক গুণ-খাছিয়তে ভূষিত হয়ে যাওয়া। মানুষ সাধনার বলে বা ইবাদতের মাধ্যমে ইসলামকে ধারণ করে মুসলমান হয়ে যায়। তার জন্য পাঁচটি বিধান কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ্জ এবং যাকাত রয়েছে- যার ভিত্তি হলো পাক-পাঞ্জাতন। ঐ পাক-পাঞ্জাতন-ই হাকিকতে পাঞ্জেগানা। এ কথা তথাকথিত মুসলিম-সমাজ ভুলে আছে মুনাফেক মুয়াবিয়া, ইয়াজিদ মোল্লা এবং তার অনুসারী মোল্লা-মৌলবীদের কারনে। পাঁচটি বিধানের মাধ্যমেই ইসলামে পৌঁছা যায়। রুহ্ কুদসির ‘মেহের’ গুণ-খাছিয়ত হতে তার প্রকাশ। কোরান এবং ইসলাম রয়েছে আল্লাহর হেফাজতে- এটা যারা বুঝে না তারাই ধর্মের নামে, ধর্মের ছদ্মাবরণে অন্যায়-অত্যাচার, জোর- জুলুম, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, অলি-আউলিয়াগণের খানকাহ বা দরবার, মাজার শরীফে আক্রমণ করা, মানুষ হত্যা ইত্যাদি জঘণ্য ক্রিয়া-কর্মে রতো হয়ে পড়ে। এ সমস্ত ধর্মান্ধ অজ্ঞ-মূর্খরা কোরান কি জিনিস তা চিনেইনি। কোরান নাজিলের শেষ পর্যায় হলো আলমে জবরুত। এখানেই আল্লাহর নিঃশব্দ কালাম (আল্লাহর কালামের কোনো ভাষা নেই, কারন তা নিঃশব্দ) শব্দায়িত হচ্ছে এবং আলমে লাহুতের মাধ্যমে আবার আসমানে পৌঁছে যাচ্ছে। আল্লাহর বান্দাগণ আলমে জবরুত হতে আল্লাহর কালাম কোরান শ্রবণ করে সঠিক জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়ে ইসলামে দাখেল হয়ে মুক্তির জগতে অধিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে। যিনিই ইসলামে দাখেল হবেন তিনিই-

হাকিকতে লক্ষ্য করলে জানা যায় ইসলাম আঠার হাজার মাখলুকের গুণ-খাছিয়তের বাহিরে অবস্থান করছে এবং তা আল্লাহর হেফাজতেই আছে। কাজেই ইসলাম হেফাজতের ধূয়া তুলে যারা ধর্মের ছদ্মাবরণে অন্যায়, অত্যাচার, জোর-জুলুম বা মানুষ হত্যা করে চলেছে তারা খাঁটি মুনাফেক, প্রতারক তথা দাজ্জাল। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লাম বলছেন ঃ “আলেমদের ভিতর হতে দাজ্জাল বের হবে এবং তারা ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষের ঈমান নষ্ট করবে”। ইলমে নব্বী বা ইলমে এলাহী হলো আত্মার জ্ঞান তথা নিজকে চেনার জ্ঞান। যারা নিজকে চিনেনি তারা আলেম নয়, জালেম। এরাই হলো ধর্মান্ধ জঙ্গি মৌলবাদী, ধর্মের নামে জোর-জুলুমই হলো তাদের ধর্ম। লা ইকরাহা ফীদ্দ্বীন- আল্লাহর এ কালামের তোয়াক্কা এরা মোটেও করে না। এ জন্য ধর্ম নিরপেক্ষতা কথাটিও তারা স্বীকার করতে রাজি নয়। কারন, তাহলে ধর্মের নামে তাদের জোর-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার ইত্যাদি পশুত্বের আচরণ বন্ধ হয়ে যাবে যে! আসলে এরা ইসলামের নামে হেফাজত করছে দাঁড়ী, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী এবং তাদের ব্যক্তিস্বার্থের কুৎসিত কিছু মতবাদ- যা তাদের ওস্তাদ কুখ্যাত মুনাফেক সউদি সরকারের। তাদের দ্বিতীয় ঘাঁটি হলো দেওবন্দ মাদ্রাসা। সুন্নী আলেম-ওলামার সম্মেলনে এবং ইসলামী ফ্রন্টের সমাবেশে সরাসরি অভিযোগ হলো “হেফাজতে ইসলামের” চেয়ারম্যান মৌলবী আহামদ শফি ছিলেন একাত্তরে মুজাহিদ বাহিনীর কমান্ডার। তিনি ধর্ম নিরপেক্ষতাকে নাস্তিকতা বলে অভিহিত করেছেন (যুগান্তর, ২৯শে মার্চ/২০১৩)। তার মতে নিরপেক্ষতা মানে হলো ধর্মহীনতা বা যার যে ধর্ম মনে চায় পালন করতে পারে অথবা এও হতে পারে মনে চাইলে ধর্ম মানবো, পালন করবো অথবা পালন করবো না ইত্যাদি। মূর্খতা কাকে বলে! আল্লাহ হলেন সামাদ বা মহা নিরপেক্ষ তথা সবার জন্য প্রযোজ্য, তাঁর কালাম বা বাণীগুলোও হলো নিরপেক্ষ এবং তাঁর ধর্মও নিরপেক্ষ। মানব ধর্ম হলো আল্লাহর ফেৎরাত- যা মহানিরপেক্ষ, এর মধ্যে কোনো জাত-ভেদ নেই।

মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলায়হি ওয়াছাল্লামের মদিনা সনদটিও ধর্ম-নিরপেক্ষতার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। অথচ একদল অজ্ঞ-মূর্খরা তার বিকৃত ব্যাখ্যা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে ভুল পথে ধাবিত করছে এবং ধর্মের নামে অন্যায়-অত্যাচার, জোর-জুলুম, মানুষ হত্যা করে চলেছে। আসলে তেঁতুলতত্ত্বের আবিষ্কারক যিনি, তিনিতো গাধার পৃষ্ঠে আরোহণ করে বেড়াচ্ছেন এবং তার ডান চক্ষু অন্ধ বিধায় এ ধরনের প্রলাপ বকছেন। কিন্তু ধর্ম-নিরপেক্ষতা বলতে বুঝায় প্রতিটি ধর্মের ধার্মিকগণ যার যার নিজধর্ম পালন করবে শান্তিপূর্ণভাবে, তাতে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না। এক ধর্মের বিরুদ্ধে আরেক ধর্মের লোকজন কটুক্তি বা কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত করতে পারবে না বা ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্যায়- অত্যাচার, জোর-জুলুম করতে পারবে না। আসলে ইসলাম হলো স্বভাবজাত ধর্ম (আল ইসলামু দ্বীনুল ফেৎরাত)।

ইনছানি আত্মার অধিকারী মানুষই হলো ধার্মিক (খাঁটি মুসলমান, খাঁটি হিন্দু, খাঁটি বৌদ্ধ, খাঁটি খ্রিষ্টান)। মুসলমান মানে মুর্শিদের নিকট তথা আল্লাহর নিকট পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী আর পূর্ণ আত্মসমর্পণকারীই হলো পূর্ণ শান্তিপ্রাপ্ত (নফসে মুৎমাইন্নাহ)। আর শান্তিপ্রাপ্ত মানুষের মধ্যেই সৃষ্টি হয় ঐক্যতা। মানবাত্মার মানব-ধর্ম ইসলামে যে দাখেল হয়েছে তার থেকে মানুষ সর্বদাই নিরাপত্তাবোধ লাভ করবে, শান্তিপ্রাপ্ত হবে। সেজন্যই ইসলামে পরিপূর্ণভাবে দাখেল হওয়ার জন্য কোরানের ঘোষণা এসেছে। এর মানে দাঁড়ী, টুপি, জুব্বা, পাগড়ী বা আক্ষরিক অর্থে কোরান-হাদিসের বয়ান নয়। যেমন, পিতা পুত্রকে বললো তুমি এবার নিজের পায়ে দাঁড়াও। “নিজের পাও” কথাটি হলো রূপক, প্রতীক, আক্ষরিক বা মুতাশাবেহাত। তার সমুজ্জ্বল অর্থ হলো কাজ-কর্ম করে স্বাবলম্বী হয়ে যাওয়া- এটা হলো মুহকামাত। “নারী শয়তানের বাহন”-এটা হাদিস। এখানে “নারী” বলতে আমাদের মাতৃজাতিকে বুঝানো আক্ষরিক অর্থ বা রূপকের অর্থ করা- যা মুতাশাবেহাত। কোরানে এ ধরনের অর্থ করার নিষেধাজ্ঞা আছে। এর মুহকামাত হলো নফসে আম্মারা বা বস্তুমোহে আক্রান্ত লোকটিই হলো নারী (তালিবুদ্দুনিয়া মোয়ান্নাছ)। এটাই হলো হাদিসের মুহকামাত। কোরান-হাদিসের কালাম হলো রূপক, প্রতীক- যার সরাসরি অর্থ করা নিষেধ। আলেম-মোল্লারা তাদের শিক্ষায় সেই আক্ষরিক বিদ্যাই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে, ফলে ধর্মজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে শত শত দ্বন্দ্ব-বিভেদ, ফেরকাবাজি এবং ফতোয়াবাজির সৃষ্টি হয়ে জঘণ্য ক্রিয়া-কর্মে মানুষ জড়িয়ে পড়ছে এবং পথভ্রষ্ট হচ্ছে। মুতাশাবেহাত হলো বাহ্যিক-কাঠামো আর মুহকামাত হলো আত্মার জ্ঞান, মানুষতত্ত্ব- যা নিজকে চিনলে জানা যায়।

আর নিজকে চিনলে খোদা চেনা যায়, তাওহীদে পৌছা যায়। তাতে কোনো দ্বন্দ্ব-বিভেদ নেই- ঐক্যতায় স্থিত হওয়া যায়, যা নামাজ, রোজা এবং সদকার চেয়েও উত্তম বলে নবীজি জানিয়ে দিয়েছেন। যতো দিন মানুষ আলেম-মোল্লাদের কোরান-হাদিসের আক্ষরিক বিদ্যা বা ইলমুল কালামকেই কোরান-হাদিসের জ্ঞান বা ধর্মজ্ঞান বলে জানবে, মানবে ততোদিন মানুষ দ্বীন-এ-মুহাম্মদী বা মিল্লাতে ইবরাহীম হতে দূরেই অবস্থান করবে এবং শত মতভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ফেরকাবাজি, ফতোয়াবাজি, জোর-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার, মানুষ হত্যা ইত্যাদি চলবেই এবং চরম পথভ্রষ্ট হবে। অন্য জাতির মধ্যেও যারা নিজ ধর্মের মর্ম বুঝেনি, মানবাত্মার ধর্মে দাখেল হতে পারেনি, কেবল বাহ্যিক কাঠামো বা রূপকটি নিয়েই আছে তারাও পথভ্রষ্ট এবং তাদের দ্বারাই ধর্মের দোহাই দিয়ে যতো রকম অন্যায়-অতাচার, জোর-জুলুম, মানুষ হত্যা ইত্যাদি জঘন্য কাজগুলো সংঘটিত হয়ে থাকে। আলেম-মোল্লারা নিজ হাতে লিখিত কোরানকে আল্লাহর তরফের কোরান বলছে, অথচ আল্লাহর নূরে মানুষ- কোরানকে ঘৃণা করা হচ্ছে। ইহুদীরা তাওরাতের বাণী কাগজে লিখে বলতো- এটা আল্লাহর তরফের কিতাব। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহপাক তাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন (সুরা বাকারা-৭৯ আয়াত)। মুসলিম জাতির আরবী বিদ্বানেরাও তাই বলছে। তারাও আল্লাহর অভিসম্পাতপ্রাপ্ত। ধর্মশাস্ত্র মানুষের আনিত, ধর্মশাস্ত্র মানুষকে আনেনি। আশরাফুল মাখলুকাত হলো মানুষ, কোনো ধর্মশাস্ত্র নয়। আসল নূরী কোরানকে ভুলে যারা কাগজের কোরানকে আসল কোরান বুঝাচ্ছে তারা কি করে সৎপথপ্রাপ্ত হবে! কাগজের কোরান রুসমী কোরান মানে খোসা, বাহ্যিক আবরণ, প্রতীক। এর ভিতর আরেকটা সমুজ্জ্বল অর্থ আছে, তার থেকে জানা যাবে মুহকামাত আয়াতের সন্ধান। এর মানে আল্লাহ নূরী কোরান মানুষ মানে মানুষই হলো কোরানের মুহকামাত আয়াত। এটা যারা বুঝেনি, চিনেনি তারা এখনো পথভ্রষ্টই হয়ে আছে। কোরানের মুহকামাতেই রয়েছে মানুষের জন্য হেদায়েতের বাণী- যার মাধ্যমে মানুষ সৎপথপ্রাপ্ত হবে, মানব মুক্তির পথ পাবে, ইসলামে দাখেল হবে। আমিত্ব নাস্তি করে স্বীয় জীবনে ইনছানিয়াতের জাগরণ ঘটানোই হলো পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখেল হওয়া। এটা সার্বজনীন কথা, কোরানের কথা।

আপন খবর